আভিজাত্য - অরবিন্দ সরকার


           আভিজাত্য
       অরবিন্দ সরকার
    

খাগড়া শহরের বাসিন্দা রূপালী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শ্রাবণী দুজনেই হরিহর আত্মা। দুজনেরই স্বামী কালেক্টরীতে চাকুরী করেন। সারাদিন ফোনে ওদের কথাবার্তা। রান্না খাওয়া গৃহকর্মের কাজ করলেও ফোন কানে গোঁজা।
রূপালীর বর চারচাকা কিনেছেন আর একটি রূপালীর আব্দারে কুকুর,থুড়ি সারমেয় কিনেছেন। এ্যালসেসিয়ান ডগ্ না থাকলে অভিজাত হওয়া যায় না।বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এই বিলেতী কুকুর নিয়ে তার আদিক্ষেতা।
হ্যালো শুনছিস্ তো ------
শ্রাবণী - হ্যাঁ বল্ বল্ আমিও একটা কিনবো রে ! সময় কাটছে না আমার। তাছাড়া শ্বশুর শাশুড়ি তো আমাদেরও বৃদ্ধাশ্রমে।উনারা সব সেকেলে লোক! উনাদের নিয়ে বাইরে বেরোনো দায়। ওদের অনুষ্ঠান বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পরিচয় দেওয়া লজ্জার। তাছাড়া কুকুর নিয়ে গেলে আভিজাত্য বাড়বে। তুই কুকুর কোথা থেকে আনলি? আর কি কি ওর জন্য করিস্?
রূপালী -- আরে অনেক খরচা! দাম নিয়েছে পঞ্চাশ হাজার।ওদের পোষাক পরিচ্ছদ ,দামী সাবান ,আর চিকিৎসা করাতে হয়। প্রতিমাসে শরীর ঠিক রাখতে ও প্রতিষেধক ইঞ্জেকশন দিতে যা খরচা। শ্বশুর শাশুড়ির বোঝা বওয়ার চেয়ে অনেক বেশী। শ্বশুর শাশুড়ির পিছনে তেমন খরচা নেই, কুকুরের খরচার এক কণাও খরচা ওদের জন্য করতে হয় না। এই বয়সে ওদের নিয়ে কে টানাটানি করবে। ওদের দেখলে আমি আজ এতো উঁচুতে উঠতে পারতাম না। সমাজের কাছে হেয় হয়ে থাকতাম। স্বামীর রোজগারের টাকায় আমার আর ওর (সানি) পুষিয়ে যায়।ওকে সাজাতে ও আমি সাজতেই অনেক টাকা লাগে। শ্বশুর শাশুড়ি তো বিলেতি না।ওরা নেড়ী । দেখলেই ঘেন্না ধরে আমার।সানির কিছু হলে আমি মরে যাবো। সানি আমাকে আদর করে, সোহাগে মন ভরিয়ে দেয়। শ্বশুর শাশুড়ির দেখাশোনা হ্যাপা বেশি আর এর ওসব বায়না নাই। শ্বশুরের মুখ দেখার চেয়ে কুকুরের মুখ দেখা ভালো।সাত চড়্ মারলেও রা নেই, শুধু লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে চলবে। হয়তো এ জম্মে বিলেত যেতে পারবো না কিন্তু বিলেতি কুকুর তো আছে। ‌ভাগ্যিস শ্বশুরবাবা ও শাশুড়িমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছি নইলে আমার সানির যত্ন আহ্লাদ করতে পারতাম না। ভগবান বলে বস্তু আছে রে।উনিই সব করাচ্ছেন। তাছাড়া আমি আমার খাটে নিয়েই শুয়ে থাকি। গাড়ীতে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে পার্কে সবাই আমাদের সমীহ করে। বিলাতী কুকুর মানেই খানদানি পরিবারের আমরা বুঝলি। পার্কে কতজন এসে আমার সঙ্গে আলাপ করে আর আমি এর নাম রেখেছি সানি। কিন্তু সকলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সোনা, মনা,লোনা বলে সোহাগ করে। আমার মন ভরে যায়। গাড়ীর কাঁচ খুলে রাখি,সবাই দেখুক আমাকে ও আমার সানিকে।ওর কিছু হলে আমি পাগলী হয়ে যাবো রে!
শ্বশুর শাশুড়ির ভার নেওয়া খুব মুশকিল , কিন্তু এর ভার নেওয়া সহজ।ছটফটে খুব। মাংস রোজ কিনি সানির জন্য। শ্বশুর শাশুড়ি থাকলে এ সব কিনতে দিত না।যত সব আনকালচার্ড!

২৪/০৬/২০২১
বহরমপুর ,মুর্শিদাবাদ।

Comments

Popular posts from this blog

আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকা - জানুয়ারী সংখ্যা ২০২৪

মাটির শহর - সৌভিক দেবনাথ

কবি বিকাশ ভৌমিকের কবিতা