হঠাৎ দেখা - লক্ষ্মী বিশ্বাস

হঠাৎ দেখা
লক্ষ্মী বিশ্বাস

ট্রেনটা স্টেশনে এসে দাঁড়াতেই অনির্বান ,কাল শাড়ি পড়ে জানালার ধারে বসে থাকা মেয়েটিকে বার বার দেখছিল।যতো দেখছিল ততো মনে পরছিল তার অতীতের কিছু স্মৃতি । কালো রং ছিল মেঘার খুব প্রিয়।ও যতবার আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল, প্রতিবারই কালো শাড়ি পরেছিল।সেই ঘন কালো চল,ঠোঁটের কোণে লুকোনো হাসি আর বারো বছর পর হঠাৎ মনে পড়ছে।অনির্বানের সাথে মেঘার পরিচয় হয়েছিল কলেজে।প্রথমে বন্ধুত্ব,তারপর ভালোবাসা। কলেজ শেষে কাজের সূত্রে অনির্বানকে বাইরে যেতে হয়েছিল।তারপর তাঁদের সম্পর্কটা ধীরে ধীরে মলিন হতে থাকে।শত চেষ্টা করেও সম্পর্ক টা টিকিয়ে রাখতে পারেনি।

                     হঠাৎই ট্রেনে সিগনাল দিয়ে বসে।অনির্বান তাড়াহুড়ো করে ট্রেনে উঠে। সেই মেয়েটির উল্টো পাশের সিটে বসে।মেয়েটির দিকে অনির্বান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিন্তু মেয়েটির চোখ ছিল ,বাইরে খোলা জানালার দিকে।এবার সব লজ্জা ,ভয় দূরে রেখে অনির্বান বলে উঠলো-

অনির্বান: নমস্কার, আপনার নাম টা কি?
মেয়েটি: আমি,অনেক ক্ষণ থেকে দেখছি,আপনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
অনির্বান: আপনাকে দেখে আমার একজন পুরনো মানুষের কথা খুব মনে পড়ছে তাই।
মেয়েটি: ও ও !আমার নাম মেঘা মিত্র।
আপনার নাম?
অনির্বান: মেঘা !তুমি মেঘা! আমি! আমি সেই অনির্বান রায়।কতদিন পর দেখা হলো । ভালো আছো তুমি?বাড়ির সবাই কেমন আছে? 
মেয়েটি: স্বামী সংসার নিয়ে ভালোই আছি,আর বাড়ির সকলেও ভালো আছে।
অনির্বান: কি করছো এখন?
মেয়েটি:সংসারের হাজারটা কাজ করে নিজের জন্য সময় পাওয়া যায় না।শুধু লেখা লিখি টা চালিয়ে যাচ্ছি।
অনির্বান: আমরা যদি আর একটু সময় দিতাম,তাহলে আমাদের সম্পর্ক টা অন্যরকম হতে পারতো।
মেয়েটি: থাক। পুরনো কথা না বলাই ভালো।
অনির্বান: কেন?কষ্ট হয় বুঝি।
মেয়েটি: না । আমার স্টেশন এসে গেছে। আমাকে নামতে হবে।

                 এই বলে মেয়েটি চোখের জল মুছতে মুছতে নেমে পড়লো।অনির্বান মনে মনে ভাবছে কেন হলো তাঁদের এই হঠাৎ দেখা? দেখা না হলেই ভালো হতো।তারপর অনির্বান চোখের কোণে আসা জল মুছে হেড ফোনটা কানে দিতেই শুনতে পেলো ,রবীন্দ্র নাথের একটা গান-

" সখি ভাবনা কাহারে বলে।
সখি যাতনা কাহারে বলে।
তোমরা যে বলো দিবস রজনী।
ভালোবাসা, ভালোবাসা সখি ভালোবাসা কাহারে কয়।"

Comments

Popular posts from this blog

আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকা - জানুয়ারী সংখ্যা ২০২৪

মাটির শহর - সৌভিক দেবনাথ

কবি বিকাশ ভৌমিকের কবিতা