মহোৎসব (রম্যরচনা) -- অরবিন্দ সরকার

             মহোৎসব
            (রম্যরচনা)
      -- অরবিন্দ সরকার
      বহরমপুর,মুর্শিদাবাদ।


একটি রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা জঙ্গলে পরিপূর্ণ। সেখানে সব চোরেদের বাস। যতোই নামডাকওয়ালা হোক না কেন তারা সবাই এক একটা ডাকাত।
গভীর জঙ্গলে তাদের আরাধ্যা দেবী মাকালী পূজিতা ।এখানে মদ, গাঁজা গুলি, সবাই ভক্ষণ করে‌ন।চুরি করার আগে দলবল এখানে হাঁটু গেড়ে  আরাধনা ক'রে দেবী কালিকার সম্মতিতে ডাকাতির উদ্দেশ্যে রওনা হন।
এইভাবেই ওদের চলে। ক্রমে একদিন ওদের ইচ্ছে হলো জঙ্গলের বাইরে দুর্গোৎসব দেখার। দলবেঁধে সদলবলে পূজো দেখতে বেরিয়ে মদ গাঁজা টেনে মন্দিরে হাজির। মন্দিরের মা মা ধ্বনি ও বাদ্যযন্ত্রের বাদন মন্দির প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে আকাশে বাতাসে মুখরিত। সবাই দেখে যে আগন্তুক জনতা তাদের স্নেহতুল্য সন্তানকে বলি দিচ্ছেন। ডাকাতের দলবলও মদের নেশায় মা মা চিৎকার ও জয়োধ্বনি দিয়ে নিজের ডেরায় ফিরে এলেন। আবার চললো প্রেমময়ী সুরাপান,আর গাঁজায় দম।
সবাই জঙ্গলের নিশ্চুপ চেহারায় বললেন আমরা আজ নিজেরাই দেবী দুর্গার আরাধনা করবো। যেই বলা অমনি  সবাই আবার নেশাভাং খেয়ে কেউ দুর্গা,কেউ সরস্বতী,লক্ষ্মী, গণেশ,কার্ত্তিক,মোষ,ইঁদুর, পেঁচা সেজে দাঁড়িয়ে পড়লেন। একজন পুরোহিত হলেন। তিনি বললেন এবার সন্ধিপূজা,আজ মহাষ্টমী। তাই বলির বিধান দিলেন। একজন ডাকাত পাঁঠা হতে রাজি হলেন! পুরোহিত বললেন এবার বলিদানের সময় হয়েছে। বলিদানের মাধ্যমে এক জনের মাথা অপর একজন বলিদান ক'রে ছেদ করলেন।কাটা মুণ্ডু ছটফট করছে আর অন্য সব ডাকাতদের নেশা ছুটে গেলো।একি হলো সর্ব্বনাশ! যে যেমনে পারলেন ছুট লাগালেন। একজন যে বলিদান করেছেন তিনি মাথাটিকে নদীর জলে ভাসিয়ে দিলেন। সকালবেলায় জঙ্গলে কাঠ কাটতে আসা কাঠুড়িয়ারা দেখে যে, মস্তকহীন দেহ প'ড়ে আছে‌! এই খবরাখবর থানায় গেলে, বড়বাবু গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। এবার পুলিশ মরা লাশের দেহ নাড়াচাড়া ক'রে জানতে চাইলেন গ্রামবাসীর কাছে-- এ ঘটনা কে ঘটিয়েছে?
পুলিশের বড়বাবু একজনকে ঘর থেকে তুলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন ‌। একে চেনো ,এর নাম কি, কোথায় থাকে ও কি করে।
একজন বললেন এ আমার পাড়ার ছ্যার। খুব ভালো ছেলে। সুনাম আছে এখানে ওর।ওর নাম যাদুনন্দন।
একজন দৌড়ে এসে বললো , হ্যাঁ স্যার আমরা একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া শোওয়া করি।
বড়বাবু - তাহলে তুমি বলো এ কে? এর পরিচয় কি! মাথা কেটেছে কে! 
- এর মাথা জন্মাবধি দেখিনি স্যার। একসঙ্গে মদ গাঁজা খাই কিন্তু ওর মুখ দেখি নাই।ওর মুখ আছে ব'লে আমার জানা নাই ‌।
বড়বাবু- মদ গাঁজা খাচ্ছে কোনদিকে,কি ক'রে সেটা তোমাদের নজর নাই।
ডাকাত পাড়ার ছেলেটি-- গাঁজা টানি, মদ খাই , কিন্তু ওর মুখ আমরা কোনদিনও দেখিনি। এ জন্মাবধি মুণ্ডহীন ব্যক্তি।
"আসি যায় গুলি খাই
মাথা কভু দেখি নাই। ‌
যাদুনন্দনকে অদ্যাবধি কেউ চিনতেই পারলেন না?

২৮/০৬/২০২১

      

Comments

Popular posts from this blog

আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকা - জানুয়ারী সংখ্যা ২০২৪

মাটির শহর - সৌভিক দেবনাথ

কবি বিকাশ ভৌমিকের কবিতা