অসমাপ্ত ক্যানভাস - সৌরভ দাস
অসমাপ্ত ক্যানভাস
সৌরভ দাস
হ্যাঁ, আমি নিজের প্রতি এতটা উদাসীন,
হ্যাঁ, আমার জীবনের প্রতি এতটা অনীহা।
জানো কেন?
-এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে তোমার কাছে আমার একটা ছোট্ট জিজ্ঞাসা আছে_
বলতে পারো, ঠিক কতটুকু কষ্টের কান্না চোখ থেকে বেয়ে পড়ার আগে কান্নাগুলো ঢোক গিলে নিলে আমার শরীরটা আরো বেশি বিষাক্ত হবে? আচ্ছা, তোমার মনে পড়ে আমাদের প্রথম দেখার কথা?
কতোই বা বয়স ছিলো তখন আমার? তখন সবে একাদশ শ্রেণীর শেষ সীমান্ত ছুঁই ছুঁই। স্কুল থেকে বন্ধুদের সাথে বাড়ি ফেরার পথে প্রথম তোমার চোখে চোখ পড়েছিল। সেদিন বুঝেছিলাম, প্রথম দেখায় কাউকে এতটাও ভালো লাগতে পারে, যার রেশ আজীবন মনের মাঝে দাগ কেটে যায়।
তারপর থেকে মাঝে মাঝেই স্কুল থেকে আসার সময় আমাদের দেখা হতো, একটু ভয় ভয়ও লাগতো। তারপর যখন দ্বাদশ শ্রেণীতে প্রাইভেট স্যারের কাছে ভর্তি হলাম, প্রথম দিন সেখানে তোমায় দেখে বেশ খুশি হয়েছিলাম জানো! তারপর থেকে আস্তে আস্তে তোমায় আরো একটু ভালো লাগা, ভালো লাগা থেকে আস্তে আস্তে ভালোবাসা। একদিন ভাবলাম, আজ তোমার সাথে কথা বলবো। কিন্তু তুমি কি বলতে চাইবে? _এই কথা ভেবে ভেবে একদিন এক বন্ধুকে দিয়ে প্রথম তোমায় প্রেম নিবেদন। জানতে পারলাম, ততদিনে তুমি অন্য কারো হয়ে গেছো। তবুও আশা ছাড়িনি, কারণ ততদিনে যে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে। তারপর শুরু হলো পাগলের পরব_পড়তে গিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তোমার চোখের গভীরতায় নিজেকে মেলে ধরা। তোমাকে দেখার জন্য আগে আগে পড়তে গিয়ে, তুমি যে জায়গাটায় বসতে, ঠিক তার সোজাসুজির জায়গাটির দখল নেয়া, শুধু তোমাকে মন ভরে দেখার জন্য। শুধু একটাবার কথা বলার জন্য তোমার পিছু নেয়া, তোমার টিউশনের ব্যাচের ঝাপসা গলির অন্ধকারে তোমার জন্য অপেক্ষা করা।
আরো কিছুদিন পর মেসেঞ্জারে শুরু হলো আমাদের কথা বলা, তারপর আস্তে আস্তে কথা গড়িয়ে নামলো হোয়াটসঅ্যাপের ইনবক্সে। তারপর একদিন তোমার কাছেই জানতে পারলাম, তোমার ব্রেকআপের কথা। কেন জানি না, কথাটা শুনে একটু খুশি হয়েও যেনো পুরোপুরি খুশি হতে পারিনি সেদিন। আস্তে আস্তে সব কিছু স্বাভাবিক হতে লাগলো। তারপর বহুবার তোমায় মনের কথাগুলো বলে ফেলেছি হোয়াটসঅ্যাপের ইনবক্সে। কিন্তু তখনো তোমার মনে জায়গা দিতে পারোনি আমাকে। তবুও হাল ছাড়িনি, মনকে কি বেঁধে রাখার সাধ্যি আমার আছে! ২০২০ সাল, শুরু হয় এক মহামারীর প্রকোপ। সবার মনেই একটা আতঙ্ক- একটা ভয়। জানো, তার মধ্যেও একটা অদ্ভুত আনন্দ ছিল আমার মনে, অবশেষে দুই বছরের কঠিন অপেক্ষার পর তুমি তোমার মনের কথাগুলো জানালে আমায়। তারপর মহামারীও আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে থাকে, আর আমাদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসাও বাড়তে থাকে দিন দিন। তুমি তো সেদিন কথা দিয়েছিলে, কখনো ছেড়ে যাবে না আমাকে! তুমি তো বলেছিলে সেদিন, অল্প কিছু উপার্জনে আমরা আমাদের স্বপ্নের কুঁড়েঘর বাঁধবো! _এইভাবে প্রায় 6মাস কেটে গেলো। হঠাৎ একদিন তুমি আমাকে ম্যাসেজ করে জানালে যে, তুমি আমাকে কখনোই তোমার মনে জায়গা দিতে পারোনি। এটা শোনার পর আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। তবুও সেদিন আমি দাঁড়াইনি তোমার পথ আগলে, নির্বাক হয়ে চিরতরে মুক্তি দিয়েছি তোমায়। সেদিন আমি আমার স্বপ্নগুলোকে হারিয়ে যেতে দেখেছি, সব থেকে কাছের মানুষকে দুরে যেতে দেখেছি, সবাই বলে ভালোবাসা নাকি হাঁসতে শেখায়, আমি সেদিন আমার ভালোবাসাকে গভীর রাতে বালিশ ভেজাতে দেখেছি।
তার কিছুদিন পরেই ছিল সরস্বতী পুজো, ভেবেছিলাম সেইদিন হয়তো সব কিছু ঠিক করে নেবে তুমি আবার, ভেবেছিলাম সেদিন হয়তো একবার তুমি ডাকবে আমায়। কিন্তু আমার যে ভাবনাটাই বৃথা, কিছুই হলোনা সেদিন। আস্তে আস্তে অনেকটা বদলে গেলে তুমি। রাস্তায় দেখলেও কথা না বলে অচেনা মানুষের মতো মুখ ফিরিয়ে চলে গেছো। কতবার তোমার কাছে ফিরে যেতে চেয়েছি। কিন্তু তুমি! তোমার মুখে তো তখন একটাই কথা, 'আমার মনে আর কোনো স্থান নেই তোমার জন্য। তুমি যদি বন্ধু হয়ে থাকতে চাও তো থাকতে পারো।'
জানো, এই পৃথিবীতে আত্নহত্যার পর দেহটাকে ময়না তদন্ত করা হয়,
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হয় মৃত দেহটাকে। কিন্তু, এই নশ্বর পৃথিবীতে আত্না-হত্যার জন্য কোন ময়না তদন্ত করা হয় না, দেখা হয় না এসব মৃত আত্নাগুলোকে। যদিও,আত্নহত্যার চেয়ে আত্না-হত্যার পরিমানটা অনেক বেশি।
যদি কোন দিন এসব আত্নাকে ময়না তদন্ত করার কোন ব্যবস্থা হতো, তবে শুধু পাওয়া যেতো, পুড়ে যাওয়া কিংবা রক্তাক্ত একটা হৃদয়! তবুও আমাদের গল্পের অসম্পূর্ণ পরিণতিটা, আজও আমার ভীষন প্রিয়। একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার আসায় অপেক্ষা করে যাচ্ছি দিনের পর দিন- রাতের পর রাত। আচ্ছা, বিচ্ছেদের পর কি সত্যিই বন্ধু হয়ে থাকা যায়?
বেদনাতুর অনুভূতি খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। অপূর্ব লেখনীর নিদর্শন।
ReplyDeleteঅপূর্ব
ReplyDeleteঅনুভূতির অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ। নিঙড়ানো বেদনার দুনিয়ায় যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম কিছুটা মুহূর্ত। এইরকম মুহূর্তগুলো প্রতিটা মানুষেরই যেন খুবই কাছ থেকে দেখা! অনবদ্য উপস্থাপন। ♥️♥️♥️
ReplyDeleteঅসম্ভব সুন্দর লাগলো। ♥️
ReplyDeleteঅনবদ্য! ♥️ কৈশোরের স্মৃতিগুলি মনে পড়ে গেলো। ♥️♥️♥️
ReplyDeleteDarun laglo re ♥️♥️♥️♥️
ReplyDeleteWow bro❤️
ReplyDeleteস্কুলজীবনের স্মৃতিবিজরিত দিনগুলি খুব ভাবে মনে পড়ে গেলো। খুব ভালো লাগলো। ����
ReplyDeleteঅতীতের স্মৃতিচারণ ভাই।🙂🙂♥️ ♥️
ReplyDeleteDarun laglo re vai..🙂♥️♥️ "আচ্ছা! বিচ্ছেদের পর কি সত্যিই বন্ধু হয়ে থাকা যায়?" দারুন লাগলো রে, দারুন।🙂🙂♥️♥️👍
ReplyDeleteপুরনো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে এক মুহূর্তের জন্য ভেসে উঠলো। 😭 চোখে জল এসে গেলো। 😭😭♥️♥️♥️♥️
ReplyDeleteবাহ! সুন্দর হয়েছে। 👍👍
ReplyDeleteঅসাধারণ লাগলো ভাই।🙏👍
ReplyDeleteচালিয়ে যা ভাই।👍 দারুন লিখেছিস। কিছু স্মৃতি মনে পরে গেলো। 😔
ReplyDeleteশেয়ার কি করে করবো ভাই? বুঝতে পারছি নাতো! লিখে যা, দারুন লাগলো 👍
ReplyDeleteআমিও শেয়ার করতে পারছিনা। দুর্দান্ত লিখেছিস রে ❤️❤️❤️❤️
ReplyDeleteভাই এটা কি তোর লাইফ স্টোরি? 🤔🤔🤔🤔 কিন্তু সুন্দর ভাবে লিখলি রে, বেশ লাগলো।। 🙂🙂🙂
ReplyDeleteAwesome ❤️
ReplyDeleteAwesome ❤️
ReplyDelete