আমরা ভবিষ্যৎ হতে পারলাম না - অভিজিৎ সাহা

আমরা ভবিষ্যৎ হতে পারলাম না 

         অভিজিৎ সাহা 

        সেই কবেই পূর্ণিমার উজলা চাঁদ হয়ে সোহেলি সেজে আমার মস্তিষ্ক থেকে রক্তক্ষরণ বইয়ে দিয়েছিলে তা এখনো ডায়েরীর লাইনটানা পাতায় লেপটে আছে।  তুমি তখন বড় অদ্ভুদ ছিলে জানোতো_ আমার সেগুলো এখনো মনে পড়ে- ছুতো কথায় হাসতে, তারপর আমি চরম বকলে মিশমিসিয়ে কান্না দিতে। রাগে তোমার সমস্ত শরীর যখন লালবর্ণ নিত আমি তখন তোমার ঠোঁটের কোণে আলতো করে চুমু দিতাম তখন তুমি আবার ভাব জোগাতে।

জানলে সেদিনের সেই তুমি মেখে আজও আমি দিন টানি ......... 

তোমার সকল পছন্দের জিনিসগুলিকে শিরদাঁড়াতে লাগিয়ে যত্ন করে আমি মুখস্থ করতাম। উদাসীনতার অভিমানকে আমি বড়ই তৃপ্তি নিয়ে সাজাতাম। তুমি খুব মিশুকের সাথে যেসব আদর গুলি করে দিতে সেগুলি আমার হৃদয়ের পাঁজরগুলিকে ভেঙে চূর্ণ করতো কেবল আর সেখান থেকে অনেক লোভনীয় ভালোবাসা কুড়িয়ে কুড়িয়ে সিন্ধুকে জমা করতাম। আমি ত ওমন ভালোবাসায় বড় লোভী ছিলাম সেকথা তুমি মানতে, ....

আজও জানলে সেই সমুদ্রের অচিন পাখিকে আসতে দেখেছি একাকী, নিরালায়_ যেখানে আমি তুমি এক হয়ে মিশতাম।

এটা মনে পড়ে তোমায়, ঘন বনানীর গায়ে বাবুই এর বাঁসার নিচে নীলকন্ঠ ফুলের চাদরে আমরা দুজনে যখন কোলে মাথা রেখে কথা দিয়েছিলাম আমরা পরস্পর এক হবো ....?

সেদিনের দিনগুলি অতীত হলেও আজও বয়ে চলে আমার অযান্ত্রিক শরীরের রক্তকোষে। 

বারবার হারিয়ে যায় অতীত গল্পটার কাছে, আজ জানলে তো রাতের পর রাত একা হয়ে যায়; ঘড়িটার কাঁটার টিকটিক শব্দ আমাকে অস্থির করে তোলে, বালিশের ওপরে নয় নীচেই শোয়া অভ্যাস করেছিলাম বেস কয়েকদিন। তবুও জানলে সকালের দরজা খুলতাম অজস্র আলো নিয়ে যাতে বাড়ির কেউ আমার রাতজাগা মুহূর্তগুলি ধরতে না পারে! ....

একটা ছোট্ট অভিমানে আমরা দুজন যখন কথা বলা স্তব্ধ করেছিলাম, আমি ভেবেই নিয়েছিলাম আজ হয়তো তুমি ই ভুলটা বুঝে আবার আগের মতো ফিরে আসবে কিন্তু 'সেই আজ আর আমার হয়ে আসেনি ....

কি ছিল ভুল সেটার তরঙ্গ হয়ে তদন্ত করি রোজ একবার করে কিন্তু এতটুকুও ভুলের আঁচড় পায়নি। তুমি বলেছিলে নেয় সারাটা জনম আমরা এমনভাবে জড়িয়ে থাকবো প্রেমের অত্যাচারে যেমনটা মধু-মৌমাছির সম্পর্কে উপসংহার হয়। কিন্তু ...........

সেদিনের ওই আলতো অভিমানে যে সম্পর্ক চির ধরে যায় আর জোড়া লাগাতে আমরা একে অপরে কেউ এগিয়ে আসিনি, তাই না ?

কয়েকদিন হল সেই আগের বুকের যন্ত্রণাটা বেড়েই চলেছে। ডাক্তার বলেছে ঘুম ঠিকমতো হলে আমি সেড়ে উঠবো; কিন্তু ডাক্তার কাকু জানেই না যে আমার ছিন্ন হওয়া বুকের ব্যাথায় কখনো ঘুম আসবার নয়।  বেশ কয়েকমাস আগেই অনেক করে তোমার ঠিকানাটা  খুঁজেছি তবুও তোমার কাছে পৌঁছাতে পারিনি। তুমি বোধ হয় ভবিষ্যত পেয়ে গেছ, ঠিকানা বদলেছ এমনি করেই তাই আমার খোঁজ আর রাখতে পারোনি। 

কিন্তু, আমি কি বোকা দেখো এখনো সেই কথা দেওয়া ভবিষ্যতটার পেছনে পড়ে আছি, এখনো ঠিক আগের মতো করে পড়ে রয়েছি .......।।