উপসর্গ (ছোটগল্প) -- অরবিন্দ সরকার
২৮/০৭/২০২১
উপসর্গ
(ছোটগল্প)
-- অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ।
গ্রামের নাম জোতকমল। জোতদারদের বাস এখানে, চারিদিকে ফসলের জমির মাঝে এই গ্রাম।একটি পাড়া আছে শেষপ্রান্তে মজুরশ্রেণীর বাস সেখানে।জোতদারেরা ওইসব বাড়িতে ওঠাবসা করে একবিঘা,দুইবিঘার ফসলের বিনিময়ে। ওদের তালের তাড়ি,পচাই মদের ভাগীদার এরা। এক জোতদার হৃষিকেশ সামন্ত তার ভাগীদারের বাড়ীর সব দায়িত্ব নিয়েছেন। ভাগীদার মোটাসোটা বুদ্ধি- তেঁতুল কোনাই। তেঁতুলের বিয়ের ক'নে দেখা ও বিয়ে দেওয়া তিনি সম্পন্ন করেছেন।মেয়ের বাবা ,মা ও মেয়ের কারোরই মত ছিলো না। মোড়ল মেয়ের বাপ মাকে টাকা দিয়ে রাজী করিয়েছেন।আর মেয়েকে সোনার গয়না, শাড়ি,দেব এই সব বলে ফুসলিয়ে বিয়েটা পার করেছেন।সোনার নাম শুনলেই মেয়েদের মন নেচে ওঠে।ওতে ওদের পেট ভরে না! আর চাই না বা আর নেবো না একথা শুনতে পাওয়া যায় না।
জোতদারদের ধর্মই হচ্ছে এখানে উপপত্নী হিসেবে এদের ব্যবহার করা। এতে উনাদের লজ্জাবোধ কম। নিজেদের স্ত্রীর বাড়ীর বাইরে বেরানো নিষেধ।তারা রান্না বান্না খাওয়া দাওয়া শেষে শুয়ে শুয়ে পান চিবোতে থাকেন।আর পানেরবাটায় পিক ফেলেন। স্বামী সোহাগ বস্তুটির সঙ্গে তাদের পরিচয় কম। স্বামী দেবতা যে উচ্ছিষ্ট ভোজন করেন সেটা ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না। গচ্ছিত পত্নী বাড়িতে ভালো শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওদের স্বামীর চেয়ে এগুলোই পছন্দ। আলমারি ভর্তি শাড়ি গহনায় সকাল সন্ধ্যা ধূপ প্রদীপ জ্বালিয়ে আরাধনা করেন,যাতে তার আরো ধন বাড়ে। পরবর্তী প্রজন্ম জমিদার হবে আর এইভাবে কাল অতিবাহিত হবে।
হৃষিকেশের রাত্রিবেলা তেঁতুলের বৌয়ের কথা মনে পড়লো। চুপিচুপি সদর দিয়ে বেরিয়ে সোজা তেঁতুলের চালাঘরে। তেঁতুলের বৌতো তার -ই সম্পত্তি। কথা দিয়ে রাজী করিয়ে এনেছেন।নেশা মনের ব্যাপার! নেশা বাড়িতে ভালো লাগে না তাই বাইরে নজর পড়ে।
হৃষিকেশ দেখলো চেড়াক্ জ্বলছে মিটিমিটি, আবছা আলোয় তেঁতুল আর তেঁতুলের বৌ কোনটি চিনতে পারছে না।এক চাদরে দুজনেই শুয়ে আছে। মোড়ল গিয়ে পায়ের তলায় চিমটি কেটেছে। তেঁতুল চিৎকার করে উঠলো ওগো মাগো আমাকে কালসাপে কামড়ালো গো। যেই চিৎকার অমনি হৃষিকেশ দে ছুট! ছুটতে গিয়ে পা হড়কে একেবারে নয়নজলিতে। ওখানে শুয়োরেরা কাদা মাখামাখি করে। ওখানে প'ড়ে উঠে বাড়ি ফিরে এসে একেবারে বৌয়ের সামনে।বৌ স্বামীর অপেক্ষায় ছিলেন।
হৃষিকেশের বৌয়ের চিৎকার ভূউউউউউত।এই বলেই মূর্ছা গেলেন। বাড়ীর সবাই আবছা আলোয় ভূতটাকে দেখলেন।
হৃষিকেশের মা শুধু অস্ফুট স্বরে বললেন- বাবা হৃষি- পদ্মপুকুর ছেড়ে পানা পুকুরে কেন গেলি? শেষে নোংরা হয়ে এলি!
Comments
Post a Comment