পিতৃমাতৃদিবস ( রম্যরচনা) - অরবিন্দ সরকার

২৫/০৭/২০২১

              "পিতৃমাতৃদিবস"
                 ( রম্যরচনা)
          -- অরবিন্দ সরকার
          বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ।

পঞ্চায়েত ভবনের মাঠ ।চকদিয়ারা জনকল্যান সেবা সমিতি আজকে পিতৃমাতৃদিবসে  বাপ- মায়ের একদিন ক'রে ছাড়বে! শ্রাদ্ধ ফুল চন্দন দিয়ে সভা।
বিড়বিড় করে চলেছেন মান্নান হোসেন। এমন সময় ওর বাবা মানোয়ার হাজির - বেটা কি বলছিস বিড়বিড় করে তখন থেকেই।
মান্নান হতচকিত হয়ে শুরু করলেন বাপ্ তুমি আমাকে পৃথিবীতে এনেছো । তোমার দায়িত্ব আমাকে লালন পালন করার। আমি জন্মানোর পরপরই তুমি মাকে তালাক্ দিয়েছো।তারপর ক্রমান্বয়ে চার পাঁচটি লিক্যা করেছো । সৎমায়ের হাতে আমি বড়ো হয়েছি।সে কি রকম স্নেহ ভালবাসা দিয়েছেন , তুমি খোঁজ নাওনি। তুমি সংসারের সংখ্যা বৃদ্ধি করেই চলেছো। সংসার চালাবার ক্ষমতা নাই তো বিয়ে করছো কেন? আর আজ সংসারের জনসংখ্যা চোদ্দো জন।তাও তো মাকে তালাক না দিলে পনের হতাম।মা ও যেন কেমন! সে আবার বিয়ে করে সংসার পেতেছে। আমাকে ভুলে গেছে। 
আজ পিতৃমাতৃদিবস।মাইক যদি পাই তোমাদের কুকম্ম সব বলবো।
বিকেলে মাইকে আজান বেজে উঠলো ,আজানের পর ঘোষনা- ভাইসব আজ সভায় সকলে উপস্থিত হবেন।মায়েরা সকলেই আসবেন।আজ পিতৃমাতৃদিবস।
সবাই হাজির - অঞ্চলের মোড়লকে সভাপতি করা হলো। সভাপতি হাজী ওসমান গনি মাইকে একে একে বলতে বললেন।সবার বলার শেষে মানোয়ার ব'লে উঠলেন - আমার কিছু বলার আছে। আমি মাইকে বলবো।
সভাপতি মাইকটি তার হাতে দিয়ে বললেন- ভাইসব এবার মূল্যবান না বলা কথাগুলো আমাদের মানোয়ার বলবে।
মানোয়ার মাইক নিয়ে শুরু করলেন - সবাই জানেন আজ মাতৃপিতৃদিবস। যাদের বাপ আছে মা নেই,আর মা আছে বাপ নেই , তাদের আজ কি দিবস? আমার বাপ আমার জন্ম দিয়েই মাকে তাড়িয়ে আবার লিক্যা মানে বিয়ে করেছেন,মা সেও বাধ্য হয়ে একটা ডাল আঁকড়ে ধরে নিয়েছেন। তাহলে আমি আজ কি দিবস পালন করবো।মা বাবা মারা গেলে তাদের জন্য এইসব দিবস মানানসই কিন্তু গাছ থেকে ডাল ছাঁটাই করে সেই ডাল অন্যবাড়ীর টবে শোভা পেলে ফলগুলো ভূতেই খাবে। সেই ফল আমি! ডাল গেলো ফেলে,আর গাছ ঝুড়ি নামিয়ে নামিয়ে কতো গাছ সৃষ্টি করছেন।আর আমার মতো অসংখ্য কলমের চারার ফল উৎপাদন হচ্ছে। তাই জীব দিয়েছেন যিনি আহার দেবেন তিনি।বাপ জন্ম দিয়েছে তার দায়িত্ব আহার জোগান দেওয়া। পরিবারের ভরন পোষনের দায়মুক্ত হতে তিনি পারেন না।বাপ দিকভ্রান্ত হয়ে নিজের আনন্দ লাভের আশায় আমাদের মা হারা হতে হয়েছে।তাই এই সভা সিদ্ধান্ত নিক্ সংসার ছোট হোক,বাবার বোঝা যেন বেশি না হয়।আর মায়েরা ঐ এক জায়গায় স্থির থেকে যেতে পারেন।বাপ মা সন্তান অভিন্ন।বাবা মহীরুহ,মা তার শোভাবর্ধনকারী ফুল আর সন্তান ফল। আশা করি যা বললাম আপনারা বুঝতে পারলেন।
আর আজকের সভাপতি সাহেব হাজীমানুষ , অনেক বিষয়সম্পত্তির মালিক।তেনার খাবার খেয়েও ফুরাবে না।তিনার পাঁচ ছটি বৌ ঘরে আছে,পর কাউকে করেন নি।তালাক দেননি। বাড়ীতে অনেক কাজের লোককে দরকার, উনি ইচ্ছে করলে আরো বিয়ে করতে পারেন। অনেক না খেতে পাওয়া সংসারের মেয়ে যদি আনেন তাহলে লোকে ধন্য ধন্য বলবেন।
সভাপতি সাহেব মাইক নিয়ে সভা শেষের ঘোষণা করার আগে বললেন এই ছেলে আমার মনের কথা বলেছে। সত্যিই আমি ক্ষুধার্ত। আমার আরও সাদি করার প্রয়োজন আছে।সালাম দিয়ে সভা শেষ করছি।পিতৃমাতৃ উদ্ধার দিবস সফল হোক।

Comments

Popular posts from this blog

আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকা - জানুয়ারী সংখ্যা ২০২৪

মাটির শহর - সৌভিক দেবনাথ

কবি বিকাশ ভৌমিকের কবিতা