আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার ওয়েব ম্যাগাজিন সংখ্যা - ১
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার ওয়েব ম্যাগাজিন সংখ্যা - ১
অভিজিৎ রায় (পলতা, উত্তর চব্বিশ পরগনা)
প্রকাশ তারিখ - ১৯ জুলাই ২০২১
সম্পাদনায় : সোমা বিশ্বাস
উপদেষ্টা : সোমনাথ নাগ
সহযোগিতায় : সৌভিক দেবনাথ, বাপি শেখ, সন্তু প্রামাণিক , সুদেষ্ণা দাস, রাজু দত্ত
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার ওয়েব ম্যাগাজিন সংখ্যা প্রকাশিত হলো। সকল কবি ও সাহিত্যিক ও পাঠক-পাঠিকা বন্ধুকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
- সোমা বিশ্বাস
লেখা পাঠানোর ঠিকানা - aalordishasahityapotrika@gmail.com
ওয়েবসাইট - aalordishasahityapotrika.blogspot.com
কবিতা :
শিরোনাম - বিয়ের সেই মন্ত্র
কলমে - দেবারতি গুহ সামন্ত
বিয়ের পবিত্র মন্ত্রোচ্চারণ আজও কানে বাজে,
"যদিদং হৃদয়ং তব,তদস্তু হৃদয়ং মম" তে বয়ে যায় প্রেমের ফল্গুধারা।
শুভদৃষ্টিতে থাকে চার চোখ মিলনের অবিস্মরণীয় মুহুর্ত,
মালা বদলে একে অন্যের কাছে করতে হয় মাথা নত।
কন্যা সম্প্রদানে সবচেয়ে মুল্যবান সম্পদ,আদরের ধন,প্রাণপ্রিয় রাজকন্যাকে,
সারাজীবনের মত একটি ছেলের হাতে তুলে দেন মেয়েটির প্রথম সুপারহিরো,বাবা।
অগ্নিকে সাক্ষী রেখে হয় ভাইয়ের হাতের খইদান,
সাত পাকে ঘুরতে ঘুরতে প্রত্যেকবার একে অন্যের পাশে থাকার নেয় শপথ।
অবশেষে আসে সেই সময়,যে রীতি ছাড়া পুরো বিয়েটাই অসম্পূর্ণ,
স্বামীর হাতের লাল সিঁদুরে রঙিন হয় তার সিঁথি।
রঞ্জিত সিমান্তের অল্প গুঁড়ো সিঁদুর এসে পড়ে নাকে,
অপূর্ব লাগে লজ্জাবস্ত্রয় ঢাকা নতুন কনেকে।
বিয়ের মঙ্গলঘট আর দুজনের গাঁটছড়ায় লেগে থাকে প্রতিশ্রুতি,
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ নবদম্পতি নেয় একে অন্যকে রক্ষা করার অঙ্গীকার।
বাবার রাজকন্যা থেকে অন্য একজনের গৃহিনী হওয়ার সফর অনেকটা লম্বা,কখনও বা কাঁটাযুক্ত,
প্রতি পদক্ষেপে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন মেয়েটি তবু ভুলতে পারে না বিয়ের সেই মায়ায় ভরা দিনটি।
কেমন যেন স্বপ্নের মতো মনে হয়,ঘোরলাগা এক রঙিন জগত,
স্বামীর দেওয়া সিঁদুরে এক ঝটকায় বদলে যাওয়া জীবনটায় ধীরে ধীরে হয়ে পড়ে অভ্যস্ত।
অপমান,অবহেলা,লান্ছনায় মনটা যখন বিষাদে ভরে ওঠে,
ঠিক তখনই কানে কানে বেজে ওঠে বিয়ের মন্ত্র,
"যদিদং হৃদয়ং তব,তদস্তু হৃদয়ং মম।"
স্বামীর প্রতি শত ঘৃণা থাকা সত্ত্বেও ভেদ করতে পারে না এতদিনকার সাংসারিক অভ্যেস,
নাকি শুধুই অভ্যেস নয়,কোথাও একটু হলেও মিশে আছে সোহাগের স্পর্শ।
লাল রঙের সিঁদুর বদলে গিয়ে যখন রক্তের লাল রঙ করে ধারণ,
কোথাও না কোথাও সেই লাল রঙের একটুকরো অংশ মিশে যায় গালের গোলাপি লালিমায়।
আখিঁপাতে ভেসে থাকা বিয়ের স্বপ্নে মশগুল একটি মেয়ে,
বিয়ের পর বদলে যেতে থাকে,আটকে পড়ে নিয়মের গন্ডীতে।
তবু বুকে যত্নের মোড়কে মুড়িয়ে রাখে বিয়ের মন্ত্রগুলিকে,
রাতজাগা কান্নাঝরা রাতে সেই মন্ত্রগুলো দিয়ে বানায় তার স্মৃতিসৌধ,তাসের তাজমহল।
শিরোনাম - শব্দের মেলা/ঝামেলা
কলমে - ধীরেন্দ্রনাথ চৌধুরী
কে যেন বেশ বলেছিলো, শব্দে শব্দ জুড়ে দিলে.....
এক্কেবারে সোজা কবি হবে, ঢুকে যাবে কবির মিছিলে !
আরো যেন বলেছিল কিছু, অর্থ তার থাক, নাই থাক.....
কেউ এসে পেটাবেনা জেনো,
নিজেই পিটিও নিজ ঢাক!
বিষয়বস্তু? কেন ভাবো ? বেছে নিও উল্টাপাল্টা দিক......
যুদ্ধেতে না গেলেও হবে, তুমিই তো সাচ্চা সৈনিক !
ম্যাগাজিন, সেও অনেক আছে,
লেখা দিয়ে ভরে নাতো পাতা.....
তুমিই উদ্ধার করো তাকে, হোকনা লেখার মান যা-তা !
এছাড়াও আরেকটা আছে, লিখে তুমি খুব পাবে সুখ.....
লাইট, কমেন্ট ভালো পাবে,
সবারই প্রিয় ফেসবুক।
আমিও তো সেভাবেই লিখি, যা মনে আসে প্রতিদিন......
নিজেই বুঝিনা তার মানে, সম্রাট, মুকুট-বিহীন!
বন্যা এসেছে আজ দেশে, কবিতে কবিতে ছড়াছড়ি.....
গাঁয়েতে বলেনা, তাই আপনি মোড়ল,
রাজ পোষাক ধার করে পরি!
শিরোনাম - স্বপ্নভঙ্গ
কলমে - সৌভিক দেবনাথ।
শুধু তুমি চাইলেই,
শুধু তুমি চাইলেই একটা মধ্যবিত্ত প্রেমের গল্প হতে পারতো আমাদের।
না হয় লাল কৃষ্ণচূড়া ফুল কিংবা রোদেলা বিকেল,
এসব কোনটাই নেই আমার নিয়ন্ত্রণে।
তবে আমার একটা আমি আছে, একটা মধ্যবিত্ত-আমি,
যে রোজ তিনবেলা তোমায় মন খুলে ভালোবাসতে পারতো,
কিংবা একটা রজনীগন্ধার স্টিক হাতে তোমায় প্রেম নিবেদন করতে পারতো।
ভালোবাসা জমাতে পারতো একটা লাল টকটকে শাড়িতে,
কিংবা পাঁচ টাকার সিঁদুরের কৌটোয় আর বিশ টাকার আলতার শিশিতে।
দু’জোড়া আশাবাদী চোখের পবিত্র জলের পবিত্র হাসিতে,
যে তোমায় দিতে পারতো বসন্তরঙা একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া।
বিশ্বাস করো,
শুধু তুমি চাইলেই আমাদের একটা মধ্যবিত্ত প্রেমের গল্প হতে পারতো।
চোখে লেপ্টে থাকা কিছু স্বপ্ন নিয়ে না হয়
এক ছাতার নিচে জড়াজড়ি করে হেঁটে যেতাম
বৃষ্টিমাখা পথ।
স্বপ্ন'?
এই স্বপ্ন কেনা-বেচার বাজারেও আমি স্বপ্ন দেখেছি সারাক্ষণ,
বিভোর হয়েছি অগণিত বার।
কিন্তু তুমি বড্ড বেশি দামি,
আর দামি স্বপ্ন দেখতে অনেক টাকা লাগে।
আমার ময়লা টাকার নোনতা গন্ধ বার বার আমায় মনে করিয়ে দেয়,
আমি একটা মধ্যবিত্ত!
না হলে তো একদিন আমিও তোমার যত্নশীল প্রেমিক হতে চেয়েছিলাম, বন্দুকের গুলির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত জালিয়ান-ওয়ালাবাগের দেওয়াল গুলোর মত তোমার মনে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে সাহসী প্রেমিক হতে চেয়েছিলাম,
মধ্যবিত্ত প্রেমিক।
বেলা শেষে তুমি ফোঁটা পদ্মের মতো শিশির ভেজা অপ্সরী,
আর আমি সৃষ্টিছাড়া; ধূসর আমার শহর,
তিন টাকার ওই চায়েই আমার স্বর্গ সুখ।
ছারপোকাদের সঙ্গে এক বিছানায় স্বপ্ন দেখি,
ধুলো জমা-ছেড়াফাটা তাবুর মতো জীর্ণ বুক পকেটে
তোমায় বাঁধার স্বপ্ন পুষি,
এটাই বা কম কিসে?
বিশ্বাস করো, আমি তোমার স্বপ্নের প্রেমিক হয়ে উঠতে পারিনি। প্রেমের উপন্যাসে হিট হয়ে যাওয়া নায়ক আমি হতে পারিনি তোমার।
মহাপুরুষদের শ্লোগান মিছিলে পদপৃষ্ট হয়ে গেছে আমার মধ্যবিত্ত বুকের একদলা মাংসপিন্ডটা।
শুধু তুমি চাইলেই আমাদের একটা মধ্যবিত্ত প্রেমের গল্প হতে পারতো_
কিন্তু তুমি তো শুধুই স্বপ্ন আমার,
বাস্তবে তো তুমি কোন মহাপুরুষের অর্ধাঙ্গিনী।
তাই হয়তো আমাদের মধ্যবিত্ত প্রেমটা ঠিক জমে উঠলো না।
শিরোনাম - রাজধানীর রাজনীতি
কলমে - অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর,মুর্শিদাবাদ
অট্টালিকার জঙ্গলে ঘাস ছাড়া ভূমি,
ধূলোবালি সব ঢাকা মাঝে ম্যানহোল,
নিকাশির তথৈবচ বৃষ্টিতে কল্লোল,
নৌকা মাছ দরিয়ায় ভাসমান জমি।
মানুষের মতিবন্দী, চিড়িয়াখানায়,
নেতামন্ত্রী তোতাপাখী গিনিপিগ রয়,
পূবের গতিপ্রকৃতি পশ্চিমে বয়,
রাম জন্মানোর আগে রামায়ণ গায়।
মিছিলের লেজ দেখে বাঁদরের মাপ,
স্তব্ধ গতিপ্রকৃতির আকুল মিনতি,
ইতিহাসে স্থান নিয়ে মণীষীর স্তুতি,
রাজা ফকিরের মূল্য চূর্ণমনস্তাপ।
পশুপাখি বিচরন মানুষের সঙ্গে,
ব্রিগেডের ময়দানে চিন্তাশীল বঙ্গে।
শিরোনাম - মাণিক
কলমে - কিংশুক সাঁই
উদ্ধত অস্ত্র নয়, চোখও হাতিয়ার হয়ে ওঠে কখনও কখনও,
আকাশের মতো ব্যপ্তি নিয়ে এলিয়ে পড়ে মাটির বুকে
ঠিক যেভাবে দশমীর সিঁদুরখেলার মতো যেমন সিঁদুরের বিরহ অথচ উল্লাস...
সমুদ্রের মতো গভীর হতে হলে বুকের ভেতর খুঁড়তে জানতে হয় গর্ত,
ঢেউ এলে যেমন দুকূলে প্লাবন তেমনই ফেনার মতো উথলে ওঠে অন্তরাত্মা,
তারপর গলাম টেনে তাকে সমুদ্রতট থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয় ফের গভীরতায়...
শুধুমাত্র তারাই গর্ব করে কাহিনী বলতে বসে পৃথিবীকে,
যারা সমুদ্র বা নদী নয় - একটা স্বচ্ছ পুষ্করিণী গড়তে পেরেছে বুকের মধ্যে
ইচ্ছে হলে জ্যোৎস্নায় ভিজতে ভিজতে পাড়ে এসে বসা যায় অথবা
স্বচ্ছন্দে গলা ডুব দিয়ে শরীর ভেজানো যায় অবলীলায়...
শিরোনাম - অস্থিরতা
কলমে - মীর আবদুর রশিদ
কেহ কোটিপতি কেহ আবার শূণ্য
কেহ করে পাপ কেহ করে পূণ্য।
কেহ খেতে পায় কেউ অনাহারী
কেহ থাকে ঝুপড়ী ঘরে কেউ পাকা বাড়ি।
কেহ থাকে ইত্যনুসারে কেউ অনাদুরি
কেহ পড়ে স্বর্ণ কেউ কাচের চুড়ি।
কামার কুমার কুলী আরও আছে ঋষি
কেহ করে হিংসা কেহ আবার খুশি।
কেহ থাকে গাছ তলা কেহ উপর তলা
কেহ আছে সুখে কারো বেশি জ্বালা।
কারও আনন্দ ভোগে কেহ পায় ত্যাগে।
পর উপহাসে আবার কারো কষ্ট লাগে।
দুর্নীতিতে কেউ জেলে কেউ সততা
অনেকই ভুগেন নানান অস্থিরতা
কারো মুখে হাসি ফোটে দিবা-নিশি
কারো ভাঙ্গে ঘর কেউ করে রেষারেষি।।
শিরোনাম - পিছুটান
কলমে - স্বপন গায়েন
পিছুটান আছে বলেই মানুষ আজও বেঁচে আছে
কঠিন সময়কে বুকে জড়িয়ে আছে চিরকালের জন্যে
রোদ মাখা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঘরে ফেরে সব্বাই।
পিছুটান আছে বলেই মানুষ মরতে গিয়েও মরতে পারে না
জীবনের লড়াইটা সঙ্গী করে বার বার ঘরে ফিরে আসে
জলপ্রপাতের শব্দে হৃদয় দুয়ার খুলে যায় পিছুটানের তাগিদে।
পরিবার বড়ই মায়াময় ভালোবাসার সংসার -
স্ত্রী সন্তান কিংবা আত্মীয়দের অমর বন্ধনেই বেঁচে থাকে মানুষ
ভালোবাসার মোহরকুঞ্জে আজও জীবনটা তাই অনেক রঙিন।
আষাঢ়ের মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরে অবিরাম ধারায় ...
পিছুটানহীন মানুষ আজও খুঁজে বেড়ায় স্মৃতির পাতার কোলাজ
শৈশবের বারান্দায় উঁকি দেয় ফেলা আসা ধূসর রোদ্দুর।
পাখিদের কলতান শুনে ফিরে তাকায় তার মাটির বাড়ির দিকে
আজও ঝরে যাওয়া বকুলের গন্ধে ভরে ওঠে হৃদয়ের উদ্যান
পিছুটান আছে বলেই মাটির পৃথিবী এতো অপরূপ মায়াময়।
শিরোনাম - কল্পনা শক্তির জোর
কলমে- অরবিন্দ মাজী
১৩/০৭/২০২১
কল্পনার শক্তিটা না থাকলে পরেই
আবেগে মর্চা পড়তে থাকে,
এই শক্তির জোরেই সকল লেখকরা
নিজেদের মনের জোর রাখে।
এই শক্তির সাহায্যে অনেকে হয়েছে
কবি, গল্পলেখক, সাহিত্যিক,
চিত্রকল্প নির্মাণ যদি করতে দরকার
হয়, এই শক্তি থাকাটাই ঠিক।
বিজ্ঞানের কাজকর্ম করতেও লাগে
কল্পনা শক্তি মনের ভেতর,
মহাকাশ বিজ্ঞানিরা ভাবেন কেবল
কেমনে তৈরী হবে চাঁদে ঘর।
কল্পনা শক্তির জোরেই হয়েছে আজ
অনেক নোবেল জয়ী মানুষ,
এই শক্তিটা থাকে যদি মনের ভেতরে
সনদ পেতে লাগে নাকো ঘুষ।
শিরোনাম - মূর্খ যদি মন্ত্রী হয়
কলমে - অশোক কুমার ঠাকুর
মূর্খ যদি মন্ত্রী হয়,,, দেশের ভিবিষ্যৎ?
কোথায় যাবে জ্ঞানী গুণী বিজ্ঞানী ও সৎ?
থাকবেনা আর আলোর রেশ
অন্ধকারে ডুববে দেশ
বিশ্ববাসী দেখবে ভারত, দুর্নীতির পর্বত!
লক্ষ জ্ঞানীর মাথার উপর বসেন যে এক মন্ত্রী
যে সে কথা নয় যে তা, সে যে আলোকতন্ত্রী
মূর্খ যদি দেখায় পথ
পঙ্কে ডুবে চলার রথ
যন্ত্র বাহন থমকে দাঁড়ায়, কাজ ভুলে যায় যন্ত্রী!
শিরোনাম - বন্দী
কলমে - সুজনা
হাতে নিয়ে বসে আছি ! কার ঝুলি ভরে দিতে ভালোবাসায় ?
তুমি তো ব্যাস্ত সখী নিজের ভাবনায় ! সময় দিতে সময়ইবা কোথায় ?
ইতিহাস বিছিয়ে রাখা অতিরিক্ত ভৌগলিক গুলিয়ে ফেলে
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সীমানা ছাড়িয়ে
অতীতের কূপে হারাই ; আর তোমার অপেক্ষায় থাকি -------
তুমি তো ব্যাস্ত সখী নিজেকে সামলাতেই !
সামাল দিতে কিছুই তো নেই
স্থিত সরোবরে ।
নিভৃতে একাকি রসে স্তূপাকার সত্ত্বা সাজাই ,
নিরন্তর অতিক্রম করে নিজেকে ; নিজেরই খুঁজি ঠাঁই!
তোমাকে পাওয়া আমার
তোমাকে চাওয়া আমার
হাতে নিয়ে বসে থাকি নদী পথে ,
সূর্য্যটা নামে দিনান্তের ঘাটে ,
উঁকিঝুঁকি অনেক তো হল সঙ্গের সঙ্গমে ছেঁড়া !
বেচাকেনা অনেক তো হল দোলকের ওঠানামায় খোঁড়া !
অপেক্ষা অনেক তো হল প্রতীক্ষায় বিদায়ী প্রহরের সাথে !
কথা অনেক থেমে গেল বদলের পাঠশালায় এসে !
ঘুড়ি অনেক পাঙ্গায় মুখ থুবড়ে শেষে !
তুমি তো মশগুল সখী নিজের অভ্যাসের দাম দিতে !
অকারণের কারণে অস্থির হরষে
দিন শেষে দূরত্বের স্বভাব ফিসফাস বাতাসে কানপেতে ডাকলে
তুমি তো ------- ।
হাতে নিয়ে বসে থাকা অপেক্ষা আমার ;
মনে মনে বুনে রাখা নীল পৃথিবীটার অভিপ্রায়ে তুমি ।
পথ হারিয়ে
পথ ফুরিয়ে
তুমি তো ব্যাস্ত সখী নিজেরই ইশারায় !
টোকা দিয়ে দ্বার খোলো দ্বীপ ছেড়ে দ্বীপের নামে ঝুপঝাপ !
খুঁজে পেতে নিজেকে ছুটে যাওয়া তোমার বাড়ি দীর্ঘ পান্থপথে
হাতে নিয়ে বসে আছি অনেক অনেক ! কেউ যদি আঁচল পেতে দাঁড়ায় তখন
ঘুমভাঙানীর সুরে সুরে বেঁধে দেয় ক্ষণ ?
নোনাধরা দেওয়ালে ফোটে জীবনের ছবিগুলো ;
আমি অভিসারী স্নানে ;
অভিযোগ ভুলে ।
তুমি তো ব্যাস্ত সখী নিজের ভাবনায় ! তাপ দিতে তাপে সময়টা কোথায় ?
কিভাবে উষ্ণতা ছুঁয়ে যাবে শুকনো ঠোঁটে !
কিভাবে ওম ভরা নিঃশ্বাস জাগাবে পানকৌড়ি প্রাণে নুব্জ দেহমনে ?
মুঠো ভরে বসে আছি
মনে মনে বেঁচে আছি
হাতে নিয়ে বসে আছি অনেক কিছুই ! কার ঝুলি ভরে দিতে যুগান্তরের পাতায় ---
ভালোবাসায় ?
তুমি তো ব্যাস্ত সখী নিজেরই জ্বালায় ;
জ্বরে পুড়ে খাঁক হয়ে আঁধারের খাঁচায় ! আমি মরি দোটানায় ।।।।
শিরোনাম - ফারাকটা মুছে ফেলে
কলমে - সৌমেন্দ্র দত্ত ভৌমিক
মান্ধাতা আমলের ধ্যান-ধারণা জাপটে ধরে
বর্তমানের ছেলে নাতি-পুতির সাথে ঠোকাঠুকি!
বাদানুবাদের প্রবল ঝড় বইছে ঘরে ঘরে,
সামাল হো ভাই সামাল হো, সামাল হো
মনের অন্তরে শুধুই কি প্রাচীনত্বের আঁকিবুকি?
সময়ের ব্যবধানে বয়েসকালে মানুষটার জ্ঞানকে
অভিজ্ঞতাকে সম্মান না জানিয়ে শুধু শুধুই ফাঁকি।
ভুলেও যায় অগ্রগতির চিন্তা-ভাবনার আকাশে
বয়স্করা পিছিয়ে পড়ে এই প্রজন্মের চলাফেরায়।
এমন কেন হবে? এমন কেনই হয়?
কুর্ণিশ জানাতে পিছপা কেন চেতনার শুভোদয়?
বরং মনে রাখা ভালো, বড়দের অতখানি যাত্রাপথের
অতিক্রমণে পুঞ্জীভূত সম্পদ বড়ই মূল্যবান নব্যর কাছে।
ফারাকটা মুছে ফেলে সম্মানীয়দের যথাযথ ভালবেসে
সান্নিধ্যে থাকার মজা ও আনন্দের একটা গড়ন আছে।
শ্রীরামপুর, হুগলী-৭১২২০১,
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
অসাধারণ ছবির ভাবনায় আমার সামান্য লেখার প্রয়াস।
শিরোনাম - মুক্তি
কলমে - সত্য রঞ্জন বণিক
বিরক্তি
বন্দীদশায় আবদ্ধ,
নিশ্চুপ নিঃসঙ্গ চারদেয়ালে।
অসার নিস্পন্দ, সদীর্ঘ অবকাশ,
সময়ের পেন্ডুলাম মৃতপ্রায় মন্থর গতি।
দিবানিশি গবাক্ষে উঁকি দিগন্তে আঁধারে ব্যবধান।
নিস্পৃহ অলস অনুভবে খুশির আলো অন্তর্ধান।
ভাবনার ডানায় ওড়ে দুরন্ত অনুভূতি,
বিহঙ্গমন ছুঁতে চায় নীলাকাশ।
একাকি আপন খেয়ালে,
শঙ্খচিলে উদ্বুদ্ধ,
মুক্তি।
শিরোনাম: লক্ষ্মী - অলক্ষ্মী
কলমচি:- ইন্দ্রনীল বসু, লিপি কুশলী, কবি রত্ন
১৪ আষাঢ়, ১৪২৮. মঙ্গলবার
রাগ কোরো না,মাগো আমার,একটি কথা কই:
'লক্ষ্মী 'হয়ে থাকলে শুধু,বেঁচেই মরে রই!
ভীড় বাসেতে খোঁচাখুঁচি
যেমন স্বভাব,তেমন রুচি
হোক না 'বুড়ি',কিম্বা 'কচি'
ইচ্ছে মতো পোশাক প'ড়ে,নিরাপদ তো নই-
'লক্ষ্মী ' হয়ে থাকলে শুধু,বেঁচেই মরে রই।।
শক্তি তুমি,লক্ষ্মী মেধা,
ঘুচাও সকল বাঁচার বাধা
নারী নয়কো ধোবার গাধা
দুর্গা হয়ে,মাঠে ঘাটে,শূল হাতে জেগে রই-
'লক্ষ্মী 'হয়ে থাকলে কেবল,বেঁচেই মরে রই।।
শিরোনাম - " মন "
কলমে - মানবেন্দ্র চক্রবর্তী
তারিখ - ২৭/০৬/২০২১
মন থাকে যে মনের ভিতর
কেউ কি তোমরা জান,
যখন তখন ছুটে বেড়ায়
এই কথাটা তো মানো।
আমার মনও তেমনি করে
নানান দিকে ছুটে,
কখনো যায় মেঘের দেশে
কখনো নদীর তটে।
কখনো সে পাখির সনে
করছে ডালে খেলা,
আবার দেখে পাহাড় চূড়ায়
নানা রঙের মেলা।
উদাসী বাউল উদাস মনে
গান গেয়ে যেই যায়,
মন যে তখন মাতাল হয়ে
সেদিক পানে ধায়।
যতই বলি আর যাবিনা
ঘরেই বসে থাকো,
আমার সাথেই করবে খেলা
কোথাও যাবে নাকো।
ওমনি দেখি মন যে আমার
মনের মাঝে নাই,
এক ছুটেতে পালিয়ে গেল
কোথায় খুঁজে পাই।
সাঁঝের বেলায় গুনতে বসে
সমুদ্রের ঐ ঢেউ,
মনের খবর মনেই জানে
আর জানেনা কেউ।
শিরোনাম - চল্লিশ কোটি
কলমে - ডঃ সুজাতা ঘোষ
স্যাটেলাইট উড়ছে সমস্ত ধরিত্রীকে ধোঁয়াময় করে
কি আলোর বাহার ............আহা ..................
চোখদুটো যেন ঝলসে যাবে এবার।
উনি চলেছেন উপরে, আরও উপরে ............
“চল্লিশ কোটি” সাদা ধোঁয়া হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে আকাশে বাতাসে।
মঙ্গল গ্রহ কি মরীচিকাই হয়ে থাকবে?
মানুষের কৌতূহল কবে মিটবে?
সকলেই চায় ভিন গ্রহের নাগরিক হতে,
তার ঘরের সন্তান দুবেলা দুমুঠো খেতে পাক,
আর ছাই না পাক।
মঙ্গল গ্রহে তাদের পৌঁছতেই হবে।
ওখানে কত জল, কত মাটি ............।
টিভির চ্যানেলগুলো ঘোড়াতে থাকলাম.........।
কেনিয়াত সন্ধ্যের পর মানুষ খাবারের অভাবে
নেশায় বুঁদ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
চা বাগানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
একে একে সব মানুষ নেমে আসছে নীচে।
খাবারের খোঁজে, ওষুদ এর খোঁজে।
আচ্ছা, দার্জিলিং এর “চা” ই তো বিশ্ব বিখ্যাত,
তাই না?
সুগন্ধির জন্য!
আরও কত খবর দেখলাম
বিভিন্ন দেশের, নিজের দেশের।
আদিবাসীদেরও নানা আচার – বিচার,
ভয়ঙ্কর .........রোমহর্ষক .........।
রাতে লং ড্রাইভে গেলাম
ঠাণ্ডা হাওয়ায় একটু শান্তির শ্বাস নিতে ............
রাতের সুন্দরী পৃথিবী আর তার নেশা
আমাকে মাতাল করে ধীরে ধীরে।
অন্ধকারে গাড়ির আলো পড়তেই
মনটা আবার খারাপ হল।
বাস্তবটা অনেক বেশী কদাকার ।।
শিরোনাম - কালের যাত্রা
কলমে- নবগোপাল চৌধুরী
কালের যাত্রা শুরু-- মেঘ ডাকে গুরু-গুরু
বজ্র-বিদ্যুত্ জানি অতি সাময়িক ;
জটিল সমস্যা জানি ঘিরেছে যে নিয়ে ক্ষতি সাম্প্রতিক--- প্রাসঙ্গিক ভুলে তা'র---
কোথা পাবে দিক ?
জীবন ধারণা যা'র গতানুগতিক !
চৌহদ্দির সীমা তা'র কাছে একান্ত প্রিয়
যতই ইঙ্গিত দিক অনির্বচনীয়
বাঁকাপথে কোনোদিন হাঁটে নি পথিক ;
সুদূর নীলিমা ডাকে হাতছানি দিয়ে
ইতস্তত করে , হাত বাড়াতে শেখে নি
সামান্য তা'র পুঁজি হারাতে শেখে নি !
সীমিত ক্ষমতা নিয়ে
সীমার বাইরে গিয়ে দাঁড়াতে শেখে নি !
জানা গল্পের ছকে মাতোয়ারা নিছক মাতাল
ত্রিতাল স্বপ্নে ঘেরে স্বপ্নে পাতাল !
রঙিন জানালা ঘেরা কল্পনার ঝুরি
পরের নকল শেখে দখল ও চুরি ,
শেকলে ঢাকতে চায় কি বিশাল জমি
পিরামিড গড়া আর হয়ে ওঠেনাকো
উলঙ্গ পড়ে থাকে ঘৃণা নিয়ে মমি !!
কালের যাত্রা তাই মাটি চাপা কফিনে বন্দী !!
মহান সে মন কৈ , যে মন উদার ?
প্রাণে- প্রাণে সেতু গড়ে মিলন অপার !
ডাক দাও সকলকে মিলনের তীরে ---
জাত-পাত ভেদাভেদ ভুলে ডাকো ফিরে ।
এক সাথে মিলে আজ চলো ধরি হাল ,
বেইমান শয়তান তরী করে বেসামাল ।
আমাদের মনে- প্রাণে থাকে যদি মিল ,
আনবোই সভ্যতা ফিরে সে প্রগতিশীল।
তরুণ- যুবার মনে আনো নবজাগরণ,
অবিশ্বাস্ দূরে ছুঁড়ে ফেলো অকারণ ;
স্বপ্ন আসুক নেমে বাস্তব প্রাণ-মনে চায় ,
ওই শোনো দুন্দুভি- সংকেত দূর নীলিমায়।
রোহিত থামবে কেন ব্রাহ্মণের মন্ত্রে শিক্ষিত
"চরৈবেতি " শ্রবণে তা'র সদা ঝংঙ্কৃত ---।।
শিরোনাম - উষ্ণতা
কলমে - চিন্ময়ী সেনশর্মা
ঠোঁটের উষ্ণতায় জানান দাও
কত ভালোবাসো আমায় !
ওই উষ্ণতা আমার সর্বদা ভালো লাগলো কিনা
তাতে তোমার কিছু আসে যায় না ۔۔۔۔۔
বরন তোমার কামুক ভালোবাসার ঔদ্ধত্ব্য র জয় হয় l
কখন ভেবে দেখেছিলে ۔۔
ওই উষ্ণতা তখন আমি চাইছি কিনা ?
ঋতু কালীন সময়ে আমার যাতনা ۔۔۔۔
ভেবে দেখো কি ?
তুমি পুরুষ ۔۔۔জান শুধু ভোগের বাসনা !
তাতে থাকে তোমার উষ্ণতা !
আমার থাকে হিমানী সম্পাত ۔۔۔۔
নেই কোনো উত্তাপ l
নারী কে ভালোবাসতে শেখ ! মন প্রাণ সোঁপে দাও ;
উজাড় করে দাও তোমার ভালোবাসার ঝুলি l
দেখো !۔۔۔۔কখন সে তোমার উষ্ণতা
কেড়ে নেবে ভালোলাগার অন্তরালে ll
গল্প -
ছোটগল্প - বিদায়
গল্পকার - রাজীব রং
( রচনাকাল - ০৪ /০৭/২১)
শৈলশহর দার্জিলিং হল পূর্ব ভারতের একটি ঐতিহ্যবাহী পৌরসভা শহর । শিবালিক পর্বতশ্রেণীর কোলে অবস্থিত মুক্তাকনা সম ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঘন , হিমেল হাওয়ায় শীত প্রধান , নীল আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো সাদা- সাদা পুঞ্জিভূত মেঘের ফাঁকে , উঁকি দেওয়া পর্বতের পিছন থেকে বেরিয়ে আসা আঁকাবাঁকা পথের পাশে, চা-বাগানে ঢাকা সবুজ পাহাড়ের প্রশান্তি , ছোট- ছোট ঝর্না , পাহাড়ের ধাপে- ধাপে প্রকৃতি ও মানুষের অপরূপ মেলবন্ধনের ঘনজনবসতি , সারিসারি বনাঞ্চলকে উপেক্ষা করে ঘরের মধ্যে অবলিলায় প্রবেশ করা মেঘরাজির এক টুকরোসম স্বর্গ -সৌন্দর্যের লীলাভূমি দার্জিলিং শহরে , স্ত্রী সুজাতা কন্যা সুচিস্মিতা সহ সপরিবারে বাস করতেন চন্দ্রশেখর তামাং । চন্দ্রশেখর বাবুর নিজস্ব তেমন কোন প্রতিষ্ঠিত আয় না থাকলেও , স্ত্রী সুজাতার আশাকর্মীর যৎসামান্য বেতনই ছিল সাংসারিক আয়ের একমাত্র উৎস। তবে অগনিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক সমাজদরদীরা, রাজনীতিকে অবলম্বন করে যে মধুভান্ডারের পথে একে অপরকে পিছনে ফেলতে সদাজাগ্রত , চন্দ্রশেখর বাবু ইতিপূর্বেই সেই পথ অতিক্রম করেছেন । আর শুধুমাত্র সেই কারণেই আজ শহরের বুকে চন্দ্রশেখর বাবুর ঝাঁ চকচকে দোতালা বাড়ি , দামী গাড়ী , হাইপ্রোফাইল সোসাইটি সহ বর্তমান জীবনে অভাব অনটনের ক্লেশ, বিন্দুমাত্র নেই বললেই চলে ।
আজ চন্দ্রশেখর বাবুর একমাত্র প্রাণাধিকা , নবযৌবনা , অদুরে কন্যা সুচিস্মিতার বিদায় । স্বাভাবিক কারণেই আত্মীয়-স্বজন, পাড়া - প্রতিবেশী সহ উপস্থিত সকলেই উৎসুক ভাবে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায়ের অপেক্ষায় অপেক্ষারত । সুচিস্মিতার গর্ভধারিনী মা ঘরের দালানে আপন অপত্য দুলালীকে , বিদায় থেকে বিরত রাখার চেষ্টায় অবিরাম শব্দবিন্যাশে কেঁদেই চলেছেন । অন্যদিকে কেন্দ্রীভূত কৌতুহলী মানুষের জমায়েত থেকে কিছুটা দূরে চন্দ্রশেখর বাবু চেয়ারে বসে উর্দ্ধপানে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিঃশব্দে- নিরবে অঝোর নয়নে অশ্রু ঝরিয়ে চলেছেন । আর সুচিস্মিতার জন্মের মুহূর্ত থেকে আজ পর্যন্ত ভালো -মন্দ প্রতিটি মুহূর্ত একেরপর এক ক্রমপর্যায়ে অহরহ রোমন্থন করে চলেছেন ।
এই তো সেদিন ছোট সুচি হামাগুড়ি দিতে- দিতে দেওয়াল ধরে দাঁড়াতে শিখলো , আর তুলতুলে ছোট্ট - ছোট্ট হাতগুলি সম্মুখে বাড়িয়ে , টলটলে পায়ে গুটিগুটি করে এগিয়ে আসতে- আসতে ধপাস করে বসে পড়তো । তারপর দেখতে- দেখতে কে-জি স্কুলে ভর্তি করলাম , বাড়ি থেকে স্কুল পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য পুলকারের ব্যবস্থা করলেও , আমার সাথে ছাড়া স্কুলে যেতে চাইতো না । এরমধ্যেই সকলের অলক্ষ্যেই কবে যে কে-জি স্কুল অতিক্রম করে প্রাথমিক , মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলো বুঝতেই পারলাম না । তবে আমার খুব মনে পড়ছে, স্কুল ড্রেসের সাথে ম্যাচ করে, লম্বা বেনুনিতে ফিতে দিয়ে ফুল করে নিজেই সাইকেল চালিয়ে স্কুল যেত আর যাওয়ার সময় প্রতিদিন টিফিনের জন্য পঞ্চাশ টাকা নিত । তবে পাহাড়ী ঢালু রাস্তায় প্রথম- প্রথম একাকি সাইকেলে সুচিকে স্কুল ছাড়তে ভয় করলেও , সময়ের সাথে - সাথে সেই ভয়ও দূর হয়। দার্জিলিং শহরের জু , টাইগার হিল , ঘুম মনাস্টি, বাতাসিয়া লুপ, পিস প্যাগোডা, মহাকাল ধাম, রক গার্ডেন, ম্যাল সহ প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে বান্ধবীদের সাথে হৈ - হুল্লোড় করে ঘুরে বেড়ানোর ছবি তুলতো । কখনো আবার নানা ধরনের পোষাকে নিজের প্রতিরূপ বোরলী মাছের স্বভাবের চঞ্চল ঝর্নার পাশে দাঁড়িয়ে , কখনো পাহাড়ের বুক চিরে উদিয়মান সূর্যের রশ্মিতে রুপালি চূড়া নিজের গাত্রবর্নের ন্যায় সোনালী রুপ ধারণ করাকে , আবার কখনো শ্রমিকদের দুটি পাতা একটি কুঁড়ির ঝুড়ি পিঠে ফেলে, আপন মনের মত দিগন্তজোড়া সবুজ শ্যামল বাগিচার উপর আলতো স্পর্শের ক্ষুদ্র - ক্ষুদ্র ভিডিও তুলে ফেসবুক, ইনষ্টাগ্রাম সহ নানা ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতো ।
এমতাবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে সুচিস্মিতা সেন্ট জোসেফ কলেজে ভর্তি হয় । মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে তাঁর পরিচয় হয় , দ্বিতীয় বর্ষের ইউনিয়ন মেম্বার চিন্ময়ের সাথে । একদা পরিচয় থেকে কথাবার্তা মেলামেশা , যা পরবর্তীকালে প্রেমে রূপান্তরিত হয় । ধীরে ধীরে ওদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে । একসঙ্গে সিনেমা যাওয়া, পার্কে দেখা করা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া - দাওয়া , একে অপরকে উপহার দেওয়া - নেওয়া, সেলফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা , হোয়াটস্ অ্যাপ , চ্যাট , ভিডিও কলিং দিনের পর দিন চলতে থাকে। ব্যাপারটা আমার কানে পৌঁছলে , আমি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়ে সুচির মাকে বলি সুচিকে সাবধান করতে । কিন্তু হায় কপাল, সুচির মা তো আগে থেকেই চিন্ময়ের ব্যাপারে সবকিছু জানে । আর আমার থেকে চিন্ময়কে লুকানোর জন্য মা- মেয়ে মিলে কত পরিকল্পনা করে ।
আজকের দিনটা অন্যরকম হলেও , সেদিন আমি চিন্ময়কে মেনে নিতে পারিনি , প্রথমত সমবয়সী, দ্বিতীয়ত ইউনিয়নের মেম্বার হওয়ার কারণে । তবে চিন্ময় ছিল সুঠামদেহী গৌরাঙ্গ সুন্দর নারীমনোহরা , আর সে কারণেই সুচিস্মিতা কলেজ থেকে ফিরে পড়াশোনার কথা শুরু করলেও , কোনো না কোনো অজুহাতে মায়ের নিকট ঘুরেফিরে সেই চিন্ময়ের গুনগান করত । আর আজ সেই অতীতের স্মৃতি মনে পরছে , চিন্ময়কে আমার থেকে লুকিয়ে রাখার জন্য মা-মেয়ের কত গোপনীয়তা । এমতাবস্থায় একদিন হঠাৎ কলেজ থেকে ফোন ,
--- হ্যালো , আপনি সুচিস্মিতার বাবা চন্দ্রশেখর বাবু বলছেন ?
মেয়ের নাম করে ফোন আসায় , আমি কিছুটা হতচকিত হয়েই বললাম ,
--- হ্যাঁ আমি সুচিস্মিতার বাবা বলছি । আপনি কোথা থেকে ? কে বলছেন ?
--- আমি সুচিস্মিতার কলেজ থেকে প্রিন্সিপাল বলছি ।
--- ইয়েস স্যার ; বলুন ।
--- বলছি আপনার মেয়ে সুচিস্মিতা হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে । আপনি যেখানেই থাকুন , যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে চলে আসুন । আমরা ততক্ষণে উপযুক্ত পরিসেবায় সুচিস্মিতাকে হসপিটালে অ্যাডমিট করিয়ে দিচ্ছি ।
এই কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো , মুহূর্তের মধ্যেই চোখের সামনে ত্রিভুবন অন্ধকার হয়ে এলো । কাকে ডাকবো ? কি করবো ? এই সাতপাঁচ চিন্তা , মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগল । আবার মনের মধ্যে ভেসে উঠলো রাস্তায় কোন কি দূর্ঘটনা ঘটলো ? নাকি সকাল থেকে না খেয়ে থাকার কারণে এমন অঘটন ! আবার ভাবলাম কলেজ থেকে ফোন করেছে মানে রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি । এই এলোমেলো কথা ভাবতে ভাবতেই ডাইনিং হলে ছুটে গিয়ে বললাম ,
--- সুজাতা তুমি এখনো খাচ্ছো ? এদিকে সর্বনাশ হয়ে গেছে । তুমি হাতটা ধুয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও , আমাদের এখুনি হসপিটাল যেতে হবে ।
সুজাতার মাথায় আচমকাই যেন বীনা মেঘে বজ্রপাত পড়ল । আধ- খাওয়া ভাতের থালা টেবিলে ফেলে , দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে কাঁদো- কাঁদো গলায় ঢোক গিলতে - গিলতে জিজ্ঞাসা করে বলে ,
--- কিন্তু কেন ?
--- প্যান্ট -শার্ট পরতে - পরতে আমি বললাম , কলেজ থেকে ফোন এসেছিল সুচি হসপিটালাইস হয়েছে । এখনি আমাদের ওখানে পৌঁচ্ছাতে হবে । তা নাহলে হয়তো বড় বিপদ হয়ে যেতে পারে ।
--- তবে কি চিন্ময়ের সাথে কিছু হলো !
হন্তদন্ত হয়ে রেডি হতে থাকা , সুজাতার মুখ থেকে চিন্ময়ের নাম শুনে মনে হলো , তবে কি চিন্ময়ের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে , আর তার জেরেই কোন কি কিছু করে বসলো আদরের দুলালীটা । এই সব নানা ধরনের অগ্রপশ্চাৎ চিন্তা ভাবনা করতে করতেই মাথা কোন কাজ করছিল না । পুনরায় ভাবলাম তাই যদি হয়,আমি চিন্ময়কে ছাড়বো না । আমিতো ওদের বলেই ছিলাম এইসবে সময় নষ্ট করার দরকার নেই , যথাযথ সময় হলে উপযুক্ত পাত্র নিরুপন সাথে ধুমধাম করে বিয়ে দেবো । সেটা মেনে নিতে পারলিনা , এখন আমি মানুষের সামনে মুখ দেখাবো কিভাবে ? ও - ও আমি এখন কি যে করি !
এইসব ভাবতে ভাবতে কোন ক্রমে হসপিটালে উপস্থিত হলাম , লক্ষ্য করলাম অক্সিজেন মাস্ক লাগানো অবস্থায় সুচি বেডে শুয়ে , আর আমি যাকে দু'চোখে সহ্য করতে পারি না , সেই চিন্ময় সুচির বেডের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । অন্যদিকে সঠিক সময়ে ট্রিটমেন্টের ফলে শারীরিক অবস্থা মোটামুটি স্বাভাবিক । তবুও তৎক্ষণাৎ আমি উত্তেজিত হয়ে চিন্ময়কে বললাম ,
--- তুমি এখানে কেন ?
--- আসলে আঙ্কেল ...
--- যতসব আদিখ্যেতা । যাও , বেরিয়ে যাও । এই সব তোমার জন্য , তুমি ওকে শান্তিতে থাকতে দেবেনা ।
--- আঙ্কেল আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন ।
--- আমি ভুল বুঝছি , তুমি কলেজের সেই প্রথম দিন থেকে ওকে বিরক্ত করছো । আর সে কারণে জন্যই ওর আজকে এই অবস্থা ।
এই বলে চিন্ময়কে ওখান থেকে ধোমকে- চোমকে বের করে দিলাম । অতঃপর আমি আমার কম্পিত হাত , অতি সাবধানে সুচির মাথায় বুলিয়ে , সুজাতাকে ওর বেডে বসিয়ে , ডাক্তার বাবুর অফিসে উপস্থিত হলাম । কি ভাবে শুরু করবো ভারতে- ভাবতে শেষপর্যন্ত ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করেই বসলাম ..
--- ডাক্তারবাবু , আমি সুচিস্মিতার বাবা । যদি কিছু না মনে করেন তাহলে একটা জিজ্ঞাসা ছিল ।
ডাক্তার বাবু নিজের ল্যাপটপের স্ক্রিনে দৃষ্টি রেখেই আমাকে সম্মতি দিয়ে বললেন ,
--- ইয়েস , বলুন ।
--- ডাক্তারবাবু আমি জানতে চাইছিলাম, কি কারনে সুচিস্মিতার এরকম দুর্ঘটনা ঘটল , দয়া করে যদি বলেন , তাহলে উপকৃত হতাম ।
ডাক্তার বাবুর কাজের মধ্যে নিমজ্জিত থাকলেও আমার অভিমুখে একপলক মুখ ফিরিয়ে, আমার জিজ্ঞাসার উত্তরে বলেন,
--- অ্যকচুয়েলি , এখন পর্যন্ত আমরা তেমন কোন রোগ দেখতে পাচ্ছি না । তবে দেখলাম যে ওর মাথার দুপাশে, কানের উপর যে পেশার পয়েন্ট গুলি আছে , তা দ্রুত বড়বড় হয়ে ফুলে গিয়েছিল । আর মাত্রাতিরিক্ত ভাবে এমন শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, যে একদম লুটিয়ে পড়ে অচেতন অবস্থা । তবে আপনি এক কাজ করুন , আমরা ওর প্রেসক্রিপশনে যে সমস্ত পরীক্ষার উল্লেখ করেছি , সম্ভব হলে আজ বিকেলেই পার্টিকুলারলি এই পরিক্ষা গুলি করিয়ে , আগামীকালই হসপিটালে রিপোর্ট আনার ব্যবস্থা করুন ।
--- ঠিক আছে ডাক্তারবাবু । তবে --- কি কারণে এই বিপত্তি , আপনারা কি অনুমান করছেন ?
--- দেখুন ,একাধিক কারণেই এই বিপত্তি হতে পারে । তবে এই রকম অল্পবয়সে এই রকম হওয়ার কথা নয় , তবুও হয়েছে । মেডিক্যাল সায়েন্স অনুসারে শরীরে অক্সিজেন ঘাটতি , রক্তে অম্লের পরিমান বেড়ে গেলে , নানা ধরনের এলার্জি , জিনগত বৈশিষ্ট্য , অতিরিক্ত টেনশন আর স্বাভাবিক খাবার ছেড়ে অতিরিক্ত কোল্ডিংস ও প্যাকেট জাতীয় খাবারের উপর নির্ভর করলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
ডাক্তারবাবুর কথায় আমার নিজের প্রতি রাগ হলো । এই ভেবে , যে ও ভাত মুড়ি খাওয়া - দাওয়া ছেড়ে সারাদিন চকলেট - কোল্ডিংস - চিপস্ জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করতো , তাই আমি বাড়িতে এইসব খাবার সর্বদাই পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রাখতাম । তারপরেও প্রত্যহ স্কুলে বেরানোর মুহূর্তে পঞ্চাশ টাকা আবদার করে চাইতো । তখন একবারের জন্যও জিজ্ঞাসা করতাম না , যে প্রত্যহ পঞ্চাশ টাকা দিয়ে কি টিফিন করে । যাইহোক সব দোষ নিয়ে ডাক্তার বাবুর কথামত পরের দিন যথারীতি রক্ত পরীক্ষা, স্ক্যানের রিপোর্ট নিয়ে হসপিটালে উপস্থিত হলাম, ডাক্তারবাবু সব কিছু খতিয়ে দেখে বললেন,
--- আমি তো এর কোন সমস্যাই দেখতে পাচ্ছি না ।
--- আমি হতচকিত হয়ে , রোগ ধরা না পড়ায় চিন্তায়- চিন্তিত হয়ে বললাম , কি বলছেন স্যার , কোন সমস্যা নেই ।
--- না , কোন সমস্যাই নেই । আজ ওর রিলিজ লিখে দিচ্ছি , আপনি ওকে নিশ্চিতে বাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারেন । তবে আপাতত বিপদমুক্ত হলেও , ব্যাপারটিকে অবহেলা করবেন না, পরবর্তীকালে বিষয়টির উপর অতিরিক্ত সর্তকতা অবলম্বন করে বেটার ট্রিটমেন্টের চিন্তাভাবনা রাখবেন । আর হ্যাঁ একটা কথা , পেসেন্টকে কোনরকম টেনশন দেবেন না। যতটা পারেন হাসিখুশিতে রাখুন তাহলেই সুস্থ থাকবে ।
আমি টেবিল থেকে রিপোর্ট , প্রেসক্রিপশন সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র একটি একটি করে গুছিয়ে ক্যারি ব্যাগে ভরতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ,
--- কেন স্যার ?
--- কারণ অনেক সময় দেখা যায় , এটি একটি সম্পূর্ণ মানসিক রোগ ।
--- ধন্যবাদ স্যার ।
এই বলে সুচিস্মিতাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম । আর দিনের পর দিন ধারদেনা - লোন করে বেটার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করতে থাকলাম । এখন অনেক দিন হলো সুচির কোন সমস্যা দেখা যায়নি । তাই সুচির থেকে চিন্ময়ের নাম্বার নিয়ে , তাকে কল করে দুপুরে ডাক করিয়ে , অতি যত্ন সহকারে জামাই আদরে খাইয়ে - দাইয়ে বিশ্রামের পর মুখোমুখি টেবিলে বসিয়ে বললাম ,
--- চিন্ময় তোমাকে কেন ডেকেছি , তুমি তা কি কিছু অনুমান করতে পারছো ?
--- চিন্ময় দুপুরে আসার সময়ের থেকে ক্রমে-ক্রমে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করলেও । মুখোমুখি চেয়ারে আড়ষ্ট হয়ে বসে , ভূপাতিত নয়নে , আমতা আমতা গলায় বলল , না আঙ্কেল ।
--- আমি চিন্ময়কে সাহস জগিয়ে প্রসন্নচিত্তে বললাম , এত সংকুচিত হওয়ার দরকার নেই চিন্ময় তুমি রিল্যাক্স ফিল করতেই পারো, তবে যদি লজ্জা পাও সেটা আলাদা কথা । আসলে আজ তোমাকে বাড়িতে ডেকেছি একথা বলতে যে, তোমাকে হসপিটালে যে কারণে দোষারোপ করেছিলাম তার জন্য কিছু মনে করোনা ।
--- না না আঙ্কেল , আমি কিছু মনে করিনি । আসলে আমি সুচিস্মিতাকে ভালবাসি । এই ঘটনার পর আমিই সুচিস্মিতাকে অনেক বুঝিয়েছি , যে তুমি অযথা চিন্তা করো না । অতিরিক্ত চিন্তা থেকেও তোমার শরীর খারাপ করতে পারে । দেখো আমি ঠিক একদিন তোমার বাবাকে বুঝিয়ে তোমাকে আমার ঘরে নিয়ে যাব ।
চিন্ময়ের সাহস , পরস্পর পরস্পরের প্রতি ভালবাসা অনুভব করে সেইদিনই আমি চিন্ময় ও সুচির সম্পর্ক মেনে নিই । তারপর থেকে চিন্ময় ছেলের মত বাড়িতে আসতে শুরু করে । এইভাবেই বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হয় । এমতাবস্থায় গতকাল আন্তর্জাল রাতে শুয়ে - শুয়ে স্ত্রী সুজাতাকে বললাম ,
--- জানো সুজাতা ঈশ্বরের অসীম কৃপায় , আজ সব ঠিকঠাক হয়ে গেলও কিন্তু সুচি আমাকে একেবারে নিঃস্ব করে দিল ।
--- কেন ? কেন বলছো এসব অলক্ষনে কথা ।
--- কেন বলছি তুমি জানো না ? সুচির যে সমস্যা হচ্ছিল তা এখানকার ডাক্তার ধরতেই পারছিল না , সুস্থ করে তোলা অনেক দূরের কথা । তুমিতো ভাল করেই জানো ওকে কলকাতা, ভেলোর সহ বড় বড় জায়গায় দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম । আর তার জন্য লক্ষ- লক্ষ টাকা খরচ করেছি তা তুমি জানলেও , শেষমেষ টাকা জোগাড় করতে না পেরে আমি আমাদের স্বপ্নের বাড়িটিও বন্ধক দিয়েছি সেটা কিন্তু তুমি জানো না । কোনদিনও বাড়িটা পুনরুদ্ধার করতে পারবো কিনা , নাকি বিকিয়ে যাবে তাও জানি না ।
--- তুমি এর আগে আমাকে, কখনো একথা বলনিতো !
--- বলিনি এই ভেবে যদি তুমি আঘাত পাও , যদি সেই আঘাত কোনভাবেই সুচির উপর গিয়ে পড়ে, তাই ।
---- ঠিকিই করেছো , এবার তুমি আমাদের সুচির সাথে চিন্ময়ের বিয়ে দিয়ে দিতে তো পারো ?
সুচিস্মিতা সেই মুহূর্তে নিচ তলায় বাথরুমে যাওয়ার সময় চিন্ময়ের নাম মায়ের মুখে শুনেই , বাবা -মায়ের রুমের দরজার পাশে এসে কানপেতে দাঁড়ায় । সেই সময় সুচি শুনতে পায় , চিন্ময়ের সঙ্গে তার বিয়ের নিয়ে, বাবা মায়ের আলোচনা চলছে । আনন্দে মসগুল হয়ে সে ভাবে এতদিন পর তাহলে বাবা সবকিছু মেনে নিল । খুব তাড়াতাড়ি তাহলে চিন্ময়ের সঙ্গে এক হতে পারবে।
তখনই চন্দ্রশেখরবাবু বলে উঠলেন-----
--- পারি তো , কিন্তু ভেবে দেখেছো সুজাতা , সুচি আমাদের একমাত্র মেয়ে , আমরাই তাকে দেখাতে গিয়ে আমাদের সব কিছু বিকিয়ে , অনুতাপ করে বলছি আর পারছি না । যাইহোক ঈশ্বরের কৃপায় যদিও সুচি এখন সুস্থ আছে , কিন্তু বিবাহের পর যদি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়ে , চিন্ময় পরের ছেলে সে কি এভাবে খরচ করবে ? নাকি করতে পারবে । চিন্ময় যে সামান্য কিছু রোজগার করে , শুনেছি তাই দিয়ে ওদের সংসারই ভালো করে চলে না । আমাদের সুচির সঙ্গে তার বিয়ে দিলে , আমার মত ছেলেটাও দেউলিয়া হয়ে যাবে । এই নিয়ে আমার খুব চিন্তা হয়।
নিজের বাবার মুখ থেকে এই কথা শোনা মাত্রই সুচিস্মিতার মুখখানি ম্লান হয়ে গেল । মুহুর্তের মধ্যেই বিশ্বের সমগ্র চিন্তা- ভাবনা যেন তার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগল । এই সকল চিন্তা করতে- করতে , এক ছুটে সে তার নিজের রুমে চলে যায়।
সুজাতা দেবী চন্দ্রশেখর বাবুর অভিমতকে সমর্থন জানিয়ে বলে ----
--- তা অবশ্য ঠিক বলেছো । তবুও বলবো চিন্ময় তো সব ঘটনাই জানে । তারপরেও তো সে আমাদের সুচিকে নিজের করে পেতে চায়। আসলে কি জানো, চিন্ময় সুচিকে নিজের জীবনের থেকেও অধিক ভালবাসে । তাই বলছিলাম যত শীঘ্রই পারো তুমি ওদের চারহাত এক করে দাও ।
--- ঠিক আছে সুজাতা , আজ আমি তোমার কথাই মেনে নিলাম। আগামীকালই চিন্ময়কে আমাদের বাড়িতে ডেকে , আমরাই ওকে বিবাহের প্রস্তাব দেবো । তবে আপাতত আজকের মত আলোচনা এখানেই থাক , অত্যাধিক রাত হয়েছে আর কোন কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ো ।
পরেরদিন স্নিগ্ধ সকাল , রোদ ঝলমলে পরিবেশ । প্রভাতে পাখির কূজনে চন্দ্রশেখর বাবুর সপরিবারের ঘুম ভাঙলেও , সুচিস্মিতার তখনও ঘুম ভাঙানি । ক্রমেক্রমে কৈশোর সূর্য যৌবনের পথে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে চলেছে । সুজাতা দেবী সুচি - সুচি বলতে - বলতে দোতালায় মেয়ের রুমে দিকে এগিয়ে যায় । দরজা বন্ধ , দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পরও মেয়ের কোন সাড়াশব্দ না পাওয়ায় বুকের মধ্যে পূর্বভয় ঘনীভূত হতে থাকে , আতঙ্কগ্রস্ত শরীরে দীর্ঘনিশ্বাসে ভাবতে থাকে পুনরায় জ্ঞানহারিয়ে ফেলল না'তো । আতঙ্কে আড়ষ্ট সুজাতা দেবী ছুটে গিয়ে খবরটা চন্দ্রশেখর বাবুর কানে পৌঁচ্ছানো মাত্রই , ঘর পুড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই যেমন ভয় পায় অনুরূপ ভাবে চন্দ্রশেখরবাবু বুকে ভয় নিয়ে ছুটে গিয়ে সুচিস্মিতার রুমের দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন । ততক্ষণে সুজাতা দেবীর উচ্চ স্বরে কান্নার রোল শুনে পড়া- প্রতিবেশীরাও বাড়িতে আসতে শুরু করে দিয়েছে । চন্দ্রশেখর বাবু বারংবার দরজায় আঘাত করতে- করতে শেষমেষ দরজা ভেঙে যা দেখেন , তা তিনি কল্পনাও করেননি । সুচিস্মিতার নিথর দেহখানা সিলিং ফ্যান থেকে তার সবচেয়ে প্রিয় লাল ওড়না সহযোগে ঝুলছে । এই দৃশ্য দেখার পর চন্দ্রশেখর বাবু শারীরিক ভাবে বল হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে , সুজাতা দেবী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন । পাশাপাশি কয়েকজন উপস্থিত প্রতিবেশী ছুটে গিয়ে দেহটি নামানোর জন্য এগিয়ে গেল , পাশের কেউ যেন বলে ওঠে হাত দিওনা , হাত দিওনা থানা পুলিশ হতেও পারে । হঠাৎ থানা পুলিশের কথা কানে বিঁধতে , চন্দ্রশেখর বাবু টেবিল ধরে দাঁড়াতে গিয়ে লক্ষ্য করে টেবিলের ওপর একটি চিরকুট , তবে কি এটা সুইসাইড নোট-----!
সুইসাইড নোট ভেবেই চন্দ্রশেখর বাবু চিরকুটটি পড়ার চেষ্টা করেও , অশ্রুসজল বিচলিত মনে পড়তে না পারায় , এক ঝলক চোখ বুলিয়েই চিরকুটখানি পকেটে পুরে দিলেন । সময়ের ব্যবধানে উপস্থিত আত্মীয়-স্বজন , পাড়া- প্রতিবেশীদের তত্ত্বাবোধনে সুচিস্মিতার প্রানগতাদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে । অনিচ্ছা সত্ত্বেও এবার সুচিস্মিতাকে বিদায় দেওয়ার পালা ।
যাকে আমরা এত ভালবাসি , যাকে ঘিরে আমাদের বেঁচে থাকা , যার জন্য এত কিছু , সেই যখন আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেল , তাহলে আমরা কি নিয়ে বাঁচবো । তোকে আমরা কি আঘাত দিয়েছি , কোন জিনিসটা তোর পছন্দ হয়নি ? কেন এই পথ বেছে নিলি ?একবার বলে যা মা'গো , এই বলে সুজাতা দেবী মুহুর্মুহুর স্বশব্দে কেঁদেই চলেছেন । যা দেখে চন্দ্রশেখর বাবুর মনে পড়ল , হঠাৎ না পড়েই পকেটে পুরে দেওয়া সুচিস্মিতার সুইসাইড নোটের কথা , তারপর ধীরে- ধীরে চিঠিখানা পকেট থেকে বের করে , নিঃশব্দে পড়তে শুরু করলেন ----
" ডিয়ার পাপা ,
আমি তোমার আদরের সূচি । আমি জানি তোমরা আমাকে খুব ভালোবাসো , আর আমিও তোমাদের খুব ভালোবাসি । তোমার ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা খুবই নগণ্য । আমি আজ জানলাম যে, আমার এই অসুখের জন্য তুমি একদম নিঃস্ব হয়ে গেছো । তারসাথে এও জেনে ভাল লাগছে যে তুমি চিন্ময়ের সাথে আমার সম্পর্ক মেনে নিয়ে , চিন্ময়কে আমাদের বিবাহের প্রস্তাব দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছো । কিন্তু বাবা আমরা একে অপরকে অন্তর থেকে ভালবাসি তাতে কোন সন্দেহ নেই ,তবুও বলছি চিন্ময়ের সামান্যটুকু রোজগারের টাকায় কোন রকমে খেয়েপরে বেঁচে থাকা একটি পরিবারে, আমাকে বউ করে নিয়ে গেলে সে-ও যে তোমার মত নিঃস্ব হয়ে যাবে বাবা । তাই আমি সব কিছু জানার পর শুধুমাত্র নিজের সুখের জন্য এতগুলি মানুষকে গিলোটিনে মাথা নত করাতে পারবো না । যদি আমি ভ্রুনাক্ষরেও জানতে পারতাম যে তুমি আমার অসুখের কারণে দিনে -দিনে খাদের কিনারায় উপনিত হচ্ছো , তাহলে আমি অনেক আগেই এই পথ বেছে নিতাম । আমি জানি আমার এই অবস্থা দেখে তোমরা খুব কষ্ট পাবে তা-সত্ত্বেও আমি নিজে নিজেই চিরবিদায় নিয়ে, তোমাদের এই নাগপাশ থেকে মুক্তি দিয়ে গেলাম । তোমরা নিজেদের শরীরের খেয়াল রেখো , আর সাথে- সাথে আমাকেও ক্ষমা করে দিও ।
হতভম্ব হয়ে চেয়ারে বসে নিজের মেয়ের সুইসাইড নোট পড়তে- পড়তে চন্দ্রশেখর বাবুর দু'নয়ন পুনরায় উত্তাল সমুদ্রে পরিনত হয়েছিল । দুকুল ছাপিয়ে অহরহ অশ্রু নির্গত হত থাকলো , একটি একটি শব্দ তির-এর মত বুকে বিঁধতে থাকে , এক একটি লাইন শেষ হয় আর মনে হয় বুকের এক - একটি পাঁজর ভেঙে যাচ্ছে । লেখাটি শেষ হতে মনে হল, যে মেয়েকে নিজের হাতে সম্প্রদান করে বিদায় দেওয়ার কথা , আজ নিজেদের অসাবধানতায় সেই মেয়েকে চিন্ময়ের উপস্থিতিতে চিতার উদ্দেশ্যে চিরবিদায় জানাতে বাধ্য হলাম । হে ভগবান ওর বিদায়ের আগে, আমাদের বিদায় হলো না কেন ?
অঙ্কন -
থিম - কলকাতা মেট্রো স্টেশন।
অঙ্কনে - রূপালী গোস্বামী
শিরোনাম - রবি বন্দনা
কলমে - সোমা বিশ্বাস
হে গুরুদেব, পথ দেখান
এই পৃথিবী পাপে ভরে গেছে।
আপনার শাণিত কলম আঁচড় কাটুক
গর্জে উঠুক অন্যায়ের বিরুদ্ধে আবার।
আবার নবজাগরণ ঘটাক মানব মনে।
আপনার উপদেশ অনুপ্রাণিত করে তুলুক প্রেমে।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করুক জাতীয় সঙ্গীত।
আর আপনার রচিত গানগুলি প্রতিবিম্বিত ও ধ্বনিত হোক জনে জনে।
মার্জিত ও রুচিশীল মানুষের আজ বড্ড অভাব।
অশ্লীল ও কুরুচিকর লেখা লিখে অনেকেই আপনার সাথে
নিজেকে তুলনা করে।
তাদের মনের কালিমা দূরীভূত হোক।
রবির আলোয় আলোকিত হোক তারা।
আলোকিত হবো আমরা।
আর দূরীভূত হোক অভিশপ্ত করোনা।
রচনা - ৯ মে ২০২১
।
Comments
Post a Comment