ছদ্মবেশী মায়াজাল - পর্ণা বিশ্বাস
ছদ্মবেশী মায়াজাল
পর্ণা বিশ্বাস
আজ না হয় ২০১২ সালের একটা ছোট্ট গল্প বলি তখন আমার বয়স ১৮ , উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে দিয়েছি । পড়ার ইচ্ছা ছিল আইন নিয়ে । আমার বাবা একজন নামি উকিল । তাই বাবার সাথে বাবার চেম্বারে যাচ্ছিলাম ১ মাস ধরে । হঠাৎ এক সোমবার বাবার সাথে তার পূর্ব পরিচিত একজন পুলিশ আঙ্কেল দেখা করতে আসেন । তিনি একটা অদ্ভুত কেস নিয়ে আসেন বাবার কাছে । তিনি বলেন , " ওই পরিতোষ , শোন না , তোর কাছে একটা জটিল কেস নিয়ে এসেছি । মামলাটা মাল্টিপল ডিসঅর্ডার - এর । যার এই রোগ তার নাম রঞ্জন । রঞ্জন নাকি তার প্রেমিকা কে খুন করেছে । রঞ্জনের তার প্রেমিকা ছাড়া কেউ ছিল না । ওর মা তো জন্মের ১০ বছর পরেই মারা যায় আর ওর বাবা ৫ বছর আগে মারা যায় । শুধু ওর প্রেমিকা রাগিনী ছিল ওর সম্বল । তাকে ও যে মেরে ফেলবে এটা আমি মানতে পারি না রে পরিতোষ । আমি তোকে পার্সোনালি রিকুয়েস্ট করছি কেসটা তুই দেখ । যদি রঞ্জন নির্দোষ হয় তাহলে ও যেন ছাড়া পায় । " সব শুনে আমার বাবা বললেন " বুঝলাম পুরো ঘটনা । আচ্ছা আমি নিলাম কেস টা । কিন্তু তার জন্য তো আমায় কথা বলতে হবে রঞ্জন এর সাথে । নাহলে বুঝবো কিভাবে ? যে ও আসল খুনি নাকি কেউ ওর উপর দোষ লাগিয়ে লুকিয়ে আছে আড়ালে । " তারপর বাবা ওই ফাইল টা নিয়ে অনেকক্ষন ঘাটাঘাটি করলেন । তারপর রাতে চেম্বার বন্ধ করে আমি আর বাবা বাড়ির পথে হাঁটা লাগালাম । চেম্বার থেকে বাড়ি ২ মিনিট এর রাস্তা । বাড়ি ফিরে খেতে খেতে বাবা মাকে পুরো কেস টা বললো । মা যে আমার সাহসী , তিনি আবার হেসে বললেন " দেখো মনে হয় রঞ্জনকে বাগে পেয়ে ব্যবহার করছে ওকে । আমার তো সব শুনে মনেই হলো না যে ও খুন টা করেছে । যাক সবার কথা শেষ হলো । আমরা শুতে গেলাম আর বাবা গেলেন লাইব্রেরীতে রোজ রাতের মত । পরের দিন উনি ঠিক করেছিলেন রঞ্জনের কাছে যাবেন । কিন্তু অন্য একটা কাজে তাকে দুদিনের জন্য গুজরাট যেতে হলো । তাই তিনি ঠিক করলেন যে দুদিন পর ফিরে দেখা করতে যাবেন । কিন্তু তিনি যেহেতু বলে দিয়েছেন মেন্টাল হসপিটাল এ যে তিনি সেদিন যাবেন তাই উনি ঠিক করেছিলেন পরে বলে দেবেন হাসপাতালে । কিন্তু এই দুদিন অনেক বড়ো একটা ঘটনা ঘটেছিল । বাবা ফেরার পর আমরা যখন হাসপাতালে গেলাম , ওখানকার জেলার কিছুটা বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞাসা করেছিলেন -
- " আপনি ? "
- " হ্যাঁ আমি , চিনতে পারছেন না আমায় ? আমি পরিতোষ বিশ্বাস । রঞ্জন এর উকিল । আসলে আপনাদের জানবো জানবো করে জানানো হয়নি যে দুদিনের কাজে গুজরাট গেছিলাম । তাই ফিরে চলে এলাম প্রশ্ন উত্তরের পর্বে । কিন্তু আপনি এরকম অবাক হচ্ছেন কেন ? এনি প্রবলেম ?? "
-" না মানে , কালকে তো একজন উকিল এই একই নামে এসেছিলেন রঞ্জন এর সাথে দেখা করে এবং অবাক করার মত কথা হলো তার পর থেকে ও কারুর সাথে দেখা করা তো দুর কাউকে সামনে দেখতেও পারছে না । তাহলেই ওর মধ্যে থাকা সকল চরিত্রগুলো একসাথে কথা বলতে শুরু করে । কিন্তু খারাপ খবর হলো ও আর বেচেঁ নেই । " সেই শুনে আমি এবং আমার বাবা প্রচন্ড ভাবে অবাক হয়ে এবং উত্তেজনার বসে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলেন যে কে এমন এসেছিল ওর সাথে দেখা করতে ? - সেই কথা অনুযায়ী আমরা গেলাম সিসিটিভি রুমে । আমি যদি নিজের কথা বলি তাহলে আমি যদিও বেশ ভয় পেয়েছিলাম তাকে সিসিটিভি ফুটেজ এ দেখে , সে কি ভয়ঙ্কর রূপ তার । ১৫ মিনিট বাবা সেই রঞ্জন এর একটিভিটি লক্ষ্য করলো । সব ঠিক ছিল । তারপর ওর সামনে একজন আইনজীবীর পোশাক পরা ভদ্রলোক এলেন বললেন -" আমি তোমার কেস লড়বো । আমি শুনেছি তুমি নাকি তোমার প্রেমিকা রাগিনী র মৃত্যুর জন্য দায়ী । এটা কি সত্যি ? বলো । তুমি যদি সত্যি কথা না বলো তাহলে আমি তোমাকে যে বাঁচাতে পারবো না । আমায় বলো । "
আমি আর বাবা লক্ষ্য করলাম সে খুব ভয় পেয়ে আছে এবং পালানোর চেষ্টা করছে । কিন্তু সেই মুহূর্তেই হঠাৎ তার গলা দিয়ে বেরিয়ে এলো এক বাচ্চার স্বর । সে বাচ্চা বলছে - ' আম পাতা জোড়া জোড়া , মারবো চাবুক চড়বো ঘোড়া '
- " থামো । আমি জানতে চেয়েছি খুন টা কে করেছে । কে মেরেছে তোমার প্রেমিকা কে ? তুমি ?? "
হঠাৎ তার গলা দিয়ে আরেকটা আওয়াজ , মেয়ের । বলছে - " তুমি তো আমায় খুব ভালোবাসো । আমিও ভালোবাসি । আমায় বাঁচাও , মেরে ফেললো বাঁচাও । "
সে খুব জোর গলায় বলে উঠলো - " আমি শুধুমাত্র রঞ্জন এর সাথে কথা বলবো । "
লোকটা উঠে গেলো তার দিকে আর রঞ্জন ভয়ে চেয়ার থেকে উঠে চলে গেলো ঘরের এক কোনায় । আমরা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম পুরো বিষয় টা । অনেক চেষ্টার পর সে নিজের গলায় বললো " আমি মারিনি রাগিনী কে , আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মেরেছে ।"
- কে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ?
- আমি বলবো না তাহলে সে আমায় মেরে ফেলবে ।
- বলো কে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ?
এই কথার পরেই সব কেমন হারিয়ে গেলো , সিসিটিভি ক্যামেরা টা বন্ধ হয়ে গেলো । এই নিয়ে বাবা এবং জেলার এর মধ্যে অনেক ঝামেলা হলো । কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না । বাবা শেষ একটা উপায় বার করলেন । বললেন , " বডি টা পোস্ট মটার্ন এ পাঠানো হোক আর আপনি , জেলার , আপনি বর্ণনা দিতে পারবেন সে কেমন দেখতে ? তাহলে ধরা যেতে পারে তাকে " ।
কিন্তু উনি পারলেন না , তিনি বললেন মাস্ক পরে এসেছিলেন তিনি তাই জানা নেই কেমন দেখতে । শেষ অবধি ৩ মাস ধরে সেই আইনজীবী এবং সেই বেস্ট ফ্রেন্ড কে খোঁজা চললেও তাদের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি । এবং পুলিশ এবং আমার বাবা সহ বাকি যারা ছিলেন এই কেস এ তারা বডি পোস্ট মর্টান করে এবং কিছু সূত্র খুঁজে আন্দাজ করেন যে সেই আইনজীবী রঞ্জন এর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল, কারণ রিপোর্ট এ পাওয়া গেছিলো , যে কেউ রঞ্জন কে ইনজেকশন দিয়েছিল , যার অ্যাকশন ২৪ ঘণ্টা পরে হয় , তাই সেই দেখা করে চলে যাওয়ার পরেও রঞ্জন সুস্থ ছিল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পরে তার অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু ঘটে। তাও এত খোঁজ লাগানোর পরেও সেই আইনজীবী কে আজ অবধি খুঁজে পাওয়া যায়নি । যদিও আজ আমিও একজন আইনজীবী । আজ আমার বয়স ২৬ বছর । কিন্তু আমি আমার ২৬ বছরের জীবনে এরকম ঘটনা আর একটাও দেখিনি । সেই ঘটনার পর আমি অনেক রাত জেগে কাটিয়েছি , কিছুটা ভয়ে আর কিছু রহস্যে ।।
Khuub sundor..😊😊 Keep it up
ReplyDelete