মৃত্যুঞ্জয় - বিষ্ণুপদ বিশ্বাস

  মৃত্যুঞ্জয়
            বিষ্ণুপদ বিশ্বাস 

তিলোত্তমার সদ্য  কিশোর  মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা,
ভোটে গিয়ে ফিরলো ঘরে খেয়ে মারণ থাবা! 
ভোরে শুরু গতর  ব্যথা  কাহিল  হলো জ্বরে,
বিনা মেঘে  বজ্র  হঠাৎ পড়লো মাথার 'পরে! 
কাশির সঙ্গে তাজা রক্ত পড়লো কাড়ি কাড়ি, 
একলা  পুরুষ  পরিবারে  মরলো  ভয়ে নারী!
ঘোর বিপদে মানুষ কোথা খুঁজে পাবে খাঁটি ? 
হঠাৎ যেনো সরে গেলো পায়ের তলার মাটি!
পরিচিত কয়েকজনকে লাগিয়ে তার কাজে,
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খবর পেলো বাজে!

হৃদয় যেনো থমকে গেলো খবর শুনার সাথে,
হাজার চেষ্টা করেও আর ঘুম এলো না রাতে!
বেড খালি নাই কোথাও হায় চেষ্টা হলো বৃথা,
সাধারণ এক  গৃহবধূ  কে  শুনবে  তার কথা!
বুঝতে পারে পাকিয়ে যায় পেটের নাড়ি দলা,
ভাবতে থাকে দুখের  খবর কাকে যাবে বলা!
মনে পড়ে পাশের  ফ্ল্যাটে থাকে সেলেব দিদি,
বলে  কয়ে  একটা  কিছু  করতে  পারে যদি! 
কুয়োয় পড়া একলা  নারীর কান্নাকাটি শুনে,
দিদি এলো এগিয়ে  তার  মহৎ  স্বভাব গুণে!

যেথায় যতো  পরিচিত  আছে  কোণে কোণে,
সাধ্য মতন চেষ্টা দিদি করলো ফোনে ফোনে।
'নো বেড' বলে ওপাশ হতে ওরা দিলো কেটে,
ওষুধ ছাড়া মরবে মানুষ?হৃদয় গেলো ফেটে!
যুদ্ধ কালের কথা ভেবে চোখের পাতা ভেজে,
মধ্য রাতে উঠলো  হঠাৎ মুঠোফোনটা বেজে!
"কি করে না  বলি  বলো ?  তুমি  বন্ধুর শালী, 
তোমার জন্য করে দিলাম একটা বেড খালি!"
বুকের পাষাণ নেমে গেলো যেন বুকের থেকে,
সাথে সাথে খবর  দিদি  দিলো ফোনে ডেকে।

রাত পোহানোর আগে  হলো বড্ড বাড়াবাড়ি,
নিথর হতে দেখেই স্বামী জ্ঞান হারালো নারী!
সঙ্গে সঙ্গে আকাশ ভেঙে পড়ে ছেলের মাথে,
শুধুমাত্র আন্টি ছাড়া কেউ নাই আজি সাথে! 
জ্ঞাতি  গুষ্টি  সবাই  থাকে  শহর  থেকে  দূরে,
আন্টিকে সে ফোনে ডেকে কাঁদে করুণ সুরে!
অ্যাম্বুলেন্সের চালকগণের বড্ড আজি তাড়া,
দু' কিমিতে হেঁকে বসে হাজার পাঁচেক ভাড়া!
তাতেই রাজি  হয়ে  শেষে  ইলেভেনের ছেলে,
নার্সিংহোমে  ছুটলো  ঘরে  অসুস্থ  মা ফেলে!

হোমড়াচোমরা সই করিয়ে নাবালককে দিয়ে,
ধরিয়ে দেয় কাগজখানা  রোগী ভরতি নিয়ে।
বললো  তারা  ছেলেটাকে  ভালো  করে চিনে,
বাইরে থেকে নিয়ে এসো রেমডিসিভির কিনে।
কোথা পাবে রেমডিসিভির বাজারে নাই দাবা,
ওষুধটাকে না পেলে যে বাঁচবে না আর বাবা! 
বসে ভাবে বাপ হারাবে শেষে কপাল দোষে ? 
ওষুধ কেনার জন্যে ছেলে শহর বেড়ায় চষে!
অকুতোভয় কিশোর  ছেলের চেষ্টা হলো বৃথা, 
যার মাজা সে বোঝে ব্যথা অন্যে বোঝে কিতা?

চাকরিজীবী  হলেও   বাপ  ঠাকুরদাদা  চাষা,
নাসিংহোমে ছেলের  মুখে  প্রতিবাদের ভাষা!
অবাক  হয়ে  বললো  তারা,"সাহস কত ভাব,
লিখেছেন তাই বলতে হবে কোথা এটা পাব?
রঙ্গ  করেই  বলা  হলো," বুঝলি  কিনা ছেলে,
রেমডিসিভির পেয়ে যাবি সত্যি থানায় গেলে।
থানায় গেলে বলা  হলো," দিতে  বলো লেখে,
কত বড়ো বুকের  পাটা আমরা নেবো দেখে!"
ফিরে এলে বললো,"আছে মূল্য হাজার কুড়ি,
দামের কথা শুনে  ছেলের  মাথা গেলো ঘুরি!

শান্ত হয়ে দেখলো  ভেবে জীবন সবার আগে,
বাঁচলে  বাবা  দিতে  রাজি 'কুড়ি' যদি  লাগে!
ক্লান্ত দেহে  ফিরলো  ঘরে হাজার কুড়ি গুণে,
সন্ধ্যাবেলা বজ্র পড়ে  অক্সিজেন  চাই  শুনে!
শিশুর মত কেঁদে কেঁদে বললো ফোনে তাকে,
"টাকা দেব জোগাড় করে দিন না যদি থাকে!
"এখানে নাই"ওদিক হতে বললো চেপে হাসি,
"চেষ্টা করব কিন্তু বাপু লাগবে হাজার আশি।"
মারণব্যাধির চেয়ে  এ তো বিরাট বড়ো থাবা,
"একটু কমে দেবেন না'লে মরেই যাবে বাবা!"

"কমে পাবে অক্সিজেনটা ? বড্ড তুমি বোকা,
সবাইকে যে বাঁচতে হবে কে বলেছে খোকা ?"
এ কথাটা কানে  ছেলের  বাজলো  বারেবারে, 
মানুষ হয়ে মানুষকে কেউ বলতে এমন পারে?
অক্সিজেন অপ্রতুল  দেশে জানে সেটা ছেলে,
আন্টির কানে দিলো সেটা একটা যদি মেলে!
বাবার কথা ভেবে  ভেবে  বক্ষ ছেলের  ফাটে,
অক্সিজেনের সিলিন্ডারটা জোগাড় হল ষাটে।
জিনিসটাকে পৌঁছে দিয়ে রাতেই ঘরে ঢোকে,
অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনে ঘুম আসে না চোখে!

রাত পোহালেই  খবর  এলো স্থিতিশীল বাবা,
শহর চষে চষে  কিশোর  বসলো খেয়ে থাবা!
আগের আঘাত বুকে ছিলো এবারে তা মাথে,
দিদির কানে খবর  দিলো  মাতা সাথে সাথে। 
মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ে আঁধার দেখে মাতা,
ঘোর বিপদে শেষে হলো  সেলেব দিদি ত্রাতা।
তার  সাহায্যেই  অবশেষে  সকল  বাধা ঠেলে,
আগের বেশি ঘাম ঝরিয়ে বাবার পাশে ছেলে।
জগৎ জুড়েই  এই  দিদিরা অন্ধকারে আলো,
ছেলের মাতা সুস্থ  আছে  মন্দে খবর ভালো!

বাবার  পাশে  ছেলে  শুয়ে  বেডে  পাশাপাশি, 
বাবার মনে সাহস  দিতে  বললো ছেলে হাসি-
"মরার আগেই মরে কিন্তু যেয়ো না বাপ হেরে,
এ রোগে তো মরার  চেয়ে  যাচ্ছে বেশি সেরে।
'ফাইট কোনি!ফাইট!' বাবা এখন মনে রেখো,
যুদ্ধ জিতেই ফিরবো ঘরে বাপবেটাতে দেখো।
"কিছু মানুষ ছেড়ে  সবাই  যে যার মত বিজি,
তোমার মত থাকলে  ছেলে যুদ্ধ জেতা ইজি।"
মৃত্যুঞ্জয়রা  যুদ্ধ  জিতেই  ঘরে  আছে ঠিকই, 
এদের থেকে আমরা সবাই চলো কিছু শিখি।

বর্ধমান,ভারত

Comments

Popular posts from this blog

আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকা - জানুয়ারী সংখ্যা ২০২৪

মাটির শহর - সৌভিক দেবনাথ

কবি বিকাশ ভৌমিকের কবিতা