বর্তমানের পরকীয়ার এক গল্প - ভালোবেসে সখী নিভৃত যত্নে - সাগর হালদার

 ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে!

                      - সাগর হালদার

        
শরতের মেঘগুলো ভাসতে ভাসতে কোথায় যে যায় তা এখনো জানা হয়নি তমালের। এ সময়টা কি এখনো মনে পড়ে সুমিত্রার? খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটেছিল যার সাথে শরতের দিনগুলি, সেসব দিনগুলি কি আর ভাবায় সুমিত্রাকে? সেসব মুহূর্তগুলো কি আর মনে পরে সুমিত্রার? তমালের মাথা ভোঁ ভোঁ করে ওঠে সেই বিকেলটার কথা মনে পড়লে। ওর তো কোনো দোষ ছিল না; ওতো নিঃস্বার্থ ভাবে স্বপ্ন দেখেছিল সুমিত্রার!

আরে তুই এখানে! নিচে কখন থেকে ডাকাডাকি করছে মামারা। কি যে দেখিস এতো আকাশে? নিচে যা এক্ষুনি, কারা যেন এসছে। তমাল বিন্দির দিকে গোল গোল চোখ করে তাকালো। বিন্দি আসলে পাশের ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়ার মেয়ে, মায়ের পছন্দতেই বেশিরভাগ সময় সে আমাদের বাড়িতে থাকে। তমাল আর কথা না বাড়িয়ে নীচে চলে গেল।

তমাল প্রচণ্ড ঘামছে, হাঁটু থরথর করে কাঁপতে লাগলো। চিবুকে সেই চেনা তিল ঘামে চকচক করছে, এটা কাকে দেখছে এতবছর পর! কী করছে এখানে ও? কেনই বা এসছে ?
এই তো তুই, কতক্ষণ ধরে খুঁজছি তোকে, কোথায় ছিলি? দেখ কে এসেছে!
তমাল জোর করে চোয়াল শক্ত করে মুখ খুললো, আমায় ডাকছো কেনো?
সুমিত্রা ওর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি নামিয়ে নিয়ে আলতো স্বরে বললো, কি চেহারা করেছিস এটা তমু?
তমালের মাথা থেকে পা অবধি শিহরণ জাগলো। কতদিন পর ও ডাকটা শুনলো। এটা কী স্বপ্ন নাকি সত‍্যি!

বাড়ির সবাই ওদের আলাদা ছেড়ে দিয়েছে। যে যার মতো কাজে লেগে গেছে- রান্নাবান্না, পুজোর সামগ্রী গোছানো, হইহুল্লোড় লেগে আছে চারপাশে। তার মধ্যে ওরা দুজন নির্জন দ্বীপের মতো একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে, কেউ কোনো কথা বলছে না। 
সুমিত্রা প্রথম কথা বলে নীরবতার রেশ ভাঙল। এখনো ভালোবাসিস আমায়?

কি হবে শুনে? তোর তো সংসার আছে।

পালাবি আমায় নিয়ে?

তোর এতদিনের সংসার? আর তোর বর আমায় ছেড়ে দেবে বুঝি?

আমি সুখ চাই, দিবি?

আমি তো এটাই চেয়েছিলাম। সেদিন বিকালের পর থেকে সবই স্মৃতি হয়ে ছিল। আজ আবার অতীত এসে ধরা দেবে কোনোদিন ভাবিনি।

সেই মনে আছে, আমরা একসাথে স্বপ্ন দেখতাম। আমি কিন্তু আমার মতো করে সাজাবো সবকিছু। তোর জীবনের এতগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়া বছর আমি আবার সাজিয়ে তুলবো, তুই দেখিস।

এখন কেউ নেই, চল বাড়ির পিছনের দরজাটা দিয়ে বেরিয়ে যাই। ঠিক একটা ব‍্যাবস্থা হয়ে যাবে।

তমু দেখ, মরুভূমিতে বৃষ্টি নামলো!