অন্তিম পরিণয় - দেবস্মিতা মন্ডল

 অন্তিম পরিণয়

         দেবস্মিতা মন্ডল 



ঝিমলি, ইমলি আর রিমি তিনজন খুব ভালো বন্ধু। তারা ছোটবেলা থেকে একসাথে পড়াশোনা করেছে। এখন আলাদা বিষয় নিয়ে যে যার মতন আলাদা কলেজে পড়াশোনা করে। তবে তারা যেহেতু একই পাড়ায় থাকে, তাই সময় সুযোগ পেলেই তারা একসাথে আড্ডা মারতে বেরিয়ে পরে। এমনই এক ছুটির দিনে ইমলি বললো চল অনেকদিন হয়েগেলো আমাদের সেই নদীর পাড়ে বসে গল্প করা হয়নি, দেখা হয়নি সেই দূর থেকে আসা নৌকা গুলোকে। তাঁদের বাড়ির পাশেই ছিল একটা ছোটো নদী। সেখান থেকে মাঝে মাঝেই একটা-দুটো নৌকা যাতায়াত করতো। বিকেলে তারা একসাথে এসে বসলো সেই নদীর ধারে। এবার একথা সেকথা বলতে বলতে ঝিমলি হঠাৎই বলে উঠল- জানিস সেদিন একটা অদ্ভুত বিবাহের গল্প শুনলাম। রিমি আর ইমলি বললো কিরকম? ঝিমলি বললো শুনবি তোরা? ওরা বললো হ্যাঁ বল বল,ঝিমলি বললো তবে শোন।


            আমরা জানি, বিবাহই পারে দুটো মানুষকে এক পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ করতে। দুটো প্রাণকে এক আত্মায় মিলিয়ে দিতে। কিন্তু সেই বিবাহটা ছিল একদম অন্যরকম। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দুজন খুব ভালো বন্ধু ছিল। তাদের বন্ধুত্বটা ধীরে ধীরে ভালোবাসায় পরিণত হতে থাকে। তারা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতো। তাদের মধ্যে একটা মিষ্টি প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে খুব একটা যে ঝামেলা হতো তাও নয়। তবে তাদের মধ্যে একটা বিষয়ে মাঝে মাঝেই দূরত্ব তৈরি হতো। রিমি বলল কি বিষয় রে? ঝিমলি বলল সেটা তারা ছাড়া আর কেউ কিছু জানতোনা। ইমলি বললো আচ্ছা তারপর বল। হুমম, সেই দূরত্বটা মেয়েটা সহ্য করতে পারতোনা। একদিন সে ছেলেটাকে তার জীবন থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। তখন ছেলেটা বুঝে উঠতে পারেনা কি করবে, তবে সে তাকে ছেড়েও থাকতে পারবেনা। তাই সে উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকলো। এর বেশ কিছুদিন পর মেয়েটা তাকে একদিন চিঠিতে জানায় যে শোনো আমাদের মধ্যে হাজারো দূরত্ব আসলেও আমাদের যে সম্পর্কটা তৈরি হয়েছিল তার কখনো বিচ্ছেদ ঘটেনি, ঘটবেও না। তোমার আর আমার বিয়ে হবে, হবেই। তুমি দেখে নিও, সবার সামনে দাঁড়িয়ে তুমি আমাকে মালা পরাবে, সিঁদুর পরাবে। তাই তুমি যেখানেই থাকোনা কেন, তোমাকে আসতেই হবে আমার কাছে।



             ইমলি বললো বিয়ে! কি করে হবে? ওদের মধ্যে তো কোনো যোগাযোগই নেই এখন। রিমি বললো তারপর কি হলো? বিয়ে হলো? এবার ঝিমলি বলে উঠলো সব হলো তবে একদম অন্যরকম। ইমলি বললো বল কিরকম। শোন, মেয়েটা হঠাৎ ছেলেটাকে একদিন রাতে এসএমএস করলো কালকে একবার এসো আমাদের বাড়িতে। আর আসার সময় তোমার প্রিয় ফুলের মালাটা আনতে ভুলোনা কিন্তু। আমি চাই আমাদের বিশেষ দিনটা একসাথে কাটাতে। আসলে তারা মাঝে মাঝেই এরকম বিশেষ দিনে দেখা করতো,বেড়াতে যেত। ছেলেটা ভেবেছিলো সেরকমই একটা দিন হয়তো কালকে। তাই সে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লো আর আসার সময় একগোছা গোলাপ ফুল এবং তার প্রিয় রজনীগন্ধা ফুলের মালাটাও কিনে নিলো।


 

            রিমি বললো এবার তাহলে ওদের বিয়েটা হলো বল। ঝিমলি বললো হ্যাঁ হলো তো তবে, ইমলি বললো তবে কি রে? বল না। হুমম, ছেলেটা চকলেট আর ফুল নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই দেখে অনেক লোকের ভিড়। সে ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে দেখে মেয়েটা শুয়ে আছে। তখন তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে। ভাষা হারিয়ে ফেলে এক নিমেষে। বাড়ির লোক কিছুই জানেনা কি করে হলো এসব। বাড়ির লোক ভাবলো তার খুব কাছের বন্ধু ছিল ছেলেটা তাই হয়তো দেখতে এসেছে। পাস দিয়ে সবাই বললো নাও আবার যে মালাটা এনেছো পরিয়ে দাও দেরি হয়ে যাচ্ছে। সে মালাটা গলায় পরিয়ে দিলো আর গোলাপের গোছাটা শক্ত করে ধরাতে কাটা ফুঁটে সারা হাতে রক্ত ভর্তি হয়ে গেলো। প্রিয় ফুলটা আর চকলেটটা তার হাতের উপর রেখে দিলো। এরপর সে মেয়েটার মাথায় হাত বুলাতেই মেয়েটার মাথা রক্তে ভর্তি হয়েগেলো। তারপর তাকে জড়িয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো। বাড়ির লোকেরা তাকে সরিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে চলে গেলো।


   

              তারপর সে আসতে আসতে বাড়িতে এসে শুয়ে পড়লো। সে চোখ বোজাতেই দেখলো মেয়েটা তার সামনে দাঁড়িয়ে খুব হাসছে আর বলছে দেখো বিয়েটা আমাদের হয়েই গেলো। তুমি এসে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলে যখন, তখন আমাদের শুভদৃষ্টি হলো। তারপর মালা বদল আর তোমার হাতের ওই রক্তে আমার মাথা ভর্তি হয়ে গেলো লাল রঙে। মিলে গেলোতো সেদিনের আমার বলা কথাটা। "আমাদের বিয়ে হবে, হবেই।" গল্পটা এখানে শেষ করার পর ঝিমলির চোখ থেকে অঝোরে জল ঝরতে লাগলো। ইমলিও চোখের জল ধরে রাখতে পারলোনা। শুধু নদীর মতন জল টলমল চোখে রিমি এক দৃষ্টিতে নদীর দিকে তাকিয়ে বললো "সব নৌকা তীরে ফিরে আসেনা, কেউ কেউ অজানা সমুদ্রের উদ্দেশ্যেও যাত্রা করে"।



Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকা - জানুয়ারী সংখ্যা ২০২৪

মাটির শহর - সৌভিক দেবনাথ

কবি বিকাশ ভৌমিকের কবিতা