আবার ফিরে পাওয়া - সাগর হালদার

 ছোটগল্প - আবার ফিরে পাওয়া

লেখক -  সাগর হালদার


               ছুটির রবিবার। নামের মধ‍্যেই একটা কোথায় অবসর লুকিয়ে আছে। রবি'র অবসর, নিত‍্যনিয়ত রুটিনের বাঁধাধরা কর্মের থেকে বিরতি, কিছুটা আলসেমি, মৃদু চালে চলা। রবি কথার অর্থে দু'টো দিক উন্মোচিত হয়, একদিকে আলোকদাতা সূর্য অপরদিকে সাহিত্যের বটবৃক্ষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আমার গল্পের রবি এর কোনোটাই নয়, সে একজন প্রতন্ত গ্রাম অঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার বাকি পরিচয় দেওয়ার আগে বর্তমান অবস্থাটা জানিয়ে রাখা ভালো, বাবা মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে এখন তাদের অভাব কিছুটা ঘুচল বটে, আর্থিক দিক থেকে নয় রবি'র শিক্ষার দিক থেকে। রবি এখন মহাবিদ‍্যালয়ের ছাত্র। বয়স ওই আঠারো-ঊনিশ এই বয়সে তাকে শিশু বলা চলে না, কিন্তু সমাজ ধেড়ে খোকা বললেও শিশুসুলভ মন, সরলতা, সাদা-মাটা স্বভাব তার পিছু ছাড়েনি। এখন রবি'র মনস্তাত্ত্বিক অর্থাৎ মনের ভাবনা, চিন্তাধারার প্রকৃতি কিছুটা পরিবর্তন ঘটছে কিনা জানি না, তবে সে দিন-দিন মুষড়ে পড়ছে সেটা লক্ষ্য করছে তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু সৌম‍্য ও তার খেলার সঙ্গী দোলন। ভালো বন্ধু তৈরি হয় স্কুলের গন্ডিতেই, এটা বলার কারণ সৌম্য তার স্কুল থেকেই বন্ধু। আর দোলন রবি'র থেকে বয়সে ছোটো কিন্তু বুদ্ধির দিক থেকে প্রাপ্তবয়স্ক, আমরা যেটাকে বলি পাকা বুড়ি। দোলন পাশের বাড়ির ভাড়াটিয়া। রবি আর দোলন দুটিকে একসাথে বেশ মিষ্টি দেখাত, গ্রামের লোক বেস্ট জুটি বলত। সেই রবি এখন দোলনকেও ডাকে না খেলার জন‍্য, নিজে হাতে প্রকৃতির সামগ্রী নিয়ে দোলনকে সাজিয়েও দেয় না, নিজের মধ‍্যেই থাকে। দোলন মনের দিক থেকে একা হয়ে যায় তার দোলাচলতা, অস্থিরতা বেড়ে যায় এখন রবিকে দেখলে। দোলন একদিন পুকুর ঘাটে দাঁড়িয়ে নির্জনতায় সৌম‍্যের সাথে রবি'র বিষয় নিয়েই কথা বলছিল। বলে রাখি, সৌম্য আর দোলনের মধ্যে এক দূরের আত্মীয়তার সম্পর্ক। তখন সৌম‍্য লক্ষ্য করল রবি তার প্রিয় লাল সাইকেলটা নিয়ে পুকুর ধার বরাবর এইদিকেই আসছে। দোলন দেখে অবাক হল রবি কদিনই ঘরের মধ‍্যে থাকে আর তার রুটিন এখন সকালবেলা কলেজ যাওয়া আর বিকাল হলে বাড়ি ফিরে আসা। সেই যে বাড়ি ঢোকা আর বেরোয় না। তবে কি আজ রবিবার বলেই কিছুটা পাল্টালো তার রুটিন, তাই কি সে প্রকৃতির নির্জনতা উপলব্ধি করতে এসেছে। রবি পুকুর ধারে দাঁড়িয়ে থাকা দুই বন্ধুর সামনে এসে সাইকেলটা থামিয়ে ঘাসের ওপর শুয়ে দিল ও কোনো কথা না বলেই জুতো টা খুলে তার ওপর বসে পড়ল। এগিয়ে গেল দোলন তার দিকে, পাশে বসল তার, কিছু বলতে গেল, তার আগেই রবি বলে উঠল দেখ পুকুরের জলটা আজ খুব নির্জন দেখাচ্ছে। যেখানে সৌম্য দাঁড়িয়ে ছিল ফ‍্যালফ‍্যালিয়ে চেয়ে রইল রবি'র দিকে, আর মনে মনে ভাবল সরলতাকে কেমন যেন দিন দিন বিজ্ঞতা গ্রাস করছে। দোয়েল বলে উঠল কি হয়েছে রে তোর? রবি আলতো হেসে একটা ঢিল হাতে নিয়ে পুকুরের জলে ছুঁড়ে কম্পনের দিকে একমনে চেয়ে রইল। তারপর হঠাৎ বলে উঠল সময় যেন বাস্তবের সাথে মিলিয়ে এভাবেই ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেয়।



Comments

Popular posts from this blog

আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকা - জানুয়ারী সংখ্যা ২০২৪

মাটির শহর - সৌভিক দেবনাথ

কবি বিকাশ ভৌমিকের কবিতা