আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার ব্লগ ম্যাগাজিন - ৫ (বাবা - সংখ্যা)

আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকা 
 বিশ্ববঙ্গ বাংলা সাহিত্য একাদেমী অনুমোদিত 
Registration number - (BBSA/GM/132/2021) 
 আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার ওয়েব ম্যাগাজিন সংখ্যা 

 পঞ্চম সংখ্যা - বাবা 

আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার 
প্রকাশ তারিখ - ১ নভেম্বর ২০২১
প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদিকা: সোমা বিশ্বাস 
উপদেষ্টা : সোমনাথ নাগ, তপন কুমার তপু
প্রচ্ছদ : বিপ্লব সরকার

সম্পাদকীয় :
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার ওয়েব ম্যাগাজিন সংখ্যা প্রকাশিত হলো। সকল কবি ও সাহিত্যিক ও পাঠক-পাঠিকা বন্ধুকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
                            - সোমা বিশ্বাস 


লেখা পাঠানোর ঠিকানা - aalordishasahityapotrika@gmail.com 
ওয়েবসাইট - aalordishasahityapotrika.blogspot.com

লেখার দায় লেখকের, সম্পাদকের নহে। 

 বাবা সংখ্যার লেখকসূচী :

নিবন্ধ - 
১) কুনাল দাস - মধ্যবিত্ত বাবা
২) বারিদ বরণ গুপ্ত - ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম
গল্প - 
৩) অসীম সরকার - বাবা
৪) গৌরী মন্ডল - শ্রদ্ধাঞ্জলি
কবিতা - 
৫) বিপ্লব কর - বাবা
৬)সৌরভ পাত্র - পিতা হওয়া কি মুখের কথা
৭)সজল মণ্ডল - পিতৃহীন, বাবা
৮) মনীষা ঘোষ - বাবা আমার মস্ত পৃথিবী 
৯) সুপ্রীতি বাগ - বাবা
১০) খাজা রফিক - বাবা
১১) শুভশ্রী দাস - বাবা
১২) শোভন দেবনাথ - বাবা
১৩) সুতপা ব‍্যানার্জী(রায়) - স্নেহের পরশ, জনক
১৪) গৌরী মন্ডল - স্মৃতি চারণ
১৫) গৌরী মন্ডল - বাবা
১৬) রাতুল চক্রবর্তী - অশথ বটবৃক্ষের মতো
১৭) শাশ্বতী দেব - বাপী
১৮) তপন কুমার তপু - বাবা
১৯) অরবিন্দ সরকার - বাবা
২০) অরবিন্দ সরকার - মোদের গরীবের বাবা
২১) রাজেশ জানা (নীলচাঁদ) - পিতা
২২) শান্তি রঞ্জন দে - হতভাগ্য বাবা  
২৩) অমল ভট্টাচার্য্য  - হে পিতা 
২৪) Diptarupa Mallick -  My father
২৫) রবি শঙ্কর মুখোপাধ্যায় -  জন্মদাতা
২৬) অক্ষয় কুমার বৈদ্য - নির্ঘুম প্রহরে ছায়াহীন আমি 
২৭) অঞ্জলি দে নন্দী, মম - বাবা
২৮) সুনির্মল বসু - অশ্রু নদীর ওপার হতে,পিতৃ স্মৃতি
২৯) Akash Bhagat - The Real Father
৩০) সোনালী বসু - বাবা আমার আদর্শ
৩১) প্রান্ত দত্ত - প্রিয় বাবা 
৩২) রূপো বর্মন - হ্যাঁ আমার বাবার 
৩৩) জীবনানন্দ বসু - বাবা
৩৪) সন্তু প্রামাণিক - বাবা ও সমুদ্র 
৩৫) সোমা বিশ্বাস - একটা সময় 







নিবন্ধ - 

মধ্যবিত্ত বাবা
কুনাল দাস (হুগলি) 

   চশমাটা খুলে আস্তে করে টেবিলে রাখলেন বাবা। চেয়ারটা টেনে শরীরটা যতটা সম্ভব এলিয়ে দিয়ে বসে পরলেন এবং যেন শরীরের সমস্ত ক্লান্তি ঢেলে দিলেন ওই চেয়ারে ! বাঁ হাত চেয়ারের হাতলে, ডান হাতটা কপালে!
কি যে আকাশ পাতাল ভাবছেন কে জানে! হয়ত ফেলে আসা জীবনের ফাঁকফোকর থেকে তুলে আনছেন কোন হারিয়ে যাওয়া ছবি ! কিংবা হয়তো হিসেব করতে বসেছেন জীবনের! পাওয়া না পাওয়ার হিসাব, শত হলেও একজন বাঙালী পিতা তো, জীবনের একটা সময় এ হিসেব প্রত্যেক পিতায় মুখে প্রকাশ না করলেও মনে মনে ঠিকই করে থাকেন!
 যদি তিনি কোন কন্যার পিতা হন, তাহলে ভাবেন আমি যেভাবে এ মেয়েকে মানুষ করেছি , কে জানে শশুরবাড়িতে সেই আদর কতখানি পাবে! একদিন সত্যি ফাঁকা হয়ে যাবে এ বাড়িটা সেই সঙ্গে আমার মন,
জানিনা কেমন বাড়িতে পরবে লোকজন কেমন হবে , হয়ত এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোন ঝাপসা হয়ে যায় কোন কোন বাবার , অজান্তেই গড়িয়ে পরে দু - একফোঁটা অশ্রু ! আবার কেউ কেউ দমিয়ে রাখে কান্না মনের ভিতর!
আর যদি মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় তাহলে কেমন আছে মা আমার কে জানে!! ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করছে তো ! মায়ের মত হয়ত সবসময় মুখফুটে জিজ্ঞাসা করতে পারেন না কিন্তু চিন্তা তাঁরও হয়!..
আরেক পিতার কথায় আসি তিনি এক ছেলের বাবা , তিনি ছেলেকে মুখ ফুটে কোনদিন বলেন না বাবু আমার এই জিনিসটা দরকার কেনার মত এইমুহুর্তে টাকা নেই তুই একটু এনে দিবি? কোন দিনের জন্যে বলেন না বাবু পূজোয় একটা জামা দিস! একটা ছেঁড়া জামা পরে দিব্যি কাটাতে চলতে পারে এই অদ্ভুত জীবেরা ! তবুও কষ্ট এদেরও হয় ছেলে যদি একা নতুন জামা দিত ! একবার হলেও ভাবেন ছোটবেলা থেকে এত করলাম বিয়ের পর দেখবে তো বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে না তো  ওর মাকে নিয়ে! আর যদি সত্যি ছেলে না দেখে তাহলে সেই পিতার যে কষ্ট তা লিখে বর্ণনা করার মত কলমের জোর আমার নেই!!
এরাই হল বাঙালী মধ্যবিত্ত পিতার দুই অনবদ্য জীবন্ত চিত্রাঙ্কন!



বাবা: ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম
বারিদ বরণ গুপ্ত

এবার পুজোয় নবমীর দিন ভুরকুন্ডার দেবী সিংহবাহিনীর রিপোর্টিং করে মালডাঙ্গায় এক বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেছি, দুতলার একটা ঘরে বসে লেখালিখি করছি, জানলা খোলাই ছিল, হঠাৎ নজরে এলো এক বৃদ্ধ, বয়স ৮০ এর কাছাকাছি, দেখছি আপন মনে ঘাস ছিঁড়ছে আর বিড়বিড় করছে, প্রথমে ভাবলাম হয়তো বাড়ির সামনে ঘাস হয়েছে তাই পরিষ্কার করছে, অচিরেই ঘোর কাটল বন্ধুর ডাকে, ও জানলার দিকে তাকিয়ে বলল-'মুখুজ্জে জেঠু, মাথা খারাপ হয়ে গেছে!' তারপর যা বলল, জীবন নিয়ে আর একবার ভাবতে হলো।

             ভদ্রলোক কেন্দ্রীয় সরকারের একজন উচ্চপদস্থ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী, দুই ছেলে ইঞ্জিনিয়ার বর্তমানে আমেরিকাবাসী, এক মেয়ে নামি ডাক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে, বর্তমানের দিল্লিতে থাকে। ভদ্রলোকের একসময় অনেক জমি জায়গা ছিল, ছেলেরা সব বিক্রি করে চলে গেছে, শুধু পৈতৃক ভিটে টুকু পড়ে আছে, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ভদ্রলোক একাই যমপুরী পাহারা দিচ্ছে, গ্রামের এক ভদ্রমহিলা একটু দেখাশোনা করে, বুড়োর রান্নাবান্না করে দেয়, মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে, গোটা গ্রাম ঘুরে বেড়ায়, দুই ছেলে মাসে মাসে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেয়, এই ভাবেই চলছে ওর জীবন!

                                 কাহিনীটা শুনে, মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল, এখন প্রশ্ন, ওই ভদ্রলোক কখনো কি ভেবেছিল যে বৃদ্ধ বয়সে তাকে একাকী জীবন যাপন করতে হবে? তার তো এই বয়সে তো নাতিপুতি নিয়ে অবসর কাটানোর সময়, ছেলেমেয়েদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছে, মানুষের মত মানুষ করেছে, মেয়েকেও একজন ডাক্তারের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে, কোন কাজ তো অটুট রাখে নি, তার তো এই পরিনিতি হওয়ার কথা নয়! আসলে এর জন্য দায়ী বর্তমান ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থা! বর্তমান সময়ে সামাজিক সম্পর্কগুলো খুব আলগা হয়ে যাচ্ছে, বাবা-মা-ভাই-বোন সকলের সঙ্গে যেন একটা ধার করা সম্পর্কের বাতাবরণ, সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে আবেগ উষ্ণতা শেষ হয়ে গেছে, বর্তমানে যা আছে তা হলো দেয়া-নেওয়ার সম্পর্ক, যতদিন লেনদেন আছে ততদিন সম্পর্কের উষ্ণতা আছে, লেনদেন শেষ হয়ে গেলে, তা শীতলতায় নিমজ্জিত হচ্ছে!
                      শুধু মুক্তিরাম মুখার্জিরই নয়, এই হাল সমাজে সিংহভাগ পিতা-মাতার, বর্তমান প্রজন্মের কাছে এরা যেন বোঝা হয়ে উঠেছে, তাই তাদের কপালে জুটছে একাকীত্ব অথবা বৃদ্ধাশ্রম! এই সেদিন একটা খবর কাগজে দেখছিলাম, এক ভদ্রমহিলার দুই ছেলে প্রবাসে রয়েছে, দীর্ঘদিন ভদ্রমহিলা বাড়িতে একাকী, বন্দিজীবন যাপন করছিলেন, কিন্তু শেষ বয়সে তাকে সুসাইড করতে হয়! আসলে একাকিত্বের জ্বালা।

                         এরকম শত শত উদাহরণ রয়েছে, যা বর্তমান অত্যাধুনিক সমাজের একটা স্টাটাস একটা অলংকার, বৃদ্ধ মা-বাবা বর্তমান প্রজন্মের কাছে মূল্যহীন, পরিবারের বোঝা হয়ে উঠছে, এর ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমাদের, বর্তমান প্রজন্মের মানসিকতার বিপর্যয়ের দিকে আঙ্গুল তুলতে হবে। বর্তমান সমাজে স্নেহ মায়া মমতা ভালবাসা মূল্যবোধ সব হারিয়ে যাচ্ছে, বর্তমান ভোগবাদী সমাজ পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে, বর্তমান ইউরোপের সমাজ ব্যবস্থায় এই চিত্র আমরা দেখতে পাই, তার ছায়া এসে পড়ছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে।

                        অতীতে যৌথ পরিবারের মধ্যে, বৃদ্ধ মা-বাবারা যথেষ্ট নিরাপদ ছিল, পরিবারের ক্রিয়াকর্মে তাদের একটা ভূমিকা ও ছিল, কিন্তু বিজ্ঞান পযুক্তি যত উন্নত হয়েছে, সমাজ থেকে দয়া মায়া স্নেহ মমতা মূল্যবোধ হারিয়ে গেছে, তার প্রভাব এসে পড়েছে যৌথ পরিবার ব্যবস্থায়, যৌথ পরিবার গুলো ভেঙে টুকরো টুকরো অনু পরিবার এ পরিণত হচ্ছে, আর সেই পরিবারগুলোতে বৃদ্ধদের কোনো ভূমিকায় থাকছে না, যেন সংসারের বোঝা হয়ে উঠছে। 
           দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটতে থাকে, নগরায়ন, শিল্পায়ন, পাশ্চাত্যকরণ, শিক্ষার বিকাশ, প্রভুতির ফলে ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী পরিবার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটতে থাকে, পরিবারের অন্তরঙ্গ এবং বহিরঙ্গে এই পরিবর্তন চোখে পড়ে, প্রাচীনকালে যৌথ পরিবার গুলির যে ভূমিকা ছিল তা বর্তমানে, বেসরকারী বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি পালন করছে, গড়ে উঠছে বেবিসিটার, বৃদ্ধাশ্রম, প্রভৃতি রকমারি সব প্রতিষ্ঠান। তাই বর্তমানে সমাজেরই এলিট সোসাইটির বেশিভাগ বৃদ্ধ মা-ববার স্থান হচ্ছে বার্ধক্যের বারানসি বৃদ্ধাশ্রমে, যদিও গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থায়, এখনো সেই ছবি দেখা যায় না, তবে আগের মত সম্পর্কে উষ্ণতা আর নেই, চোখ লজ্জার খাতিরে যেটুকু করা, তাই হচ্ছে! তাই বৃদ্ধ পিতা বা মাতা এখন নিঃসঙ্গ, দুর্বিষহ জীবনযপন করতে বাধ্য হচ্ছে। 

                তাই আমরা সবশেষে বলতে পারি, বর্তমানের অত্যাধুনিক সমাজে, বৃদ্ধ পিতা-মাতা, এক অবাঞ্ছিত উপসর্গ, পরিবারের বোঝা! জানিনা আগামী দিনগুলো তাদের ভাগ্যে কি লেখা আছে! তবে এ কথা হলফ করে বলা যায় যে পশ্চিমা সভ্যতার নগ্নরূপ ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় এসে পড়েছে! যে ব্যবস্থায় বৃদ্ধ পিতা-মাতার নিঃসঙ্গ জীবনের অভিশাপ একটা অতি সাধারন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে!!



গল্প :

বাবা
                   অসীম সরকার

            বাবা শব্দে এমন এক বিস্ময়কর অনুভূতি আর মাদকতা মিশ্রিত আছে যা নিজে বাবা না হওয়া পর্যন্ত সম্যকরূপে ধারণা করা সম্ভব নয়। ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি যে, 'পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিত্য হি পরমং তপঃ পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে সর্বদেবতা।'

            বাবা তাঁর কাজ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে পালন করে যান মুখ বুঁজে, আমাদের জ্ঞানের গভীরতা কম থাকায় অথবা অজ্ঞানতার কারণে বাবার অসীম পরিশ্রম নজরে ঠিক আসে না! তাঁর নিদারুণ কষ্ট কেউ সঠিক বুঝিনা, তাই তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য নিজেদের সবল হাতদুটো বাড়িয়ে দিইনা সচরাচর। কাজের মাসি কামাই করলে বাবা জল তোলেন, বাসন মাজেন ঝাড়পোঁছ করেন...আমরা দেখেও দেখি না! গা বাঁচাতে বুঝেও বুঝিনা।

' অনেক মা তাঁর অপত্য স্নেহের বশে সন্তানের বহু দোষ ত্রুটি চাপা দিয়ে রাখেন। কিন্তু বাবার কাছে সন্তানের প্রতি স্নেহ আবেগ ভালোবাসা অনেকটা ফল্গুনদীর মতো হৃদয়ের গভীরে বইতে থাকে সহজে বহিঃপ্রকাশ করেন না তিনি। বাবা যদি তাঁর বাহ্যিক আবরণে কঠিন্য ভাব বা মেজাজ বজায় না রাখেন, তবে তো চঞ্চল স্বভাবের সন্তানরা কাউকে মেনে চলতো কিনা যথেষ্ট সন্দেহ! বরং যা খুশি তাই করে বেড়াতো বিশেষ কাউকে তেমন তোয়াক্কা না করে। অসৎ সঙ্গে মিশে নিজের জীবণ ও সমগ্র পরিবারকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারতো।

             আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত রাশভারি স্বভাবের। আমরা যখন খুব ছোট ছিলাম বাবার গুরুগম্ভীর স্বরে ধমক বা বকুনিতে...আমরা ভয়ে জড়সড় হয়ে মায়ের পিছনে আত্মরক্ষার জন্য নিজেদের সমর্পিত করতাম। আমরা সচরাচর বাবার ধারে কাছে তেমন কেউই ঘেঁষতাম না তিনি না ডাকা পর্যন্ত। বাবার সপাটে চড় থাপ্পড় খেয়ে দুই এক দাদা তো কানে কম শোনেন আজও। রবিবারে বাবার হাত ধরে টুকটুক করে বাজার যেতাম। আমাকে তো থলেও ধরতে দিতেন না বাবা...কারণ থলে ছিল আমার উচ্চতা সমান, থলে হাতে ঝুলিয়ে হাঁটলে মাটিতে হোঁচট খেতাম। বাজার পরিপাটি শেষ করে মিষ্টির দোকানে বসিয়ে আমাকে একটা রসগোল্লা মাটির খুড়ীর মধ্যে নিয়ে আমাকে ধীরে ধীরে খাওয়াতেন। নিজে কিন্তু একটুও খেতেন না! বাবা নিজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলতেন...একদম "কথা নয়, বিষম লাগবে" একথা বলে আমার বকবকানি থামিয়ে, টানা রিক্শা তে বাড়ি ফিরিয়ে আনতেন। আজ উপলব্ধি করতে পারি বাবা নিজে রসগোল্লা খেতেন না পয়সার কথা ভেবেই হয়তো। অফিসে বালিগঞ্জ পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে... ট্রামে যেতেন দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভাড়া কম বলে। বাবাকে নিজের জন্য কখনো বিলাসিতা করতে দেখিনি। পুজোর বাজার করার সময়ে সবার জন্য কিনে দিয়ে নিজের কিছুই কিনতেন না, পরে কিনবেন বলে। এটাই হয়তো অনেক বাবাদের মানসিকতা হয়! সেইসব বাবার মুখে আদৌ কোনোরকম আক্ষেপ ভেসে ওঠে না। 

               বাবাকে সারাটা জীবন দারুণ নিয়মানুবর্তিতার সাথে চলতে দেখেছি। ভোর পাঁচটায় উঠে ফ্রিহ্যাণ্ড এক্সারসাইজ সেরে জলে ভিজিয়ে রাখা ছোলা বাদাম খেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে, স্নান সেরে়... সকাল আটটার মধ্যে খাবার খেয়েদেয়ে এসপ্লানেডের অফিসে পৌছতেন ঠিক কাঁটায় কাঁটায় দশটার সময়। বাবাকে দেখে ঘড়ি মেলানো যায় বলে সবাই বলাবলি করতো। অথচ বাবাকে কোনদিন ঘড়ি পরতে দেখিনি! 

               আমরা অনেকেই যেমন বসার সময় কুঁজো হয়ে পিঠ বেঁকিয়ে বসি অথবা কোথাও হেলান দিয়ে বসি, বাবার কাছে তা হবার জো ছিলনা। নিজেও মেরুদণ্ড সোজা করে বসতেন এবং চলা ফেরা করতেন জীবনভর। 

               খুব ভালো করে মুখে শব্দ না করে কমপক্ষে বত্রিশ বার চিবিয়ে চিবিয়ে নিজে যেমন খেতেন, তেমন করেই আমাদের খাওয়ানোর অভ্যাস করাতেন। খাবার সময়ে বিষম না খেলে জলের গ্লাসে হাত দেওয়া ঠিক নয়। খাবারের আধ ঘণ্টা পর জলে চুমুক দেওয়ার অভ্যাস করিয়ে ছিলেন। দুপুরে বা রাতে খেয়েই শুয়ে পড়লে রেগে যেতেন। উচ্চস্বরে কথাবলা বা হাসাহাসি করা অত্যন্ত অপছন্দ করতেন। আমরা পথে চলার সময় পা ঘষটে ঘষটে চললে বা গোড়ালিতে শব্দ করে হাঁটলে খুবই রেগে যেতেন। আমি গেলাসে জল, শরবৎ বা দুধ খেলে গেলাসের মধ্যে ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ার শব্দ হোত, তখন সংযত না করালে হয়তো আজও বহাল থাকতো সেই বদঅভ্যা   

                  বাবা প্রায় বহু বছর বেঁচে ছিলেন। কখনও তাঁকে কঠিন রোগে শয্যাশায়ী থাকতে বা লাঠি/ছড়ি হাতে হাঁটতে দেখিনি। পান দোক্তা জর্দা নস্যি, খৈনি মদ ভাঙে আসক্ত থাকা ব্যক্তিদের দুচোখে দেখতে পারতেন না। বাবাকে কখনো নেশা সামগ্রীর কথা উচ্চারণ করতে শুনিনি। পিসিদের বা দিদিকে বিয়ে দেবার সময়, পাত্রের কোনরকম নেশায় আসক্তি আছে কিনা জেনে নিতেন। 

                 প্রতিদিনই বাবা নিয়ম করে আমাদের পড়াতে বসাতেন, বাংলা ব্যকরণ ইংরেজি গ্রামার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বোঝাতেন। বাবার কাছে যখনই যে বিষয় নিয়ে জানতে চেয়েছি আমরা স্কুল কলেজে পড়ার সময়, ধৈর্যের সাথে কাছে বসিয়ে বোঝাতেন অনায়াসে। বাবা ছিলেন চলন্ত পাঠাগার এবং অভিধান। জিজ্ঞাসা করা মাত্র বানান, উচ্চারণ মানে সহ সব বলে দিতেন। বাবা ছিলেন আমাদের কাছে চরম বিস্ময়। মায়ের শিক্ষা অনুযায়ী বাবার চটি জুতোয় হঠাৎ আমাদের পা লেগে গেলে জুতোকে প্রণাম করতে হতো। যেহেতু জন্মদাতার ব্যবহার্য পাদুকা। মায়ের আদর্শ শিক্ষায়, বাবাকে আমরা দেবতা জ্ঞানে দেখতাম । বাড়ীতে যে কোন পুজোর সময় যেমন সত্যনারায়ণ হোক, লক্ষ্মী পূজা, সরস্বতী পুজো,, বিয়ে, অন্নপ্রাশন, শ্রাদ্ধ, নান্দীমুখ অনুষ্ঠানে পুরোহিতের শ্লোক বা মন্ত্রের উচ্চারণ অশুদ্ধ হ'লে বাবা তখনই তা সংশোধন করিয়ে দিতেন। বাবার অভ্যাস ছিলো আমাদের নতুন ক্লাশে উঠবার পর নতুন বই কিনে আনার পরপরই নিজে পড়ে ফেলতেন। সেখানে যদি ভুল থাকতো লাল কালি দিয়ে শুদ্ধবানান লিখে দিতেন। ভোর বেলা দৈনিক সংবাদ পত্রিকাতেও বানান সংশোধন করে রাখতেন। তাঁরই সন্তান হয়ে কি করে যে আমরা এত ভুল করি তা ভেবে পাইনা! সংশোধন করতেন এই কারণে যাতে তাঁর সন্তানেরা কেউ ভুল কিছু না শেখে।
           
               বাবার উপর একবার আমার খুব রাগ এবং অভিমান হয়েছিল। পাড়ার এক দাদুর একতরফা কথা শুনে আমাকে মারধর করার পরও সেই দাদুটার সামনেই, পাড়ার রাস্তায় সেই দাদুর বাড়ি পর্যন্ত নাকেখৎ দিতে বাধ্য করাতে নাকের ছাল উঠে গেছিল! দুঃখ সেটাই যে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও আমি পেলাম না। অভিযোগ যে কি তা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারিনি। এই সব কারণে যাতে কেউ কখনো নালিশ না করে তার জন্য খুব তটস্থ থাকতাম। বাবার নিজস্ব কোন চাহিদা ছিলো না কেবল তাঁর ছেলে মেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হোক এই স্বপ্ন ছাড়া। পরম্পরায় সেই ভাবধারা আমাদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে। তবে আমি কারও মুখে ঝাল খাইনা...সত্যতা যাচাই না করে ছেলেদের কিছুই বলতাম না। একটু গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে ছিলাম বলেই হয়তো আজ আমার বাড়ি ছাড়া হয়ে গেল বড় ছেলেটা। আলাদা ফ্ল্যাট কিনে দুই রোজগেরে স্বামী স্ত্রী তাদের এক পুত্রসন্তান নিয়ে ভালোই আছে শিবপুরে। ফোনে ভিডিও কলে মাঝে মাঝে কথা হলেও বছর খানেকের উপর আমার গিন্নি তাঁর নিজের ছেলে বৌমা নাতির মাথায় পিঠে হাত বোলাতে পারেনা বলে ছটফট করে দুঃখে কাতর হন।

                  বাবার যে বাধানো দাঁত না থাকায় খেতে কষ্ট হতো, ডাক্তারের পরীক্ষা করিয়ে মা বাবার চশমা থাকাটা যে জরুরি ছিল...বয়স হলে শিশুদের মতো খাবার লোভ বাড়ে এসব অনুভূতি এলো তাদের বয়স কালে নিজে পৌছে যাবার পর। মা যখন কোনমতেই ছুঁচের মধ্যে সুতো পড়াতে পারছেন না...বাবা মায়ের থেকে দশ বছরের বড় হয়েও সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালাতেন। সুতো এদিক সেদিক চলে গেলেও ধৈর্যের ঘাটতি ছিলনা। এখন প্রথমে মাকে এবং কয়েকবছর পর বাবাকে চিরতরে হারিয়ে বুঝতে পারছি তাঁদের মর্ম। বাবা মা কত দুঃখজনক পরিস্থিতি সামাল দিতেন তবুও মুখ ফুটে কোন অনুযোগ করতেন না! আজ আমাদের সকলেরই চোখের নিয়মিত পরীক্ষা হয় একটার পর একটা চশমা করি পাওয়ার বেড়ে যাওয়ায় সেই চশমা অকেজো হয়।
 
               বাবার চশমার হ্যান্ডেল ভাঙা এবং তা টনসুতো দিয়ে বেঁধে ব্যবহার করছেন কিনা!সেসব দেখার সময় ছিল কোথায় আমাদের! ভাগের মা শুধু নয় ভাগের বাবাও গঙ্গা পায় না।
 
                  আমি এবং গিন্নি দু'জনেই অসুস্থ। M.Sc পাশ করে বেকার বসে থাকা এক বিমর্ষ পাঁচফুট আট ইঞ্চি লম্বা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী কর্মঠ ছেলেকে নিয়ে পেনশনের টাকায় কোনওমতে বেঁচে থাকার অভ্যাস করে চলেছি সাড়ে ছয় বৎসর যাবৎ কাল। নিরুপায় হয়েও কোন রকম তোষামোদ, আমরা কেউই করতে জানিনা। তাই ভাগ্যের উপর নির্ভর করেই জীবীত আছি।

                  বাবা দেখে যেতে পেরেছেন তাঁর সব ছেলেরা উপযুক্ত হয়েছে। চাকরি করে সংসার জীবনে প্রবেশ করেছে। বাবা মা শেষজীবনে নিজেরা পরম শান্তি না পেলেও স্বস্তি পেয়েছেন সন্তানদের সাফল্যের কথা ভেবে। আমি বাবা হিসেবে পুরোপুরি সফলতার মুখ এখনও দেখতে পারিনি নিজে। যতদিন নিজে বেঁচে আছি পেনশন পাব। আমি ফটো হয়ে দেওয়ালে ঝুলে থাকার পর, বউ ফ্যামিলি পেনশন পাবে। কিন্তু... সেও তো সারাজীবন বাঁচবে না...তখন কি হবে? অর্থকরী দিক দিয়ে এতটুকুও সঞ্চয় নেই যে একটা ব্যবসার করে দেবার মতো সহায়তা করে দিতে পারবো....সে গুড়ে বালি। অগত্যা প্রতিদিনের মতো বিছানায় শুয়ে শুয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে পাখির কূজন শোনার প্রতীক্ষা করি। আমি তো তবুও সময় মতো বাবা হতে পেরেছিলাম বলে ছেলে দুটোকে মানুষ বা বড়ো করতে পেরেছি। যে ছেলে স্নাতকোত্তর হয়ে বেকার অবস্থায় প্রায় ২৮ বছর পার করতে চললো সে কবে চাকরি পাবে!? কবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে...আর কত বছরে বিয়ে করতে সক্ষম হবে তা ভগবানই জানেন। কবে উপার্জন করে নিজের সংসার পাবে, সন্তানের মুখ দেখবে? কতবছর চাকরি করার সুযোগ পাবে! সে যখন বাবা হবে সন্তানকে কতটা দৈহিক বা মানসিক শক্তি প্রয়োগ করে, গড়ে তুলতে পারবে বা আগামী সময়ে সে কতটা যথার্থ 'বাবা' হয়ে উঠতে পারবে! সেটা না হয় সময় বলবে।
         

  শ্রদ্ধাঞ্জলি
            গৌরী মন্ডল 



প্রিয় বাবা, 
                  হৃদয়ের অন্তরস্থল থেকে তোমার জন্য রইলো অকৃত্রিম শ্রদ্ধা। তুমি কিছু বছর আগে অনেক....অনেক.....দূরে পৃথিবীর মায়ালোক ছাড়িয়ে অসীম নীলাকাশের বিলীন হয়ে গিয়েছো। তবুও তুমি আছো সদা সর্বদা আমাদের আলোর পথযাত্রী হয়ে। তোমার দেওয়া শিক্ষা আজও আমাদের জীবনের পাথেয়..... তোমার দেওয়া আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে...... কোন অন্যায়ের সঙ্গে আপোস না করে..... আত্মঅহং ত্যাগ করে......জীবনের কঠিন লড়াই-এর যে বীজ তুমি রোপন করেছিলে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। ছেলেদের পাশাপাশি তুমি মেয়েদেরও সমান গুরুত্ব দিয়েছো। তাই আজ বলতে বাধা নেই..... বংশের বাতি শুধুমাত্র ছেলেরাই নয় মেয়েরাও জ্বালতে পারে। মহালয়ার পূণ্যলগ্নে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে কেবলমাত্র ছেলেরা নয় মেয়েরাও জলদান করতে পারে।
বাবা আমি যদি তোমায় স্মরণ করে তোমায় জল দিই, তোমায় বাতি দেখায় তুমি খুশি হবে না!! তুমি কী সেই জল গ্রহণ করবে না? বাতি কী তুমি নিভিয়ে দেবে? বলো না বাবা....মেয়েদের বিয়ে দিলে গোত্রান্তর হয়ে যায় জানি। তাই কী আমরা পর হয়ে গেলাম? বিয়ে হলে কেন মেয়েরা পর হয়ে যায় বলতো? কেন? তবে কেন তারা তোমার দেওয়া শিক্ষা, আদর্শ সারাজীবন আঁকড়ে ধরে রাখে। গাছ উপড়ে ফেললেই কী সেই গাছের শিকড়ের উৎস মুছে ফেলা যায়? বলো না বাবা? যাইহোক আমি এই মহালয়ার পূণ্যলগ্নে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে স্মরণ করে বলি—-“ পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহি পরমং তপ/ পিতোরি প্রিতিমা পন্নে প্রিয়ন্তে সর্ব দেবতা। ”
"পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাই পরম তপস্যা। পিতাকে ভজন করলে সব দেবতা সন্তুষ্ট হন।" আমি আমার বাবার ভজন করতে পেরেছি কিনা জানিনা। তবে আজীবন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তুমি যেন তোমার পরমগতি লাভ করতে পার। 
         
                                             ইতি—
                                   তোমার হতভাগ্য মেয়ে

                 এভাবেই অনুতপা প্রতি বছরের মতো চিঠি লিখে বাবাকে স্মরণ করে। বাবার উদ্দেশ্যে গঙ্গায় গিয়ে সে তার শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে।ছেলেদের মতোই গঙ্গায় গিয়ে তর্পণ করার ইচ্ছা থাকলেও করতে পারে না সামাজিক বিধিনিষেধের কারণে। ওর বিশ্বাস একদিন না একদিন এই বিধিনিষেধ উঠে যাবে। মেয়েরাও তাঁদের পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জল দান করতে পারবে। 
             অনুতপার আরো দুই ভাই আছে। তারা প্রত্যেকেই তাদের শ্বশুরের দেওয়া ফ্লাটে বউ বাচ্চা নিয়ে সুখে শান্তিতে আছে। ছোট ফ্যাটের অজুহাতে তারা স্থির করে বড়ো ভাই বাবাকে আর ছোট ভাই মাকে নিয়ে রাখবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এভাবেই কিছু বছর কাটে। শেষ বয়সে এভাবে কাটাতে হবে তাঁরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। তাই বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছেলেদের না জানিয়ে ওরা দুজনেই চলে আসে নিজেদের বাড়িতে। তাই রাগ করেই ছেলেরা বাবা মায়ের খোঁজ খবর নেয়না। অগত্যা অনুতপা বাবা-মায়ের দেখাশোনার ভার নেয়। 
     দেখতে দেখতে আরো সাত আট বছর কেটে যায়। হতাশাগ্রস্ত বাবা-মা মনোকষ্টে ভুগতে ভুগতে দুএক বছরের ব্যবধানে পরলোকগমন করেন। তবে মারা যাওয়ার আগে অনুকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেন যেন ছেলেরা কোনমতেই বাবা-মায়ের মুখাগ্নি না করে। অনুতপার ছেলে দাদুদিদার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে। কিন্তু মহালয়া আসলেই ওর ভীষণ মনখারাপ হয়ে যায় তর্পণ না করার কারণে। তাই প্রতি বছরই বাবা-মায়ের ছবিতে মালা দেয় চিঠি লিখে এভাবেই মনে মনে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায়। 

কবিতা: 


বাবা
বিপ্লব কর  (হাতিরামপুর, বাঁকুড়া) 

তোমার সাথে আমার এখন আর ভালো করে কথা হয়না।
তুমি এখনও কথায় কথায় রেগেও যাও খুব আগের মতোই।
আমি কতবার তোমায় কাঁচা নুন খেতে বারণ করেছি , কথা শোনোনি।
বারবার আমার মনে হয়েছে আমার অস্তিত্ব পৃথিবীতে আছে তো।
ছোটবেলা থেকেই তোমাকে দেখেছি তুমি প্রচুর পরিশ্রম করতে পারো।
এখনও সমান ভাবে করে যাচ্ছো।
কতবার চেয়েছি তোমার এই কষ্ট করার জায়গা গুলো বন্ধ করতে, কিন্তু তোমাকে বোঝাতেই পারি না।
তোমার আবেগ , শরতের মেঘের মতো মান অভিমান, সবার সাথে সহজেই মিশতে পারা,কত কি যে ভালো লাগে আমার ,
তোমাকে কোনদিন বলতেই পারলাম না।
তুমি আর আমি যেন দুটো বিপরীত দিক ,
মতের মিল হওয়াটা তাই বড্ড জটিল।
তোমার মা একবার বলেছিলেন ,' তোদের বাপ ব্যাটার এক মাসে জন্ম এ সমস্যা মিটবে না'।
ছোটবেলায় ভালোবাসতে খুব ।
আমার খুব মনে আছে একটা পাঞ্জাবি পরিয়ে আমায় মোড় নিয়ে যেতে বেড়াতে।
আবার গুপ্ত কাকুর সাইকেলেই আমাকে হাফপ্যাটেলও শিখিয়ে দিয়েছিলে।
তোমার মনে আছে হাতের লেখার জন্য কি মার মারতে।
আমি গলায় জামার নিচে শিবঠাকুর ঝুলিয়ে ঔঁ নম শিবায় জপ করতাম, তোমার মারের হাত থেকে বাঁচতে।
তবু তোমায় আমি ভালোবাসি বাবা।
তোমার স্বাস্হ্য নিয়ে চিম্তা হয়।
তুমি যেদিন রাগ করে মাছ খাওনা সেদিন আমার কষ্ট হয় বাবা। 
আমি তোমায় ভালোবাসি বাবা।
এই তো সেদিন মাঝ রাতে যখন হঠাৎ করে মেঘ ডাকতে শুরু করল ,
আমি গিয়ে দেখছি তুমি জানালা বন্ধ করেছো কিনা,
 তুমি বুঝতে পারো নি।
বড় টর্চ লাইটটা প্রতিদিন তোমার বিছানায় রেখে দিই,
 যাতে তুমি অন্ধকারে বাইরে না যাও। 
তোমায় আমি বড্ড ভালোবাসি বাবা।



পিতা হওয়া কি মুখের কথা
সৌরভ পাত্র (ভাঙ্গাহার, বাঁকুড়া) 

বাস্তবের সাথে পায়ে পায়ে 
পথ চলতে গিয়ে হোঁচট খাই বারে বারে;
তবুও ছাড়ি না হাল পেটের দায়ে 
বৃহৎ এই সংসারের ভারে!

পিতা হওয়া কি মুখের কথা!
দায়িত্ব যাঁর সঙ্গে বিরাজ করে;
দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয় তুমিই শ্রেষ্ঠ মাথা
তোমার পূজা হোক প্রতিটা শিশুর হৃদয় মন্দিরে।



পিতৃহীন
                   সজল মণ্ডল (দীঘা, উত্তর চব্বিশ পরগনা) 

        মা - মা - মাগো তুমি - ই বলোনা -
     আমরা সবার থেকে ক্যানো আলাদা? 
              সবার তো বাবা আছে
        সকল বউ মাথায় সিঁদুর পড়ে
            ভালো লালচে শাড়ী পড়ে
                 তুমি ক্যানো পড় না?

                 আমরা বুঝি গরীব --
          আমাদের কেনার পয়সা নেই
         মা - মা - মাগো তুমিই বলো না 
              কোথায় আমার বাবা ---?

     শোন সোনা তোকে একটা গল্পো শোনাই
                 তুমি তাইই বল না মা 
   আমি ওদের সাথে মায়ের পুজো দেখতে যাবো না
                  তুমিই তো আমার মা।
        আমি দেখবো না মা মাটির প্রতিমা
     সেতো কথাও বলে না আর শোনেও না। 

      মা জানো আমার বাবার কথা খুব মনে পড়ে
        সকলে মা বাবার সাথে পূজো দেখতে যায়
                    আমার তখনই মনে হয়
  বাবা থাকলে তুমি আমি বাবা খুব আনন্দ করতাম
                তুমি বল না মা বাবা কোথায়?
        ক্যনো বাবা আমাদের কাছে আসে না
                    বাবাকে তুমি কি বোকেছো? 
          তুমি বল না মা বাবাকে আর বলবে না?

     না সোনা আমি আর কখনও তোমার বাবাকে- -বোকবোনা। 
       সোনা জানো তোমার বাবা খুব ভালো ছিলেন
                 সবাই তাঁকে খুব ভালো বাসত
                       কখনো মিথ্যা কথা বলত না
                            সব সময় সত্য পথে চলত।

         আর তুমি তো জানো রামায়ণের "রাম"
                রাজা না হয়ে কেন বনে গেল
          ঠিক তেমনই কিছু খারাপ লোক ছিল
   তারা তোমার বাবাকে আকাশে পাঠিয়ে দিয়েছে।

           তোমার বাবা তো প্রতি রাত্রেই আসে
                তুমি তো তখন ঘুমিয়ে থাকো
          তাই তোমার বাবা তোমাকে ডাকে না
     তোমার বাবাও যে তোমাকে খুব ভালোবাসে।

         মা বাবা তাহলে প্রতি রাত্রেই আসে
           আমি অনেক দিন বাবাকে দেখিনা-
        মা তুমি বল আমি যদি ঘুমিয়ে পড়ি
   বাবা আসলে তুমি আমাকে ডেকে দেবে তো-
             না - মা আমি আজ ঘুমাবো না
      তুমি কোনো দিন আমাকে ডেকে দাও না
               বাবা তো প্রতি রাত্রেই আসে 
                    আমি আজ ঘুমাবো না-
                           মা তুমি কিচ্ছু বোঝ না
              মা আমি ও বাবার মতো হতে চাই
          বাবার কাছে থেকে আমি সব শিখব
               তুমি আমাকে কিচ্ছু শেখাওনা
                    আমি বাবার মত হতে চাই
                      তুমি দেখ ঠিক বাবার মত
               সবাই আমাকেও ভালো বাসবে।

         না সোনা তুই অমনটা হবি না
              তুই একটা ছোট্ট কৃষক হবি
        আমরা দুজনে মিলে কাজ করব
    তাতেই আমাদের ভালোভাবে কেটে যাবে
তা না হলে সোনা তোকেও যে ওরা আকাশে পাঠিয়ে- -দেবে
      আমি তোকে ছাড়া একা থাকতে পারবো না
               তুই আমার মানিক আমার সোনা 
                        এবার তুমি ঘুমাও-----

   মা বাবা আসলে তুমি আমাকে ডেকে দেবেতো
          আমি অনেক দিন বাবাকে দেখিনা -----।।

বাবা
    সজল মণ্ডল

    মা - আমাদের বিছানায় শুয়ে লোকটা কে?
    আমি তো তাকে ঠিক চিনতে পড়ছি না যে -
     সোনা উনি তোমার বাবা চিনতে পারছ না
    তুমি ঠিক মত চেয়ে দেখ উনি তোমার বাবা
     মা - বাবাকে আমি কবে মন ভরে দেখেছি
              আমার তো মনেই পড়ে না
       কি করে বল মা- চিনব বাবাকে 
                তুমিই বল না মা ----
    সোনা এতে তোমার কোন দোষ নেই
  দোষ আমাদের গরীব যে তোমার বাবা মা
     বাবার সকল সন্ধ্যা কোলকাতেই হয়
         বাড়িতে শুধু গভীর রাত্রি কাটায়
            তুমি যখন থাকো ঘুমের ঘরে
           বাবা তোমার ট্রেনে তখন চড়ে
  তোমার বাবা তোমায় খুব যে ভালোবাসে
         অনেক আদর করে রাত্রে এসে।
    তোমার কপালে আঁকে সে স্নেহের চুম্বন
            সারাটা রাত বুকে আগলে রাখে
    ভালোবেসে সে তোমায় বাবাই বলে ডাকে
           তোমাকে সে বড়ই ভালোবাসে।
      আজ তোমার জন্য এনেছে জামা- জুতো
            আমার জন্যে এনেছে শাড়ী
     তুমি নতুন পোশাক পড়ে দেখবে পূজো
           আজ তার মনে আনন্দ ভারী।

       মা বাবার জুতো তো খুব পুরোন
            জামা কাপড় ও ভালো নয়
  বাবা নিজের জন্যে এনেছে কি নতুন পোশাক
                 কিনেছে কি তার জুতো?

    সোনা তোমার বাবা প্রতি বছর এমনই করে
  নিজের জন্যে সেলের পোশাক নিয়ে ঘরে ফেরে।

   মা বাবাকে এখন আমি ঘুম থেকে ডাকবো
   আজ সত্যি করে বাবার ছবি হৃদয়ে আঁকব
    আজ বাবাকে বাকে জড়িয়ে ধরবো আমি
      মন ভরে আজ বাবা - বাবা বলে ডাকব।

বাবা আমার মস্ত পৃথিবী
মনীষা ঘোষ


ক্লান্ত দেহে ঘাম মুছানোর গামছা গেছে ছিঁড়ে,
 এটাই বুঝি বাস্তব আমার বাবার পৃথিবী জুড়ে ।

গভীর রাতে খিদের জ্বালায় ছটফট করে,
জানো এটাই 'আমার বাবা' বুকের কাছে, দেহের কাছে শুধু কান্না লোকায়।

আর অগোছালো শব্দেরা শুধু কবিতাই খোঁজে,
 হাড়ির কোণে মনের ভুলে কখনো এক মুঠো ভাত খোঁজে।

তবুও বাবার চোখের কোণে কখনো দেখিনি দু-ফোঁটা জল পড়তে,
 তবু আমার দু-চোখেতে আসে ,বাবার মুখে ফুটবে কবে হাসি সেই কথাটি ভেবে ।

বাবার ছিলো ছেলেবেলা এখন বুঝি সব গতজন্মের স্মৃতি,
ঘুম ভাঙ্গে রোজ , স্বপ্ন ভাঙ্গার আওয়াজেতে।

বাবা
সুপ্রীতি বাগ (মনুচক, হাওড়া)

বাবা মানে অনেক খুশি,অনেক ভালোবাসা
তাহার থেকেই বাস্তবটা উপলব্ধি করতে শেখা।
মায়ের কাছে বকুনি খেলেই করি বাবার কাছে নালিশ
বাবা মানে প্রতিটা মেয়ের শান্তির কোলবালিশ।
বাবার কাছেই সীমাহীন আবদার,ছোটো ছোটো চাওয়া
বিপদে-আপদে বাবা-ই প্রদান করে বৃক্ষের মতো ছায়া।
বাবা মানে বুঝতে দেয়না অভাবের জ্বালা
সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেও হাসিমুখে পথ চলা।
বাবা মানে জীবন গড়ার প্রথম শিক্ষক
বাবা মানে প্রতিটা মেয়ের আদর্শ রক্ষক।

বাবা
খাজা রফিক (বাংলাদেশ) 

শৈশবে যার কোলে, বুকে, পিঠে,ঘাড়ে থেকে বেড়ে উঠা।  
তারপর তাঁরি হাতধরে হেটে, 
 পথ চলা শেখা। 
তার মুখে শিখেছি হাজার রকম 
 কথা বলা। 
আর তারি কাছ শেখা এই না না বর্ণ লেখা। 

বাবা মানে জীবন্ত পৃথিবীর এক মহা শক্তির আশ্রয়। 
যেখানে নাহি কোন ভয়। 
বাবা মানে অসংখ্য টাকা মজুদ ভান্ডার, যার কাছে টাকা নাই,
সে কথা কখনো শুনি নাই। 
বাবা মানে রোগের অষুধে, 
বাবা মানে ধন,রত্ন, গ্রহ-নক্ষত্রের 
অশেষ ভান্ডার। 
বাবা মানে ক্ষুধার খাবার, 
বাবা মানে মহাভয়, নির্মম সাইক্লোন । 

বাবা আমার সবচেয়ে বড়ো শিক্ষক। 
সেইতো শেখালেন এই ধর্মবোধ আর ধারমিকতা। 
ফজরে কি করে মসজিদে যেতে হয়, 
ক্লান্তি কালে এশা পড়ে কি করে বিছানায়।
এই বিশ্ব সংসার শুধুই বাবা ময়।
তাছাড়া আর কিছু নয়,আর কিছু নয়।

বন্ধু 
শুভশ্রী দাস 

বাবা তুমি না কী পার করোনি ?
হাই স্কুলের দরজা।
কেমন করে বোঝা তুমি?
আমার পড়ার বই টা ।
আ কার ও কার ভুল করলে, 
কানটা ধরো মুলে।
এই তো সেদিন চলেই গেলো মা টা আমার ।
তুমি বললে আমি আছি, 
এগিয়ে দেখো সামনে।

বাবা
শোভন দেবনাথ

বাবা এলেন শহর থেকে
খোকা-খুকি বেজায় খুশি
ব্যাগে ঠাসা জিনিস-পত্র 
খেলনা, কাপড় রাশি রাশি। 

সাথে আছে আরো জিনিস
মায়ের জন্য টাইপের পাতা
বোনের জন্য নতুন পুতুল, 
সাদা রঙের নতুন খাতা। 

ক'দিন পরে পূজো শুরু 
বাবার সাথে হবে ঠাকুর দেখা
রাত জেগে প্যান্ডেলে দুর্গা
কার্তিক-গণেশ-লক্ষ্মী-সরস্বতী দেখা। 


স্নেহের পরশ
সুতপা ব‍্যানার্জী(রায়)

আমাকে বেষ্টন করে রাখে শেকড়গুলো,
প্রতিদিনের চলায় বুঝে নিই ঐ বন্ধন,
আমাকে অনেক দূরে যেতে দেয় না,
মাথার ওপর অনুভব করি একটা ছাদ,
সব ঘর্ষণ,বর্ষণ জলোচ্ছ্বাসেও একইরকম,
কোনোদিন ওখানে চিড় ধরতে দেখি নি,
স্বপ্নের স্পর্ধা বুকে এঁকেছি তারই প্রশ্রয়ে,
অদৃশ‍্য বিভূতিতে ছায় অগুরু সুগন্ধ,
বহুদিন হল আলতো স্পর্শটা নেই,
তবু আলোকিত পথটা দেখি দুর্ভেদ্যতায়,
বাঁচার শপথগুলো আনমনে আওড়াই,
ফিসফিস করে কানে বাজে সবসময়,
নিঃশ্বাসে উঠে আসে সে গ্রন্থিত সংলাপ,
মেরুদণ্ডে কাঠিন‍্যের স্রোত অনুকরণীয়,
সেই হাতেখড়ি ক্ষণে সত‍্যের নামাবলী,
জনকের জানকি হয়ে পরীক্ষার্ত্তীর্ণ সময়ে,
স্নেহের পরশ নিয়ে চলা দৃঢ় প্রত‍্যয়ে।

......................
জেলা-পশ্চিমবর্ধমান
রাজ‍্য-পশ্চিমবঙ্গ

জনক
সুতপা ব‍্যানার্জী(রায়)

জীবনের বর্ণময়তা,শৈশব যাপন,
সুনিশ্চিত এক ছায়ার নিগড়ে,
মনে হয় আমৃত্যু সেই বাঁধনে,
আটকে পড়ি সময়কে থামিয়ে,
আশা-নিরাশায় চালচিত্র বদলায়,
কিন্তু স্নেহের সে দুটো চোখ,
পিছু ছাড়ে না,অবোধ ধৃতরাষ্ট্র,
আমার আমিকে সয়ে নেয়,
আদরে,অনুশাসনে,যুক্তি,বিবেচনায়,
একটু একটু করে পূর্ণাঙ্গ আকৃতি,
নির্মিত হয় একটা ভরসার হাতে,
যত ঝড় রুখে দেওয়া,আগলানো,
এখনো লেগে আছে সে স্নেহের গন্ধ,
শত গোলাপে,রজনীগন্ধার সাজে,
মন খারাপের বিকেলে,পথের বাঁকে,
প্রত‍্যেক জানকীর স্বপ্নের জনক হয়ে।

স্মৃতিচারণ
              গৌরী মন্ডল

ছোট্টবেলায় ভয়টা পেলেই 
ধরতো বুকে চেপে
বলতো খুকু ভয়টা কিসে? 
আমি আছি কাছে। 
অন্ধকারে ভয়টা ছিল
 আমার বরাবরি—
তাঁর কথাতেই সাহস আমি
পাই যে ভীষণ ভারি। 
দিনের আলোয় যেমন দেখি
প্রকৃতিরই রূপ..... 
অন্ধকারের মাঝেই তিনি দেখান
আরেক রূপ। 
এমন ভাবেই ছোটবেলায়
ভয়টাকে দূর করে;
জীবন পথে এগিয়ে যেতে
শেখান যতন ভরে। 
এমনতরো শিক্ষাগুরু
হলেন আমার বাবা—
অন্যায়ের বিরোধিতা
করেন তিনি সদা। 
জীবন পথে চলতে গিয়ে
আপোস করে বাঁচা... 
মিথ্যা অহং নিয়ে কেবল
গুমরে মরে কাঁদা.... 
এমনতর ভরং থেকে
রাখেন আমায় দূরে। 
তাঁর শিক্ষা মাথার পরে;
আছে হৃদয় জুড়ে।

           
 বাবা           
গৌরী মন্ডল 

বাবা মানে উদার আকাশ
 প্রচুর ভালোবাসা !! 
বাবা মানে কঠিন লড়াই
মনেতে জোর ঠাসা। 
বাবা মানেই বাঁধা বিপদ
ভয়কে করে জয়!! 
সামনে কেবল এগিয়ে চলা
সাফল্য নিঃশ্চয়। 
বাবা মানে মাথার পরে
ছাতার মতো থেকে!! 
ঝড়ঝঞ্ঝা বিপদ আপদ
রক্ষা প্রতি পদে। 
বাবার স্নেহের ছত্রছায়ায়
দিনে রাতে আমি—
আসমানকে ছুঁতে চাওয়ার
স্বপ্ন অনেকখানি।

অশথ বটবৃক্ষের মতো.. 
রাতুল চক্রবর্তী

এক বটগাছ আছে মোর গ্রামে
যার ছায়ায় স্নিগ্ধ নদীর দুকুল,
যেখানে জিরায় ক্লান্ত পথিক
বাউল তুলে একতারাতে সুর।

যে সুর আমায় ডাকে হয়ে আকুল
ছুটে আসি তার ছায়ার সুধায়,

আমি যে এক ছন্ন ছাড়া মস্ত পাগল বাঁধন হারা ,
প্রাণ হয় এই প্রেমের সুরে বেকুল ।

এ অশ্বত্থ বটের মত ছায়াদিতে সর্বদা রত
আছে পৃথিবীর পিতা যত।

যে ছায়ার হয়না তুলনা, যে ছায়ার অপার মহিমা।

যদি সন্তান না পায় পিতার ছায়ার দেখা
হয়ে নষ্ট যুবক কিছু ভ্রষ্ঠ পথে ঘুরে শুধু একা একা।

এ ছায়া বাজায় স্নেহের বাঁশি
এ ছায়া কবির হাতের মসি।

শিশুর জীবন পূর্ণ করে হয় পুর্নিমারি শশী,
সময় হলে হতে পারে বীরের হাতে অসি।

এ ছায়া বড়ই সুনিবিড়
এছায়া বড় শান্তির নীড়
আছে যত জগৎ জুড়িয়া মহাবলী মহাবীর,
এ ছায়া দাতার চরণে নত করে উন্নত শির।

এই মহান ছায়া দাতা পৃথিবীর সব পিতা ;

বট বৃক্ষের মতো ছায়া দিতে তারা সর্বদা রত
আছেন পৃথিবীর পিতা যত।
এই পিতাই স্বর্গ পিতাই ধর্ম 

পিতাই পরম তপ ।
এই পিতা যদি থাকে রুষ্ট ,
ভগবান কি করে হতে পারে সন্তুষ্ট.?

বাপী
    শাশ্বতী দেব

যখন ছিলাম খুবই ছোট তখন শত  
কষ্টের মাঝেও আমায় একা থাকতে দাও নি,

কখনও কখনও বকুনি দিতে মাঝে মধ্যে তুমি আমায় ।

কত না চেষ্টা করলে আমায় ওপরে  
ওঠানোর জন্য তুমি ,

ভালোবাসি এখনও তোমায় অনেক আমি ;

সেকথা বোঝাতে পারব না বলে কখনও তোমায় ।

সময়ের টানাপোড়েনে যদিও আজ আমরা একে অপরের চেয়ে অনেক দূরে,

তবুও জীবনের চলার পথে পাশে চাই সারাজীবন তোমায় আমি ।


বাবা
তপন কুমার তপু (বাংলাদেশ) 

ছোট্ট বেলা বাবা আমার 
ডাকতো বাবা বলে,
বাবা আমায় বলতো বাবা 
আমি যে তার ছেলে। 

বাবা ডাকটি শুনে শুনে 
বাবা বলা শিখে,
বাবা বলে ডাকি আমি 
আমার মনের সুখে। 

বাবা আমার হারিয়ে গেছে 
কোন সে অচীন দেশে, 
আজও খুঁজি বাবা কে যে
গভীর ভালবেসে। 

এইতো বুঝি বাবা এসে 
ডাকবে বাবা বলে,
নেইতো বাবা তবু খুঁজি 
আমার দু-চোখ মেলে।

আমার যখন ছেলে হ'ল
বাবা শূন্য ঘরে, 
আমি ও এখন বাবা ডাকি
বাবার মত করে। 

              

বাবা
        অরবিন্দ সরকার
  বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

সৃষ্টি কর্ত্তা ,বিধাতা ! সারাজীবন
লড়াই ক'রে ক'রে সংসারের সেবা!
কার কি প্রয়োজন,করতে পূরণ, মানেনা 
সময় দিনক্ষণ।
বানী তার শুনি , পরিশ্রমের বিকল্প নাই!
আহারে আহা! কেউ বলার শোনার নাই!
সবার শেষে খাওয়া,কারো 
দৃষ্টি নজর নাই,
তিনিই বাবা ! 
সকালে ঘুম ভাঙ্গার আগেই
তাঁর যাত্রা!
পাখীরা নীড়ে ফেরার পরে,
ধীরে ধীরে ফেরা !
উঃ আঃ শব্দ নেই, পাছে কারো ব্যাঘাত ঘটে তাই মার্জার পদনিক্ষেপ!
অবসর নেই, ক্লান্তি নেই শরীরে!
যত্ন নেবার সবাই আছে,-তার
যত্নের অভাব উঁকি মারে দরজা,দেওয়াল!
পিঠ ঘসে ওখানেই, মাথা ঠুকে মরে ওখানেই! কান্নার অশ্রু
কেউ দেয়না সামাল!
পাঁজরের হাড়ে, কঙ্কালসার চিহ্ন!
বাবাকে কাঁদতে নেই , তাই তিনি পথপ্রদর্শক অভিন্ন!
প্রতিরূপ হয়না বাবার স্থান,
তাঁর চোখে পরিবার সমান!
শুধু তিনি ছাড়া ! সবাই বিদ্যমান।
সৃষ্টিকর্তা মহান! দিনরাত সমান!
আহার বিহার তাঁর জন্য নয়!
জীব দিয়েছেন যিনি- আহার দেবেন তিনি!
তাই তাঁর দাসখত্ ! সংসারের ভারে নূব্জ কুব্জ বংশের ক্রীতদাস !!

মোদের গরিবের বাবা
       অরবিন্দ সরকার
 বহরমপুর,মুর্শিদাবাদ।

সংসারের ভারে ন্যুব্জ ,কুব্জ বাবা!কখন যে ঘরে ফেরে,
নুন আনতে পান্তা ফুরায় ,সোহাগ করতে মাথা নারায়,সূর্য্য ওঠে যায় পাটে,বাবা তখনও মাঠেঘাটে,শরীর নিঙারি খাটে , তবুও আধবেলা খাদ্য জোটে। জমিদারের গোলা ভরে,ওরা থাকে সুখের নীড়ে, নাদুসনুদুস ছেলে মেয়ে খাবার নষ্ট করে।খাও খাও বলে ওদের,উদরে না ধরলে বমি করে। ওদের ছেলে মেয়ে বাবার ঘাড়ে,পেট খালি বাবার, তবুও ওরা বায়না ধরে নাহি ছাড়ে!                    
ওরা পাওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা,আর আমাদের না পাওয়ার বেদনায় চোখে জল ভরা।
খেটে খাওয়া মানুষের খাবো খাবো বলতে নেই! রসনার তৃপ্তি থুতু দিয়ে ঢোক গেলা,ওটাও ফেলতে নেই।তেল ছাড়া চান, অবশিষ্ট খাবার যেটুকু পান সেটুকুই খান বাবা চেটেপুটে। ঢক্ ঢক্ জল খেয়ে ঢেঁকুর তুলে মাজা সাট করে একটু শয়ান।
তারপরই তো বিহান! আবার আমাদের তরে একা ঘাড়ে ,বাবা দৌড়ে মরে , সংসারের ঘুচলো না টান! লেখাপড়া করতে নেয়, হিসাবের ভুল ধরতে নেয়, বাবার কথায় আমাদের লেখা নয়- পাখিপড়া,গরীব কি চিরদিনই রবে, জাতির ঘুচবে না বদনাম।


পিতা
রাজেশ জানা (নীলচাঁদ)

একটা কর্তব্য কারী মানুষ, এক পিতা, 
নিজ গুণে আগ্নেয়গিরি, হাজার ব্যর্থতা, 

তবুও হারতে শিখিনি, হারতে দেবে না কভু.. 
হাত ধরে টলমল, প্রাণ প্রিয় প্রভু। 

জগতে প্রবেশ পথে অগ্রসর হতে আজি, 
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, শৈশব কে দেয় সাজি। 

কর্মে লিপ্ত সুখ স্বার্থ, মুখে রাখে হাসি... 
ভাঙ্গা গড়ার খেলা ঘরে পুণ্য রাশি রাশি।

ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে কি আছে গো মান, 
পিতার বুকেই সুখের সাগর, যা স্বর্গ সমান।

 হতভাগ্য বাবা 
শান্তি রঞ্জন দে 

বাবা দিবসে ফেসবুকে
সফল বাবাদের ছবি 
হাসি মুখের ছবি সবার 
তৃপ্তির ছোঁয়া সবই। 

হতভাগ্য বাবা আমি 
কান্না ছড়ানো মন জুড়ে 
পাথর চাপা এই বুকেতে 
হতাশা খায় কুড়ে। 

একমাত্র ছেলে আমার 
বিছানাতে ঠায় বসে 
 বিরল রোগে স্তব্ধ হাঁটা 
কোন বিধাতার রোষে। 

" বাবা দিবস " আমার কাছে
তাই তো ভীষণ লজ্জার 
হাসি মুখে সেলফি তোলা 
নয়কো মোটে সুখ সজ্জার। 


হে পিতা
অমল ভট্টাচার্য্য 

হে পিতা, কখনও বুঝিনি তুমিই এক জ্বলন্ত চিতা।
আসলে তুমি কখনও বুঝতেই দাও না যে তোমার ভিতরে সদা পুড়ছে কোরান, বাইবেল, গীতা।
কোরান, বাইবেল আর গীতার থেকেও উচ্চ মার্গে বিচরণ করে তোমার ধর্ম। 
তোমার ধর্ম বর্ণিত নয় কোরান, বাইবেল কিংবা গীতাতে। 
তোমার দর্শন বর্ণিত নয় বেহুলা লখীন্দরের গল্পে,
তুমি বিরাজমান জলে,স্থলে, বনে, কল্পে।

তুমি বিত্তবান হও,দরিদ্র হও,হিন্দু, মুসলমান কিংবা হও খ্রিস্টান, 
আসলেই তুমি এক পাষাণ।
সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণাকে নিজের ভিতরেই পুড়িয়ে মারো,
জীবনের সব সুখ,হাসি,স্বাচ্ছন্দ্য সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে পারো। 
সন্তান ও স্ত্রীকে খুশি রাখতে প্রাণপাত করো তুমি,
তাদের খুশি করতে না পারার ব্যথাকে নিজের ভিতরেই পুড়িয়ে মারো তুমি,
নগ্ন পায়ে হেঁটে তোমার রক্ত ঝরে,
টিফিনের অর্থ বাঁচাতে গিয়ে রোগ তোমার শরীরে বাসা গড়ে।
ছেঁড়া জামা,সেলাই করা প্যান্ট, তাপ্পি লাগানো চপ্পল পরেও তোমার মুখে হাসি থাকে,
এত তাপ সহ্য করেও চিতা যেমন জ্বলতে থাকে।

হে পিতা,তোমার ত্যাগেই পূর্ণ হয় সংসারের সুখের খাতা,
তুমি মহান, তুমি নিজেই এক চিতা।


My Father
Poet- Diptarupa Mallick Dasgupta (Behala, West Bengal, India)

My Father

A place where I can invest all my trust,
And get love and care as refund,
Deposit all my troubles,
And get solution to my problems,
My medicine for pain,
The catalyst towards my gain,
My best advisor,
My beloved guide and supervisor,
My store of happiness,
And relaxation from stress,
My magnificent support,
The very definition of comfort,
My greatest inspiration behind writing,
The quintessential cause of my living,
Can you guess who he is?
-Yes he is my father,
God's finest blessing!


জন্মদাতা
 রবি শঙ্কর মুখোপাধ্যায়

বাবা তুমি জন্মদাতা 
তোমায় সদা নমি, 
সকাল -সাঁঝে নিত্ত দিনই 
তোমার চরণ চুমি। 

কত কষ্ট করে তুমি 
করলে মানুষ আমায়!
কীর্তি টুকু নিতেও তবু -
তোমার মন যে না চায়। 

যে সব সন্তান পায়না বাবা 
তারা যে ভাগ্যহীন, 
মুহূর্তকাল থাকতে না চাই 
তোমাকে বিহীন।

সারা জীবন আমি যে হই 
তোমার কাছে ঋণী, 
লেখাপড়া যাই থাক না 
তুমিই আমার গুণী। 

বাবা তুমি জন্ম দিয়ে -
করলে মোরে ধন্য, 
জগৎ মাঝে তাই যে আমি 
হলামই এক গণ্য। 

বাবা তোমার গুণের কথা 
হবে না তো শেষ! 
শ্রদ্ধা প্রণাম ভালোবাসা 
জানাই তোমায় অশেষ।


 নির্ঘুম প্রহরে ছায়াহীন আমি 
অক্ষয় কুমার বৈদ্য (জয়নগর, দঃ২৪পরগনা, ভারত) 

তীক্ষ্ণ সূঁচের মতো নিঃসঙ্গ দীর্ঘ অন্ধকার ক্রমাগত এসে বেঁধে রাত্রির শরীরে, 
আর ছায়াহীন আশ্রয়ে বসে একা আমি - 
আজও খুঁজি সেই তোমার নির্ঘুম প্রহরে। 

ঘন কুয়াশার গভীরে তবু যতটুকু জেগে থাকে নির্বাক চোখ, 
অস্থির বিষাদে ঠিক ততটুকু 
অনাবিল স্নেহ, 
অশান্ত ছিন্ন কিছু সুখ। 

সারি সারি দুঃখ নদী আর বিস্মৃত অবহেলা এঁকে বেঁকে চলে হৃদয়ের গহীনে। 
তুমি এখনও স্বপ্ন কেনো আমার জন্যে, নীরবে সংগোপনে।

কেন এভাবে হারায় ঝরাপাতা হেমন্ত দিন! 
কেন এভাবে চলে গেলে নিদারুণ শূন্যতা নিশিদিন! 

তুমি চলে যাওয়ার পরে বুঝেছি ছায়ার গুরুত্ব। 
প্রতিদিন প্রতিক্ষণে আহত হই পৃথিবীর কাছে আহত পাখির মতো। 
এতো ঋণ! এতো কান্না! এখনও যে রয়েছে বাকি! 
যে যায় সে ফিরে আসে না কেবল স্মৃতির ফাঁকি। 

দেখিনি জলন্ত আগ্নেয়গিরি, 
দেখেছি আগুন জ্বলতে তোমারই বুকের ভিতরে 
ক্লান্তিহীন পথচলা শেষে মিশে গেছো জল মাটি মহাপৃথিবীতে।

অজস্র দুঃখ গুলো আজও ঘিরে ধরে-
ছায়ারা হারায় ছায়াপথে অবিরত, 
নির্জন নীরবতা মৌন অভিমানে 
রক্তক্ষরণে গভীর ক্ষত বিক্ষত ।


বাবা
অঞ্জলি দে নন্দী, মম

সেই সকালে বেরিয়ে যায় বাবা।
ঘাড়ে তার সাংসারিক-দারিদ্র্যতার থাবা।
গুনতিতে তেরোটা মাথা।
রোজ পাত পরে ওদের।
শক্ত হাতে পরিবার-নাওয়ের হাল ধরেছে মাতা।
দারিদ্র্য থাকলেও হাসিখুশির সম্পর্ক মোদের।
আমাদের সেবক, নাম তার 'হাবা';
সে বোবা ও শোনে না কানে।
সে-ই রোজ হাট থেকে বাজার করে আনে।
আবার রাতে ঠাকুরদার সাথে
সে সদরে বসে খেলে দাবা।
তামাকও সেজে দেয় সে বৃদ্ধের হাতে।
অনেক রাতে
সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরে বাবা।
বাবার জুতোর নীচে দুটি ক্ষয়ে গেছে 
আধখানা হয়ে গেছে।
তবুই সে পড়ছে ওদুটিই রোজ।
সংসার রাখেনি সেই আধ ক্ষওয়া জুতোর খোঁজ।
বাবার ক্লান্তি নেই।
বাবার কোনও চাহিদাও নেই।
বাবা থাকে বাবাতেই।
রাতে তার বাড়ি ফিরে আসা
টের পায় শুধু মায়ের ভালোবাসা।
মায়ের অপেক্ষার অবসান হয়,
ক্রিং শব্দে বেল বাজিয়ে 
সিট থেকে বাবার উঠোনে নাবাতেই।
ওরা পরস্পরের জন্যই প্রতীক্ষায় রয়।
মা বাবাকে খেতে দেয় থালা সাজিয়ে।
ওদের দায়িত্বেই আমাদের সংসারে শান্তি বয়।


২৭)

বাবা সম্পর্কে লেখা।

 অশ্রু নদীর ওপার হতে,পিতৃ স্মৃতি
সুনির্মল বসু 

মা যেদিন মারা গেলেন, সেদিন কুল গাছের মাথায় চড়ে,তার কী আনন্দ,তাকে আর কেউ পড়তে বসতে বলবে‌ না।তখন তার বয়স মাত্র পাঁচ বছর।পরে সারা জীবন তিনি মায়ের জন্য কেঁদেছেন। তিনি আমার বাবা। আমি বাবু বলে,বরাবর তাকে ডেকেছি।দাদু স্কুল শিক্ষক।বাবু বাঁশের খুঁটিতে পয়সা জমিয়ে, পড়াশোনা শেষ করে বাটা কোম্পানি তে কেরানীর চাকরী নেন।বাবুকে লেখা দাদুর চিঠি আমি দেখেছি।দাদু কবিতা লিখতেন।বাবু গর্ব করে বলতেন,রামায়ন রচয়িতা কৈলাস বসু, আমাদের পূর্ব পুরষ।
ভাইবোনেদের দায়িত্ব নিতে হবে,এই শর্তে বাবূ মাকে বিয়ে করেন। কাকু তখন আড়াই বছর।দুই পিসী বড়। কাকু বাবার মুখ দ‍্যাখে নি, জন্মের পর ,মাকে হারায় কাকু।বলত,কলশীরপাশে কে আমাকে ডাকছে। বাবু সবাইকে নিয়ে চলা মানুষ। উচ্চাকাঙ্ক্ষী, পরিশ্রমী লোক। আমার মা বড় বাড়ির মেয়ে,তবু যেন বাবুর ছায়া। ছোট বেলায় বাবুকে খুব ভয় পেতাম। আমাকে একদিন প্রশ্ন করেন,বড় হ ওয়া ভালো, না ছোট হ ওয়া।পরে বুঝেছি,বড় হয়ে তিনি সব দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন।অফিস থেকে বাড়ি ফিরে, বাবু আমাদের পড়াতেন।হায়ার সেকেন্ডারী পরীক্ষার আগে,ভোরে উঠিয়ে,চা খাইয়ে,পড়াতে বসাতেন। আমি কোনদিন ভালো ছাত্র ছিলাম না। বাবু মার কষ্ট দেখে,নিজে থেকে ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা শুরু করি। সারারাত পড়েছি।সাফল‍্য এলো। কাগজে লিখি,রেড়িওতে বলি। অনেকে বলেন,এই,এ তোর গলা নয়। চাকরির জন্য যখন আশা ছেড়ে দিয়েছি,তখন আমার স্কুল আমায় ডেকে চাকরি দিল। বাবুর পাশে দাঁড়ালাম। বাবু বন্ধু হয়ে গেলেন।তার যখন, বাষট্টি বছর বয়েস,তখন আমারমনে হয়, বাবু বুড়ো হয়ে গেছে, বাবুর কিছু হলে, আমি কী করবো,আজ আমার সাতষট্টি চলছে।আমাকে বাবু বাজার করতে দিতেন না, বলতেন,তোরে ঠকাবে।বলতেন,গরীব হ ওয়া বড় পাপ।বলতেন, দাঁত থাকতে কেউ দাঁতের মর্ম বোঝে না।দুপুর বেলা আমার কাছে এসে বসতেন।আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তিনি,বলতেন, আমি মরলি, একজন আমার জন‍্যি কাঁদবে।বাবু আমার সঙ্গে ঘুড়ি উড়িয়েছেন, সাইকেল চালানো শিখিয়েছেন, কলেজে পড়া অবধি,সাবান দিয়ে স্নান করিয়ে দিয়েছেন।তার মতো ভালোবাসা,তার মতো পথ দেখানো,তার মতো সর্ব সময়ের পরম সুহৃদ, আমার কেউ ছিল না।
শেষ দিকে এই অসম্ভব তেজী মানুষটা অসুখে পড়লেন।তার আগে গঙ্গা স্নান করতেন,মা কালীর ভক্ত ছিলেন।ভুগলেন, চলে গেলেন। অতিশয় ঝড় জলের রাত, সেদিন।এমন দুঃখের দিন কখনো জীবনে আসে নি।আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেল।ছায়া সরে গেছে, উদ্দাম রোদ্দুরে একা দাঁড়িয়ে আমি। আমার লক্ষ পাওয়ারের আলো চলে গেছে,এত শূন‍্যতা আমি কোথায় রাখি,কাকে জানাই।রাতে বাবুর সঙ্গে কথা বলি, আগের মতো। পরামর্শ নিই। তিনি নিজের জন্য ভালো জামা কাপড় কখনো কেনেন নি। অফিসে খেতে দিলে, বাড়িতে নিয়ে আসতেন।কী করে ভুলি।সাত হাত কপাল আমার,এমন মানুষ আমার বাবু।আমার জীবনের পরতে পরতে আছেন, বাবু। নিজের গায়ে হাত দিলে, আমি বাবুর অস্তিত্ব টের পাই।এগারো বছর আগে,আজকের দিনে তিনি চলে গিয়েছেন, বাবু, ভুল করলে, শুধরে দিও, আমি হারি নি,হারবো না।সৎভাবে জীবন যুদ্ধ করাটা তুমি শিখিয়ে গিয়েছো,
কাজ সারা হলে, আমি তোমার কাছে যাবো,ভাবি,এতবড় পৃথিবীতে কোথাও বাবু নেই।জ‍্যোৎসনা রাতে রবি ঠাকুরের গানে সান্ত্বনা খুঁজি,
সে ঢেউয়ের মতো ভেসে গেছে,
চাঁদের আলোর দেশে গেছে।


The Real Father
Akash Bhagat (Malda, West Bengal, India)

Oh my dear father!
Today we lost your exemplar,
under caste, we are showing our anger,
by becoming a butcher,
only bloodshed & envy are there.
We all forgot your that lecture,
where you mentioned the real human nature.
We remember you only in picture,
merely we think 'I am superior'.
Oh my dear father!
Please accept my prayer,
and forgive their barbarous nature,
by making their hearts clean & fair.
You are our real father!
The Father of our constitutional structure,
the father of real human behaviour, 
the father of making us brother & sister,
the father who dreamt for our bright future,
above all you are our respected Ambedkar!


বাবা আমার আদর্শ
সোনালী বসু

মনে পড়ছে আজকে ভীষণ আমার ছোটবেলা
বাবার কোলে মনের সুখে খেলেছি কত খেলা,
তোমার আদর্শ শিখিয়েছে পথ চলতে
সৎসাহস যোগায় আজ ও প্রেরণা দেয় সত্য বলতে।

যেটুকু শিখেছি লেখাপড়া হয়েছে ক্ষুদ্র ধর্মের জ্ঞান
আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি তোমার অবদান।
বৃষ্টি হলে এ ঘর থেকে ও ঘরে দিতে পাড়ি,
তুমি কাঁধে না নিলে দিতাম অনেক আড়ি!

কি মধুর ছিলো সে শৈশবের দিনগুলি
তুমি শোনাতে রামায়ণ মহাভারতের গল্পের ঝুলি,
বাবার হাত ধরে যাবো মেলায় ধরেছি বায়না
কত মেলা আসে যায় মন যেতে চায়না।

তাইতো তোমার স্মৃতি আমার চোখে জল ঝরায়
তুমি ছিলে, ছিলাম আমি বটবৃক্ষ ছায়ায়।


বাবা নেই তার সে হতভাগ্য জীবনে
সব কষ্ট সয়ে সুখ এনে দেয় সন্তানের মনে ,
যেখানেই থাকো ভালো থেকো এই কামনা
তোমার আশীষ মাথায় রেখো এ প্রার্থনা।।


প্রিয় বাবা
     প্রান্ত দত্ত

বাবা মানে আমার কাছে,
ভালোবাসার একটি নাম।
বাবা মানে আমার কাছে,
বেঁচে থাকার প্রাণ।

সংসার নামক বিশাল জাহাজ,
একা চালিয়ে নিয়ে যায়।
দুঃখ কষ্ট বুকে চেপে,
সারাজীবন করে লড়াই।

বাবার শুধু চিন্তা থাকে,
সংসার,সন্তান আর পরিবার।
সারাজীবন এভাবেই কেটে যায়,
ভাগ নেয় না কেউ চিন্তার।

সংসারের সুখের আশায় বাবা,
সারাজীবন পরিশ্রম করে।
বাবার কথা লিখতে গেলে,
শেষ হবে না হাজার বছর ধরে।

হ্যাঁ আমার বাবার
রূপো বর্মন 

বাবা আমার সত্যি নয়কো কঠিন মনের মানুষ,
বাবা কষ্ট পেলেও কাঁদেনা কারণ সে পুরুষ।
বাবা আমার খুব কড়া শাসন করে সবসময়,
বাবা আমার ভবিষ্যতের জন্য অবিরাম করে সঞ্চয়। 
কোনো ভুল করলে বুক কাঁপে বাবার ভয়েতে,
বাবা সবসময় বলে মানুষের মতো মানুষ হতে। 
আমার বাবার তুলনা হয় না আমার জীবনে,
স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে ঝড় তুফানে। 

বাবা
জীবনানন্দ বসু

আমার বাবা তো বাবা‍-ই
শত দুঃখ কষ্ট মাথায় নিয়ে
আগলে রেখেছেন অক্ষয়
বটবৃক্ষের শীতল মনোরম ছায়ায়।

প্রভাতের আলোর মতো
আলোকিত করছেন
সেই কবে থাকে জানি না
সেই তো আমাকে নতুন পথের সন্ধান দিয়েছেন ।

আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে তিনি বসে আছেন,
চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই-
তাঁর জ্যোর্তিময় মূর্তি
হে পিতৃদেব তোমায় প্রণাম।

বাবা ও সমুদ্র
     সন্তু প্রামাণিক

বাবাদের ব্যপ্তি বিশাল, সমুদ্রসম।
অনেক সর্বগ্রাসী কর্তব্যের নদী
শান্ত হয় তাদের কাঁধ নামক-
সমুদ্রে মিশে।

বাবারা সব থেকে বড় যোদ্ধা,
যুদ্ধ চলে প্রতিনিয়ত।
সময়ের সাথে, বয়সের সাথে-
ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা দায়িত্বের সাথে।


একটা সময়
সোমা বিশ্বাস

আজকাল বাবাকে দেখলে আর বাবা মনে হয় না,
মনে হয়, কোন বাচ্ছা ছেলে।
বাচ্ছাদের মত অবুঝ, দুরন্ত, দামাল আর আদুরে।
মানুষটা বিকলাঙ্গ, প্যারালাইস্ড, একটা হাত অসাড়
পা টা টেনে টেনে হাঁটেন, ঠিক মতো কথাও বলতে পারেন না।
মানসিক দিক থেকেও বাচ্ছাদের মতো।
আজকাল মাঝে মাঝে আমাকেই শাসন করতে হয় ওনাকে
কখনো কখনো বকাও দিই , কোনও ভুল কাজের জন্য,
আজকাল বাবা-মা দুজনকেই বাচ্ছা মনে হয়।
বাবা-মা অনুভূতিটা কম, ছেলে-মেয়ে অনুভূতিটাই বেশী আসে।
বয়স বেড়ে গেলে বাবা-মা ছেলে-মেয়ের মতো অবুঝ হয়ে যায়।

রচনা - ২৮ অক্টোবর ২০২১, শ্রীরামপুর হুগলি

Comments

Popular posts from this blog

আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকা - জানুয়ারী সংখ্যা ২০২৪

মাটির শহর - সৌভিক দেবনাথ

কবি বিকাশ ভৌমিকের কবিতা