আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার ওয়েব ম্যাগাজিন সংখ্যা - ৩
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার ওয়েব ম্যাগাজিন সংখ্যা - ৩
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকা
বিশ্ববঙ্গ বাংলা সাহিত্য একাদেমী অনুমোদিত
Registration number - (BBSA/GM/132/2021)
সম্পাদনায় : সোমা বিশ্বাস
উপদেষ্টা : সোমনাথ নাগ
সহযোগিতায় : সৌভিক দেবনাথ, বাপি শেখ, সন্তু প্রামাণিক , রাজু দত্ত
প্রচ্ছদ : অঞ্জলি দে নন্দী
সম্পাদকীয় :
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার ওয়েব ম্যাগাজিন সংখ্যা প্রকাশিত হলো। সকল কবি ও সাহিত্যিক ও পাঠক-পাঠিকা বন্ধুকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
- সোমা বিশ্বাস
লেখা পাঠানোর ঠিকানা - aalordishasahityapotrika@gmail.com
ওয়েবসাইট - aalordishasahityapotrika.blogspot.com
কবিতা গুচ্ছ :
শিরোনাম : প্রকীর্ণ প্রেম
কলমে : সত্য রঞ্জন বণিক
তোমার প্রতিশ্রুতি " তোমায় ভালোবাসি। "
খুশির উন্মাদনা উজান স্রোতে ভাসি।
রূপকথার উন্মাদনা আপ্লুত মন,
ভরসার আচ্ছাদনে মিছে প্রলোভন।
আজ সবই স্মৃতি মরীচিকার ফাঁকি,
একাকি নিমগ্নে ব্যর্থতার ছবি আঁকি।
রিক্ত শূন্য হৃদয়ে শুনশান আঁধার,
বিরহ ব্যথায় মনেপড়ে বারবার।
আবেগী মুহূর্তে অতীত স্মৃতির ভীড়,
বঞ্চনার মহড়ায় প্রেম নষ্টনীড়।
অশ্রুভেজা নীরবতায় স্মৃতিচারণ,
স্মৃতির আলপথে বিমর্ষে বিচরণ।
প্রকীর্ণ প্রেমে অশ্রীক স্বপ্নে আশাহত,
নিজের কাছে নিজের প্রশ্ন অব্যাহত।
শিরোনাম হীন কবিতা
কলমে :-রণজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায়
তারিখ:-০৫/০৭/২০২১
হিসাবের গুটিগুলো দাবার ছকে সাজানো ছিল । জীবন ও চলছিল উর্বর পথ ধরে গন্তব্যে ,
কিন্তু কোথা থেকে মহাকাল এসে সব
এলোমেলো করে দিল, ফলে তোমার আমার প্রাত্যহিক জীবনের পথ হয়ে উঠলো দুর্বিষহ ।
স্বপ্নগুলো ছেড়ে চলে গেল সুযোগ পেয়ে ,
আমিও স্বস্তি পেলাম । দীর্ঘ দিন
স্বপ্নের পিছনে ছুটতে ছুটতে
আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম ,কিন্তু
ক্রমে ক্রমে সেই স্বস্তি গ্রাস করল গৃহের ভালোবাসা। আস্তে আস্তে সেই ভালোবাসা করাল মূর্তি ধারণ করলো ; ভাবিনি ভালোবাসার বৈচিত্র্যরূপ একদিন বিচিত্র রঙে চিত্রিত হবে জীবনের সবুজ ক্যানভাসে ,
আর বিষময় করে তুলবে জীবন ।
হে মহাজীবন!
জীবনের অসুর সময়ে তুমি সুরে গান ধরেছ
ভাঙা গলায়, আজ সুরেলা গলা আছে অথচ
কন্ঠ দিয়ে বের হচ্ছে কেন অসুরের সুর ?
সেটাই মহাচিন্তার বিষয় ।
জানিনা এই পঙ্গু সময়কে পরিত্যাগ করে
মহাকাল কবে পাখনা মেলে উড়ে যাবে পর্বত পার হয়ে পৃথিবীর সৌন্দর্যকে স্থিতিশীল রেখে সমুদ্রের গভীরে , । সেদিন আমার সন্তান-সন্ততিরা হাঁফ ছেড়ে পূর্ণশ্বাস নেবে প্রেমময় নির্মল বাতাসে ।
শিরোনাম--- " নিজের নিজের "
সৃজনে---নবগোপাল চৌধুরী
তারিখ--- 19/08/2021
এখন আর কা'রো প্রিয় নয়
এক ছটাক বেশী স্হান ,
কি হবে করে' বাগান ?
ফুল ফুটলেই -- ভ্রোমরার উৎপাত
দিন- রাত অধিকার- অধিকার খেলা
মধুভান্ড-- মৌচাক -- বিপজ্জনক !
কা'র শখ ভয়ঙ্কর কান্ড-কারখানা ?
যদিও বা জানা ---- রক্ষণাবেক্ষণ বেড়া ,
না হয় ছাগল-ভেঁড়া বসাবেই মুখ ;
গোষ্ঠীর নির্দেশ চলবেনা ঘেরা
ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে আর কিছু নেই
পারবেনা নিতে কেউ সিদ্ধান্ত নিজেরা ।
এই ভাবেই ছড়িয়ে দেওয়া ভয় নির্মম নির্দয়
কে না চায় --- নিরাপদ -- নিশ্চিন্ত আশ্রয় ?
ভীড় বাড়ে--- বাড়তেই থাকে
ভীরু বাড়ে --- বাড়ে নপুংসক
ভীড় বাড়ে---- স্বার্থপর-- সুবিধাবাদীর --
ভীড় বাড়ে শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখানো অপরাধীর
ভীড় বাড়ায় --- খুনী-- ধর্ষক
সকলেই নিরাপত্তা চায় ---
উপঢৌকনে আপাততঃ বন্ধ রাখা মুখ ;
নিশ্চিন্তি দেবার --পর্যাপ্ত আয়োজন তা'র
অলিতে- গলিতে তৈরি দল আর নেশুড়ের ঠেক
নির্বিবাদে সারি সারি ভেঁড়া- গাধা ছোটে ,
দিতে বাধ্য গুণীজন বন্ধক বিবেক
গুষ্টিশুদ্ধ ফুলে ফেঁপে ওঠে !
মোড়ে মোড়ে বিজ্ঞাপন-- গান ও ভাষণ
গৃহ-বন্দী মানুষের টি ভি ফেসবুক ।
কে না চায় পরিবার স্বাচ্ছন্দ্যে থাকুক ?
লম্বা লাইন জুড়ে---- নিজের নিজের
শখ-- সাধ-- আহ্লাদ মেটানো নিজের ;
বৈষম্য যে বাড়ছেই বস্তিতে ঢের
সাময়িক মস্তিতে পায়নিকো টের
ব্যস্ত সকলে আজ নিজের নিজের
সুযোগ সুবিধা কত ছড়ানো ছিটানো
অবাধে বাড়তে থাকে আগাছা বীজের ।
আজ আমাদের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভ কামনা অন্তবিহীন—
শিরোনাম - ‘স্বাধীনতা’
কলমে - শ্রীমন্ত সেন
১৫ই আগস্ট, ২০২১
স্বাধীনতা কাঁপে বিড় বিড় করা ক্ষুধাক্ষীণ ঠোঁটে,
স্বাধীনতা গিয়ে সাহসী উঠোনে চুপি চুপি জোটে।
স্বাধীনতা খোঁজে প্রবল আবেগ জীবনের ভাঁজে,
স্বাধীনতা বোজে দুচোখ আরামে জটলার মাঝে।
স্বাধীনতা জানে হাতে-হাত-ধরা মিছিলের মানে,
স্বাধীনতা টানে ভীরু প্রাণগুলি যে আছে যেখানে।
স্বাধীনতা মাপে জীবনের তাপ সবহারা-বুকে,
স্বাধীনতা জ্বলে নিষ্পেষিতের থমধরা দুখে।
জীবনের স্বাদ পায় স্বাধীনতা সবুজের গানে,
জীবনের গান গায় স্বাধীনতা হতাশের প্রাণে।
চায় স্বাধীনতা রূঢ় সত্যের হতে মুখোমুখি,
স্বাধীনতা সুখী সব দুখী হলে সীমাহীন সুখী।
স্বাধীনতা কাঁদে বীর শহিদের রক্তধারায়,
স্বাধীনতা হাঁটে ভিন্নমতের ব্রাত্যপাড়ায়।
স্বাধীনতা ভাঙে সব জোড়াতালি আপনার জোরে,
দুহাত বাড়িয়ে ডাকে স্বাধীনতা আগামীর ভোরে।
----
শিরোনাম : রাত জাগা পাখি
কলমে : লক্ষ্মী বিশ্বাস
ওই পাখিটি রাত জেগে বসে আছে।
নীরবে,নিভৃতে।
বৃষ্টি কুয়াশা মাথায় নিয়ে।
মনে হয় সঠিক বাসার খোঁজে,
হারিয়ে ফেলেছে দিগ -দিগন্ত।
সঠিক বাসা,
সত্যি সঠিক বাসা
খুঁজে পাওয়াটা খুবই কষ্টের।
সেই রাত জাগা পাখি টিকে
সমাজের মূল স্রোতে দেয়না ঠাই।
তাই তো বসে আছে নীরবে, নিভৃতে।
সঠিক বাসার খোঁজে।
শিরোনাম - শুভ রাখী বন্ধন
কলমে - রূপালী গোস্বামী
লাল- নীল-হলুদ-সবুজ
রকমারি জরির সুতোয়
বোনা সযতনে চির বন্ধনের,
ঝলমলে অঙ্গীকার।
মেকি ভেদাভেদ তুচ্ছ করে
পরিয়ে দিলাম হাতে,
চির সম্প্রীতির বাহুডোরে
জয় হোক মানবতার।
বড় সুন্দর এ লগন,
আনন্দে ভরুক মন,
শুভ রাখী বন্ধন
শিরোনাম - ষড়যন্ত্রের হৃদযন্ত্র
কলমে - দেবারতি গুহ সামন্ত
মেঘেদেরও তো কখনো বুকে ব্যাথা হয়,
জমে থাকা অভিমানে গাল ফোলানো কিশোরী মেয়ে।
এক ফোঁটা শান্তির খোঁজ চলে বহুযুগ ধরে,
দেখা মেলে শুধুই ষড়যন্ত্রের,শান্তি তখন আলোকবর্ষ দূরে।
এক আকাশ কান্না ঝড়িয়েও মেটে না সাধ,
দান দিন বাড়তেই থাকে আকাঙ্খা,সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আশা।
কোথাও নেই স্নেহের পরশ,ভালোবাসার রেশ,
অহংকারে মত্ত ষড়যন্ত্ররা দিনের শেষে বড়োই একা।
অন্যের উন্নতি চোখে লাগে বড়ো,শুরু হয় জ্বালাভাব,
এর জ্বালানি তৈরী হয়েছে নিজের অন্তরের গোপন কুঠুরীতে।
স্বীকার করার মতো ক্ষমতা নেই তো,
হিংসার আগুনে নিজেই জ্বলে পুড়ে ছাড়খার।
অভিমান জমতে জমতে এক পাহাড় সমান,
কার ওপর অভিমান,এর উত্তর আজও অজানা।
প্ল্যান ফেল করায় কাঁচের গ্লাসে হাত কেটে রক্তারক্তি কান্ড,
বৈঠকখানায় ছক কষা হচ্ছে তখন নতুন ষড়যন্ত্রের।
ছোট্ট পিপড়ের হৃদপিণ্ডটা ধুক পুক করছে,
পৈশাচিক অট্টহাসিতে ফেটে পড়ার উপক্রম।
কই,হচ্ছে নাতো আনন্দ,ঠিক যতটা হওয়ার কথা ছিল!
তবে কি মাপে কিছু ভুল হয়ে গেল?
ষড়যন্ত্রের গন্ধে পুড়ে যাচ্ছে প্রতিটি রোমকূপ,
পোড়া অংশে তৈরী হচ্ছে দগদগে ঘা।
যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতিগুলো কুড়ে কুড়ে খেয়ে ফেলছে বিবেক,
হতাশা আর অবসাদ ঘিরে থাকছে সারা শরীর।
শিরোনাম - ভালোবাসার শেষ দিন
কলমে : সুস্মিতা সরকার
ব্যস্ততার মধ্যে হঠাৎ এইরকম একটা ফোন পেয়ে হকচকিয়ে গেল শুভ। বুঝতে বাকি রইল না কিছু সমস্যা নিশ্চয়ই ঘটেছে।
" কি হয়েছে আকাশ? এমন ভাবে কথা বলছিস কেন? আর বোনি কো..."
কথা শেষ করার আগেই আমি বলে উঠলাম "এখুনি কোলাঘাটের কাছে আসতে পারবে? প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো দাভাই"
"আচ্ছা আচ্ছা দাড়া আমি আসছি কিন্তু.."
"তুমি এসে আমাকে যা খুশি বোলো আগে তুমি এসো.."শেষ কথাটা বলতে গিয়ে আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না যে কান্না টা গলার কাছে আটকে ছিল সেটা এবার অঝোর ধারায় ঝরে পড়ল।
বুঝলাম ফোন টা ডিসকানেক্ট হয়ে গেল।
জানেন আমি মিনিট কুড়ি আগে কতো খুশি ছিলাম। আজ আমার জন্মদিন। উপহার দিয়েছে অনু আমাকে গোটা একটা দিন। অনুসুয়া আমার কলেজ জীবনের বান্ধবী। সম্পর্ক টা বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হলেও সেই সীমা অতিক্রম করে এগিয়ে গেছে। যেমন করে নদী আপন বেগে মোহনা দিকে ছুটে যায় ঠিক তেমনই। নবীনবরণ এর প্রথম দেখা থেকে শুরু করে আজ অবধি অনুর প্রতি টান একটুও কমে নি, উল্টে বেড়েই চলেছে। তিন বছর তো শুধু বন্ধু হয়েই কেটে গেল তারপর কলেজ শেষের দিন প্রেম নিবেদন এর কাজ টা প্রথম দায়িত্ব নিয়ে অনুই করেছিল। সেদিন রাতেই আমি সম্মতি জানিয়েছি আসলে মনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারিনি বন্ধুত্ব ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে। সদা হাসযোজ্জ্বল মুখখানা দেখে আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাই। আজও যখন আমি ওর থেকে উপহার হিসাবে ব্যস্ত কর্ম জীবনের একটা দিন আমার জন্য চাই ও খুশি হয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল "ব্যাস এইটুকুই"
আমি বললাম "হ্যাঁ আর তোর রিটার্ন সারপ্রাইজ গিফট টা আমি দেবো"
ও আজ ছুটি নিয়েছে শুধু আমার জন্য। দেখা তো হয় প্রায় অফিস ছুটির পর। সপ্তাহের মধ্যে কমবেশি খাওয়া দাওয়া করতে চলে যাই মাঝে মধ্যে রেসটুরেন্টগুলোতে। কিন্তু একটা গোটা দিন একসাথে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ হয়ে ওঠে নি তেমন।
দুর্গা পূজায় আমি ওর সাথেই থাকার চেষ্টা করি কিন্তু গ্রামে মামার বাড়িতে নিজেদের পুজোতে যেতেই হয়।ওকে নিয়ে যেতে চাইলেও বাড়ি থেকে বাবার অনুমতি পেত না। আমাদের ভালোবাসা দেখতে দেখতে চার বছর হল, তখন ও বাড়িতে জানায়। বাবা প্রথমে ঘোর আপত্তি করলেও, পরে একমাত্র মেয়ের কথা ফেলতে না পেরে নিমরাজি হয়ে যায়। ওর যে নিষ্পাপ স্বচ্ছতা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছিল প্রথম দেখায় সেই মুখ দেখেই আমার বাড়িতে এককথায় রাজি হয়ে গেল সবাই। তিন মাস পর বিয়ের দিন ঠিক হল দুই বাড়ি মিলে।
দুজনেরই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে প্রতি বছর সব বন্ধু বান্ধবদের সাথে হয়। কেক কাটা,পার্টি, খাওয়া দাওয়া, এইসব করেই কাটে।প্রতি বছর কিছু না কিছু সারপ্রাইজ গিফট থাকে। এই বছর আমি একটু অন্য রকম ভাবে সাজাতে চেয়ে ছিলাম। ভোর বেলা বেরোতে বলেছিলাম। অনু রেডি হয়ে ঠিক ছ'টা দশ পাড়ার মোড়ে এসে আমাকে ফোন করলো।
"কোথায় তুই?"
আমি " এই তো আসছি আর একটু ওয়েট কর প্লিজ"
"আজও লেট" বলেই ফোন টা কেটে দিল।
আমার বাড়ি থেকে বাইক নিয়ে মিনিট পনেরো লাগে। আজ পড়েছে লাল রঙের চেক শার্ট আর বিস্কুট কালারের জিন্স। বেশ মানায় ওকে শার্ট জিন্স পরে। চোখটা একটু গাঢ় কালো কাজলে এঁকেছে, ঝাকরা চুল তুলে পনিটেল করা, সিম্পল হালকা লিস্টিক। এক ঝলক দেখে বুঝলাম লেট করেছি বলে মুখ ভার। কিছু না বলে উঠে বসলো বাইকে। সেকন্ড ব্রিজ পার করে হাওড়া যখন চলে আসলাম তখন অনু নিজেই কথা বললো।বুঝলাম জন্মদিন বলে এই যাত্রায় মুক্তি পেলাম।তারপর ঐ যে বকবক শুরু হলো তা রেডিও মিরচি কেও হার মানাবে। যেহেতু কিছুই বলিনি কি প্ল্যান করেছি তাই অসংখ্য প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করতে থাকে। কোলাঘাটের কাছে এসে যখন পৌঁছলাম তখন সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। তখনও অবধি ধোঁয়াশা ওর চোখেমুখে। একটা ধাবা দাঁড়িয়ে জলখাবারে লুচি ঘুকনি দিতে বলে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি, ম্যাডাম এক্সট্রা একটা স্পুন দিতে বলছে।তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে বার করলো দুটো টিফিন বক্স। একটাতে নিজের বেক করা কেক আর অন্য টায় পায়েস। পায়েস টা চামচ করে খাইয়ে দিয়ে " শুভ জন্মদিন। আজকে সকাল টা শুরু হল শ্বশুরের হাতের পায়েস দিয়ে" বলেই কি হাসি। আমি বললাম "ভালো, কিন্তু তুই করলে আরো ভালো হত" কথাটা শুনে কেক টা একটু ভেঙ্গে আমার মুখে পুরে দিয়ে বলল " এবার বল কেমন হয়েছে?"
বুঝতে পারলাম ওভার বেক হয়ে গেছে কিন্তু মুখে হাসি নিয়ে বলাম "দারুন টেস্টি"
শুনে অবাক হয়ে আবার বলল "সত্যি?"
বিশ্বাস করতে পারে নি নিজের কেক ওর বাবার পায়েস থেকেও ভালো হবে। সকাল টা নিমেষেই ভালোলাগায় ভরে উঠলো। ওর অকপট সত্যি কথা স্বীকার দেখে আমার বেশি ভালো লাগলো অন্য মেয়ে হলে হয় তো নিজের নামে চালিয়ে দিত দুটোই। ভোর বেলা উঠে আমার রাগি শ্বশুর যে আমার জন্য পায়েস বানাতে পারেন সেটা ভেবেই আমার আরও ভালো লাগলো।জানি না অনুর মা বেঁচে থাকলে এর থেকে বেশি যত্ন পেতাম কিনা তবে এতেই যেন নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
"কিরে কি এত ভাবছিস বল তো? মায়ের হাতের পায়েস মিস করছিস না?" অনু আমার মাথায় টোকা দিয়ে বলল
আমি বললাম "না না তুই কত ভোরে উঠে এইসব আয়োজন করেছিস তাই ভাবছি আর কি.. রাতে ফিরে তো মায়ের পায়েস পাবো..তবে এই কেক আর পায়েস দুটোই আমার কাছে খুব স্পেশাল"
লুচি ঘুকনির সাথে নিজেই বেশিরভাগ পায়েস টা শেষ করে ওকে একটু দিলাম আর কেক টা সব না খেয়ে ব্যাগে ভরে নিলাম।ওখানে থেকে বিল মিটিয়ে বেরোলাম তখন প্রায় আটটার কাছে ঘড়ির কাঁটা পৌঁছে গেছে।গাড়ি কোলাঘাট ছেড়ে আরো প্রায় কুড়ি কিমি আসার পর একটা সাইন বোর্ড দেখা গেলো দীঘা 90km টার্ন রাইট। এটা দেখা মাত্র অনুর বুঝতে বাকি রইল না আমাদের গন্তব্য কোথায়! তখন তার সে কি উল্লাস " ইয়ে ! আমার দীঘা এসে গেছি"
"এখনও নব্বই কিমি বাকি" আমি হাসতে হাসতে বললাম
সকাল থেকেই মেঘলা ছিল,এখন যেন কালো মেঘের চাদর টা আরো ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিল আকাশ।কিছুক্ষন পরেই শুরু হল তিরতির করে বৃষ্টি। অনুর তো আনন্দ আর ধরে না। হাত দুটো খুলে উপর দিকে মুখ করে বৃষ্টিকে যেন আরও ভালো করে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। বৃষ্টি ভিজতে যে কোনো মেয়ে এমন ভালোবাসতে পারে অনুকে না দেখলে জানতামই না। হালকা ভিজতে ভিজতে গাড়ি চালাতে আমারও মন্দ লাগছে না।গুনগুন করে গানের সুর ভেসে এলো কানে।বুঝলাম অনুর অনুভূতি টা আজ যেন একটু বেশি স্পেশাল।লং ড্রাইভে, বৃষ্টিতে ভিজে, প্রিয় মানুষের সাথে, নতুন পরিবেশে, একটা আলাদা আমেজে ভাসতে থাকে ও।
কিন্তু রোমান্টিক বৃষ্টি ক্রমেই বাড়তে বাড়তে ঝমঝম করে অঝোর ধারায় যখন ঝরতে শুরু করলো তখন অগত্যা দাঁড়াতেই হলো।ততক্ষনে দুজনেই কাক স্নান হয়ে গেছি। অনুর দিকে তাকিয়ে মেকি রাগ নিয়ে বললাম " তোর জন্যেই বোধ হয় বৃষ্টি টা আজ হলো"
"বেশ হয়েছে, আমি ভিজতে ভালোবাসি বলেই হচ্ছে"
ওর কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম। বৃষ্টিতে সব থেকে পীড়া দায়ক হল আমার বুট জুতো জোড়া। চামড়ার বুটের ভিতরে জল ঢুকে পুরো পাঁচ কিলো ওজনের ভেজা কম্বলে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির দাপট খানিকটা কমলে আমরা আবার বেরিয়ে পরি।রাস্তা কম নয় তাই দীঘা ঢুকতে প্রায় এগারোটা বেজে যায়। হোটেল আগে থেকেই বলা থাকায় চেক ইন করে রুমে আসতে দেরি হল না। ব্যাগ রেখে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি মহারানী তখন ওই ভিজে জামা কাপড় পরে ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে ব্যাস্ত। আমাকে দেখেই ঝাঁপিয়ে পরলো সেলফি তোলার জন্য। দু একটা ফটো তুলে চায়ের অর্ডার দিলাম দুকাপ। ব্যাগ থেকে ওর জন্য লেডিস হ্যাফ প্যান্ট আর একটা টপ দিলাম। অনু চোখটা বড়ো বড়ো করে বললো " তুই আমার জন্য ড্রেসও নিয়ে এসেছিস!"
"সবই প্রি প্ল্যানিং ম্যাডাম" বলতেই ও আমার নাক টা জোরে একটু টেনে দিয়ে "আমি চটপট চেঞ্জ করে আসছি" বলে ওয়াশরুমে চলে গেল।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছি সবে হঠাৎ পিছন থেকে এসে গলা জড়িয়ে ধরলো। আদুরে গলায় বলল " জান কেমন লাগছে আমাকে?"
আমি বললাম " চা টা তাড়াতাড়ি খা স্নান করতে যেতে হবে"
আমার এইরকম জবাব শুনে কাপ টা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল।চা টা শেষ করে ব্যালকনিতে গিয়ে অনুর হাত ধরে টেনে নিলাম নিজের বুকের কাছে। কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললাম "স্নান করে যখন সমুদ্র থেকে ফিরবি তখন বলবো কেমন লাগছে, এখন চল তাড়াতাড়ি"
দুজনেই নেমে এলাম হোটেল থেকে ওর জন্য লেডিস স্যান্ডেল আনা হয় নি।তাই আমার টা ওকে পরতে দিয়ে নিজে খালি পায়ে অনুর হাত ধরে হেঁটে হেঁটে চলে আসলাম সমুদ্রের ধারে।অনেক মানুষ জন নেমে গেছে স্নান করতে। সমুদ্রকে এইসময় নির্জন নিরিবিলি পরিবেশে পাওয়া দুষ্কর। অনু বাচ্ছা দের মতো লাফাতে লাগলো,হাসতে হাসতে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে পাথরের উপর দিয়ে সমুদ্রে নামবে বলে। আস্তে যেতে বললে কে কার কথা শোনে। তখন যেন এক উন্মত্ততায় মত্ত। সমুদ্রের ঢেউ এর থেকেও বেশি উচ্ছসিত আমার অনু। ক্লাস ফাইভে পড়াকালীন অনু এসেছিল কাকা কাকিমার সাথে প্রথম সমুদ্র দেখতে গল্প বলেছিল।তাই আজ প্রথম বার নয় আগেও সমুদ্রের ঢেউএর স্বাদ সে পেয়েছে তবু আজ এত উল্লাস। কাছে যেতেই ঢেউ এসে আমাদের ভিজিয়ে দিল আমি ওর হাত টা শক্ত করে ধরে আছি।মাথার উপর দিয়ে ঢেউ খেলে যাচ্ছে অনুর দাপাদাপি আরও বেড়ে যাচ্ছে। কখনও আমার পিঠে উঠে আরও দূরে নিয়ে যাওয়ার বায়না করছে কখনও হাতে করে নোনতা জল ছিটিয়ে দিচ্ছে আমার চোখে মুখে।মনে মনে ভাবছি এত ট্রানফারেন্সি কিভাবে থাকতে পারে ওর মুখে। চোখে মুখে আলাদাই খুশি ফুটে উঠেছে বলে যেন সরলতা আরও বেশি করে প্রকাশ পাচ্ছে।
ঘন্টা খানেক লাফালাফি করার পর হাঁপিয়ে উঠেছে তবু জল থেকে উঠার কোনো ইচ্ছাই নেই। সকালে বৃষ্টিতে ভিজেছে তারপর এতক্ষন স্নান করে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে তাই একপ্রকার জোর করেই সি বিচ থেকে তুললাম ওকে। হোটেলে ফিরে হাতে সাবান শ্যাম্পু ধরিয়ে দিয়ে স্নান করে আসতে বললাম। অনু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু বলল "জামা?"ব্যাগ থেকে একটা ওয়ান পিস ধরিয়ে দিলাম। ও চলে গেল আমিও বাইরের ওয়াশরুম থেকে স্নান করে এসে দেখি ম্যাডাম আয়নার সামনে নিজেকে দেখতে মত্ত। আমি যে এসেছি কোনো খেয়াল নেই, ভিজে চুলে লাল রঙের লং ওয়ান পিস টা পরে দারুন মানিয়েছে অনুকে। পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম কোমরটা, ও আয়নার থেকে তাকালো আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে।
"দারুন লাগছে আমার পাগলি টাকে" আমি বললাম। আমার দিকে ঘুরে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল
"আমারও ড্রেস টা খুব পছন্দ হয়েছে আকাশ,বুঝতেই পারছি না জন্মদিন টা আসলে কার"
আমি বললাম "আমার গিফটটা কিন্তু আমি এখনও পাই নি"
"কি চাই জান?"
"আপাতত খুব খিদে পেয়েছে,তাই খেতে চাই"
"বুদ্ধুরাম... চলো"
নিচে নেমে এলাম খাবারে দেখলাম বাঙলিয়ানা ছোঁয়া রয়েছে। ভাত ডাল বিভিন্ন রকম ভাজা দুরকম তরকারি মাছ চাটনি সহযোগে খাওয়াটা মন্দ হল না।
উপরে এসে এক ঝটকায় অনুর হাত ধরে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। অনু বুকে মাথা রেখে শুধু বলল "দরজা খোলা"
আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে লক করে এলাম।আগেও অনুর কাছাকাছি এসেছি কিন্তু এইরকম প্রাইভেসি কখনও পাই নি।আজ একটা আলাদা অনুভূতি।
"কখন পাবো জন্মদিনের মিস্টি?" কপট রাগ দেখিয়ে বললাম
অনু আমার একটা গালে চুমু দিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে অপর গাল টা বাড়িয়ে দিলাম।অনু আবার একটা চুমু দিতেই জড়িয়ে ধরে ঠোঁট টা বাড়িয়ে দিলাম। ও আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে দেখে আমি আগে গিয়ে ওর ঠোঁট স্পর্শ করলাম।চোখ বন্ধ করে নিল পাগলি টা। আগেও এক দুবার ওর ঠোঁটের স্বাদ আমি পেয়েছি।তবে খুবই ক্ষণিকের জন্য। আজ ডুব দিলাম সুরা পানে।জানিনা কতটা সময় কেটে গেছে এইভাবে, একসময় অনু আমাকে আরও জাপটে ধরল।আমি বুঝতে পারলাম ওর নিশ্বাস গরম হয়ে আসছে, নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। আমার জায়গায় যেকোনো কেউ থাকলে এই মুহূর্তকে এড়িয়ে যেতে পারত না। আমার পক্ষেও কঠিন হয়ে উঠছে।তবু আমি ওর সারল্যের সুযোগ আমি নিতে পারব না। নিজেকে ছাড়িয়ে দুহাত দিয়ে ওর মুখ টা ধরে বললাম "অনু মোহনা দেখতে যাবে না?"
"এক্ষুনি কেন?"
"আর তো কটা দিনের অপেক্ষা তারপর তো আমি তোমার তখন যত খুশি আদর খেও,এখন আর নয় কেমন" একটু আদুরে গলায় বলে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলাম।কি জানি অনু কি আমাকে আনরোমান্টিক ভাবলো?
ব্যাগ থেকে কাজল আর লিপ্সটিক টা বার করে একটু লাগিয়ে নিল, চুল তুলে বেঁধে নিয়েই বলল "চল আমি রেডি"
"ভিজে চুল খোলা থাক শুকিয়ে যাবে" বলে চুল টা খুলে দিয়ে নিজে 1টা শার্ট পরে বাড়িয়ে এলাম হোটেল থেকে। সি বিচ ধরে বেশ কিছুক্ষন হাঁটলাম।মনে হচ্ছে এইসময় যেন তাড়াতাড়ি বয়ে না যায়। তার মধ্যে সমুদ্রকে সাথে রেখে ম্যাডামের অনেক গুলো ফোটো তুলে দিতে হলো। ফোটো তুলতে নেই কোনো ক্লান্তি তার।আমাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি ছবিও তুলল। এরপর এলাম আমরা মোহনায়। সত্যি অপূর্ব সুন্দর এই জায়গাটা।আগে যতবার বন্ধুদের সাথে ছুটি কাটাতে এসেছি এই মোহনা কখনও মিস করি নি। সব জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে দেড় ঘণ্টা কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পরলাম না। হোটেলে ফিরে সব কিছু ঘুছিয়ে চেক আউট করে বেরলাম যখন, তখন পাঁচ টা পনেরো।
এখন অনেক টা দায়িত্ব। বাড়িতে আমরা দুজন একা এত দূর আসছি জানলে কেউ ছাড়ত না।ওর বাবা জানে অনেক বন্ধুদের সাথেই আমরা থাকব। এত সকালে বেরোনোর জন্য আগেই ওকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এখন যেভাবেই হোক সাড়ে নটায় বাড়ি ফিরে যেতে পারলেই হল। ফেরার সময় বৃষ্টি হচ্ছে হালকা,উপেক্ষা করেই গাড়ি চালাচ্ছিলাম। ভাবলাম বৃষ্টি যদি খুব জোরে আসে অনুকে একটা রেইন কোর্ট কিনে দেব, দাঁড়িয়ে আর সময় নষ্ট করা যাবে না।
প্রায় একশো তেরো কিলোমিটার একটানা চালালাম।হঠাৎ বাইকের হেড লাইট অফ হয়ে গেল।একটানা এতক্ষন ধরে চলার জন্যেই বোধ হয় গরমে কেটে গেছে।আর কিছু টা গেলেই কোলাঘাট। কিন্তু তার আগেই রাস্তার ধারে একটা দোকান পাওয়া গেল।যেখানে হেড লাইট টা লাগিয়ে নিলাম। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া জামা গায়েতেই শুকিয়ে গেল। কোলাঘাট পৌঁছে কিছুটা দাঁড়িয়ে চা জল খাওয়া দরকার।অনুর চোখে মুখে এবার ক্লান্তির ছাপ পড়েছে।জিজ্ঞাসা করলাম "কিরে ক্ষিদে পেয়েছে?"
"না ঘুম পাচ্ছে" উত্তর দিল।
আমি আর কিছু না বলে গাড়ি চালাতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই কোলাঘাটের কাছে এসে এটা ধাবায় দাঁড়ালাম।দুটো চা আর গরম গরম দুটো সিঙ্গাড়া নিলাম। অনু চোখে মুখে জল দিয়ে চা আর সিঙ্গাড়া টা শেষ করে বাড়িতে একটা ফোন করে নিল আমার ফোন থেকে।ওর ফোন চার্জ শেষ হয়ে সুইচ অফ হয়ে গেছে। আমাদের আর ঘন্টা দেড়েক লাগবে বাড়ি ঢুকতে।
একটা সিগারেট ধরিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে দিলাম। সিগারেটটা শেষ করে হেলমেট টা পরে নিয়ে গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দিলাম। বৃষ্টি হওয়াতে রাস্তা ভিজে আছে। আচমকা একটা বাসের আলো চোখটা কে ঝাঁপসা করে দিল।বুক টা ধক করে উঠল। টাল সামলাতে পারলাম না গাড়ীটা স্লিপ করে। ছিটকে গেল পিছন থেকে অনু।সজোরে ধাক্কা খেল ফুটপাতের বর্ডারে, ওর একটু দূরেই হেলমেটটা গিয়ে পরেছে। নিমেষের মধ্যে পিছনে দূরপাল্লার বাস টা সজোরে ব্রেক কষলো আমি চিৎকার করে উঠলাম কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।অনু ভয়ার্ত এক দৃষ্টিতে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।
মিনিট কুড়ি নির্বাক হয়ে শুধু বসেই ছিলাম লোকজনের ভিড় বাড়তে ফোন টা পকেট থেকে বার করে লাস্ট রিসেন্ট কল অনুর দাদাভাই নম্বর টা দেখে আগে ডায়াল করলাম... কি বলবো বুঝতে পারছিনা...কি করবো মাথা কাজ করছে না...
"দাদা... দা.....দাভাই দেখো না তোমার বোন..তোমার বোন কথা বলছে না তুমি এসো না প্লিজ" ভাঙ্গা গলায় অনেক কষ্টে কথা টা শেষ করলাম আমি
এক ঝটকায় সমস্ত পৃথিবী টা ওলটপালট হয়ে গেল। আমার অনু এখনও আমার দিকে অপলক তাকিয়ে। আমার জন্মদিনের উপহার স্বরূপ আজকের দিনটাই রয়ে গেল।আমার জীবন অনু আমারই চোখের সামনে চলে গেল।দাদাভাই এসে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। অনুর চোখটা আলতো ভাবে বন্ধ করে দিল।অনুভূতিহীন আমি ওর বাঁ হাত টা শক্ত করে চেপে ধরে বসেছিলাম কিন্তু বাঁধন আলগা করে ওরা অণুকে নিয়ে গেল।কত শত মানুষ, পুলিশের ভিড় আসতে আসতে শান্ত হয়ে এলো। অনু রক্ত গঙ্গায় বসে শুধু আজকের দিনটাই মনে করছি। অনুর বায়না, ওর রাগ, অভিমান, ওর হুল্লোড় সব কিছু কেই তো বুকে করে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এক নিমেষে সব কিছু ধূলিসাৎ হয়ে গেল। সেই স্বপ্নের ভালোবাসা আজ হাহাকার করে এ বুকে। সকল অনুভুতির মৃত্যু হয়েছে অনুর জীবনের সাথে। এটাকেই কি বলে নিয়তি?কথা দিয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার, এইভাবে কেউ কি চলে যেতে পারে এমনি হঠাৎ করে!!!!
২৪/০৮/২০২১
শিরোনাম : আজব ধুতি (রম্যরচনা)
কলমে : অরবিন্দ সরকার।
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ।
ইংরেজ চলে গেলেও তার ভাষা,আদব কায়দা সব রেখে গেছে।
ভুজঙ্গ সেন খাঁটি বাঙালি,তার একটিমাত্র ছেলে এখানকার ব্যাঙ্কের চাকুরী ছেড়ে পাড়ি দিয়েছে লন্ডন। সেখানে চাকুরী করে স্থায়ী বাসিন্দার স্বপ্ন জেগে উঠেছে তার মনে।তার ছেলে সজল তার বাবা মাকে লন্ডনে নিয়ে গেলো ঘর দেখার জন্য।
ভুজঙ্গ বাবু ছেলের সঙ্গে বিলেতে পাড়ি দিলেন কয়েক দিনের জন্য। ওখানে ছেলে ডিউটি করে আর ভুজঙ্গ বাবু এদিক ওদিক লন্ডনে বেড়িয়ে বেড়ান। একদিন বিখ্যাত একটি পার্কে ঢুকলেন। পার্কের যতো নক্ষত্র সেলিব্রেটি চেয়ে আছে ভুজঙ্গ বাবুর দিকে। তাদের বিলেতি নানা ধরনের কুকুরগুলো তেড়ে চলে আসছে,যেন ভিনদেশী কোনো কুকুর এসেছে। মানুষে ও কুকুরের মাঝে ভুজঙ্গ বাবু খাপছাড়া।
কলকাতা তথা বাংলাদেশে যেমন কাগজকুড়ানীদের কুকুর তাড়া করে তেমনি এখানে ভুজঙ্গ বাবুর সেই দশা।
মানুষ ও কুকুর সবাই বিলাতী তাই ভিনদেশী ধুতি পরিহিত কোন জীব সেদিকে তাদের নজর। ধুতি তো বিলাতী হতে পারে না। এদেশেও ধুতি তার পরিবেশ হারিয়ে ফেলেছে।সবাই এখন খাপের পোষাক পরিধান করে।দোনলা বন্দুকের মতো দুই পা তাতে পুরে মানুষের ছুটাছুটি। ধুতি তার কুলীনতা হয়তো একদিন দেখায় । যেদিন বিয়ে করে সেদিন।তাও নতুনভাবে সৃষ্টি হয়েছে ধুতি। আন্ডারওয়্যার পড়ার মতো পরিধান করা যায় কোমরে ইলাস্টিক লাগানো।
ভুজঙ্গ বাবু কাপড় গুটিয়ে পালিয়ে আসার চেষ্টা করতেই কাপড় ধরে বিলাতী কুকুরের টানাটানি। ভুজঙ্গ বাবু পরিধানের কাপড় হারিয়ে বাসায় ফিরে এলেন। কোনো রকমে আন্ডারওয়্যার ছিলো বলে সম্মান হানি হয়নি। ভুজঙ্গ বাবু তার স্ত্রীর দিকে চেয়ে বললেন এখানে সবাই বিলাতী কুকুর।আর পার্কে যাওয়া যাবে না।চলো এবার ফিরে যাই। এখানে মারা গেলেও গঙ্গা পাবো না। বিলাতী কায়দায় এখানে শবদাহ হবে। ধুতি প'রে ছেলে মুখাগ্নিও করবে না। ধুতি উঠে যাবে সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালির স্বাদ হারিয়ে কুলীন বাঙালীয়ানা জাত খুইয়ে বেজাত হয়ে যাবে।এই বয়সে আর জাত খোয়াবো না। ছেলে মনে হয় এখানেই বিলাতী বৌ নিয়ে ঘর করবে।গঙ্গা বাঙালীর,ধুতিও বাঙালীর।
কলকাতাতেও এখন বাড়ীতে বাড়িতে পোষ্য এই বিলাতী কুকুর।আর এদেশীয় নেড়ীকুত্তারা রাস্তায় ধুলোবালি মেখে অখাদ্য খেয়ে বেঁচে থাকে। বিলাতী কুকুর দেখলে তারা চিৎকার করে।
ধুতি একদিন না একদিন যাদুঘরে আশ্রয় নেবে। বাঙালীর বাঙালিপনার অবসরপ্রাপ্ত হবে।এ পৃথিবীর বাঙালি জাতির পোষাকে রদবদল হয়ে বাংলাদেশের সর্বত্র বিলাতিপনা শুরু হবে।
বিয়ের মন্ত্র তন্ত্র পাঠ শিকেয় উঠবে। নাপিত পুরুতের জাত ব্যবসা ধুতি পরিধান করে বিয়ে, অন্নপ্রাশন, শ্রাদ্ধ উধাও হয়ে কোর্ট কাছারীত বিয়ে হবে।
পুরুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই ঐ ধুতির মালিক স্ত্রী।বৈধব্যের ছাপ ধুতি মিশ্রিত।ধুতি পরার কতো রকম ধরন সেটা বাঙালির মধ্যেই ছিলো।কারো ধুতির আঁচল পকেটে পুরে জমিদার জমিদার ভাব, কারো আবার বাবুয়ানা।কেউ চাষী তার ধুতি খাটো, ধুতির ন্যেঙটি তাতেও পাড়ের নক্সা ও পরিধানে বৈচিত্র্যময়।
ধুতির মৃত্যুর সাথে সাথেই বাঙালী জাতিটাই মুছে যাবে হয়তো।
শিরোনাম - মনুষ্য সেবায় "ঈশ্বর"
কলমে - অরিন্দম দাস
তাঁর স্বরচিত পুস্তক -
বাংলায় 'বর্ণ পরিচয়'।
পণ্ডিত ছিলেন তিনি,
বিদ্যাসাগর মহাশয়।
সবাই তো জানে কেমন,
দয়ার সাগরের স্বভাব।
গরীবদের দিতেন দান,
যতই থাক না অভাব।
গরীব ব্রাহ্মণ পরিবারে,
শিক্ষার হয় নি তো অন্ত।
বাংলায় শিক্ষা বিস্তারে,
তিনি হননি কখনও ক্লান্ত।
নারী শিক্ষার প্রসার ও
বিধবা বিবাহ প্রচলন।
এই বাংলার গর্ব তিনি,
মোরা করি ঈশ্বর স্মরণ।
শিরোনাম - স্তন্যদায়িনী
কলমে - সোমনাথ সাহা
অসংখ্য উষ্ণতা গায়ে মেখে শুয়ে আছি তোমার কোলে মুখ ডুবিয়ে।
আমার মৃত্যুমুখী ব্যর্থ রক্তপাত বর্ধিত প্রলয়ের আভাস দিয়ে গেলো সবে।
সনাতনী দীর্ঘশ্বাস দুঃখের মত বুক চিতিয়ে ওঠে,
আর কণ্ঠ শুকিয়ে আসে শূন্য হওয়ার আগে।
ঠিক তখনই মায়ের শীতলতা আমি বুঝতে পারি,
যখন জ্বলন্ত কপালে তোমার স্পর্শ পাই।
তারপর ঘাম দিয়ে জ্বর চলে যায় নিরন্ন মানুষের পথ- মিছিলে।
আমি ঘুমিয়ে পড়ি ঘুমের ভিতরে আর স্বপ্ন দেখি,
রাস্তায় রাস্তায় কবর দেওয়া হচ্ছে মানুষের মনোবল।
আমি বুঝতে পারি বিপন্ন বাতাস এখানে পাথরের চেয়ে ভারী।
মা তখন হাত বুলিয়ে বাস্তবতার জানান দেয়,
আর বলে সভ্যতার পথ গুলো এইভাবেই মায়া কাটিয়ে কঙ্কাল হয়ে ওঠে। ভয় কোরোনা!
পদ্মের কোমলতাকে ভেদ করে যে মৃত্যু জন্মের ঠোঁট ছুঁয়ে এসেছিল, সূর্যাস্তের অনন্ত গোধূলি থেকে আমার নিঃসঙ্গ মা উঠে এসে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে জননী সত্ত্বা দিয়ে।
ঠিক যতটা দুর্বল হলে মেরুদন্ড থাকেনা, ততটাই দুর্বল হয়ে মায়ের কোলে শুয়ে আকাশের সুখতারা গুনছি।
দেখবে তুমি ক্লান্তির চাদরে শুয়ে স্নেহের চুম্বনও কেমন স্বাদহীন লাগে।
অশ্রুস্নাত চোখে দেখতে পাই চারিদিকে সামাজিক জঞ্জাল; উঠে দাঁড়াতে পারছিনা।
তাই, মায়ের হাত ধরে শুয়ে আছি শান্তির বিশ্রামে।
একদিন উঠে দাঁড়াবো ঠিক !
স্তন্যদায়িনীর ঋণ শোধ করে মৃত্যুর কাছে গিয়ে আজীবন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবো মেরুদন্ডহীন হয়ে।
শিরোনাম -আমিত্ব
কলমে - সুবর্ণা বর্মন
চারপাশের ব্যর্থতার কিনারায়
হারানো বুকে ফিকে রং বদলের দিনে
ধূসর বেলার আত্মীয়তায়
একটা নিজস্ব আমিত্ব চাই,
যার নিজস্ব সত্তার দোয়ার
চির স্বাধীনের খোলা বাতায়ন,
শরীরের যাবতীয় অনুবাদের লেখায়
অভিমানী বর্ণমালারা বিদায়ের সুরে
রজনীগন্ধার সৌরভে মাতে।
শিরোনাম - মানুষের হালচাল ও পৃথিবী
কলমে - রেজাউল করিম রোমেল
যখন হেঁটে যাও মানব সভ্যতা
ভালোবাসার সিঁড়িগুলো ফিরে চায়।
থামো, চলো, ফিরে তাকাও-
বিরামহীন ধাপ সমষ্টি ডিঙ্গিয়ে
যাওয়া তোমার ধর্ম।
যুদ্ধ কর-
সময়, বাস্তবতা, সত্যের সাথে অসত্যের।
স্বপ্ন দ্যাখ,
সুখের পেছনে ছুটে যাও,
তুমি তার ঠিকানা জানো না।
ত্রি-চক্র যানে চালক যেমনিভাবে
এগিয়ে যায় শহরের আঁকাবাঁকা পথে।
মাঝি অজানা দিগন্তে খোঁজে
ভাটিয়ালী সুর।
মাঝে মাঝে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত বা কাঙ্ক্ষিত
গন্তব্য পাওয়ার উন্মাদনায় পশু হয়ে উঠো,
পায়ের নিচের মাটিকে মনে হয় অচেনা।
নিজ প্রয়োজনে মানুষের ঘাড় মাথা পিষে
আকাশ ধরতে চাওয়া তোমাদের লক্ষ্য।
তাই আজ পৃথিবী তার
লাভ ক্ষতির হিসাব কষতে বসেছে।
শিরোনাম :-অপরিচিতা
কলমে :- জান্নাতুল মাওয়া মিম
পদ্ম পুকুরের পাশে বসে যখন
দেখেছি হংসরাজের জলকেলি,
সহসা মোর কাড়িয়াছে মন
মায়াবিনী এক নারী।
মাঝে মাঝে তব পাহিয়াছি দেখা
নিত্য পাইনি দেখিতে,
মন করে মোর বড় আনচান
মোর অপরিচিতার প্রেমেতে।
ওহে অপরিচিতা,
তুমি কি জানো তোমার
মনে আমারই বসবাস!
তবো কেন পাইনি কভু
প্রেমেরও আভাস?
সত্যি বলছি কভু দেখতাম না
তোমারও স্বপন!
বাসতাম না তোমায় ভালো,
থাকিতে তুমি তোমারি মতোন
আর আমি অগোছালো।
অনেক কিছু যেতো পাল্টে
যদি তুমি থাকতে পাশে,
ভাঙতে পারতো অনেক ভুল
হয়তো অবশেষে।
শিরোনাম - চুক্তি
কলমে - কুনাল দাস
শ্রাবণ মাসের মেঘবালিকা আমার পানে চাও,
তোমার বুকের বৃষ্টি খানিক আমার বুকেও দাও!
আমার বুকের শুষ্ক শরৎ চাও যদি আমি দেবো,
বিনিময়ে এক টুকরো বর্ষা আমি নেবো!
আমার বুকে শিশির আছে চাইলে নিতে পারো,
শিউলি আছে পদ্ম আছে চাইছো নাজে বড়ো?
মেঘবালিকা, আঁচল পাতো সব কিছু আজ দেবো;
শুধু পশলা খানিক বৃষ্টি আমি তোমার থেকে নেবো!
বলবে তুমি জানি আমার একি হ্যাংলা স্বভাব,
বিশ্বাস করো সবই আছে শুধু বৃষ্টিটারই অভাব!
আমার বুকের পাঁজর গুলো তুলোর মেঘে ঢাকা,
ইতস্তত বেড়ায় ঘুরে ছবির মতো আঁকা
রোদের সাথে খেলছে সদাই লুকোচুরি খেলা,
কাশফুলের ওই নদীর মাঝে ভাসায় মনের ভেলা!
তবুও সব শুষ্ক হেতা ধুলোর মতো ওড়ে,
পাঁজর হতে মাটি গুলো ঝড়ে ঝড়ে পরে!
তাই তো তোমার বুকের পানে চাতক চেয়ে আমি,
এক পশলা বৃষ্টি পেলে ভিজবে বুকের জমি!
শিরোনাম - বহে বেত্রবতী
কলমে - শ্যামাপ্রসাদ সরকার।
প্রস্তরময় জঙ্গলগাত্রের ভিতর দিয়া একটি নির্ঝরিনী কলস্বরে বহিয়া বেত্রবতী নদীতে আসিয়া মিশিয়াছে। এই স্থানটি তপোবনের ন্যায় শান্ত। নদীতটে উড্ডীয়মান বহুবর্ণীল পক্ষী ও চিত্রিত মায়ামৃগ ব্যতিরেকে কেবল ময়ূর ও শশকজাতীয় প্রাণীই এই অরণ্যাংশে দৃষ্ট হয়। অপর কোনও হিংস্র প্রাণী সাধারণতঃ গোচরে আসে না।
একদা এই অরণ্যপথে ভগবন্ তথাগত তাঁহার প্রবজ্যাপথে আসিয়াছিলেন। তখনও তিনি বুদ্ধত্বের অনুধাবনে সিদ্ধ হন নাই। বরং সেইকালে তিনি এক সর্বসুখপরিত্যাগী সংশয়ী ঋষিকল্প যুবার ন্যায় তাঁহার আত্মদীপের অগ্নিশিখাটিকে সম্পূর্ণরূপে প্রজ্জ্বলনের অণ্বেষণেই ঘুরিতেছিলেন মাত্র।
************
এই অরণ্যের মধ্যে এক নিষাদ বাস করিত। তাহার নাম কীলক। অরণ্যের পশু বধ করিয়া সে নিকটস্থ চেদীরাজ্যের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে পশু মাংস বিক্রয় করিয়া জীবিকা নির্বাহ করিত। গুঞ্জা ছিল তাহার একমাত্র কন্যা।মাতৃস্নেহবঞ্চিতা হইলেও অভাগিনী গুঞ্জা তাহার পিতার স্নেহ ও প্রশ্রয় তাহার বিড়ম্বিত জীবনে সম্পূর্ণরূপেই পাইয়াছিল।
পিতার নিকটে গুঞ্জা নৌচালনায় অতি অল্পবয়সেই পটুত্ব অর্জন করিয়াছিল। তাহার ক্ষুদ্রকায় ডিঙিটি বাহিয়া সে প্রপাতিনীর ধারা পার করিয়া বেত্রবতী নদীর মূল অবধি ভাসিয়া যাইত। ইহাই ছিল তার একমাত্র বিনোদন। বনেচর হইবার ফলে বহুবিধ ভেষজ লতা ও ফুল ও ফলের সন্ধানও সে জানিত। ক্রমে গুঞ্জার যৌবনপ্রাপ্তি হইল। সেইযুগে নিষাদ সমাজে অযথা আব্রু রক্ষার দায় হইতে নারীদের মুক্ত রাখাই হইত। বনেচর এই প্রকৃতিবালারা বনের শষ্পলতার সাথে একদিন বৃদ্ধি পাইয়া প্রকৃতির নিয়ম মান্য করিয়া ফলবতী হইয়া পড়িত। তাহাই স্বাভাবিক বলিয়া কন্যার বিবাহের জন্য কীলক একেবারে ব্যতিব্যস্ত হইবার প্রয়োজন বোধ করে নাই।
***************
বেত্রবতী যে স্থলে রঙ্গিলা নদীর ক্ষীণধারায় আসিয়া মিশিয়াছে তাহার অপরপ্রান্তেই শূরসেন রাজ্যের সীমানার প্রারম্ভ। ইহার পরই উত্তরবাহিনী বেত্রবতী ক্রমে অলস ছন্দে যমুনায় আসিয়া সমর্পিতা হইয়াছে। গুঞ্জা উজানে তাহার ডিঙিটি ভাসাইয়া ক্রমে চেদী রাজ্যের সীমানা পার করিয়া কি এক নেশায় ক্রমশ আরো দূরে যাইতেছিল। অপরাহ্নের আলো ক্রমে ক্ষীণ হইয়া আসিতেছে। এই অঞ্চলের বনাঞ্চল অপেক্ষা নদীপথ অধিক বিপদসঙ্কুল। প্রায়সই যমুনার ধারা বাহিয়া শিকারের লোভে কুম্ভীর আসিয়া লুকাইয়া থাকে। গুঞ্জা নিষাদের কন্যা। শৈশবকাল হইতেই এ অঞ্চলের প্রতিটি সংবাদ তাহার নখাগ্রে থাকে। ডিঙি চালাইতে চালাইতে সে দেখিল দূরের তীরভূমিতে এক মনুষ্যদেহ অচেতন হইয়া পড়িয়া আছে। তাহার দেহের অর্ধাংশ জলস্পর্শ করিয়া রহিয়াছে। অর্থাৎ তৃষ্ণার্ত হইয়া মনুষ্যসন্তানটি জলে নামিয়াছিল ঠিকই, কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে তাহার চেতনা লুপ্ত হইয়াছে। আরো কিছুদূর অগ্রসর হইয়া গুঞ্জা দেখিল মনুষ্যটি এক পিঙ্গলবর্ণের যুবাপুরুষ। সে দ্রুত তাহার ডিঙিটিকে একটি গুল্মের সহিত বাঁধিয়া যুবাটির নিকট আসিল। গুঞ্জা তাহার শ্বাসপরীক্ষা করিয়া বুঝিল নাড়ীর গতি ক্ষীণ হইলেও যুবাটি এখনো জীবিত। তাহার ডিঙিটিতে তৎপরতার সহিত অচেতন যুবাটিকে উদ্ধার করিয়া গুঞ্জা ফিরিবার পথ ধরিয়া তাহার নৌচালনা করিল।
**********************
পথিমধ্যে যুবাটির সংজ্ঞা আসিল। সে তাহার আয়তনয়ন মেলিয়া অতি বিস্ময়ে গুঞ্জাকে দেখিতে লাগিল। গুঞ্জা নৌযাত্রায় সর্বদা তাহার নিকটে কিছু ফল ও মধু সঞ্চিত রাখে। তাহা হইতেই সে যুবাটিকে তৎক্ষণাৎ কিছু ফল খাইতে ও মধু পান করিতে দিল।
যুবাটি বাস্তবিকই ক্ষুধায় সে বড়ই অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছিল। সঙ্গে খাদ্য না থাকায় সে বাধ্য হইয়া জল পান করিতে নদীতে নামিয়াছিল। তাহারপর অবসন্নতা ও ক্লান্তিতে অকস্মাৎ চেতনালুপ্ত হইয়া পড়িয়াছিল। সে কিছুটা সুস্থ বোধ করিয়া উঠিয়া বসিলে গুঞ্জা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল-
" আপনাকে দেখিয়া সদ্বংশজাত বলিয়া মনে হইতেছে! তথাপি এ বনমধ্যে একাকী কি করিতেছিলেন? মৃগয়া করিতে আসিয়া পথভ্রষ্ট হইয়া পড়িয়াছিলেন বুঝি? কিন্তু তাহা হইলে আপনার অমাত্যগণ আর অস্ত্রশস্ত্র সব কোথায় হারাইলেন? "
যুবকটি স্মিত হাসিয়া কহিল-
" হে বরদে! আপনি সদয়া না হইলে এযাত্রায় আমি রক্ষা পাইতাম না। আমি মৃগয়াণ্বেষণে বনমধ্যে আসি নাই ঠিকই তবে আমিও একপ্রকার অণ্বেষী এ কথাও যারপরনাই সত্য!"
গুঞ্জা ইতিমধ্যে তাহার আত্মপরিচয় প্রদান করিয়াছে। সে পরম বিস্মিত কন্ঠে পুনরায় কহিল -
" তবে এই বনমধ্যে কিরূপ ধনের অণ্বেষণ করিতেছিলেন? আপনার ভাগ্য অতি সুপ্রসন্ন বলিয়া বিষধর শঙ্খচূড় সর্প অথবা ভয়াল কুম্ভীর হইতে রক্ষা পাইয়াছেন। আপনার শান্ত ও আয়ত চক্ষুদুটি দেখিয়া কোন দস্যুপতি বা ধনলোভী তস্কর বলিয়া ভাবিতে কষ্ট হইতেছে! তবে কি আপনি কোন বণিকপুত্র? "
****************
বেত্রবতী যেস্থলে রঙ্গিলা নদীর ক্ষীণধারায় আসিয়া মিশিয়াছে তাহার একপার্শ্বে যুবাটি গুঞ্জাকে তাহার ডিঙিটি বাঁধিতে অনুরোধ করিল। তারপর ডিঙি হইতে মাটিতে অবতীর্ণ হইয়া তাহাকে করজোড়ে নমস্কার করিয়া যুবাটি বিদায়ের আজ্ঞা যাচনা করিল। গুঞ্জা হতবাক হইয়া যুবকটিকে দেখিতে লাগিল।
সন্ধ্যার প্রাকমুহূর্তে ক্রমশ গোধূলির গৈরিকআভায় যুবকটির মুখমন্ডল প্রশান্তিতে ভরিয়া উঠিতেছে। সে অপ্রকট হইবার কালে আত্মপরিচয় দিয়া কহিল - " আমার পিতৃদত্ত নাম গৌতম! অনেকদূরের লিচ্ছবিরাজ্যের নিকটে শাক্যবংশে আমার জন্ম। মাসাধিককালপূর্বে আমি সংসারত্যাগ করিয়া যে মহাসত্যের সন্ধানে নিষ্ক্রান্ত হইয়াছি আজ তাহার অনেকগুলি প্রশ্নের মধ্য হইতে অন্তত একটি প্রশ্নের উত্তর পাইলাম তাহা হইল- সর্বং অনিত্যম্ সর্বং অনাত্মম্ সর্বং ক্ষণিকম্ - সকলেই অনাত্মীয়, সকলই অনিত্য, আর সব কিছুই ক্ষণিকের । হে ভদ্রে, আপনার জন্য আজ যে জীবন পুনরায় ফিরিয়া পাইলাম তাহা পুনরায় সেই মহাসত্যের অণ্বেষণেই নিয়োগ করিব! " এই বলিয়া সে দ্রুতপদে বনমধ্যে মিলিয়া গেল।
গুঞ্জা এতক্ষণ নির্বাক দর্শকের ন্যায় এই অপরূপকান্তি যুবকটির কথা শুনিতেছিল। তাহার সপ্তদশবর্ষীয়া সুকুমারী হৃদয় এক অকল্পনীয় আবেগে ও অনুরাগে কম্পিত হইতে লাগিল। নিষাদপল্লীতে বেদাদি শাস্ত্রশিক্ষার উপায় তাহার নাই তবুও যুবকের কম্বুকন্ঠে ধ্বনিত সেই মহামন্ত্র -
" সর্বং অনিত্যম্ সর্বং অনাত্মম্ সর্বং ক্ষণিকম্'' এই শব্দগুলি তাহার দেহতন্ত্রীতে বীণার ন্যায় বাজিতে লাগিল।
বিধাতার অভিপ্রায়ে গুঞ্জা ও তাহার ক্ষুদ্র ডিঙিটি সেই মহাজীবনের অনন্তযাত্রাপথের একটি অধ্যায় হইয়া বেত্রবতীর বুকে ভাসিয়া চলিতে লাগিল কাল হইতে কালান্তরের পটভূমিকায়।
শিরোনাম - প্রশ্ন
কলমে - শুভব্রত ব্যানার্জ্জী
কাঁদতে কাঁদতে খোকা এসে শুধায় মায়ের কাছে-
অনেক দিন হয়ে গেল বাবা কোথায় গেছে?
আদর করে মা বলে- আয়রে বুকে জাদু,
বাবা গেছে সুন্দরবনে আনতে অনেক মধু ।
অবুঝ খোকার প্রশ্ন যেন থামতে নাহি চায়-
ফুলেই যদি মধু মেলে তবে সুন্দরবন কেন যায়?
শুনেছি সেথা জলেতে কুমীর ডাঙায় থাকে বাঘ
ইয়াব্বড়ো অজগরে এক গ্রাসে গেলে ছাগ!
তাদের সাথে দেখা হলে কি যে হবে বাবার,
এবার এলে বলো তাকে দরকার নেই যাবার ।
আঁতকে উঠে মা খোকার মুখটা চেপে ধরে
মনে মনে ইষ্টদেব দক্ষিণ রায়ে স্মরে ।
এমনি ভাবেই দিন কেটে যায়
খবর পাবার নেই যে উপায়-
ভরসা এখন একটাই, যে অনেকে সাথে আছে
সবাই মিলে দক্ষিণ রায়ের আশিষ নিয়ে গেছে ।
পক্ষকাল পরে যেদিন নৌকা লাগে ঘাটে
সবার সাথে মা'কে নিয়ে যায় খোকা ছুটে ।
সবাই নামে নৌকা থেকে খোকার বাবা নাই
জনে জনে শুধায় খোকা- তার বাবা কোথায়?
এ ওর মুখ পানে চায়, হয়ে গেছে নির্বাক
খোকার মায়ের বুকের ভেতর করছে হাঁকপাক ।
সবাই যখন একে একে পাশ কাটাতে চায়
জোরে কেঁদে শুধায় খোকা- আমার বাবা কোথায়?
পঞ্চাখুড়ো দলের নেতা বলল ধীরে ধীরে-
তোর বাবাকে নিয়ে গেছে দক্ষিণ রায়ে কেড়ে ।
শুনে খোকা কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে যায়
দেখে মা তার অসার হয়ে চেয়ে আছে অসহায় ।
মেয়ে-বৌরা কেঁদে কেটে কাঁদাতে চায় তাকে
ভয়ে খোকা আঁতকে ওঠে, জড়িয়ে ধরে মা'কে ।
খোকার কোমল হাতের ছোঁয়ায় মায়ের চেতনা ফিরে আসে
গগনবিদারী কান্নাতে তার সব চোখের জলে ভাসে ।
খোকাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মা করে- হায় হায়
স্বামী ছাড়া এ জগতে সে যে বড়ই অসহায় ।
এতোবড় জীবন তারা কাটাবে কেমন করে
কি করে ফিরবে সে তার স্বামী হীন ঘরে!!
শিযোনাম – ঘাসফুল
কলমে – স্বপন গায়েন
তারিখ – ১৮/০৮/২০২১
আগাছার মধ্যেই বেড়ে ওঠে বেজন্মা ঘাসফুল
কারুর নজর পড়ে না ওদের দিকে -
বিনা যত্নেই বেড়ে ওঠা গন্ধহীন রঙিন ঘাসফুল।
অবহেলা যাদের একমাত্র সম্বল সেই অনাথ শিশুরাই যেন ঘাসফুল
সব্বাই মাড়িয়ে চলে যায় অবলীলায় মাটির ঘাসফুলের মতই
কাটা ঘুড়ির মতো বেয়ারিশ অগোছালো জীবন।
কোনো পুজোতেই লাগে না ভালোবাসাহীন ঘাসফুল -
কাটা ঘুড়ির মত শুধুই ভেসে চলা অনন্ত অবিরাম
ছন্দহীন জীবন নিয়ে ছোটো ছোটো অনাথ ছেলে মেয়ে ঘুরে বেড়ায়।
জীবনের আলপথে আগাছা ভর্তি কাঁটাময় জীবন
জ্যোৎস্না চাঁদের আলোয়ও বিবর্ণ মনে হয় -
আশৈশব কেটে যায় আঁধার ভরা জীবনের পরিমণ্ডলে।
হাজার আলোকবর্ষ পেরিয়ে গেলেও ঘাসফুল নীরবে কাঁদবে
দেবতার পায়ে কোনোদিনও পুজোর স্পর্শ পাবে না
অনাথ ছেলেমেয়েদের মত ঘাসফুল চিরকাল রবে পৃথিবীর আঁধার কক্ষপথে।
শিরোনাম - খুঁজে পাবে ঠিকানা
কলমে - সঙ্ঘমিত্রা ভদ্র
. এবং
প্রবীর ভদ্র তাং-২৪.০৮.২১
বুঝি আছে উত্তরে
বন্ধ সে পিঞ্জরে
ডানা দুটি ঝাপটায়
বারবার পাকখায়
মনে হয় বাতাসে
খুঁজে পাবে পাখা-সে
হুঁশ করে উড়ে যাবে
দূর নীল আকাশে |
আকাশের ঠিকানা
কেন যেন অজানা
মন চায় উড়তে
পিঞ্জর ছাড়তে |
একদিন আসবেই
ডানা সে যে মেলবেই
উড়ে যাবে বহুদূর
অচেনা অচিনপুর।
শিরোনাম
- শরতে সুখ
কলমে - রুশো আরভি
ছাতিম ফুলে মন মেতেছে
বসেছে রঙের মেলা,
নীল আকাশে শুভ্র মেঘে
করছে দারুণ খেলা।
মাটির বুকের কাটলো খরা
শরতের এই কালে,
হরেকরকম ফুল ফুটেছে
গাছের ডালে ডালে।
বিলের পাড়ে কাশফুলেতে
করছে আজ রাজ,
বাংলা মায়ের রাঙা বুকে
সেজেছে নয়াসাজ।
সাগর,নদী জল পেয়েছে
যৌবন পরিপূর্ণ,
শরতে এবার সুখ এসেছে
দুঃখ করে শূন্য।
শিরোনাম - ছাতে
কলমে - প্রবীর ভদ্র
তাং- ৩০.০৮.২১
চুপটি করে বসেছিলি ছাতে
তোর গায়েতে লেগেছিল গা'।
এমন সময় উঠল বেজে শাঁখ
হঠাৎ উঠে বাড়িয়ে দিলি পা'।
ঠোঁটের কাছে ছিল জলের গ্লাস
পানের আগেই--- পড়ল দীর্ঘশ্বাস।
তারায় ভরা নির্জন সেই রাতে
অনাঘ্রাত কুসুম-কলি
গন্ধ ছড়ায় ছাতে।
শিরোনাম - মন পাখি
কলমে - প্রশান্ত কুমার মন্ডল
সে কথা শোনায় আজও কেউ
রাতের গভীরে একাএকা কথা বলা
স্বপ্নে দেখা চোখ মুখ।
প্রতি রাতে পুঁতি গাছ, ভরে ওঠে ফুল ফল
রঙ দিয়ে সাজাই মনের মতো
সূর্য ঢলে পশ্চিমে,রাস্তা ও শেষাগত
কত গাছ গেল মরে, কত এখনো বেঁচে
এখনো কেউ হাসে,কেউ ফোটায় ফুল
কোনো হৃদয় পাখি বাসেনি ভালো
বলেনি এসো বাসা বাঁধি তোমার বাগানে।
শিরোনাম - পরিশেষকি
কলমে - কিশোর ভট্টাচার্য্য
আমরা তো ভাগ করি
মিলিয়ে দিই তড়িঘড়ি,
কই আর রাখি ভাগশেষ?
আমাদের স্বভাবে,
নয় শুধু অভাবে;
শেষ হলো পরিবেশ!
দেহ জুড়ে ব্যাধির ক্ষয়
দিক দিগন্তে প্রাকৃতিক বিপর্যয়!
জলস্তর নেমে গেছে মনে
দাবানল চতুর্দিকের বনে!
মানুষ তুমি বড়ো বেহায়া
অহংকারে সাজিয়ে তোলো কায়া!
হুঁশ ফেরেনি দিলেও তোমায় সাজা।
ভাবছো তুমি একছত্র রাজা।
আঁধার ঘরে মোমবাতিটি জ্বালো
একটু যদি আসে আশার আলো।
হাতছানি দেয় ডিজিটাল সন্ত্রাস
ঘরে বাইরে অবৈধ সব লাশ!
বন্ধু তুমি ভালো মন্দ ভুলে
কলপ করা বন্ধ করো
প্রকৃতি মার চুলে।
শিরোনাম: অবসন্ন হৃদয় ছন্দহীন পথে
কলমে: বারিদ বরন গুপ্ত
নিদ্রাহীন তন্দ্রা ছোটে
অবসন্ন হৃদয় ছন্দহীন পথে
কেবল আপন-মনে বকে,
অভিশপ্ত রাত চলে আপন খেয়ালে
ঝিমধরা পৃথিবী উদ্ভ্রান্তের দোলে
সর্পিল পথে থমকে দাঁড়ায়,
চিৎকার সুরে তন্দ্রা হারায়!
হঠাৎ নেড়ি কুত্তার আওয়াজ!
শ্মশানের নীরবতা ভাঙে;
একটা পথহারা পেচক
প্রবল চিৎকারে বাসায় ফেরে,
ভোর জাগা পাখি গুলো
সেই কখন থেকে আলোর খোঁজে,
পুব আকাশে ঊষার তপন আড়মোড়া ভাঙ্গে
ক্লান্ত নয়নে চেয়ে আছে পশ্চিম আকাশপানে,
অনেকটা পথ এখনোও রয়েছে বাকি!
শিরোনামঃ "পালয়িত্রী"
কলমে - বনশ্রী (বর্ণা)রায়
'মা ' মোদের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি,
জগতে ভরা সকল দৃষ্টি।
সেই নয়ন মায়া ময়ী
তাহার কোনো তুলনা নাহি।।
নিষ্পাপ মুখে মধুর হাসি,
সেই রূপকে ভালোবাসি ।
মায়ের ছোঁয়ায় শান্তি জানি -
অনুভব করলে একথা সবাই মানি ।।
মায়ের চরণে ঠাঁই খুঁজি ;
সার্থক জীবনের দুঃখ খানি গেল মুছে ।
'মা ' মোদের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি -
জগতে আভার প্রথম দৃষ্টি ।
শিরোনাম - প্রতিক্ষার অবসান
কলমে - রূপালী সাহা
আবির রাঙা সেই গোধূলি লগন
তোমাকে দেখার সেই প্রথম ক্ষণ,
হারিয়েছে এ মন তোমাতে কখন,
দিশেহারা হয়েছে এ মন,
তোমাকে দেখার তরে।
ভালোবাসা সে তো ছিলো হৃদয় গভীরে
চিরদিনই রয়ে যাবে,
মনের আড়ালে গোপনে ,
সবটুকু জুড়ে ছিলে তুমি।
না বলা কথা গুলো হয়তো কখনো,
পাবেনা ভেবেছিল প্রকাশের ভাষা...!
অনুভূতি গুলো হয়তো
ভাবনাতেই রবে চিরদিন গাঁথা,
কবে না কভু কোনো কথা......!
কখনও ছোঁবে না এহৃদয় তোমায় ,
জানবে না কভু তার অনন্ত প্রতিক্ষার কথা,
প্রহর গোনার সেই স্মৃতির গল্প গুলো,
স্মৃতিতেই রবে গাঁথা,
মনে মনে ভেবেছি একথা।
অবশেষে এলো সেই ক্ষণ,
প্রতিক্ষার হলো অবসান।
শিরোনাম - আমরা কবি
কলমে - সোমা বিশ্বাস
কথা ভেঙে কথা গড়া
আমাদের কাছেই সাজে ।
দুঃখেরা ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হয়
কেবল আমাদের কাছে ।
কবিতাতে সুর দিয়ে
আমরাই গাই গান ।
'গায়ক' বলে ভুল করো,
পদ্যের জয়গান ।
জীবন শুধুই কবিতা ভরা
তুলে করি প্রকাশ ।
নাচে গানে অভিনয়ে
'নট' মিথ্যা প্রকাশ ।
চাঁদ সূর্য আকাশ জুড়ে
আমরা খুঁজি ছন্দ ।
'বিজ্ঞানী' ভেবে ভুল করো না
করতে এসো না দ্বন্দ্ব ।
ছন্দ অলংকার বাক্য সাজিয়ে
কবিতার চিকিৎসা ।
'চিকিৎসক' তো উপাধি মাত্র
কবিত্বেরই প্রশংসা ।
শিক্ষা-দীক্ষা আচার-বিচার
এসব আমরা শেখাই ।
সন্তান স্নেহে কবিতা গড়ি,
'শিক্ষক' উপাধি পাই ।
ধীরে ধীরে খাদ্য দিয়ে
যত্নে গড়ি সন্তান ।
'পিতা'র স্নেহে কবিতাকে
করে তুলি মহান ।
নয় মাস নয় দিন
গর্ভে ধারণ করি ।
কবিতাকে জন্ম দিই
'মমত্ব'কেই স্মরি ।
সৃষ্টি করি, ধ্বংস করি
আমরাই কর্তা ।
আমরা কর্ম, উদ্দেশ্য-বিধেয়,
আগামী প্রজন্মেরও বার্তা ।
রচনা : ১৬ মার্চ ২০১৮, শ্রীরামপুর হুগলি
অভিনন্দন
ReplyDelete