আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকা - মে সংখ্যা
বিশ্ববঙ্গ বাংলা সাহিত্য একাদেমী অনুমোদিত
Registration number - (BBSA/GM/132/2021)
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার ওয়েব ম্যাগাজিন সংখ্যা
ব্লগজিন : দ্বিতীয় বর্ষ, পঞ্চম সংখ্যা : মে ব্লগজিন সংখ্যা
প্রচ্ছদ শিল্পী : সোমা বিশ্বাস
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার
প্রকাশ তারিখ - ৩১ মে ২০২২
মে - পঞ্চম সংখ্যা
প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদিকা: সোমা বিশ্বাস
উপদেষ্টা : সোমনাথ নাগ, অমল ভট্টাচার্য্য, বিপ্লব সরকার
সম্পাদকীয় :
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার ওয়েব ম্যাগাজিন সংখ্যা প্রকাশিত হলো। সকল কবি ও সাহিত্যিক ও পাঠক-পাঠিকা বন্ধুকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
- সোমা বিশ্বাস
লেখা পাঠানোর ঠিকানা - aalordishasahityapotrika@gmail.com
ওয়েবসাইট - aalordishasahityapotrika.blogspot.com
লেখার দায় লেখকের, সম্পাদকের নহে।
সূচীপত্র :
প্রবন্ধ :
১) মিঠুন মুখার্জী - রবিসম রবীন্দ্রনাথ
চিঠি :
১) সুস্মিতা এস দেবনাথ - নজরুলের কাছে খোলা চিঠি
....অসহায় পিতা, তোমাকে
কবিতা :
১) অরবিন্দ মাজী - কবি প্রণাম
২) স্মরজিৎ দত্ত - রবীন্দ্রনাথ স্মরণে কবি নও তুমি ছবি
৩) স্মরজিৎ দত্ত - নজরুল স্মরণে ভ্রাতৃত্বের ভালোবাসা
রবি শঙ্কর মুখোপাধ্যায় - বিদ্রোহী নজরুল
৪) দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায় - কাজী নজরুল
৫) সুব্রত চক্রবর্ত্তী - ভারত পথিক
৬) অরবিন্দ মাজী - কবি প্রণাম
৭) বিমান প্রামানিক - নজরুল স্মরণে
৮) ইনা মুখোপাধ্যায় - স্মরণে বরণে রবি
৯) অঞ্জলি দেনন্দী, মম - নজরুল
রবিসম রবীন্দ্রনাথ
মিঠুন মুখার্জী
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।"
-------- বিশ্ববরেণ্য বিশ্ববন্দিত সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার হয়েও বলতে পারেন এমন কথা। জমিদারি প্রতাপ নয় ভালোবাসায় আপামর মানুষের হৃদয় জয় করেছেন তিনি। এককথায় অনবদ্য কিংবদন্তি মৃত্যুঞ্জয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমগ্র বিশ্বে বাঙালি ও বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিকে পৌঁছে দিয়েছেন। তাই তাঁর সৃষ্টি তাকে দান করেছে অমরতা।
রবি সৌরজগতের সমস্ত শক্তির উৎস। রবি ছাড়া এই পৃথিবী যেমন অচল, ঠিক তেমনি বাঙালির সাহিত্যচিন্তা রবীন্দ্রনাথ ছাড়া ভাবাই যায়না। তিনি বাংলা সাহিত্যে রবিসম। বাঙালির এই মনের মানুষ মনীষী সাহিত্যিক দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ শে বৈশাখ (ইংরেজির ১৮৬১ সালের ৭ই মে) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতা সারদা দেবী। ছোটবেলা থেকেই নিয়মমাফিক পুঁথিগত শিক্ষার প্রতি তার একটা অনীহা লক্ষ করা যায়। ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে শিক্ষাগ্রহণ তাঁর স্বভাব বিরুদ্ধ ছিল। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন ভারতীয় তপোবনের আদর্শে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে 'ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে এটি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। রবীন্দ্রনাথের হাতেই এই প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা সূত্রপাত ঘটে।
ছোটবেলা তাঁর কেটেছিল চাকরদের তত্ত্বাবধানে। ইচ্ছা থাকলেও বাবা-মা ও গুরুজনদের সান্নিধ্যে তাঁরা সবসময় যেতে পারতেন না। 'জীবনস্মৃতি' ও 'ছেলেবেলা' গ্ৰন্থদ্বয়ে তিনি তার শৈশবের বিভিন্ন স্মৃতি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। পৈতা নেওয়ার পর জীবনে প্রথম পিতার সঙ্গে হিমালয় যাত্রার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর জীবনের স্মরণীয় মহামূল্যবান ঘটনা গুলির মধ্যে এটিও স্থান পায়। গুরুজনদের কথা মতো চলার সঙ্গে সঙ্গে কখনো কখনো স্বাধীনচেতা রবীন্দ্রনাথ নিজের মনের কথাও শুনতেন। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২০শে সেপ্টেম্বর ইউরোপে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তাঁর গুরুজনেরা। প্রথম বিলেত যাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন 'য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র' রচনাটি।
মাত্র তেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম কবিতা রচনা করেন। ধীরে ধীরে কবি ও পাঠকসমাজে পরিচিতি লাভ করতে থাকেন। শুধু কবিতা নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছোটগল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-নাটক-রম্যরচনা-ভ্রমণসাহিত্য-পত্রসাহিত্য-ডায়েরিও তিনি রচনা করেন। সাহিত্যের সব শাখায় তিনি বিচরণ করেছেন। তবুও তিনি নিজেকে 'কবি' হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন-----
"একটিমাত্র পরিচয় আমার আছে। সে
আর কিছু নয়, আমি কবি মাত্র।"
বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বাস্তব অভিজ্ঞতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছিল, ঠিক তেমনি তাঁর বাবা জমিদারি কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্বও একটু একটু করে তার উপর অর্পণ করতে থাকেন। জমিদারি দেখাশোনার জন্য বাংলাদেশের পদ্মানদীর তীরে শিলাইদহ-সাজাদপুর ও পতিসরে বোট নিয়ে দীর্ঘদিন ছিলেন তিনি। সেখানকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অভিজ্ঞতা ছোটগল্পের দ্বার উন্মোচন করে দেয়। বাংলা ছোটগল্প তাঁর হাতেই প্রথম প্রাণ পায়। এই সময়কে রবীন্দ্র ছোটগল্পের স্বর্ণযুগ হিসেবে ধরা হয়।
১৮৮৩ সালে বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণী দেবীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয়। ঠাকুরবাড়িতে ভবতারিণীর নতুন নামকরণ হয় মৃণালিনী দেবী। এরপর ১৮৮৪ সালে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্ত্রী কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেন। তিনি রবীন্দ্রনাথকে যেমন স্নেহ করতেন, ঠিক তেমনি তাঁকে সাহিত্য চর্চাতে উৎসাহিত করতেন। রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনী দেবীর পাঁচ সন্তান ছিল। মাধুরীলতা-রথীন্দ্রনাথ-রেনুকা-শমীন্দ্রনাথ ও মীরা। সাহিত্যজগৎ ছাড়া একজন স্বামী ও পিতা হিসাবেও তিনি সফল।
জমিদারি আভিজাত্য নিয়ে তিনি যেমন তাঁর উপন্যাস রচনা করেছেন, ঠিক তেমনি মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষদের জায়গা দিয়েছেন ছোটগল্পে। একদিকে গভীর দার্শনিক ও শিক্ষাবিদের চিন্তা যেমন তাঁর প্রবন্ধে ধরা পড়েছে, ঠিক তেমনি নাটক হয়ে উঠেছে তাঁর সামগ্রিক প্রতিভার প্রতিফলন। তাঁর কাব্যগুলি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। বিচিত্র বাস্তব অভিজ্ঞতার ফসল। তবে গীতাঞ্জলি পর্বে এসে কবি আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যকীর্তির জন্য বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। তাঁর রচিত 'গীতাঞ্জলি', 'গীতিমাল্য','নৈবেদ্য','শিশু','অচলায়তন'ইত্যাদি নাটক ও কাব্যগ্রন্থের ১০৩ টি কবিতা ও গানের অনূদিত ইংরেজি অনুবাদ 'song offerings'- এর জন্য ১৯১৩ সালের ১৩ই নভেম্বর তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এই পুরস্কার তাকে বিশ্বজনের কাছে পরিচিত করে তোলেন।
শুধু সাহিত্য সৃষ্টি নয় তাঁর সৃষ্ট সঙ্গীত বাঙালির কাছে অমৃতসম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অতিআধুনিক। বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করে তিনি তার সংগীত রচনা করেছেন।পূজা-প্রেম-স্বদেশ-প্রকৃতি-বিচিত্রা- আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে গান লিখেছেন। গানের ক্ষেত্রে নিজের সৃষ্ট তাল রচনা করেছেন। ষষ্ঠী, রুপকড়া, ২/২ ছন্দ, নবতাল তার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' ও ভারতের জাতীয় সংগীত 'জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে' রবীন্দ্রনাথের অমর সৃষ্টি। তার সঙ্গীত মানুষের দুঃখ দূর করে, দূর করে জাতিগত ভেদাভেদ।
একজন জমিদার হয়েও রবীন্দ্রনাথ কেবল সাহিত্য চর্চা নয়, বড় স্বদেশ অনুরাগীও ছিলেন। তাঁর প্রচুর দৃষ্টান্ত রয়েছে। দেশের সমস্ত মানুষ তাঁর ভাই বোনের মতো ছিলেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে প্রচুর কবিতা রচনা করেছেন তিনি। রাখি বন্ধনের মাধ্যমে সৌভ্রাতৃত্বের ডাক দিয়েছেন তিনি। তিনি যে জাত-পাতে বিশ্বাসী ছিলেন না তার প্রমাণ অনেক সাহিত্যে পাওয়া যায়। তিনি জানিয়েছেন---- "আমার সঙ্গে আমার মুসলমান প্রজার সম্বন্ধ সহজ ও বাঁধাহীন।" দেশ ও জাতির স্বার্থে মানবতাবিরোধী যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন তিনি। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করেন। রবীন্দ্রনাথের একাধিক গানে স্বদেশের প্রতি ভালবাসার পরিচয় পাই ---------
১) ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা।
২) বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু বাংলার ফল।
৩) আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
বিশ্বকবি রবি ঠাকুর যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই তিনি ভারতীয় আধ্যাত্ম দর্শনের সমভাব ও প্রেমের বার্তা দিয়েছেন।"আমরা সবাই ভাই ভাই, ধনী-গরিব ভেদ নিরর্থক। মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই। ভাইয়ের সাথে হিংসা করা অথবা লড়াই করা অধর্ম। সবার সাথে প্রেমপূর্ণ মনোভাব রাখাই মানবতার মূল কথা। প্রেম ও ভ্রাতৃত্বের ব্যবহারই সংসারের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত।"
শুধু ভারতবর্ষে নয়, ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, চীন, ইরান ইত্যাদি দেশে কবি যখনই গিয়েছেন, তখনই তারা তাকে রাজসিক অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। বিশ্বের বড় বড় দেশের মনীষীরা রবীন্দ্রনাথের গুণমুগ্ধ ছিলেন। আইনস্টাইন থেকে শুরু করে অনেক বিদেশি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বারংবার ভারতে এসেছিলেন। মহাত্মা গান্ধী কবিগুরুর সংস্পর্শে এসেছিলেন। গান্ধীজীর 'মহাত্মা' বিশেষণটি রবীন্দ্রনাথেরই দেওয়া।
১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২শে (ইং ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট) শ্রাবণ সূর্য ডুবে যাওয়ার মতো এই মহামানবের জীবনাবসান হয়। কিন্তু শুধু তাঁর মরদেহের অবসান ঘটে। তাঁর অমর সৃষ্টি কর্মের মধ্যে দিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত আমাদের মধ্যে বিরাজমান। আমৃত্যু মানবতার পূজারী রবীন্দ্রনাথ শুধু বঙ্গভূমি কিংবা ভারতবর্ষের নয় সমগ্র বিশ্বের জন্য তাঁর প্রয়াস ব্যক্ত করে গেছেন। মানব সভ্যতার যথার্থ আদর্শ কি হওয়া উচিত---সেই কথায় তিনি বুঝিয়ে দিয়েগেছেন তাঁর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে যথার্থই বলেছেন ----------
" কবিগুরু তোমার প্রতি চাহিয়া আমাদের
বিস্ময়ের সীমা নাই।"
------- বাস্তবিকই রবীন্দ্র প্রতিভা এক পরম বিস্ময়।
চিঠি :
নজরুলের কাছে খোলা চিঠি
....অসহায় পিতা, তোমাকে
সুস্মিতা এস দেবনাথ
প্রিয় নজরুল,
৷ ৷ কবিদের বাগ- বাগিচায় রবি ঠাকুরের পরে আমার প্রিয় কবি হলে তুমি। তখন আমি সপ্তম শ্রেণীতে। বিদ্যালয় থেকে শোভাযাত্রা বের হবে। আমাকে নজরুল সাজানো হলো। সে কি রোমাঞ্চ আমার! শোভাযাত্রায় সবার সামনে আমি হেঁটে যাচ্ছি। পেছনে তোমার বিদ্রোহী নওজওয়ানের দল বিভিন্ন সাজে সজ্জিত। কেউ বা বিদ্রোহী, কেউবা সৈনিক, কেউ বা পূজারিণী, কেউ চম্পা, কেউবা বীরাঙ্গনা....। কে তুমি তখন ততটা জানতে পারি নি, কিন্তু জেনে
ছিলাম তুমি বিদ্রোহী, বিপ্লবী, তুমি ধূমকেতু।
সেই থেকে তোমার প্রতি আমার আগ্রহ। তোমাকে জানার দুর্দমনীয় আগ্রহে, তোমার কবিতা,গল্প আত্মজীবনী পড়তে লাগলাম, সেই পড়া আজও শেষ হয় নি, পড়েই চলেছি।
যেদিন তুমি চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলে সেদিন কেউ বাজায় নি শঙ্খধ্বনি।আজানের শব্দ শোনা যায়নি কোথাও? কে-ই বা বাজাবে শঙ্খধ্বনি? পরিবারের ষষ্ঠ সন্তান ছিলে তুমি আর তোমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। ইংরেজদের নানারকম বঞ্চনা ও শোষণের শিকার হয়ে দৈন্যদশার চরম অবস্থায় ছিল তোমার পরিবার। যেখানে দুইবেলা খাবার জোটানো কষ্টকর, সেখানে ষষ্ঠ নবজাতক শিশুর জন্ম দুঃখ ছাড়া সুখ কি করে বয়ে আনবে? দারিদ্রতা ছিল তোমার নিত্যসঙ্গী। যে বয়সে বাবার হাত ধরে বেড়ে ওঠার কথা সেই বয়সে বাবাকে হারিয়ে পরিবারের অভাব অনটন দূর করার জন্য খেলার মাঠ ছেড়ে কাজে নামতে হয়েছিল তোমাকে।তবে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অসম্পূর্ণ থাকলেও জ্ঞানচর্চা থেমে থাকে নি তোমার। শুধু কি ইসলাম ধর্ম গ্রন্থ? হিন্দু পুরাণ শাস্ত্রও সেইসাথে অধ্যয়ন করেছো। দুই ধর্মকেই সমান শ্রদ্ধা করতে বলেই আমরা তোমার কবিতা, নাটক, গানের মধ্যে দুই ধর্মের সমন্বয় খুঁজে পাই । তার জন্য তোমাকে কত কথা শুনতে হয়েছে, কিন্তু তুমি সবার মুখের উপর জবাব দিয়েছো, "আমি শুধু হিন্দু-মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।"
তুমি ছিলে সব ধর্মীয় চেতনার ঊর্ধ্বে। অন্তরে না ছিলে হিন্দু না মুসলিম। তা তোমার 'জাতের নামে বজ্জাতি' পড়েই বুঝেছিলাম, " জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াত খেলছে জুয়া।"
কান্ডারী কে কখনো হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রশ্ন তুলেছো, "হিন্দু না মুসলিম ওরা! ওই জিজ্ঞাসে কোন জন ?" ধর্ম ও বর্ণের ঊর্ধ্বে মানুষই যে জীবনের শেষ কথা। সাধারণ মানব জীবনে যে অসাধারণ বঞ্চনা মহাবিদ্রোহী মানুষকে তাই শুনিয়ে হয়েছো 'ধুমকেতু'। মন্ত্রমুগ্ধের মতো 'বিষের বাঁশি' শুনিয়ে হয়েছো রণক্লান্ত। জাত ধর্ম ভেদাভেদ এর বিরুদ্ধে সদর্প সত্যাচরণে শান্তির বাণী হৃদয়ে ধারন করে হাসি মুখে বারবার হলে কারারুদ্ধ স্বদেশের জন্য।
দেশপ্রেম ছিল তোমার আত্মার সঙ্গে একাত্ম। তাই হয়তো তোমার কবিতা, গানগুলি এত প্রানবন্ত
শক্তিশালী। তোমার অগ্নিঝরা কণ্ঠ পুলিশি অত্যাচারও রুখতে পারে নি। বিদেশিদের রক্তচক্ষুর উন্মাদনার প্রতিবাদী হুংকারে কারারুদ্ধ অবস্থায়ই বলেছো, "কারার ঐ লৌহকপাট ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট।" নবযৌবনের বুকে তোমার বিদ্রোহী কণ্ঠ জাগিয়েছিল স্বাধীনতার নতুন আশা। তোমার আহবানে ভারত মায়ের চোখের জল মুছতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল অসংখ্য নওজোয়ান। তাদের মুখে মুখে ছিল দর্পিত উচ্চারণ, "বল বীর, বল উন্নত মম শির.." জেলেই লিখেছিলে "রাজবন্দীর জবানবন্দী"- অসাধারণ এক সৃষ্টি।সাম্যবাদী চিন্তায় বিশ্বাসী হে নজরুল গাইলে সাম্যের গান। নারী পুরুষের সমান অধিকার, কৃষক মজুরের দুঃখের কথা, কৃষক শ্রমিক পার্টির হয়ে কাজও করলে তুমি। এ সমস্ত কিছুর মধ্যে দিয়ে তোমার যে মন মানসিকতা প্রকাশ পেল তা অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দিল তোমায়। এর মধ্যে কোন আভিজাত্য ছিল না। একেবারে নিচ থেকে উঠা মানুষের গান, তাদের কথা, যারা দলিত, যারা অত্যাচারিত, যাদের ভাষা ছিল না তোমার কলমে তারা ভাষা খুঁজে পেল। তাইতো অধ্যাপক শিব নারায়ণ রায়ের মতো হাজারো বাঙালি গর্বের সাথে আজও বলে একহাজার বছরের বাংলা সাহিত্যে তোমার মত অসাম্প্রদায়িক কবি আর দেখা যায় নি।তােমার পরিচয় তুমি মানুষ। কারণ, সাম্প্রদায়িকতার দিনে, যুদ্ধের দিনে, দ্বিজাতিতত্ত্বের দিনে তুমি যেভাবে বাংলার জয়গান করেছো এর তুলনা বাংলা সাহিত্যে বিরল, এক জ্বলন্ত উদাহরণ।
কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, ছড়া ব্যক্তিগত রচনা চিঠিপত্র, অভিভাষন, সংগীত, কোন রূপকল্পে না লিখেছ তুমি? সাহিত্যের সবক্ষেত্রেই ছিল তোমার অবাধ বিচরণ ।পারিবারিক দুঃখদুদ্দর্শার মধ্যেও আজীবন বাংলা কাব্য, সাহিত্য সাধনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এতটাই ছিল তোমার অদম্য আগ্রহ, লক্ষ্যে অবিচলতা। নিজেই গান লিখেছো, সুরও দিয়েছো, পাশাপাশি সাংবাদিক হিসেবে কলমও ধরেছো, সোচ্চার কন্ঠ ছিল তোমার রাজনৈতিক অধিকার আদায়েও, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার সাম্প্রদায়িকতা ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে তোমার আপসহীন লড়াই এর জন্যই তুমি 'বিদ্রোহী'। তারপর
'ধূমকেতু'র মতো বাংলা সাহিত্যের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়লে। আত্ম নিপীড়িত বঞ্চিতের লাঙ্গল নিয়ে সৃষ্টি করলে একের পর এক অসাধারণ সৃষ্টি। সেই লাঙ্গল নিয়েই বিষের বাঁশি বাজিয়ে শুনিয়েছো বাংলার মাঠে প্রান্তরে। কখনও আকাশবাণীর সংগীত শিক্ষক, কখনও বাংলা সিনেমার সুরকার, কখনও বা হিজ মাস্টার্স ভয়েসের সুর সংযোজক, কখনও বা শুধুই সাহিত্যপ্রেমিক। মানুষের অত্যাচার নিপীড়ন থেকে, শোষন মুক্তির আহবান ধ্বনিত হয়েছে তোমার কবিতায়।এইভাবে সাহিত্য কাননে ফোটালে অজস্র সুগন্ধি ফুল, যে ফুলের সৌরভে আজও বাংলা তথা ভারত বিমোহিত।
তুমি চেয়েছ মানুষের কল্যাণ, সমাজের মঙ্গল, স্বদেশের স্বাধীনতা। কল্পনায় ছিল তোমার এমন এক সাম্যবাদী সমাজ যেখানে নেই শোষণ, বৈষম্য, নির্যাতন আর সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ। নেই আদি নৃগোষ্ঠীর প্রতি কোন তুচ্ছবোধ।
কিন্তু তুমি কি জানো নজরুল, তোমার কল্পনার সমাজ, দেশ আজও কল্পনাতে রয়ে গেছে, বাস্তব রূপ পায়নি। জানি না কবে হবে শোষণ মুক্ত একটি সুন্দর দেশ আমাদের সবার।
নারীদের কথা যদি বলি সেই নারীদেরও তুমি তোমার গল্প, কবিতা উপন্যাসে বারবার জয়ী করে দিয়ে গেছো। কিন্তু বাস্তবে তোমার নারীরা কবে যে তোমার "মৃত্যুক্ষুধা" গল্পের নায়িকা মেজ বৌ এর মত পারবে নিতে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা? কবেই বা তোমার গল্পের "বিন্দিয়ার" ( রাক্ষসী) মত অসামান্য ব্যক্তিত্ব পরশে নারীরা জেগে উঠবে? যেখানে আর শোনা যাবেনা,"জাগো নারী, জাগো বহ্নিশিখা....।" "হেনা" গল্পের হেনাকে আত্মসংযমী, ধৈর্যশীলা ও সেবাপরায়ণ রূপে আমাদের সামনে তুলে ধরে, নারীর একটা অন্যরূপ প্রদান করেছো এবং কর্তব্যবোধ থেকে শক্তি সঞ্চয় করে নারীকে বিদ্রোহিনীতে যেভাবে রূপান্তরিত করছো তা যেমন অসাধারণ লেগেছে তেমনি আমাদের হেনারা কবে এমন ভাবে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে সেটা ও ভাবি আমি। তেমনিভাবে "ব্যথার দান" গল্পের গুলশান, "পদ্মগোখরা" গল্পের জোহরা তাদের মধ্যে দেখি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যর বহিঃপ্রকাশ। "শিউলিমালা" গল্পের শিউলিকে সৌন্দর্য ও প্রেমময় হৃদয় আর স্বাধীনতা দিয়ে সাজিয়েছো। আবার "বাঁধনহারা" উপন্যাসে মাহবুবা কে করে তুলেছ স্পষ্টভাষী, প্রখর ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণী ক্ষমতায় শিক্ষিত-মার্জিত মুসলমান এক নারী চরিত্র। এই যে শিউলি, বিন্দিয়া, হেনা এরা যে আমাদের আশপাশের কোনো না কোনো চরিত্র, যা তুমি তোমার গল্প-উপন্যাসে তুলে ধরেছো। তোমার বিশ্বাস ছিল "নারী তার জ্ঞান ও শ্রম, সৌন্দর্য আর সুষমায়, বুদ্ধিমত্তায়, ত্যাগে বদলে দিতে পারবে বিশ্ব। তাইতো দৃপ্তকন্ঠে উচ্চারণ করেছিলে, " জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য লক্ষ্মী নারী, নারী সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি'।"
"বিজয়নী" কাব্যগ্রন্থে দেখেছি নারীরা কিভাবে জয়ী হতে হয়। ব্যক্তি জীবনে নারী তোমাকে যেমন দুঃখী করেছে, তেমনি নারীর কাছে চরম সুখের মুহূর্তগুলোও কাটিয়েছো। তাদের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই নারীদের বিজয়িনী বানিয়েছ। সৃষ্টির অর্ধেক কৃতিত্বের সাথে নারীকে জাগিয়ে তোললে তুমি বহ্নিশিখা রূপে; একই সাথে নারী যে প্রেয়সী মমতাময়ী সেটা ও তুলে ধরেছো কাব্য কবিতায়।
আজ আমরা একবিংশ শতাব্দীতে, বিজ্ঞান ও আধুনিকতায় আমাদের দেশের নাম সমানভাবে উচ্চারিত হয় অন্যান্য উন্নত দেশের সাথে, তারপরও কি আমরা পেরেছি নারীদের দিতে একটা সুন্দর নিরাপদ পৃথিবী? না পারলাম-আজ নারীকে যথাযোগ্য শ্রদ্ধা ও সম্মান দিতে? নজরুল, নারীরা যে আজও তোমার কাব্য কবিতায় বন্দী হয়েই রয়ে গেল, বাস্তবে যে তারা সেইটুকু সম্মান শ্রদ্ধা আজও পায়নি।
যাই হোক, বললে তো আর বলা শেষ হবে না। আমাকে একটা জায়গায় তোমার কাছে লেখা চিঠির ইতি টানতে হবে। কিন্তু যেটা না বললেই নয় সেটা না বলে আমি আমার লেখা কেমন করে শেষ করি বলো তো।।
বিদ্রোহের কবি, প্রেমের কবি, প্রকৃতির কবি এমন হাজার অভিধায় ভূষিত করা হয় তোমাকে। কিন্তু কেউ কি জানে তুমি একজন অভাগা পিতাও।
তােমার আদরের সম্তান, বুলবুল যখন চারবছর বয়সে বসন্তরোগে মারা যায়,সেই রাতে কানা কড়িও ছিলো না তোমার হাতে। তখন
তাকে কাফন-দাফন করবার-,এমনকি গাড়িতে করে গোরস্থানে দেহ নিয়ে আসবার---কমপক্ষে দেড়শো টাকার ছিলো দরকার সেটাও ছিল না। তুমি পাগলের মত এদিক ওদিক টাকার জন্য ছুটোছুটি করছিলে। বিভিন্ন লাইব্রেরীতে, লোক পাঠিয়েও ব্যবস্থাই করতে পারো নি টাকার।
অস্থির মন একবার প্রিয় বুলবুলের কাছে আর একবার উন্মাদের মত টাকার জন্য ছুটোছুটি, এ কি অসহায়ত্ব একজন পিতার তা আমার হৃদয়কে ভেঙেচুরে দিয়েছে।
মৃত বুলবুলকে রেখে শেষে গেলে প্রকাশকের কাছে।।
প্রকাশকের শর্তমোতাবেক
এক মুহূর্তে লিখে ফেললে কবিতা, "ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে, আমার গানের বুলবুলি
করুণ চোখে চেয়ে আছে--
সাজের ঝরা ফুল গুলি"।
এক অসহায় পিতার--এ যে, কতো বড়ো যন্ত্রণার, ভাষা নেই বোঝাবার।এমন দিন কোন পিতার জীবনে যেন আর কোনদিনও না আসে।
প্রিয়পুত্র বুলবুলের অকালমৃত্যু তোমার হৃদয় বিদীর্ণ করেছে। তবুও ধৈর্য ও সাহসিকতায় লিখলে ‘চন্দ্রবিন্দু’র মতো কাব্যগ্রন্থ।
বুলবুলের মৃত্যু তোমার জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছিল। দুঃখ, কষ্টেও তুমি ছিলে প্রাণশক্তির এক অনন্য উদাহরণ, কিন্তু বুলবুলের মৃত্যুর পর গভীর রহস্যের সামনে দাঁড়িয়ে পরম সত্যকে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলে।
বুলবুল যখন শেষশয্যায়, অনুবাদ করছিলে 'রুবাইয়াৎ ই হাফিজ'। বুলবুল-কে তা উৎসর্গ করলে। প্রিয়তম পুত্রের মৃত্যুর পর তুমি কার্যত উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলে। উৎসর্গ পত্রে লিখেছিলে, 'তোমার মৃত্যু শিয়রে বসে "বুলবুল ই সিরাজ" হাফিজের রুবাইয়াতের অনুবাদ আরম্ভ করি। যেদিন অনুবাদ শেষ করে উঠলাম, সেদিন তুমি আমার কাননের বুলবুলি - উড়ে গেছ। যে দেশে গেছ সে কি বুলবুলিস্তান, ইরানের চেয়েও সুন্দর? জানি না তুমি কোথায়? যে লোকেই থাক, তোমার শোক-সন্তপ্ত পিতার এই শেষদান শেষ চুম্বন বলে গ্রহণ ক'রো।"তোমার জীবন থেকে অনেক কিছু শিখতে হবে আমাদের।তোমার ধৈর্য সাহস বীরত্বকে কুর্নিশ জানাই প্রিয় কবি আমার।
বুলবুলের মৃত্যু আমার লেখার গতিকে কেমন থামিয়ে দিল, আর যে পারছি না কিছু ই লিখতে, শুধু বলব, নজরুল
আজ তোমাকে আমাদের বড় বেশি প্রয়োজন। তুমি কি জানো, উৎপীড়িতের কান্না আজও থামেনি। অত্যাচারীরা শুধু মুখোশ বদলে করেছে, কিন্তু অত্যাচার কমায় নি বরং অত্যাচার আরো তীব্র করেছে। মানুষ আজ বড় অস্থির, চঞ্চল। নিজের বিবেক, মনুষত্বকে না জাগিয়ে মানুষের মধ্যে যে ঈশ্বরের বাস তা না খোঁজে ছুটে গির্জা, মন্দির বা মসজিদে। অশিক্ষিত স্বার্থান্বেষীদের উগ্রবিশ্বাসে সাম্যবাদ নয়, আজ সাম্রাজ্যবাদের রাজত্ব সবার মাথায়। এমন দেশ তো তুমি চাওনি? যে স্বাধীনতা আনার জন্য, অগ্নিস্ফুলিঙ্গ লেখার জন্য তুমি কারান্তরাল হয়েছিলে, সেই স্বাধীনতা আমরা পেলাম ঠিকই, কিন্তু আজ এতে ঘুণ ধরেছে, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে অসহায় জাতির হাহাকার ও হা-হুতাশে ভরে গেছে আমাদের দেশ।
তোমার তেজস্বী লেখা, তোমার ভাবনা বিপ্লব বিদ্রোহ আজও আমাদের শীতল হয়ে যাওয়া রক্তস্রোতে প্লাবন আনে, আগুন ধরায়। তুমিই তো বলেছিলে, "মহা বিদ্রোহী..... রণ-ক্লান্ত। "
তাহলে আজকের এই কঠিন সময়ে মনুষ্যরূপে ভেকধারী অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তুমি ফিরে আসো আবার, হাতে তুলে নাও তোমার কলম, লিখে ফেল আবারও কোন অগ্নিঝরা কবিতা, যার প্রতিটি শব্দে ভুল পথের পথিক যারা তাদের ঘুমন্তসত্তা থেকে জেগে উঠবে।
ভালো থেকো প্রিয় কবি। আজ রাখলাম।
ইতি
তোমার গুনমুগ্ধ পাঠিকা
কবিতাঞ্জলি :
কবি প্রণাম
অরবিন্দ মাজী
২৮/০৫/২০২২
কাব্যের রবি বিশ্বের কবি
অম্লান আছো মনে।
লেখনীর দ্বারা তুমি ধ্রুবতারা
মনে পড়ে শুভ ক্ষণে।।
আজ মোর কবিগুরু স্মরণে
হয় আমার মনে মনে।
তাঁর লেখা এবং তাঁর আঁকা
এখনো দেখে সর্বজনে।।
বিশ্বের কবি তোমার লেখা
ভালবাসে সকলেই।
তোমার লেখা আমার পড়া
আছে আমার দখলেই।
তুমি বিশ্বের কবি সবার রবি
দিয়েছো উজ্বল আলো,
তোমার গীতাঞ্জলির জন্যই
দেশটি হয়েছে যে ভালো।
আজ ২৫ শে বৈশাখের দিন
তোমার করছি স্মরণ,
আজোও তুমি রয়েছো বেঁচে
হয়নিকো তোমার মরণ।
অনন্য তুমি এযুগের কবি
সত্যিই মহান যে তুমি।
প্রনাম নিয়ো আমার তুমি
বারবার তোমায় প্রনমি।।
রবীন্দ্রনাথ স্মরণে
কবি নও তুমি ছবি
স্মরজিৎ দত্ত
"তুমি কি কেবলই ছবি"
তুমি বলেছিলে তোমারই কাব্য মাঝে।
আজ তোমার শুভ জন্মদিনে
তোমারেই করি এই নিবেদন
তুমি নও শুধু ছবি।
দুঃখের মাঝারে তোমারে খুঁজে পাই
আনন্দে সম, যেভাবে যখন।
তোমারে খুঁজে পাই মৃত্যুর শোকানলে
সহ্যের যষ্ঠি রূপে;
তোমারেই পাই আনন্দ বিউভলে।
প্রভাতীর সূর্যালোকে
যবে উঠি প্রভাতের করি শুরু;
সেইখান হতে তোমাতেই শুরু।
আছো বিপ্লবে, আছো প্রতিবাদে,
জীবনের প্রতি মুহূর্তের প্রতিক্ষণে।
তাই কেমনে তুমি হবে ছবি
কবির গহনে, শিশুর মনে,
কিশোর কিংবা যৌবনে;
বার্ধক্যের বারাণসীতেও সম ভাবে
তুমি আছো হৃদয়ের গহন কাননে।
আজিকার শুভদিনে হে কবি
অশ্রু জলে করি নিবেদন
দাও শকতি, যে কষ্ট পাই,
তাহা পারি যেন সইতে;
যেমনে কাটিয়েছো তুমি
বহুযুগ ধরে বহু কষ্ট বহু ক্লেশ
সহ্য করেছ যেমনে।
তোমারই গান মোর হৃদয় মধু
তাই মোর হৃদয়ের পাথেয়।
গঙ্গা জলে করি তাই গঙ্গা পূজো
তোমারই গানে করি সেই নিবেদন
" তুমি রবে হৃদয়ে মম"
সদা সম উন্মোচন।
নজরুল স্মরণে
ভাতৃত্বের ভালোবাসা
স্মরজিৎ দত্ত
দুর্নিবার অকুতোভয় কবি
তুমি হয়তো আর আসবে না
আসবে না ফিরে,
ঐ না ফেরার দেশ থেকে।
বিশ্ব ভাতৃত্বের এই দেশে
আজ তোমাকে বড় প্রয়োজন।
সন্তানের জাত হয় না
তাইতো তুমি হতে পেরেছিলে
মায়ের পায়ের জবা।
তুমিই পেয়েছিলে খুজে
সেই জবার গাছের ডালে,
একটি তোমার হিন্দু ভাই
অপরটি তোমার কাসেম মিয়া।
ভাতৃত্বের কবি,
তোমাকে বড় প্রয়োজন আজ।
যে গানে যে কবিতায়
উজ্জবিত হত তখন
পরাধীন ভারতের বিপ্লবীদল,
আজ সেই বাঙালি হারিয়ে গেছে ;
চারদেওয়ালে আবদ্ধ তাই।
"
হিন্দু মুসলমান।"
ভালোবাসা আজও আছে,
তেমন নেতা যে আজ নাই।
কোথায় যেন হারিয়ে গেল
ভাতৃত্বের হিন্দু মুসলিম ভাই।
নতুন ভুবনের উজ্জিবিত কবি
যেথায় থাকোনা কেন!
তোমার উত্তরসুরী আমরা,
জীবন কাটাচ্ছি তোমার -
তোমার প্রিয় ক্ষেত্রেই।
শুভক্ষণে তাইতো মোর প্রার্থনা,
ফিরিয়ে দাও বিপ্লবী মন,
দিও সাথে ভাতৃত্বের ভালোবাসা।
বিদ্রোহী নজরুল
রবি শঙ্কর মুখোপাধ্যায়
বাংলা মায়ের দামাল ছেলে
কাজী নজরুল ইসলাম,
অনেক সাধ্য সাধনার পর
তোমায় আমরা পেলাম।
হিন্দু -মুসলিম এই ভেদাভেদ
দূরে রাখলে তুমি!
সম্প্রীতির ঐ মিলন তানে
হলেন মানব প্রেমী।
চুরুলিয়া জগৎ খ্যাত
তোমারই হাত ধরে,
মনীষি রূপে ভারতবাসী
তোমায় সবাই স্মরে।
বিদ্রোহ আর সাম্য যেন
তোমার রক্তে মিশে!
কোন বিষয়ে তোমার বিচার
ছিল না একপেশে।
দারিদ্রকে জয় করে
করলে গলারই হার!
ছড়িয়ে দিলে বিশ্ব মাঝে
তোমার সৃজন বাহার।
জৈষ্ঠ্যের এই জন্ম মাসে
তোমার প্রতি ভক্তি,
আমার মাঝে নিয়ে আসে
শিল্প সৃষ্টির শক্তি।
কাজী নজরুল
দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়
হে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল
তোমার বিদ্রোহ বাঙালি চেতনার মূল।
ধর্মের গোঁড়ামি ঘুচিয়ে পেয়েছো সবার মান,
তুমি পেরেছো করে দিতে এক,
হিন্দু মুসলমান।
বিরহী প্রেয়সীর কন্ঠে তুমি বিদায় সন্ধ্যাবেলা,
অভিসারীনির জরিণ ফিতায়
খেলেছ মূখর খেলা।
মন্ত্র দিয়েছ তরুণ কন্ঠে,কারার ঐ লৌহ কপাট!
গানের সুরে ঠুংরী ,গজল ওস্তাদের দিয়েছো দাপট!
ছোটরা পেয়েছে প্রজাপতি গান, সঙ্গে কাঠবিড়ালি।
সবাইকে সব দিয়েও তুমি হারিয়েছ বুলবুলি।
কোলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত
ভারত পথিক
সুব্রত চক্রবর্ত্তী
বাংলার বুকে উঠেছিল ঝড়
এসেছেন রাজা এক
নতুন সূর্য হেসে উঠেছিল
হলো,ভারতের নবজাগরণ।
নারীযে মানুষ ভুলেছিল সব
জ্যান্ত পুড়িয়ে হত্যা করতো
শবের সঙ্গে জীবন্তের হতো
সমাধি অসহায় নারীর ।
মাথায় পড়েছিল লাঠির আঘাত
রক্তাক্ত হয়েছিল শরীর
দমেননি তিনি ছেড়েছিলেন হুঙ্কার
পালিয়েছিল নর পশুদের দল।
লুপ্ত হলো সতীদাহ প্রথা
রামমোহন নয়ত কেবল রাজা
মূর্তি পূজার বিরোধী ঘোর
পূজারী তিনি নিরাকার ঈশ্বরের।
এখানেই স্বর্গ এখানেই নরক
দেখিয়েছিলেন ভারতের পথিকৃৎ
জন্মমাসে জানাই তোমাকে প্রণাম
হৃদয়ে তুমি থাকবে চিরকাল।
কলকাতা।
কবি প্রণাম
অরবিন্দ মাজী
কাব্যের রবি বিশ্বের কবি
অম্লান আছো মনে।
লেখনীর দ্বারা তুমি ধ্রুবতারা
মনে পড়ে শুভ ক্ষণে।।
আজ মোর কবিগুরু স্মরণে
হয় আমার মনে মনে।
তাঁর লেখা এবং তাঁর আঁকা
এখনো দেখে সর্বজনে।।
বিশ্বের কবি তোমার লেখা
ভালবাসে সকলেই।
তোমার লেখা আমার পড়া
আছে আমার দখলেই।
তুমি বিশ্বের কবি সবার রবি
দিয়েছো উজ্বল আলো,
তোমার গীতাঞ্জলির জন্যই
দেশটি হয়েছে যে ভালো।
আজ ২৫ শে বৈশাখের দিন
তোমার করছি স্মরণ,
আজোও তুমি রয়েছো বেঁচে
হয়নিকো তোমার মরণ।
অনন্য তুমি এযুগের কবি
সত্যিই মহান যে তুমি।
প্রনাম নিয়ো আমার তুমি
বারবার তোমায় প্রনমি।।
নজরুল স্মরণে
বিমান প্রামানিক (মুর্শিদাবাদ)
বিদ্রোহী কবি তুমি, সবার কাছে পরিচয়,
কলমের চলনে সব বাধাকে করেছো তুমি জয়।
জন্ম তোমার অতি দরিদ্র এক পরিবার,
মহা মানব তুমি, সবার হৃদয়ে জায়গা তোমার।
তোমার সৃষ্টি 'গীতি' সকল বাজে যখন কানে,
এদেশ ও দেশ ছড়িয়ে সে গান সারা ভুবনে।
লিখেছো তুমি অনে--ক কবিতা গান,
বাঙালি তো বটেই, সারা বিশ্ববাসীর কেড়েছো মন।
কলমে তোমার যেমনই বিদ্রোহের ছটা,
তুমি পরাধীন দেশবাসীর মনন দ্রষ্টা।
ইংরেজ কালে তুমি এসেছিলে স্বদেশভুমি,
এ মাটিতেই জন্ম আমার, গর্বে তাই চরণ চুমি।
দেখিয়েছো তুমি মোদের জাতি ধর্ম ভেদ নাই,
আল্লাহ ঈশ্বর তোমার কলমে পেল ঠাঁই।
সাম্যের গান গেয়েছো তুমি, দেখিয়েছো পথের দিশা,
সৃষ্টি তোমার দোলনচাঁপা, অগ্নিবীণা, সর্বহারা, ফণীমনসা।
"বিদ্রোহী কবি" আখ্যা লভিলে, গেয়েছো বিদ্রোহের সুর,
ছন্দের সুরে ভুলিয়েছো সব দারিদ্র্যতাকে করেছো দুর।
শিক্ষা তোমার হয়নি পুরণ স্কুলে পাওনি যেতে,
সব শিক্ষাকেই তুমি মানিয়েছো হার কলমের লেখনীতে।
বাঙালির ঘরে জন্ম যখন ভুলব না কোনোদিন,
হে নজরুল! মহান তুমি, তোমার সৃষ্টির ঋণ।
স্মরণে বরণে রবি
ইনা মুখোপাধ্যায়
তোমার পুজার ছলে মোরা তোমায় স্মরণ করি
সদাই তুমি হিয়ার মাঝে লুকিয়ে আছ কবি,
চোখের বাহিরে গেলেও তুমি হারাওনিত রবি
বিশ্ব মাঝারে অমর হয়ে রয়েছে তোমার সৃষ্টি সবি।
অসীম তোমার লেখনীর মাঝে সীমাহীন পারাবার
কল্প মনের খেয়ালি ভাবনায় আত্মপ্রকাশ যার,
সৃষ্টির মাঝে নিজেকে দিয়েছ রসে ও বশে উজার
রবির মতোই উজ্জ্বল তব সৃষ্টির সম্ভার।
জগতে আনন্দ যজ্ঞে আজো কবির নিমন্ত্রণ
তোমার স্মরণে নিবেদন করি তোমা সৃষ্টির দান,
চির ভাস্বর সৃষ্টিগুলি অমূল্য রতন
সৃষ্টির মাঝে বিশ্বকবি তুমি রাজ-রাজন।।
নজরুল
অঞ্জলি দেনন্দী, মম
ওগো প্রিয় নজরুল!
আজও তোমায় ডাকে
তোমারই সে বুলবুল,
বাগিচার শাখে শাখে শাখে।
চুরুলিয়ার পথে সে তোমায় খোঁজে।
তোমায় ডেকে ডেকেই সে তার নীড়ে
নিশায় আঁখি বোজে।
তুমি যদি ফের আসো ফিরে
তোমার জন্মদিনে, তোমার জন্মস্থানে,
তবে আবার পূজব তোমাকে, বিদ্রোহী বীরে।
নব সুর রচব হৃদ ছন্দে, গোধূলি লগণে
অস্তাচলে যাওয়া, রবির প্রস্থানে।
রক্তিমালো আহ্বান জানাবে তোমায় গগণে।
আমি বিভোর হব।
মৌন রব।
ভাবনায় তব।
তোমার উচ্চ চেতনার মহাকাশ বক্ষে।
তোমায় দর্শব আপন মানস চক্ষে।
নিজ নির্দিষ্ট লক্ষ্যে।
তুমিই সেই সে কবি
যার লেখনীতে শুধুই মিলনের ছবি।
তোমায় করি নমস্কার।
তুমিই এ বিশ্বের রচনাকার।
Comments
Post a Comment