আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকা - সপ্তম সংখ্যা - ডিসেম্বর ব্লগজিন সংখ্যা - চিঠি
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকা
বিশ্ববঙ্গ বাংলা সাহিত্য একাদেমী অনুমোদিত
Registration number - (BBSA/GM/132/2021)
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার ওয়েব ম্যাগাজিন সংখ্যা
সপ্তম সংখ্যা : চিঠি সংখ্যা
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার
প্রকাশ তারিখ - ৩১ ডিসেম্বর ২০২১
ডিসেম্বর দ্বিতীয় সংখ্যা
প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদিকা: সোমা বিশ্বাস
উপদেষ্টা : সোমনাথ নাগ, তপন কুমার তপু
প্রচ্ছদ : শ্রীমতি ঋতবৃতা মুখোপাধ্যায়
সম্পাদকীয় :
আলোর দিশা সাহিত্য পত্রিকার ওয়েব ম্যাগাজিন সংখ্যা প্রকাশিত হলো। সকল কবি ও সাহিত্যিক ও পাঠক-পাঠিকা বন্ধুকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
- সোমা বিশ্বাস
লেখা পাঠানোর ঠিকানা - aalordishasahityapotrika@gmail.com
ওয়েবসাইট - aalordishasahityapotrika.blogspot.com
লেখার দায় লেখকের, সম্পাদকের নহে।
সূচীপত্র :
১) অপেক্ষা - সুমিত বৈদ্য ( ব্যারাকপুর)
২) হেমন্তিকা - গৌরী মন্ডল
৩) চিঠি - শুভশ্রী দাস
৪) চিঠি - রাজা দেবরায়
৫) চিঠি - অঞ্জনা চক্রবর্তী
৬) তুমি পুমান - পৌলমী দত্ত (রাজকন্যা)
প্রাক্তনকে লেখা চিঠি - পৌলমী দত্ত (রাজকন্যা)
৭) প্রেমপত্র - অরবিন্দ সরকার
৮) প্রেমপত্র - শাশ্বতী দেব
৯) প্রভু যীশুকে লেখা চিঠি - অসীম সরকার (কলকাতা, ভারত)
১০) চিঠি - অনিল দাঁ
১১) হারিয়ে যাওয়া শিল্প - রবি শঙ্কর মুখোপাধ্যায়
১২) খোলা চিঠি - মুনমুন ঘোষ
১৩) এই চিঠি - মনীষা ঘোষ
১৪) ডাক বাক্স - নিবেদিতা বর্মন
১৫) এক খোলা চিঠি - কুনাল দাস
১৬) সবুজ চিঠি - বিপ্লব সরকার
১৭) হারিয়ে যাওয়া একটুকরো চিঠি - দেবারতি গুহ সামন্ত
১৮) মাকে লেখা চিঠি - রূপালী গোস্বামী
১৯) আমি তো গেছি মরে - শুভঙ্কর মজুমদার
২০) চিঠি - অমল ভট্টাচার্য্য
২১) প্রিয়তমাসু - সৌরভ পাত্র
২২) চিঠি - তপন কুমার তপু
২৩) খোলা চিঠি - প্রান্ত দত্ত
২৪) খোলা চিঠি - সজল মণ্ডল
২৫) চিঠি - স্বপন গায়েন
২৬) হারানো চিঠি - শিশির মল্লিক
২৭) মায়াপথ - দীপ্তি চক্রবর্তী
২৮) স্মৃতির চিঠি - সুব্রত চক্রবর্ত্তী
২৯) চিঠি - শ্রীমন্ত ঘোষ
৩০) "বাংলা তথা ভারতের সর্বকালের মহান বিপ্লবী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস কে খোলা চিঠি" - বারিদ বরন গুপ্ত
৩১) প্রভু যীশুকে লেখা চিঠি
সুতপা ব্যানার্জী(রায়)
৩২) বছরের শেষ চিঠি - সুজয় মজুমদার
৩৩) অজ্ঞাত - রত্না মজুমদার
৩৪) মাকে লেখা চিঠি - শান্তি রঞ্জন দে
৩৫) শেষ চিঠি - ব্রতশ্রী বসু
৩৬) এক পাগলের চিঠি - বিপত্তারণ মিশ্র
৩৭) নিলাঞ্জনা - পলি পুরকাইত
৩৮) এই পাগলের ভালোবাসাটুকু নিয়ো - মুনতাসির মামুন চৌধুরী
৩৯) জীবনের আয়নায় কিছু না বলা কথা - শিবপদ মন্ডল
৪০) খোকনকে চিঠি - অক্ষয় কুমার বৈদ্য
৪১) খোলা চিঠি - নবীন মণ্ডল
৪২) মাকে লেখা চিঠি - অরবিন্দ সরকার
৪৩) চিঠি - তরুন নস্কর
৪৪) কোলকাতাকে চিঠি - সুস্মিতা চক্রবর্তী
৪৫) বাসর রাত - শ্রাবণ কয়াল
৪৬) কাপুরুষ মনকে চিঠি - সোমা বিশ্বাস
রচনাবলী :
অপেক্ষা
সুমিত বৈদ্য ( ব্যারাকপুর)
রাবেয়া, আমার এই শেষ চিঠিটা যখন তুমি পড়বে
তখন হয়ত আমি থাকবো না আর এই পৃথিবীতে;
প্রেতলোকের নিঃসঙ্গতায় শত-সহস্র যোজন দূরে
আমি হয়ত তখন থাকব কোনো এক ঘন অন্ধকার কুটুরিতে!
যুগ-যুগান্তের সমস্ত আকাঙ্খাগুলোকে একসাথে জড়ো করে একটা বিস্ফোরন ঘটানোর প্রচেষ্টায় ;
আমিতো হাইড্রোজেনের মতো সারনীর নিয়মগুলোকে ভাঙতে চেয়েছিলাম;শুধু তোমার সাথে মিলনের আকাঙ্খায়।
তুমিও তো বলেছিলে, হেলেনের মতো সুখের প্রাসাদ ছেড়ে
আমার সাথে অসুখের পথে পা-বাড়াবার কথা-
তোমার ঐ কথা শুনে আমি মুগ্ধ শ্রোতার মতো ভাবতাম
ইলিয়াড বীরগাথা নয়; প্যারিসের প্রেমের কাব্যগাথা।
অজানা কোনো এক বিশ্বাসে ভর করে
দু-বাহুতে কাছে টেনে যখন দুজনা একাকার হয়ে যেতাম,
ভাবতাম আমাদের সম্পর্ক বোধহয় সৃষ্টির আদিকালের
যখন ধ্বনিত হয়নি সামবেদের গান অথবা মসজিদের আজান।
সূর্যালোকের স্পর্শে প্রাণের স্পন্দন যেদিন স্পন্দিত হয়েছিল
মনেহয় আমাদের সম্পর্কের সূচনা সেই সময় থেকে;
যেটা বারেবারে সভ্যতার রথচক্রে আবর্তিত হয়েছে,
একটুও বিবর্তিত হয়নি কালচক্রের ঘূর্ণিপাকে।
আমাদের প্রেম মহেঞ্জদারোর স্তুপ থেকে
সুমেরীয় পথ ধরে মিশরের মমি হয়ে ঘুমিয়েছিল;
মায়া অথবা ইনকার জাদুমন্ত্রে সেই সম্পর্কের ফসিলখানা
ইয়াং-সিকিয়াং এর পথ ধরে এই গঙ্গার তীরে নবজন্ম পেল।
কিন্তু দেখলাম, আমরা আজ বড় অসহায়!
এখানে মন্দির আর মসজিদ নিয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়,
মুক্তবাতাস বড় দুর্লভ এখানে; তাই আমি চললাম
প্রেতলোকের অন্ধকার কুটুরিতে, থাকবো তোমার অপেক্ষায়।
হেমন্তিকা
গৌরী মন্ডল
প্রিয়
প্রকৃতি মা,
মা, তোমার জঠরে জন্ম আমার। তোমার আরো পাঁচ সন্তানের মত আমিও প্রতিবছর এই সময়ে তোমার কোলে ফিরে আসি। আমার সকল সত্ত্বা দিয়ে তোমাকে সাজিয়ে তুলি। তাইতো কবিগুরু তাঁর কবিতায় লেখেন—
“ হেমন্তে কোন বসন্তেরই বাণী
পূর্ণশশী ওই যে দিলো আনি।।
বকুল ডালের আগায়
জ্যোৎস্না যেনো ফুলের স্বপন লাগায়। ”
মা, আমি তোমার সেই আদরিনী হেমন্তিকা। সাদার মায়া আর মনমাতানো সুবাসে ছেয়ে থাকা শিউলি ফুল যখন তোমার বুকে উজাড় হয়ে পড়ে থাকে আর দোলনচাঁপার হৃদয় ছোঁয়া সুগন্ধে তোমার সব অঙ্গ যখন ভরপুর তখন চুপিসারে আমি আসি, সারি সারি মেঘের ভেলায়। কুয়াশা হয়ে ঘুরে বেড়ায় বাতাসে.....ভোরের অভিমানী শিশির হয়ে ঝরে পড়ি সবুজ কার্পেটে মোড়া তৃণদের মাঝে । আমার অভিমান সূর্যের নরম আলোয় মুক্তোর মতো জ্বলজ্বল করে ......ধানের শীষে, পদ্মপাতায় কিংবা পুষ্করিণী শালুক ফুলে।
আমার আগমনে যখন মাঠের পর মাঠ সোনালী হলুদ ধানে ছেয়ে যায়, আর তা দেখে পরিশ্রান্ত কৃষকও তাদের কষ্টের কথা ভুলে সুখ অনুভব করে । সারা বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলার মানুষ নতুন ওঠা ধান দিয়ে ‘নবান্ন’ উৎসব পালন করে । পাকা ধান থেকেই সযত্নে বাড়ির মেয়ে বউ চাল তৈরি করে। সেই নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি হয় নানা রকম পিঠে ,পায়েস......সুস্বাদু খাবারের গন্ধে তোমার ভুবন ভরে ওঠে । এই সময়ে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি খেজুর রস। এই রস থেকে তৈরি গুড়ের গন্ধে চারিদিকে ‘‘ম’ ‘ম’ করে । তাইতো আমার হৃদয় জুড়ে থাকে নবান্ন।
মা, এই জন্যই আমি বারবার তোমার মাঝে ফিরে আসি । আমি এভাবেই যেনো তোমার বুকে সৌরভের ডালি নিয়ে হাজির হতে পারি সেই আশীর্বাদ করো মা......যুগ যুগ ধরে গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে আমি যেন এনে দিই সুবাসিত অঘ্রাণ.....!!
ইতি———
তোমার হেমন্তিকা।।
রচনা : (০৫/১২/২০২১)
চিঠি
শুভশ্রী দাস
বেনামী
ডাকহরকরা চিঠি দিল, লেখা ছিল বেনামী ।সাথে শুকিয়ে যাওয়া একমুঠো কুন্দফুল।
চিঠির কথা ।
ভেঙে নতুন কে নিজের করে, তোকে ছেড়ে গিয়েছিলাম ।ভালো আছে আমাদের হাতের লাগানো রক্তচন্দনের গাছ? কত বড় হয়েছে?
সুবাস পাস? না কী এখনও রেগে মধ্যাহ্নের সূর্যের মতো ।বিশ্বাস কর ছেড়ে যেতে হয় ।ভাঙতে হয় নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য ।কষ্ট পেয়ে আসল নকল এর ফারাক টা বুঝতে হয় ।দূরে গিয়ে তোর কাছে আসতে পারার আনন্দ টা যে কী তা কলমের প্রকাশ করার সাধ্য নেই ।সেই সমুদ্রের ঢেউ, ঢলে পড়া সূর্যাস্তের লাল রঙ ।মাখবি আবার আগের মতো ।ভাসব আমরা নিজের মতো ।
তোর আপনজন।
চিঠি
রাজা দেবরায়
শ্রীচরণেষু সান্টাদাদু,
প্রথমেই আমার প্রণাম নিও। তুমি কেমন আছো গো? শরীর ঠিকঠাক আছে তো? সান্টাদাদু এইবার তোমার কাছে একটু অন্যরকম কিছু চাইবো গো। দিতে হবে কিন্তু! প্রত্যেকবারই কিছুনা কিছু চাই, কিন্তু পাই না। মন খারাপ থাকে অনেকদিন ধরে। ছোটবেলায় বন্ধুদের কাছে শুনেছি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই তারা বালিশের নীচে মোজার ভেতরে অনেক গিফ্ট পেয়েছে। কিন্তু আমি তো এখন পর্যন্ত কিছুই পাইনি গো। তাই এবার আমাকে নিরাশ করোনা সান্টাদাদু। প্লিজ প্লিজ প্লিজ!
সান্টাদাদু আমাকে ভাবনাচর্চার জন্য কিছু বুদ্ধি দিও গো। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক যাচাই করার ক্ষমতা দিও। মনের অস্পষ্টতা ও অস্বচ্ছতা দূর করার জন্য জ্ঞান দিও। ভাবনাচর্চা করার জন্য বিশ্লেষণী যুক্তি দিও।
জানো সান্টাদাদু নিত্য কাজের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় দিচ্ছি। কী করছি জানো? শুধু শেয়ার আর শেয়ার করছি। আর কী শেয়ার করছি শুনলে তুমি শুধু হাসবে! বেশিরভাগই নিজের ছবি শেয়ার করছি গো। সেলফি শব্দটি তুমি নিশ্চয়ই শুনেছো? সকাল বিকাল সেলফি বা নিজস্বী তুলছি আর সামাজিক মাধ্যমে দিচ্ছি। কত্ত কত্ত লাইক পাচ্ছি, কত্ত কত্ত কমেন্ট আর শেয়ার করছে বন্ধুরা! জানো সান্টাদাদু নিজেকেই তখন সেলিব্রিটি মনে হয়! তাছাড়া নায়ক, নায়িকা সহ বিভিন্ন সেলিব্রিটিদের ছবি, খবর শেয়ার করছি, প্রচুর জোকস শেয়ার করছি। এগুলোতেও প্রচুরস লাইক, কমেন্ট আর শেয়ার পাই। আর কিছু ইনফো শেয়ার করছি। এগুলোতে খুব একটা লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার না পেলেও একটা স্ট্যান্ডার্ড কিছু শেয়ার করছি এই ভাবটা মনে চলে আসে। তাই অল্প হলেও এগুলো দিই। এইসব নিয়েই সারাদিন ব্যস্ত থাকি আমি!
কিন্তু দিনের শেষে মনে শান্তি নিয়ে রাতে ঘুমুতে পারিনা গো সান্টাদাদু! ঘুমোবার আগে ভাবি সারাদিন নিজের সৃষ্টি কী দিলাম? সবই তো অন্যের সৃষ্টি। আমি তো শুধুমাত্র শেয়ার করছি। তাতে আমার ক্রেডিট কোথায়? তাছাড়া অনেক ইনফো যে শেয়ার করছি সেগুলো সত্য নাকি মিথ্যা যাচাই করছি না তো। কোনো কিছু ভাবনাচিন্তা না করেই যা পাচ্ছি শেয়ার করে যাচ্ছি। বুঝতেও পারছিনা কিভাবে যাচাই করতে হবে। ভাবনাচিন্তা কিভাবে করতে হবে বা কিভাবে করতে হয়, সেটাও জানিনা, বুঝিনা গো! তাই দিনান্তে বড্ড ভেঙ্গে পড়ি সান্টাদাদু! নিজেকে একটা সময় খুব বোকা মনে হয়।
তাই সান্টাদাদু এইবার তুমি আমাকে নতুন জীবন দান করো। আমাকে ভাবনাচর্চা করার বুদ্ধি দাও। যুক্তি নির্ভর চিন্তাভাবনা করার যোগ্যতা দাও। নিজস্ব সৃষ্টি করার দক্ষতা দাও। তোমার কাছে এবারের চাওয়া এটাই গো।
তুমি দেবে তো সান্টাদাদু? ভালো থেকো, সুস্থ থেকো কেমন। আর এইবার আমার সাথে দেখা করো অবশ্যই। আজ শেষ করছি, পরে কথা হবে আরো।
ইতি -
তোমার আদরের নাতি,
রাজা দেবরায়
চিঠি
অঞ্জনা চক্রবর্তী
প্ৰিয় দেবব্রত,
জানি এ চিঠি তোর হাতে পৌঁছবে না... কারণ ঠিকানা আমার জানা নেই |তবু কেন লিখি জানিস? একটু মন যদি উজাড় করতে পারি... যখন লিখি মনে হয় সেদিন সেই কলেজ করিডরে তুই আর আমি, ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু গল্প করেছি |তুই ছাড়তে চাইলেও আমি যে তোকে ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারতাম না |তোকেও খানিক আটকে রাখতাম আমি খেয়ালিপনায় |অনেক সময় তুই জোর করে চলে যেতিস আর আমি অভিমান করতাম |
ছোটো থেকেই আমি বড়ো অভিমানী |তোকে নিয়ে কত সহপাঠীরা কত কথা বলতো... বলতো বাবা মা বাড়ির লোকজনরাও | কলঙ্ক মেখেছি নির্দিধায়, |মনের উপর কি নিয়ন্ত্রণ থাকে?
শুন্যতা থেকে সৃষ্ট মায়া সেই থেকেই সান্নিধ্য উপভোগ |তবু আজ আমি তুই দূরত্বে |আমার অভিমানের অনলে তুই পুড়ছিলি... তুই ভালো থাকতে চাইলি |থাক ভালো |মুক্তি দিলাম |
লেখা থাক আমার কথা এমনই কিছু আনমনা অনুভূতি .. প্রেরক ও আমি আবার রক্ষক ও আমি, পাঠক ও আমি...প্রাপক ও আমি |
যাহোক, ভালো থাকিস |
ইতি
তোর কোনো একদিনের বন্ধু |
খোলা চিঠি - তুমি পুমান
পৌলমী দত্ত (রাজকন্যা)
তুমি পুমান,যেই স্রোতের জেদে
তুমি প্রকৃতিকে কলঙ্কিত করছ
সেই স্রোতেই প্রতি পূর্ণিমায়
ভেসে যায় আরশিনগরের ঘাট।
তুমি পুমান, যে অহংকারে
তুমি প্রকৃতিকে কলুষিত করে
একদিন সেই অহংকারেই
সৃষ্টি হয়েছিলে তুমি।
তুমি পুমান, যে সামান্য কষ্টে
তুমি দোষ খুঁজে বেড়াও প্রকৃতির,
তার সহস্রগুণ কষ্ট সহ্য করে
প্রকৃতি জন্ম দেয় তোমারই মতো কোনো পুমানের।
যে তুমি সারাদিন কাজের পর
একটু শান্তির খোঁজে মাথা রাখো প্রকৃতির কোলে,
সেই তুমিই কিনা অন্ধকারের সুযোগে
ধর্ষণ করছ অন্য কোনো প্রকৃতির!
ধিক তোমায় পুমান!
তোমারতো প্রকৃতির রক্ষক হওয়ার কথা
পরিবর্তে ধর্ষক হয়ে ধরা দিলে তুমি!
প্রাক্তনকে লেখা চিঠি
পৌলমী দত্ত (রাজকন্যা)
প্রিয় প্রাক্তন,
তোমায় ধন্যবাদ। তুমি যদি আমার জীবনে না আসতে তাহলে অনেক কিছু অজানা থাকত। আর সেদিন যদি তুমি আমায় ভুল বুঝে আমার থেকে না দূরে সরে যেতে, তাহলে কষ্ট কী জিনিস জানতাম না। তারপরও তুমি ফিরে এলে, বললে আমি নাকি অভদ্র, আমায় ভদ্র করার জন্য নাকি তোমায় দরকার। ভালো আবার সব ভুলে তোমায় আপন করেছিলাম। কিন্তু তুমি এবার শুধু আমায় না আমার মা, দাদা, বাবা, পরিবার সবাইকে খারাপ কথা বললে। তাও তোমায় বলেছিলাম প্রিয় এরকম কথা বলো না ওনারা আমার মা বাবা হন, আর যে দাদা কে তুমি খারাপ কথা বলেছিলে সেই দাদা আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয়। তাও তোমায় ক্ষমা করেছিলাম কিন্তু তুমি আবার আমায় ভুল বুঝলে। কিন্তু ততদিনে কিছুটা হলেও আত্মসম্মান বোধ জন্মেছিল। তাই তোমার অপমানগুলো নিতে পারতাম না। তুমি ভাবলে আমি নতুন কাউকে পেয়ে গেছি, বারবার বলেছিলাম প্রিয় ভুল করছ, কিন্তু তুমি তো তখন সন্দেহ করতে ব্যস্ত। জানো খুব কেঁদেছিলাম তখন। কারণ আমি এতটা ভুল মানুষ চিনব ভাবিনি কখন। কিন্তু ভাগ্যিস তুমি আমায় ছেড়ে চলে গেলে, নাহলে তো কোনো জেদ তৈরি হত না মনের মধ্যে। তাই তোমায় ধন্যবাদ, আমায় ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করার জন্য। তুমি চলে গেলে বলে, মনের মধ্যে একটা জেদ তৈরি হল। আর ছেড়ে গেলে বলেই এত কিছু বুঝতে শিখলাম। নিজেকে নতুন করে চিনলাম। নতুন করে আবিষ্কার করলাম। চলে গেলে বলে নিজের প্রতিভাটা খুঁজে পেলাম। তাই তুমি আমার ক্ষতি করতে গিয়েও দিন শেষে আমার উপকার করেছ। তাই আমি সারাজীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
ইতি
-রাজকন্যা
প্রেমপত্র
অরবিন্দ সরকার
কলমের লেখা বাণী লিপিবদ্ধ পত্রে,
সম্বোধনে কতো বাক্য লিপি ছত্রে ছত্রে,
আকাশ কুসুম স্বপ্ন অগোছালো সূত্রে,
ভোর থেকে কলমের ছক পট চিত্রে।
কত ভালোবাসাবাসি শুধু মনে হাসি,
প্রজাপতি রংধনুর রঙ চোখে ভাসি,
চাওয়া পাওয়া মন্ত্র হিসাব নিকাশি,
খাওয়া দাওয়া ভুলে পত্রে কাছাকাছি।
মান-অভিমান পালা কাগজে কলমে,
কয়না কলম কথা শরমে মরমে,
কাগজ নিঃশেষ প্রায় লেখা অতিক্রমে,
ভাষা ছন্দ হারা লিপি কথন চরমে।
কাটাকাটি লেখালেখি ছেঁড়া ছেঁড়ি সব,
নদী মিলন সাগরে মনে অনুভব।
প্রেমপত্র
শাশ্বতী দেব
লিখছি পত্র প্রেমের তোমায়,
যেখানে পাবে সব সুখ এক লহমায় ।
লিখছি শুধুই অন্তরের যাতনা ,
তুমি যে বোঝ না আমার বেদনা ।
প্রেমবাণে আহত হৃদয় আমার ,
জীবনে কি করে আসলে আমার?
কঠিন সময়ে আছো পাশে দাঁড়িয়ে ,
আমার দুহাত দিলাম তোমায় বাড়িয়ে ।
এই পত্রে লেখা সব প্রেমানুভূতি,
করি তোমায় শুধু পাশে থাকার আকুতি ।
প্রভু যীশুকে লেখা চিঠি
অসীম সরকার (কলকাতা, ভারত)
২৪--শে ডিসেম্বর,২০২১
প্রভু যীশু,
রাত পোহালেই প্রভু তোমার শুভ জন্মদিন। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে, সারা দুনিয়ার ব্যাপক অঞ্চলে...সাড়ম্বরে পালিত হবে বড় দিন। তোমার সামনে কতজন ভক্ত মোমবাতি জ্বেলে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবে তা বলা না গেলেও এটা ঠিক নানা রঙবেরঙের পোশাক পরে, রঙিন চোখে রঙিন নেশায় বুঁদ হয়ে যাবে রাতের গায়ে হাল্কা শরীরটাকে ঠেঁস দিয়ে। রীতিমতো সমাদরে পকেট ভরা টাকা নিয়ে নামীদামি হোটেল রেস্তোরা নাইটক্লাবে চলবে হৈ-হুল্লোড় শ্যাম্পেন ফোয়ারা, ককটেল পার্টি, নাচা গানা.....!
মানুষ করবে স্ফূর্তি অনিচ্ছুক কিছু অবলা প্রাণী নিজের শরীরটাকে সাজিয়ে তুলবে মদিরার উপযোগী হয়ে খাবার টেবিলের সুস্বাদু খাবার হিসেবে আবার কিছু অবলা অসহায়া মনোরঞ্জনের জন্য নিজেকে আদিমতম ক্রীড়া সঙ্গী হবে।
প্রভু তুমি জন্মেছিলে জেরুজালেমের এক অপরিচ্ছন্ন আস্তাবলে। জীবনটাকে কেবল যেন মানুষের মঙ্গলের জন্য বিলিয়ে দিতেই এসেছিলে! কত রক্ত ঝড়িয়ে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হলো তোমাকে। নৃশংস যন্ত্রণা বুকে নিয়ে তুমি হত্যাকারী, অত্যাচারীদের ক্ষমা করে দিলে! তুমি ঈশ্বর হয়ে রয়েছ মানুষের অন্তরজুড়ে। সেই নৃশংস হিংস্রতা আজও বহমান নানা ছলনায় নানান আঙ্গিকে।
তুমি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে সকলকে মাফ করেছ ঠিকই কিন্তু যুগ যুগান্ত ধরে সবার বুকে দগদগে ঘা সন্তর্পণে জানান দিলেও..দুঃখকে দূরে সরিয়ে রেখে কেক কেটে আনন্দে বিভোর থাকি আমরা সাধারণ অচৈতন্য মানুষ। নাচানাচি করি নেশায় মাতলামি করি পুরুষ নারী নির্বিশেষে।
হায় ভগবান, কি অদ্ভূত এই দুনিয়া! পবিত্র প্রদীপের তলাতেই কি গাঢ় অন্ধকার!
প্রভু----ভগবান মানে তো সর্বশক্তিমান, এমন একটা জগৎ উপহার দিতে পার না়....যেখানে কেবল ক্ষমতা নয়, সমতাও থাকবে। যে সমাজে কোন ভেদাভেদ উঁচু নীচুর ব্যবধান থাকবে না। থাকবে না ধনী দরিদ্রের ফারাক! রাজা হরিশচন্দ্রকেও তো তাঁর রাজ্যপাট ছেড়ে কাশি তে মৃতদেহ সৎকার করে জীবন নির্বাহ করতে হয়েছিল। নিজের ছেলের মৃতদেহ সৎকার করার জন্য কপর্দকশূন্য স্ত্রী শৈবার কাছে পারিশ্রমিক দাবি করেছিলেন। এমন পালাবদলের গল্প কি হরিশচন্দ্র পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে যুগেযুগে? ঈশ্বর মনের কথা জানালাম। ভুলত্রুটি হলে এই অধমকেও মার্জনা করে দিও। ইতি---
প্রণামান্তে----
অসীম সরকার,
কলকাতা (ভারত)।
চিঠি
অনিল দাঁ
মাননীয়
অধ্যাপক সাহিত্যিক শঙ্খ ঘোষ
মহাশয়,
আপনি এখন তারাদের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে বিচরণ করছেন যা আমার নাগালের বাইরে। আপনি সমাজের মূল্যবোধ নিয়ে বহু চিত্র এঁকেছেন, প্রগতিশীলতা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলেছেন, পারস্পরিক বিশ্বাস, সততা,সহনশীলতার মতো নৈতিক গুণ সমাজে না থাকলে সাহিত্যের বাগান নিষ্ফলা থাকবে এ কথা বারবার আপনার কলমের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু সমাজের অবক্ষয় রীতিমতো বেড়েই চলেছে। একজন লেখক হিসাবে আমিও দায়বদ্ধ সমাজের প্রতি। আপনি ইহলোকে থাকলে সরাসরি আপনার বাড়ি পৌঁছে যেতাম। এখন কে আমায় পরামর্শ দেবে ঠিক বুঝতে পারছি না। জানি না এই চিঠি আপনার নজরে আসবে না হাওয়ায় ভেসে বেড়াবে?
যেখানেই থাকুন আমার প্রণাম নেবেন।
বিনম্র নিবেদনে
শ্রী অনিল কুমার দাঁ
০৮-০৯-১৪২৮
হারিয়ে যাওয়া শিল্প
রবি শঙ্কর মুখোপাধ্যায়
"চিঠি" আজও লেখা হয়!
পোস্ট অফিসে পোস্ট করাও হয়,
ডাক পিওন ডেলিভারিও করে।
কিন্তু "চিঠি"র মধ্যে -
সেই প্রাণ কই?
" চিঠি" আজও লেখা হয়!
কিন্তু সবই অফিসিয়াল,
নয়তো কমার্সিয়াল,
নতুবা এডিটোরিয়াল,
কোনো পার্সোনাল নয়।
ফলে সেগুলো প্রাণহীন,
আন্তরিকতা হীন, আবেগহীন,নিস্তরঙ্গ
একেবারেই যেন কাঠখোট্টা।
"চিঠি" আজও লেখা হয়!
কিন্তু তাতে মনের কথা থাকে না
কোন অনুভূতি স্থান পায় না।
কোন প্রেম -বিরহ নেই!
কোন শিল্প নেই
কোন সাহিত্যের রস নেই!
সব অ্যাপ্লিকেশান, আর প্রেয়ার এর ধাঁচে
পুরোটাই ফর্মাল।
"চিঠি" আজও লেখা হয়!
তবে আজ তা বড়ই নীরস
একেবারেই নিষ্প্রাণ -
জড়ো পদার্থের মতো।
"চিঠি" লেখা আজ একটা
"লুপ্তপ্রায় শিল্প"-
অ্যালফ্রেড জর্জ গার্ডিনারের মতোই
আমরা বলতে পারি।
স্টার্ট ফোনের যুগে -
যা হয়ত বিলুপ্তিরই পথে।
খোলা চিঠি
মুনমুন ঘোষ
প্রিয়তমাষু,
মনে পড়ে তোমার, নন্দনে মুক্তধারা সিনেমাটা দেখে ফেরার পথে একটা বোগেনভেলিয়া গাছ কিনে দিয়েছিলে? আমার স্বপ্নের বোগেনভেলিয়া!
গোলাপি বোগেনভেলিয়া!
জানো, গাছটা আছটা আজ আমার দোতলার ব্যালকনিতে উঁকি দিয়েছে। কি যে খুশি হয়েছি আমি বলে বোঝাতে পারবো না।
আজ তুমি আমাকে ভুলে গেলেও
ও কিন্তু আমাকে ভোলে নি এতটুকু।
প্রতিদিন গোলাপি হাসি নিয়ে আমার মুখে হাসি ফোটায়!
কিই বা দিতে পেরেছি ওকে একটু জল ছাড়া!
ও তো মানুষ নয়!
তাই বোধ হয় এত অল্পে খুশী।
ভাগ্গিস ও মানুষ হয় নি। তাহলে বোধ হয় অনেক দাবি থাকতো আমার ওপর।
আর দিতে না পারলে, তোমার মত...
থাক এসব কথা। কেমন আছো বল।
তোমার বর্তমানের সাথে তুমি সুখী তো?
তোমার আবদার নিশ্চয়ই সব সময়...
খুব মনে পড়ে জানো, তুমি আমাকে বলতে, "দেখো, সকালে আমরা যখন ব্যালকনিতে বসে চা খাব, তখন বোগেনভেলিয়াটা আমাদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসবে আনন্দে"।
জানো, আজ তোমার বোগেনভেলিয়াটা হাসে আমায় দেখে। সে হাসিটা যেন আমার গায়ে ঠিকরে লাগে। কি যে হয় আমার তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না! আমার মন শুধু একবার পেতে চায় তোমায়। আসবে? বল? একটাবার এসো। আমরা এই শীতের সকালে আমাদের ব্যালকনিতে বসে ওই গোলাপি বোগেনভেলিয়ার গোলাপি হাসিকে সাক্ষী রেখে দুজনে মুখোমুখি বসে কাটিয়ে দিই পুরো সকালটা।
শুধু এইটুকুই চাওয়া। পারলে রেখো।
ভালো থেকো।
--- তোমার মুন।
কলমে- মুনমুন ঘোষ
তারিখ- ২৪/১২/২০২১
এই চিঠি
মনীষা ঘোষ
এইচিঠি খান দিছি তোকে মা,
এই ভাষা বোঝার মত ক্ষমতা শুধু তোরই আছে মা।
আমায় তুই জন্ম দিয়েছিস,
দিয়েছিস শিক্ষা- দিয়েছিস দীক্ষা ।
তবুও আমি আজও ভীষণ অসহায় ,
আজ নিজের দুঃখ নিজের কাছেই লুকিয়ে রাখি
এই বুকেতে মা , তোর মতোন ।
তবুও আমায় স্নেহের ছায়া দেয়না কেউ মা,
এটাই নাকি প্রকৃতির নিয়ম।
এমন নিয়ম যাই নাকি ভাঙ্গা,
এটাই বুঝি ছিল না আমার জানা।
কেনো জানাসনি মা এমন নিয়মের কথা,
যে নিয়মের গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়া যায় না কোথাও।
পায়ের বেরি থাকে অদৃশ্যের ,
কেনো জানাসনি মা, কেনো?
আগে থেকে যদি জানতাম মা,
এমন নিয়ম ভেঙ্গে কবেই যেতাম ,
ওই আকাশেতে উড়ে।
আজ আমার পায়ে অদৃশ্যের শিকল,
বুকেতে একরাশ আমৃত্যু যন্ত্রণার কান্না।
ডাক বাক্স
নিবেদিতা বর্মন
হারিয়ে যাওয়া ডাক বাক্সে মরছে হাজার স্মৃতি,
সাদা খামের ভেতর মোড়ানো তোমার আমার প্রীতি।
কত মনের গোপন কথার আনাগোনার পথ,
ডিজিটাল যুগে যুদ্ধ করে হারিয়ে গেছে ডাক পিয়ন।
ফেলে এলাম শব্দমালা কালির ছোঁয়ায় চিঠির খামে,
উড়ছে এখন শব্দমালা ইন্টারনেটের বেড়াজালে। বেখেয়ালে লেখা চিঠি তোমার নামে,
থেকেই গেল ডাক বাক্সের বন্ধ কোণে!
এক খোলা চিঠি
কুনাল দাস
প্রিয় বৈশাখী,
কেমন আছিস তুই? জানি আজ এ কথা বলা নিতান্তই ছেলেমানুষি! জীবনের রঙ অনেক বদলেছে, বদলেছে দিন, ফিকে হয়েছে অকৃত্রিম আবেগের সেই উচ্ছলতা! তবু যেটুকু বেয়ারা স্মৃতি মনে কোনে দোলে নিতান্ত অবহেলায় তাই সম্বল করে তোকে আমার এ খোলা চিঠি!
আজ কেন জানি না সেদিনের সেই রোদমাখা দুপুরের ঘোলাটে স্মৃতি উড়ে এল ছেঁড়া কাগজের মতো! মনে পরে তোর? যেদিন এক আকন্ঠ উত্তেজনায় কাঁপা ঠোঁটে বেড়িয়েছিল এক চিরাচরিত কথা,'প্রেম করবি আমার সাথে?' এত দ্রুত সম্মতি দিবি ভাবি নি ! তারপর বছর কয়েক এক ঘোরের মধ্যে কেটেছিল! তখন এত সোসাল মিডিয়ার দাপট ছিল না, তাই টানটা একটু গভীরই ছিল!
হঠাৎই কেমন ওলট পালট হয়ে গেল! এক সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুকে (একাউন্ট খুলেছি তখন সবেমাত্র) তোর সিঁদুর রাঙা সিঁথিখানি চোখের সামনে ভেসে উঠল,
তারপর কেটে গেল কতগুলো বছর! তুই আজ প্রবল ভাবে সাংসারিক! হয়ত আমার কথা ভাবার বা মনে করার কোনও ফুরসত ই নেই!
তবু কোথাও মনের গভীর থেকে যেন রবিঠাকুর প্রশ্ন করে, 'আমাদের গেছে যেদিন সত্যিই কি গেছে?' মন বলে,' রাতের সব তারাই আছে, দিনের আলোর গভীরে!'
ভাল থাকিস, মন দিয়ে সংসার করিস, ভালবাসা না নিতে পারলেও স্নেহটুকু নিস!
ইতি
আমি
সবুজ চিঠি
বিপ্লব সরকার
প্রিয়তমা,
মনে পড়ে? এই রকমই এক শীতল দিনে দেখেছিলাম তোমায়। মগ্ন শালবনের সবুজ পাতায় রোদের লুকোচুরি। আকাশের সীমানায় মেঘেদের অন্তহীন আনাগোনা। চার -চোখের মিলনে শুষ্ক শীতে বসন্ত এসেছিল একদিন। আজকের এই আবার শীতে সেই তোমায় খুঁজি এই কবিতার চিঠিতে -
সেই চকোলেট রং এর চুড়িদারটা আমার মনেআছে,
ভরদুপুরে চাঁদিফাটা রোদে তোমার কষ্ট আড়াই কিমি-
সাইকেলটাও রেখেছো কি আজ চির স্মৃতি করে মনে ?
পাল্টে গেছো অনেক তুমি ,দেখো একই আছি আমি!
স্টেশনে বসে আড়াই ঘন্টা, ভয়ে আধো আধো প্রেমে-
মনে পড়ে, বসে কথা-নেই মুখে কত কত কিছু বলা,
চাতক পাখির সোনালী বিকেলে গোলাপ বাগানঘেঁষে-
ঠোঁট কেটে যাওয়া ঠোঁট থেকে সেই আঙুর চুরির খেলা।
সময় তোমাকে পাল্টে দিয়েছে ,পাল্টাই নি কি আমি?
যুবতী নদীর স্রোত কমে যায়, মোহনায় চর বাড়ে
একটুও তো বাড়েনি আজও ,তোমার আড়াই কিমি!
প্রেম গুলোতো আজওসজীব, সবুজ ঝোপে ঝাড়ে!
ভালো থেকো, ভালোবাসা নিও।আগামী বসন্তে মধুবনে তোমার অপেক্ষায় থাকব সেই "হারানো তুমি 'র" জন্য। এসো কিন্তু!
ইতি তোমার সবুজ।
হারিয়ে যাওয়া একটুকরো চিঠি
দেবারতি গুহ সামন্ত
একান্তই আমার প্রিয়,
দেখা হয়নি বহুদিন,
তোমার অপেক্ষায় গুনেছি দিন।
তবুও আসনি তুমি,বসনি আমার কাছে,
আদুরে গলায় বলনি ডেকে,"কেমন আছ তুমি?"
সময় বয়ে চলেছে নিজের গতিতে,
থামেনি আমার জন্য।
তবুও,মনের সিন্দুকে যত্নে আগলিয়েছি তোমায়,
জমতে দেইনি ধুলো।
সূর্য উঠেছে,অস্তও গেছে প্রতিদিনের মতই,
আমি তো কবেই অস্ত গেছি তোমার ছেড়ে চলে যাওয়ায়।
আশায় আশায় দিন গুনে যাই তোমার কামনায়,
অলস দুপুরের চিলেকোঠায় আমি ডুবে যাই তোমার ভাবনায়।
ডাকবাক্সে জমা করি রোজ তোমার নামের চিঠি,
জানি না,সে চিঠি পৌছয় কিনা,তোমার কাছ অব্দি।
যে মনের মনিকোঠায় ছিল আমার একছত্র অধিকার,
সেই আসনেই অবলীলায় অন্য একজনের বিরাজ।
সাজানো সংসারের স্বপ্নে আমি হয়েছিলাম মশগুল,
কঠিন হাতে ভাঙিয়েছিলে তুমি আমার করা ভুল।
তবুও আমি ভুলিনি তোমায়,ভুলতে পারিনি প্রিয়,
তোমার অস্তিত্বে মিশেছিল আমার সর্বস্ব।
দেখা হয়নি বহুদিন,হয়ত হবেও না আর দেখা।
আমার একতরফের প্রেম গাঁথা মৃত্যু দিয়ে থাকুক লেখা।
মাকে লেখা চিঠি
রূপালী গোস্বামী
রচনা - 25/12/2021
সেদিন ছিল 22 শে সেপ্টেম্বর, 2021, বুধবার, সময় দুপুর 3টে 06 মিনিট। মা তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে সেই কোন সে দূরে, ওই ওপারে তারাদের কাছে, মেঘপরীদের দেশে। মা তুমি চলে গেছো কিন্তু আমার কেন জানি না সবসময়ই মনে হয় তুমি আছো , আছো মা।তাই তো আমার ইচ্ছে করে ছুট্টে চলে যাই সেই স্নেহের নীরে, পরম মমতা মাখা আমার মায়ের কোলে। খুব ইচ্ছা করে সেই আগের মতো তোমার কোলে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমাতে।কিন্তু হায়! আমার ইচ্ছে টা ইচ্ছেতেই থেকে যাবে চিরদিন কারণ, তুমি তো আর আমার কাছে নেই।একা করে কাঁদিয়ে চলে গেলে। যেখানে আছো ভালো থেকো মা।তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা।এই জীবনে তোমাকে তো আর ফিরে পাবো না । মা গো যদি জীবনে কোন অপরাধ করে থাকি সেইসব অপরাধের জন্য ক্ষমা চাই মা।
ইতি -
তোমার মেয়ে রূপালী
আমি তো গেছি মরে
শুভঙ্কর মজুমদার
আমার লেখা চিঠি তুই
রাখিস খামের ভেতর ভোরে।
যা লেখা আছে তাতে
রাখিস আড়াল করে।
কথা গুলি তুই সত্যি ভেবে
রাখিস না মনে করে।
সাদা খাতায় নাম লেখা
তোমায় আপন করে।
চিতায় যখন থাকব আমি
চিঠি পড়েন আপন করে।
তখন লোকে বলুক অনেক কথা
আমিতো গেছি মরে।
চিঠি
অমল ভট্টাচার্য্য
কি বলে তোমাকে সম্বোধন করব বুঝতে পারছি না। আচ্ছা, তোমাকে যদি বন্ধু বলি তাতে কি তোমার আপত্তি আছে ? মনে হয় তুমি নারাজ হবে না। ভাবছো, চিঠি কেন লিখছি ? এই ডিজিটাল যুগে কেউ চিঠি লেখে নাকি ? ঠিকই ভেবেছো।আমিও চিঠি লিখি না, আসলে চিঠি লেখার প্রয়োজন কখনও হয়নি। কিন্তু আজ তোমাকে কুর্নিশ জানাতে আমাকে এই চিঠি লিখতেই হচ্ছে। না, শুধু তোমাকে নয়, তোমার মতো লক্ষ লক্ষ নারী যারা পুরুষের সেবায় নিয়োজিত তাদের সকলকে আমার আন্তরিক কুর্নিশ জানাই।
জানি, তুমি হাসছো। তুমি এটাও ভাবছো, সেবা কিসের , আমরা টাকা পাই তার বিনিময়ে পুরুষের লালসা মেটাই। হ্যাঁ, তোমার ভাবনা অর্ধেক ঠিক। আসলে তোমরা টাকার বিনিময়ে যেটা করো সেটা কেবল পুরুষের লালসা মেটায় না, কোটি কোটি নারীর সম্ভ্রম বাঁচায়।
বন্ধু, তুমি বা তোমরা সমাজের সেই ফুল যারা নিজেদের ক্ষত বিক্ষত করে অন্য নারীদের সম্ভ্রম রক্ষা করে চলেছ যুগ যুগ ধরে। এমনকি বিবাহিত পুরুষদের যারা বহুগামী তাদের কাছে নিজেদের সমর্পণ করে সেই পুরুষদের সংসারের শান্তিও বজায় রাখছো তোমরাই। তোমরা না থাকলে এই সমাজের যে নারীরা তোমাদের নামে নাক সিঁটকায়, তাদের নাকটাও হিংস্র পুরুষদের কামুক ছোবলে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যেত। তোমরা না থাকলে নারী জাতীয় সম্পর্ক গুলো যেমন মা, বোন, মাসি, পিসি ইত্যাদির কোনও মর্যাদাই এই সমাজে থাকতো না।
তুমি কেবল আমার বন্ধু না, তুমি বা তোমরা সম্ভ্রম বাঁচিয়ে চলা সমগ্র নারীদের বন্ধু। তুমি বা তোমরা কামুক পুরুষদের বন্ধু। সর্বোপরি তুমি বা তোমরা কবি, সাহিত্যিক তথা ভারতীয় সংস্কৃতির একনিষ্ঠ বন্ধু। তুমি কারো মা, কারও বোন কিংবা অন্য কিছু। অবশ্যই তুমি বা তোমরা কিছু না কিছু।
ভালো থেকো বন্ধু।
ইতি--------
আগামীর সমাজ।
প্রিয়তমাসু
সৌরভ পাত্র
ভাঙ্গাহার,মশানঝাড়,খাতড়া,বাঁকুড়া,পশ্চিমবঙ্গ,ভারত,722121
দিনাঙ্ক-25/12/2021
প্রিয়তমাসু!
হাজারটা ভোরের আলো
সাজিয়ে রাখব উঠোন জুড়ে;
যত অন্ধকারের কালো
শুধু তোমার জন্য ফেলব ছুঁড়ে।
পরিবারের বড়োর বড়ো হয়ে
থাকবে একসূত্রে সারাটা
জীবন;
খুশির হাওয়ায় নতুন পরিচয়ে
সাত পাকে পড়বে বাঁধন।
চিঠি
তপন কুমার তপু
আমি একটা চিঠি লিখতে বসেছি জীবনের প্রথম সকাল থেকে,
লিখেই চলেছি শুধু প্রতিদিনই- কবে যে শেষ হবে জানিনা,
সে চিঠির ভাষাটা শুধুই হৃদয় ভরা আত্মিক প্রার্থনা।
এজগতে সবাই প্রতিদিন ই আমার মত সে চিঠি টা লেখে।।
কত শত লক্ষ কোটি প্রাণ ও প্রাণীর কত শত প্রাণের সে ভাষা,
হৃদয়ের অদৃশ্য কালি ও কলমের লেখা চিঠি -অদৃশ্য হয়েই থেকে যায়,,
তবুও শত মনের শত ভাষায় লেখা চিঠির ভাষাটা বুঝি একই হয়।
সকলেই লিখে পাঠায় জগতে বেঁচে থাকার একটাই শুধু আশা।।
অদৃশ্য চিঠি, অদৃশ্য ডাকঘর, অদৃশ্য ঠিকানায় লেখা সে চিঠি,
প্রাপকের প্রাপ্যতা আজও জানিনা আমি সে চিঠি পৌঁছায় কি না,
শত চেষ্টায়ও জানতে পারলাম না সেই প্রাপকের সঠিক ঠিকানা।
তবুও লিখে যাই যতদিন জীবন আছে লিখি আর এ জগতে পথহাঁটি।।
খোলা চিঠি
প্রান্ত দত্ত
শ্রদ্ধেয় দাদুভাই,
পত্রে প্রথমে আমার নমস্কার নিবে।দাদুভাই আশা করি ভালো আছো।দিদিমাকে আমার নমস্কার জানাবে।সবাই কেমন আছে পরের পত্রে লিখে জানাবে।দাদুভাই বর্তমান যুগে আমরা ফেসবুক,মেসেঞ্জার,ইমু,টুইটার ব্যবহার করে আমাদের পুরোনো সেই যোগাযোগের মাধ্যম চিঠি সাহিত্যের কথা একেবারেই ভুলেি গেছি।দাদুভাই তোমাদের যুগের সে চিঠি লেখার গল্পগুলো শুনতে অনেক ভালো লাগতো।কিন্তু বর্তমানে স্মার্টফোনের জগৎে প্রবেশ করায় শুধু চিঠিপত্র লেখা নয়,নিজেদের পড়ালেখার মনযোগ হারিয়ে ফেলেছি।আস্তে আস্তে যেন চিঠিপত্রের ইতিহাসটা সবাই ভুলেই যাচ্ছি।এখন আর ডাকঘরের সেই পোস্টবক্সে কেউ আর চিঠির খাম জমা দিতে দেখা যায় না।দেখা যায় না আর পিয়ন তার কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে দৌড়ে দৌড়ে হেঁটে হেঁটে সবার কাছে চিঠি পৌঁছে দিতে।দাদুভাই তোমাদের যুগের যোগাযোগের মাধ্যমটা অনেক ভালো ছিল।কারণ,চিঠির মধ্যে সরাসরি ভাবে তার মনের ভাব বা ব্যক্তব্যকে কলমের কালির ছোঁয়ায় প্রকাশ করা যেতো।ছোটবেলায় সে তোমার হাতের লেখা চিঠি পেলে দুইভাই মিলে পড়তাম।দাদুভাই সত্যি কথা বলতে বর্তমানযুগে আধুনিকতার ছোঁয়া আমাদের গায়ে লেগে ভুলে গেছি আমাদের সেই পুরোনো ঐতিহ্যকে।আমাদের একটা কথা মাথায় রাখতে হবে,আমাদের আধুনিক যুগের সব আবিষ্কার নিয়ে চললে হবে না,আমাদের সেই প্রাচীনযুগের সব আবিষ্কারের কথা মনে রাখতে হবে।কারণ,যদি প্রাচীনযুগে নতুন নতুন জিনিস তৈরি না করত,তাহলে আজ আমরা আমাদের আধুনিক যুগকে দেখতে পারতাম না।তাই অতীতটাকে ভুললে চলবে না।দাদুভাই মোবাইলে এত কথা বলতে পারতাম না।চিঠি লিখতে বসে তোমাকে এগুলো প্রকাশ করতে পারলাম।
আজ আর নয়।ভালো থেকো সবসময় এবং তোমার স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবে।
ইতি
তোমার আদরের নাতি
পানু
খোলা চিঠি
সজল মণ্ডল
প্রিয়তমা,
প্রথমে আমার ভালোবাসা নিও প্রিয়। মা,বাবাকে আমার প্রণাম দিও।আমার রাজ পুত্রের জন্যে অনেক ভালোবাসা, জানাই তাকে অনেক আদর স্নেহ।সারাদিনের কাজের শেষে খেয়ে দেয়ে ঘুমোতে এসে,ঘুম আসেনা আসো শুধু তুমি,আমার ইচ্ছা করে পাখি হয়ে উড়ে,একটি বার দেখে আসি তোমাদের ঘুরে, তুমি ছাড়া বড় শূন্য লাগে,দুচোখে ঘুম আসেনা মনের কল্পনায় আসো শুধু তুমি।ঘুম ভাঙে আমার মানিকের স্বপ্ন দেখে,আমার মতো কোনদিন ওকে বাইরে কাজে আসতে দেবনা, ওর পড়াশোনার জন্য যত টাকার দরকার আমি সব পূরণ করব।তাতে আমার যতই কষ্ট হোক, আমার মানিক একদিন হবে অনেক বড়লোক।তখন আমার সব কষ্ট দুর হবে গর্ভে বুকটা ভরে উঠবে।তুমি ভেবোনা চিঠিটা চোখের জলে ভিজে গেছে এ আমার আনন্দের অশ্রু,আর কয়েকটা বছরই বাইরে কাটাব তার পর বাকিটা জীবন তোমার পাশেই কাটাব, এবার পুজোয় তুমিও একটা ভালো শাড়ী নিও তুমি ভেবনা আমি সন্ধা রাতেও একটা কাজ নিয়েছি,টাকা নিয়ে কোন চিন্তা করবে না,আর আমার জন্যে কিছু কিনে রেখে দিও না শুধু শুধু ঘরে থেকে পুরনো হবে,আমি জানি আমার জন্য তুমি কিনতে চাইবে আমি বাড়ী আসলে নতুন কিনে দিও।তুমি এই ভাবে আমার মনের শক্তি হয়ে পাশে থেকো।
আমার অনেক ভালোবাসা নিও প্রিয়। মা বাবার শরীরের যত্ন নিও,আর তোমার নিজের শরীরের খেয়াল রেখো,সোনা মানিক আমার রাজপুত্রকে আমার আদর স্নেহ ভালোবাসা দিও।
ইতি......
তোমার প্রিয়.
চিঠি
স্বপন গায়েন
চিঠি লেখার দিন শেষ,
তাই ভালোবাসার লোককে বলতে পারিনা – চিঠি দিও
জীবনের সব খুশির রোদ্দুরগুলো যে ঐ খামের মধ্যে থাকে
এখন লেখা মানেই তো ভুল ইংরাজীর বাংলায় তর্জমা
না পারে ভাল বাংলা লিখতে, না পারে ইংরাজী!
বাক্স হাতড়ে কিছু পুরনো চিঠির গন্ধ শোঁকা
প্রতীক্ষিত রাতের মত শুধুই জেগে বসে থাকি
দুপুরের নরম রোদ্দুর মাড়িয়ে কখন এসে বলবে, চিঠি আছে ...
বুকটা ধড়ফড় করে উঠলেও তার আকুতিই আলাদা।
চিঠি লেখার দিন শেষ,
সময় কোথায় এতো সভ্য মানুষের
ভালোবাসার কথা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলে
কখন যে দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা নামে কারুরই খেয়ালই থাকে না
বাপ ঠাকুরদার মুখেই শুনি সেই রানারের গল্প কথা।
সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ ছুটছে রকেটের মত
পূর্ণিমা চাঁদের আলো, ভোরের শিশির সিক্ত ঘাসের কথা ক’জন খেয়াল করে
চিঠির মধ্যে যেন ভালোবাসার মায়াময় সুগন্ধ লেগে থাকে
তাই যতই জীবন আধুনিক হোক চিঠির মাহাত্ম্যই আলাদা।
হারানো চিঠি
শিশির মল্লিক
২৫/১২/২০২১
সুন্দরী কাঠের নকশা কাটা
আমার চিঠির বাক্সটা
আজ উইয়ে কাটা
ফুটো ফাটা
ঝুরঝুরে চিঠিগুলো আজ অস্তিত্বহারা
কত কথা কত ব্যথা অক্ষরে অক্ষরে
ভিজিয়েছে কতবার বৃষ্টির আদরে
ওরা কতবার তোমাকে আমাকে
উড়িয়েছে আকাশে বাঁধন ছাড়া
শুকনো গোলাপ ঝাউপাতা
গন্ধ মাখা বন্ধ নীল খামে
কত কথা----
আজ উইয়ের চাদরে ঢাকা
চেনা অক্ষরগুলো ভেজা কান্নায়
স্মৃতির নীল সমুদ্রে অস্তিত্ব হারায়
আর চিঠি লেখা হবেনা কোনোদিন
ওরা আজ একেবারেই মূল্যহীন
আমার বড় আদরের চিঠির বাক্সটাও
মুছে দিল শেষ চিহ্ন হয়ে গেল অন্তর্লীন।
মায়াপথ
দীপ্তি চক্রবর্তী
পাহাড় যখন হয় মায়াবী উচ্চতা
আমি নীল খামে মোড়া হালকা মেঘ
তোমাকে চিঠি পাঠাচ্ছি
মুঠো ভর্তি প্রেমের আলোকমালা
পেরিয়ে যাচ্ছি অনেক নাম না জানা পথ
আমি তখন গগনচুম্বী
আঁচলা ভরে কুড়িয়ে নিচ্ছি নরম শিশির
হৃদস্পন্দনে লালিত হচ্ছে মায়া
অবশিষ্ট আকাশ থেকে ঠিকরে পড়ছে
ভাঙা ভাঙা তারাদের দেহের টুকরো
সময়ের স্পোকে যেটুকু চলাফেরা
সবটাই উজানের ঢেউ
নদী জানে উপুড় হয়ে থাকা মাটির গন্ধ
ফুটে থাকা সন্ধ্যামণির কোলে
মেশে জোনাকি ভোরের আলো।
স্মৃতির চিঠি
সুব্রত চক্রবর্ত্তী
তারিখ:- ২৫.১২.'২১।
দূরের সাথে ছিল যোগাযোগ
পথ যতই হোক দুর্গম
নিকট জনের খবর মিলত
দুরকে করত আপন ।
পথের ধারে বোকা বাক্স
রঙের প্রলেপ লাল
খোঁজ খবরে রাখতে ভরসা
ভালোবাসার নতুন ঠিকানা ।
নববর্ষ, বিজয়া,অন্নপ্রাশন,বিয়ে বা শ্রাদ্ধ
সবখানেই ছিল তোমার অবাধ বিচরণ
কর্মস্থলে প্রবেশ করার আমন্ত্রণ পত্র
সঠিক সময়ে সবার কাছে,পৌঁছে যেত যত।
নেট দুনিয়ার দৌলতে আজ
তুমি হারিয়ে গেলে কোথায়
হারিয়ে গেল আন্তরিকতা,সবাই আজ পর
চিঠি কেবল স্মৃতি আজ,ফেলি চোখের জল।
প্রথম প্রেমের পরশ তুমি,কাঁপা হাতে লেখা
লুকিয়ে যেতে বইয়ের ফাঁকে,ছিল বোকা বোকা
রাণার থেকে পিয়ন,সবাই আজ অতীত
মনের ঘরে তুমি থাক,চিঠি জানাই তোমায় সেলাম।
চিঠি
শ্রীমন্ত ঘোষ
নরেন ছোটো বেলা থেকেই খুব মেধাবী ।
কিন্তু সংসারে অভাব থাকায় টেনে টুনে
বি এ পাশ করে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজে যোগ দেয় ।ঘরে তার
অসুস্থ স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই ।হঠাৎ
তার বাড়িতে একদিন একটা চিঠি আসে
তার স্ত্রী চিঠি খানা পড়ে বিছানার তলায়
রেখে দেয় ।নরেন কে সে চিঠির কথা কিছুই
জানালো না ।
মাস তিনেক হলো তার স্ত্রী মারা গেছে ।তাই
একা থাকতে থাকতে বড্ড বোরিং ফিল করছিল ।মনে মনে স্থির করলো এবার পুজোতে বন্ধুদের সাথে দার্জিলিং কিংবা পুরী ঘুরে আসবে । আর কিছু দিন বাদেই পুজো ।
মহালয়ার দিন অফিসে ছুটি থাকায় ঘর পরিষ্কার করার কাজ শুরু করলে বিছানার
তলা থেকে দুটি চিঠি বেরিয়ে এলো ।খামের
ভিতরে চিঠিটা পড়ে দেখলো গুজরাটে
একটি
বড় কোম্পানিতে চাকরির জয়েনিং লেটার ।মনে মনে ভাবলো এ কথাটি আমার স্ত্রী আমাকে গোপন রাখলো কেন ।চিন্তা করতে
করতে পরের চিঠি টা খুলে পড়তে গিয়ে দ্যাখে
তার স্ত্রীর হাতের লেখা ।
প্লিজ তুমি রাগ করো না ।তোমায় চিঠির কথাটা গোপন রেখেছিলাম ।তুমি ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই নরেন ।তুমি আমাকে ছেড়ে ওতো দূরে গেলে আমি কি করে একা থাকতাম বলো ।আমি যে তোমায় খুব খুব ভালোবাসি ।প্লিজ প্লিজ রাগ করো না
পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও ।চিঠিটা পড়া
শেষ হতেই নরেন হাপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে
ঘরে মেঝেতে থপ করে বসে পড়লো ।।
"বাংলা তথা ভারতের সর্বকালের মহান বিপ্লবী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস কে খোলা চিঠি"
বারিদ বরন গুপ্ত
প্রিয়ভাজনেষু নেতাজী
আজ প্রায় ৭৬ বছর অতিক্রান্ত হলো তোমার কোন সংবাদ পাই নি, কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য চিঠি লিখব লিখব করে লিখতে পারিনি, আজকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পড়তে পড়তে তোমার কথা মনে পড়ে গেল, ২৩ শে জানুয়ারি তোমার জন্মদিন, অনেক ঘটা পটা করে পালন করবো, হাজার হোক তোমার মত মহান নেতার জন্মদিন ভুলবো কি করে? তাই অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি লিখতে বসলাম ।
আজ প্রায় আট দশক অতিক্রান্ত হল, কতো ভাবে খোঁজ হল, শাহনেওয়াজ, খোসলা, মুখার্জি তিন তিনটি কমিশন, জাপানের ফাইল, রাশিয়ার চিঠি কত কিছু করেও তোমার উত্তর পাওয়া গেল না, বছর যায়- ২৩ শে জানুয়ারি আসে, তখন তোমার কথা মনে আসে, ঘটা করে জন্মদিন পালন করি। তারপর সব ভুলে যাই।
আজ হঠাৎ মনে এলো তোমার কথা, ব্রিটিশদের পা চাটবে না বলে সিভিল সার্ভিস ছারলে! দেশবন্ধুর ডাকে জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিলে, ভালোই মিলেমিশে চলছিল সংগ্রাম, তারপর কি যে হলো-১৯৩৯ এ ত্রিপুরী কংগ্রেসের গান্ধীর মনোনীত প্রার্থী সিতারামাইয়া কে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হলে, গান্ধীজী বলল-"সীতারামাইয়ার পরাজয় আমার পরাজয়" ব্যাস জাতীয় কংগ্রেসের অসহযোগিতা, বাধ্য হয়ে তুমি জাতীয় কংগ্রেস ছাড়লে, ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন করলে, চলল নানান চক্রান্ত, ব্রিটিশদের কুনজরে এলে, তোমাকে এলগিন রোডে বাড়িতে অন্তরীণ হয়ে থাকতে হলো, ছদ্মবেশে ১৯৪১ সালের জানুয়ারিতে দেশ ছাড়লে, কাবুল হয়ে বার্লিন, গোয়েবেল এবং হিটলারের সঙ্গে সাক্ষাত করলে, তারপর চলে গেলে জাপান, সেখানে তেজোর আশ্বাস পেলে, জাপানি বন্দি ভারতীয় সেনাদের নিয়ে গড়লে আজাদ হিন্দ ফৌজ, প্রখ্যাত বিপ্লবী রাসবিহারী বসু তোমাকে আজাদ হিন্দ বাহিনীর দায়িত্ব অর্পণ করলেন, এরপর ১৯৪৩ সালে আগস্ট মাসে তুমি ডাক দিলে-" দিল্লি চলো" তোমার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আজাদহীন বাহিনী ১৯৪৪ এ আরাকান, ইম্ফল, কোহিমা দখল করলো, মণিপুরে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলে, কিন্তু হঠাৎ জোরে বর্ষা নামল, দুর্ভাগ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হলো, তবুও তুমি ভেঙে পড়ো নি, উদাত্ত কণ্ঠে আহবান করলে-"তোমরা আমায় রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব!"
তারপর ১৯৪৫ এ তাইহোকু বিমানবন্দরে কি যে হলো, এখনো জানা গেল না, সব যেন রহস্যাবৃত হয়ে গেল, আজও তার উদঘাটন হল না। এই সেদিন এক সেমিনারে সবাই বলছিল, তোমার মত আদর্শবাদী নেতার দেশে এখন খুব দরকার! তাই তোমাকে লিখলাম এই খোলা চিঠি, আগামী২৩ শে জানুয়ারি তোমার জন্মদিন পালন করবো, তুমি যেন ভুলে যেও না, আমার প্রণাম নেবে! ভালোবাসা পাওনা রইলাম! ইতি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী-
বারিদ বরন গুপ্ত
প্রভু যীশুকে লেখা চিঠি
সুতপা ব্যানার্জী(রায়)
প্রিয় যীশু,
শুধু বড়দিন নয়,তোমাকে স্মরণের মুহূর্ত জীবনের প্রতি ক্ষণেই যেন আসে। ঈশ্বরীয় অনুভূতি নয়,আমাদের সকলের ভালোমন্দের চালিকাশক্তি হয়ে। যখন লক্ষ্যপূরণের স্বার্থপরতায় তোমার মতোই কোন কোমল প্রাণের হনন হয় তখন তুমি এসো তোমার বরাভয় উপস্থিতি নিয়ে। মেষপালকের ঘর আলো করে যেমন বেথলেহেমের বুকে তোমার জ্যোতির্ময় আবির্ভাব ঘটেছিল তেমন দেবশিশুর জন্মে যেন জগৎ আলোকিত হয়। শুদ্ধ আত্মা আর মনুষ্যত্বের ঝর্ণাধারায় পৃথিবীর যত পাপ ধুয়ে যাক। গীতা,বাইবেল,কোরাণের সমান্তরাল পথ নয়,হোক নানা মত,নানা পথের মিলনক্ষেত্র। সম্পর্কে কাঁটা নয়,সুগন্ধি গোলাপ ফুটুক। তোমার ক্ষমাসুন্দর নিমীলিত দুই স্বপ্নচোখ যুগের পর যুগ অঙ্কিত হোক সকল নরনারীর বুকে। তোমার রক্তক্ষরণের দহন,জ্বালা যেন আর কাউকেই না পেতে হয়। প্রতিশোধ ও প্রতিরোধের আগুন, আগ্রাসী আস্ফালন প্রকৃতিকে বিনষ্ট করে। তোমার পুনর্জন্মের বিশ্বাস তো পৃথিবীর চিরশান্তির জন্য। ক্ষমতা ও ক্ষমতালোভীর লোভ যেন সাধারণের জীবনকে ধূসরিত না করে,এ আশা,এ স্বপ্নের গান খ্রীষ্টমাস ক্যারোলের সঙ্গেই মিলেমিশে যাক। তোমার পরিচয় নিহিত তোমার মানবপ্রেম সকলের পরিচয় হয়ে উঠুক। হৃদয়ের শাসনে মস্তিষ্কে শুভবোধের অনুভূতি সদা জাগরুক থাকুক। অনাথ,আতুর পাক প্রিয়জন। ধর্ষণমুক্ত সমাজে স্বাভাবিক হোক নারীর প্রগতি। দিনের আলোর মতোই উজ্জ্বল হোক রাতের অন্ধকারগুলো। মনুষ্যরূপী হায়নার আঁচড় যেন অন্ধকারের নিকষতায় স্বার্থসিদ্ধি না করতে পারে।
... আলোকমালা উঠুক জ্বলে বিশ্ব পরে
আশিসটুকু পথের পরে থাকবে ওরে,
ক্ষুদ্র যে জন থাকে যেন আপন আলোয়,
বৃহৎ যেন মিশতে পারে সকল ভালোয়,
ভেদাভেদটা ঘুচবে তবে এই সে ভাবেই,
চিঠির মাঝে চাওয়া আমার মিটবে তবেই।
.....................শুভসূচনার আন্তরিক সে ক্ষণে
প্রভুর প্রতিপদে
আকুল প্রার্থী
প্রেরক-সুতপা ব্যানার্জী(রায়)
বছরের শেষ চিঠি
সুজয় মজুমদার
পৌষে শীতের পারদ নামে
থার্মোমিটার জানান দেয় শরীরের তাপ
কাঁপুনি কমে না লেপ কাঁথা কম্বলে
পেতে চাই তোমার উত্তাপ।
আমি আছি তুমিও আছো
একই পৃথিবীর একই কোনে
এত কাছাকাছি তবু কত দূর
দূরত্ব তো জমে আছে মনে।
আগে পাশাপাশি থেকেও
লেনদেন হত চিঠি খাতার ভাঁজে
আজ আর পাওনা সময়
আটকে গেছো ব্যস্ততার খাঁজে।
তবুও আজকে বর্ষ বিদায়ে
তোমাকেই লিখি চিঠি
পারলে চিঠির উত্তর দিয়ো
টেনোনা বন্ধুত্বের ইতি।
অজ্ঞাত
রত্না মজুমদার
সেই কবে থেকে ভাবছি তোমাকে চিঠি লিখব,
লেখা আর হয়ে ওঠে না ।
এবার সত্যি সত্যি লিখছি ,
চাঁদনী রাত চারপাশে বিরুৎ শ্রেণীর
উদ্ভিদ ,
সবার মাঝখান থেকে ডেকে নিলে ,
সেদিন তোমার প্রস্তাবে সাড়া দিতে
পারিনি ।
দিনরাত পিষ্ঠ হতে হতে বুকের ব্যথাটা জমাট বেঁধে টনটনে পাথর,
দুহাত দিয়ে তাকে ঠেলছি।
কূল - কিনারা না পেয়ে ভাবছি কত কথা কত কি ,
আবারও বলছি প্রত্যাশিত আগ্রহে রূপ দিতে কেন পিছিয়ে গেলে?
অজ্ঞাত
সে মনের খাম আর খোলা যাবে না ।
মাকে লেখা চিঠি
শান্তি রঞ্জন দে
মাগো ,
আমার প্রণাম নিও ۔۔۔এতো বছর পরে ۔۔۔এই প্রথম তোমায় চিঠি লিখতে বসেছি /জানি না , এই চিঠি তোমার হাতে পৌঁছবে কিনা ۔۔۔চিঠি পেলে তুমি অবাক হবে জানি /
আজকাল আমার বুকে , ভীষণ একটা কষ্ট হয় মাগো ۔۔۔তোমার জন্য ۔۔۔বুকের ভেতর বিশাল এক কান্নার সমুদ্রে ভাসে আমার একান্ত আপন ۔۔۔নিবিড় কষ্টগুলো /
জানো মা , তোমার পলু আজ বয়সের শেষ প্রান্তে এসে ۔۔۔মানবিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে / ঠিক যেন উত্তাল সমুদ্রে ভাসমান ভঙ্গুর জাহাজের মতো /
তুমি চেয়েছিলে মা , আমি যেন কবি হতে পারি / ছেলেবেলায় আমার লেখা ছেলেমানুষি ভাবনার কবিতাগুলো তন্ময় হয়ে শুনতে তুমি / আমার শিক্ষার প্রথম শিক্ষা গুরু তুমি ۔۔۔কবিতারও /
আজ এতদিন পরে ۔۔۔আমি কবি হয়েছি কিনা জানি না / তবে কবি মহলে কিছু পরিচিতি লাভ করেছে আমার লেখনী /
জানো মা, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে কিছু অণু গল্প লেখ শুরু করেছি সম্প্রতি /
এতো কিছুর মধ্যেও۔۔۔۔ আমার জীবনে একটা দুঃখের ও বেদনার অনুভূতি প্রকট হচ্ছে ক্রমশঃ /
২০০৪ সালে ۔۔ অল্প রোগ ভোগের ফলে এক শীতের রাতে সাহসা আমায় কাঁদিয়ে চলে গেছো অমৃতলোকে /
আমার একমাত্র ছেলে ভুগছে জিনঘটিত এক বিরল রোগে / ছ বছর আগে সায়নের হাঁটা বন্ধ হয়ে যায় /ওর জন্য আমার খুব কষ্ট হয় মাগো /
জানো মা , কখনো কখনো দেখি তোমায় /তোমায় দেখি , কিন্তু স্পর্শ করতে পারি না / হঠাৎ ই হারিয়ে যাও তুমি /
যখন খুব মন খারাপ হয় ۔۔۔উঠোনে বসে নিরালায় , রাতের আকাশে মিটমিট করে জ্বলা তারাদের মাঝে শুধু তোমায় খোঁজে ۔۔আমার দু চোখ /
দেখো , একদিন সহসা চলে যাবো তোমার কাছে / বালক থেকো মা ۔۔۔۔
ইতি ۔۔۔
তোমার পলু
শেষ চিঠি
ব্রতশ্রী বসু
বুকের ব্যথাটা একটু একটু করে বেড়ে যাচ্ছে নিষ্ঠার। তাহলে দোলন পুরোটা জানতো ! কই , ওর মুখ দেখে বা ওর সঙ্গে কথা বলে তো কখনও মনেই হয়নি যে ও সবটা জানতো ! এত চাপা মেয়ে দোলন টা ! এই তো মাসদেড়েক আগেই দোলন ফোন করে তাকে ডাকলো। দুজন একসাথে গেলো সুপার মার্কেটে। সংসারের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনল দোলন। শীত পড়ছে বলে নিষ্ঠাকে একটা দামী নাইট ক্রিম উপহার দিলো। ওরা চিকেনরোল আর আইসক্রীম খেলো। দোলনই খাওয়ালো। কিছুতেই টাকার ব্যাগ বের করতে দিলো না নিষ্ঠাকে। বুকে এত যন্ত্রণা চেপে রেখেও এত স্বাভাবিক ছিলো মেয়েটা ! মনের এত জোর দোলনের ! বুকে চিনচিন করে ব্যথা করতে থাকে নিষ্ঠার।
"দিদিভাই , ষোড়শ দানের সামগ্রী কি আপনারা কিনে আনবেন , না আমরা নিয়ে আসবো শ্রাদ্ধের দিন ? সেক্ষেত্রে মূল্য ধরে দিলেই চলবে।" -- পুরোহিতের কথায় হুশ ফেরে নিষ্ঠার। --"না , সব আমি কিনে আনবো নিজে হাতে। যা যা কিছু দোলন ভালোবাসতো। আর দক্ষিণা আপনি যা বলবেন তা-ই দেবো, ঠাকুরমশাই। ওটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। শুধু দেখবেন দোলনের শেষ কাজটা যেন ভালোভাবে হয়।" -- "আচ্ছা দিদিভাই। এখন আসি।"
সুদীপ ফিরলো বাজার করে। হবিষ্যির কিছু সামগ্রী যেমন গোবিন্দভোগ চাল, আলু, বিউলির ডাল ,ঘি , সন্ধব নুন আর কিছু ফল এইসব। দুপুরে খেতে তো হবে। --"আমি রান্নাটা করে দিই দীপ ! কি জানি তুমি হাত টাত পুড়িয়ে ফেলবে" --"না। আমি করে নিতে পারবো। চালে ডালে আলু দিয়ে গ্যাসে একটু ফুটিয়ে নিতে পারবো না ! আমি ঠিক করে নেবো, তুমি এখন এসো। খালি বাড়িতে তোমাকে বেশিক্ষণ থাকতে দেখলে পাঁচজনে পাঁচকথা বলবে , সেটা তোমার বা আমার কারোরই ভালো লাগবে না।" --"বেশ , তবে আসি। দরকার হলে ফোন কোরো।" চলে যায় নিষ্ঠা।
রান্নাঘরে ঢুকে বুকের ভেতর ঝড় ওঠে সুদীপের। এটা তো দোলনের রান্নাঘর ! শিশি , কৌটো , বাসন , কাপ , ডিশ, ওভেন সবকিছুতেই যে দোলনের হাতের ছাপ ! চব্বিশ ঘন্টাও হয়নি সে দোলনকে পুড়িয়ে একা ফিরেছে শ্মশান থেকে।
দোলন কোথাও নেই , অথচ সবকিছুর মধ্যেই সে আছে। এই বাড়ির প্রতিটি জিনিসে , প্রতিটি কোণায় দোলন , শুধু দোলন। খিদে মরে যায় সুদীপের। দুটো মিষ্টি আর জল খেয়ে মেঝেতে পড়ে থাকে সে।
বিকেলে সুদীপ ফোন করে ডাকে নিষ্ঠাকে। কিছুক্ষণ আগেই গুপ্তিপাড়ার পিসি, দমদমের সেজকাকু আর পাশের বাড়ির দীপাবৌদি এসে হবিষ্যি দিয়ে শোক প্রকাশ করে গেছেন। একা সুদীপের চলবে কি ক'রে সেসব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গেছেন সকলেই। সুদীপ বসে বসে আকাশপাতাল ভাবে। দোলন এবাড়িতে বৌ হয়ে আসার পর সে কিছুই দিতে পারেনি দোলনকে। তার ওপর মা তখন অসুস্থ। প্রাইভেট ফার্মের চাকরী , তার ওপর মায়ের চিকিৎসার খরচ। সুদীপ যা মাইনে পায় তাতে সংসারটা কোনওমতে চলে। দোলন অসুস্থ মায়ের সেবা করতো, রান্না করতো, সংসারের যাবতীয় কাজ করতো। কোনোদিন মুখ ফুটে কিছুই চায়নি। বিকেলে টিউশন করে বাচ্চাদের পড়িয়ে সে নিজের শখের জিনিস এটা সেটা কিনতো।
নিষ্ঠা এসে চা করে। নিষ্ঠা সুদীপের ছোটবেলার বন্ধু। দোলন আর নিষ্ঠার সম্পর্ক খুব সুন্দর ছিলো। নিষ্ঠা বিয়ে করেনি এখনও , যদিও তার বয়স এখন তেত্রিশ। আর বিয়ে করার ইচ্ছেও তার নেই। রামকৃষ্ণ মিশনে ঠাকুরের পদতলে বাকি জীবন কাটাতে চায় নিষ্ঠা।
"দীপ , চা ধরো" --- "উমমম। আচ্ছা নিষ্ঠা , দোলন সবটা জানতো। তাই রোগটা চেপে রেখেছিল, না !" সুদীপের চোখ থেকে জল পড়তে থাকে। নিষ্ঠা নীরব। বুকের ভেতর আবার চিনচিন। ও তো নিজেও একটা মেয়ে। সবটা জানতো দোলন ! সবটা ! আর তাই মারণ রোগের কথা কাউকে জানতে দেয়নি। ওর ব্রেণ ক্যান্সার যখন ধরা পড়ে তখনও সময় ছিলো হাতে। প্রপার ট্রিটমেন্ট হলে মেয়েটা বেঁচেও যেতে পারতো। দিনের পর দিন মাথার যন্ত্রণায় কাবু দোলন পেইনকিলার খেয়ে ঘুমিয়েছে।কখনও বা কড়া ডোজের পেনকিলারেও ঘুমোতে পারেনি। সুদীপ জিগেস করলে বলত , মাইগ্রেণ। কখন ডক্টরের কাছে গেছে , কবে সব টেস্ট হয়েছে, বায়োপ্সি হয়েছে কিছুই জানতে দেয়নি সে সুদীপকে। এত অভিমান ! এত ! এত কষ্ট একা বুকে করে নিয়ে চলে গেলে তুমি দোলন ! চোখ ফেটে ধারা নামে সুদীপের। সেই সব রিপোর্ট দোলনের গয়নার বাক্সে পাওয়া গেছে। কিন্তু তখন সব শেষ।
দোলন নিজের গয়নার বাক্সে তার শেষ চিঠি লিখে রেখে গেছে।
"দীপ ,
আমি মারণ রোগে ভুগছি। চিকিৎসা করতে গেলে নিঃস্ব হয়ে যাবে তুমি। এমনিতেই মায়ের ট্রিটমেন্টের জন্য বহুদিন ধরে তোমার অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। মা মারা যাওয়ার পর সংসারটা একটু সচ্ছলভাবে চলছে। তাই কিছু আর জানালাম না তোমায়। তোমার আর নিষ্ঠাদির বিয়ের ফটো আমি খুঁজে পেয়েছি। বাঙ্কারে তোমার অফিসের পুরোনো ফাইলের মধ্যে ছিলো। আমি বাঙ্কার পরিস্কার করতে গিয়ে পেয়েছি। তোমরা একে অপরকে ভালোবাসতে। দক্ষিণেশ্বরে তোমরা লুকিয়ে বিয়ে করেছিলে। কিন্তু নিষ্ঠাদিরা অসবর্ণ বলে তোমার মা মেনে নেননি। তোমার বাবার অকালমৃত্যুর পর তোমার মা অনেক কষ্ট করে তোমাকে মানুষ করেছেন। তাই তুমি মাকে আঘাত দিতে চাওনি। মায়ের পছন্দ মতো আমাকে বিয়ে করেছ। তবুও নিষ্ঠাদির জায়গাটা আমি নিতে পারিনি কোনওদিন। তুমি তো তাও আমাকে বিয়ে করলে , সংসার করলে। কিন্তু নিষ্ঠাদি তো অন্য কাউকে বিয়েই করলো না আর। ওর সবটা জুড়েই শুধুু তুমি , দীপ ! ওকে দেখে আমার ভীষণ কষ্ট হতো। এখন তো তোমার মা আর নেই। তুমি নিষ্ঠাদিকে আপন করে নিও, ওকে স্ত্রীর সম্মান দিও। কিছু গয়না রেখে গেলাম। নিষ্ঠাদিকে সেগুলো দিও। এটাই আমার অন্তিম ইচ্ছে।
ভালো থেকো দীপ!
------
দোলন"
গয়নার বাক্সে ভাঁজ করা দোলনের চিঠি। সঙ্গে দোলনের প্রিয় মঙ্গলসূত্র , শাঁখা বাঁধানো , নবরত্ন লকেট , সীতাহার , রতনচূড় , কানপাশা , পদ্ম আংটি , রূপোর সিঁদুরকৌটো।
সবটাই জেনে ফেলেছিল দোলন। আর তাই নিজের কর্কট রোগের কথা কাউকে ঘুণাক্ষরেও জানতে দেয়নি সে। সে বুঝতে পেরেছিলো যে একমাত্র তার মৃত্যুই ওদের দুজনকে এক করে দিতে পারে।
চিঠি আর গয়না হাতে নিয়ে সুদীপ শোকে বিস্ময়ে পাথর হয়ে যায়।
এক পাগলের চিঠি
বিপত্তারণ মিশ্র
প্রিয় 'চ', একটা পাখির নামের মেয়ে,
কতদিন দেখিনি তোকে। কেমন আছিস? আর কি আমায় মনে পড়ে? মনে না পড়াই ভালো। একটা অপদার্থ আমি!
সেদিন শ্রাবণের বৃষ্টি হচ্ছিলো টুপটাপ, ঝুপঝাপ। আমি পুকুরে সাঁতার কাটছি পাগলের মতো। ওপারে তোদের বাড়ির বাইরের বারান্দায় তোরা গাইছিলি 'আজ মন চেয়েছে, আমি হারিয়ে যাবো .....' ঐ গান শুনছি আর আরও মাতাল হয়ে সাঁতার কটছি। চিৎ সাঁতার, ডুব সাঁতার, বাটারফ্লাই ---চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে, হাতের তালু সাদা হয়ে যাচ্ছে, তবু থামছি না। তুই মনে মনে সেদিন কার সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছিলি, সেদিন ঠিক বুঝিনি। বুঝেছি অনেক অনেক পরে, যখন বোঝা আর না বোঝা সমান ছিলো।
আমিও তোকে নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখতাম। তোর আসা-যাওয়ার পথে বসে থাকতাম। ব্যস, এটুকু। কিন্তু তুই যে কতোটা এগোতে পারিস, আমার তা তখন কল্পনাতেই ছিলো না।
আমি তখন ইউনিভার্সিটি-তে। আমাদের হতদরিদ্র খড়ের চালের কুঁড়ে ঘরের দাওয়াতে তুই, মাষ্টারমশাইয়ের মেয়ে ছুটে এসেছিল। তখন বাড়িতে কেউ ছিলো না। বলেছিলি, তোর বাবার শরীর ভালো যাচ্ছে না, তাই তোর বিয়ের ঠিক করছে। তোর চোখে জল দেখেছিলাম।
বলেছিলি, আমায় কেউ ভালোবাসে না। আমার বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছে। কী করি বলো তো? তুই যে উত্তরটা পেতে চেয়েছিলি, আমার মাথায় তখন তা আসেই নি। পরে বুঝতে পেরেছি। তারপর তোর বিয়ে হয়ে গেছে। শুধু মনে হয়েছে, এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে না হলেই তো হতো। ব্যস, এটুকু। অনেক পরে বুঝেছি, আমিও ভালোবাসতাম তোকে। তবে ওটা কম বয়সের কেমন একটা এলোমেলো অবোধ আবেগের মতো ছিলো যেন।
এখন মাঝে মাঝে মনে পড়ে তোকে। মন বলে, তোর সঙ্গে অনেক কথা সেদিন বলতে পারতাম। বলা দরকার ছিলো। কিন্তু বলি নি। খানিকটা না বুঝে, আর খানিকটা দায় এড়িয়ে।
তুই খুব ভালো থাকিস। তোর সংসার সুখ শান্তিতে ভরে যাক। আমার কথা কখনও মনে পড়লে, কবে কম বয়সে একটা পাগলের সঙ্গে দেখা হয়েছিলো ভেবে একটা মিষ্টি স্বপ্ন দেখে জেগে ওঠার মুহূর্তের মতো একটু হেসে উঠবি।
---- সেদিনের সেই পাগলটা
২৫৷১২৷২০২১
নিলাঞ্জনা
পলি পুরকাইত
নিলান্জনা এখন আর চিঠি লেখেনা-
সময় পেলে এন্ড্রোয়েড ফোনে ভিডিও কলে কথা বলে,
এক সময় সে প্রতিমাসেই একটি করে চিঠি লিখতো,
খুব ই খুশি হতাম আমি -
পূজানীয়া মা,কেমন আছো তোমরা, বাড়ির উঠোনের শিউলি ফুলের গাছে কি ফুল ফুটেছে,আমার বাগানের গোলাপ ফুল গুলো কি ঝরে গেছে - এবারে মাঠের ফসল কি ভাল হয়েছে সারাটা বছর চলবে তো? গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মনি নদীতে কি জল হয়েছে,বাঁধ ভেঙে কি গ্রামের সবার বাড়ীঘর কি জলে ভরে গেছে, বাবা কেমন আছেন? আমাকে চিঠি লিখতে বলো।ভাল থেকো,সাবধানে থেকো,ইতি তোমাদের নীল।
চিঠি টা পড়তে পড়তে মনে হতো নীল বুঝি সামনে এসে কথা বলছে-
এখন আমার সেই কল্পনার স্বপ্ন গুলো সত্যি ই সার্থক হয়েছে - নীলাঞ্জনা এখন সামনাসামনি প্রতিটি সময়ে আমার সাথে কথা বলে।।
এই পাগলের ভালোবাসাটুকু নিয়ো
মুনতাসির মামুন চৌধুরী
পাপিয়া,
তুই কি জানিস,তোর ঐ কিউটি কিউটি বিন্দি বিন্দি চোখগুলো কতটা সুন্দর,কতটা আদুরে?দেখলেই মনে হয় আদরে আদরে ভরিয়ে দেই ঐ চোখ জোড়া।তাকিয়েই থাকি আর তাকিয়েই থাকি ঐ চোখজোড়ায় চোখ রেখে।
তোর রেশমের মতো কাঁধছোয়া চুলগুলো যেন মেঘলা দিন।জানিস,আমার না মাঝে মাঝে খুব,খুউব ইচ্ছা করে ঐ চুলের মাঝে মুখ ডুবিয়ে বসে থাকি তোকে খুব করে জড়িয়ে ধরে।রেগে যাচ্ছিস কি?জানতাম,রেগে যাবি।কিন্তু কী করবো বল,আমার যে তোকে অনেক অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে।নীল আকাশে উড়তে চাওয়া ভাবনাগুলোর কথা।বিস্তীর্ণ ভূমি,এঁদো মাটিতে চড়ে বেড়ানো স্বপ্নগুলোর কথা,সবুজ মাঠের ঘাসে উড়ে বেড়ানো ঘাসফড়িংগুলোর কথা,মনের শাখায় শাখায় ডালপালা মেলা চিন্তাগুলোর কথা,ধানের শীষের দোলায় বা শহরের যান বাহনগুলোর চাকায় ওড়া ধূলিকণার কথা।আমার যত স্মৃতিচারণ,বর্তমান আর ভাবনার সমুদ্রে ডুবে নিজেকে অতলে হারিয়ে ফেলা ভবিষ্যতের কথা।তোকে নিয়ে,তোকে ঘিরে আমার এলোমেলো ভাবনাগুলোর কথা।আমার ভালো লাগা,খারাপ লাগাগুলোর কথা।
আমার জীবনের অলি-গলিতে বরফকঠিন শীতলতায় মেঘ হয়ে জমে থাকে অসংখ্য কথা।তোকে বলতে চাই,আর তোর কাছ থেকে শুনতে চাই
তোর-আমার সেই কথাগুলিও।
আমি জানি,তুই অনেক রিজার্ভড,অনেক চাপা স্বভাবের একটা মেয়ে।বাইরে যদিও ছুটোছুটি করিস,বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকিস।তবুও কোথায়,ঠিক কোথায় যেন তুই একা।বড় একা।অনেকের মাঝে থেকেও ভয়াবহ,ভয়াবহ রকমের নিঃসঙ্গতা হয়তো মাঝে মাঝেই কুরে কুরে খায় তোকে।বিষধর বিষন্নতার তীক্ষ্ণ ছোবল হয়তো প্রায়ই তোকে দংশন করে।তোর প্রাণবন্ত চোখের তারার উজ্জল আলোকে হয়তো মাঝে মাঝেই নিস্প্রভ করে দেয় পথচলার নির্দয়, গাঢ় ক্লান্তিরা।একঘেয়ে কর্মব্যস্ত দিনের পর হয়তো রাত নামে তোর মনের শহরে,যখন তোর মনের কুয়াশায় লুকিয়ে থাকা রাতের নিশাচর নিঃশ্বাসে সাথে মনের আড়ালে-আবডালে মিশে থাকা অসহায় আবছায়া স্মৃতিরা।স্মৃতির নীল দংশনে বারবার,বারবার দংশিত হস তুই।আমার মনে হয়,আমরা সবাই, এমনকি বন্ধু আড্ডার মধ্যমণি,সারাদিন সবাইকে হৈ-চৈয়ে মাতিয়ে রাখা একজনও দিনশেষে নামা নিস্তব্ধ রাতটায় "রাতের মতোই একা"।
খুবব সুন্দর না উপমাটা "রাতের মতো একা"?
তোকে আমি খুব করে,পুরোপুরি বুঝতে চাই।তোর মনের প্রতিটা অনুভূতিকে বুঝতে চাই,তোর এমন সব অনুভূতিগুলিকেও আবিস্কার করতে চাই দুজনে মিলে,যেগুলো হয়তোবা তুই নিজেও বুঝিস নি আগে।ব্যাপারটা কিন্তু বেশ মজার,তাই না?তোর মনের একটা অনুভূতি,যেটা তুই অনুভব করিস,কিন্তু তুই নিজেই সেটা বুঝিস না!হয়তো অন্যান্য কাজের ব্যস্ত স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে দিতে নিজের মধ্যেই নিজেকে নিয়েই নিজের অতলে ডুব দেবার সময় পাস না তুই!সমস্যা নেই।আমরা দুজনে মিলে সেসব অনাবিষ্কৃত বোধগুলিকে আবিষ্কার করবো,কেমন?
জানিস,আমার না খুব ইচ্ছে করে তোকে নিয়ে ঐ মাঠটার ঘাসে পা ছড়িয়ে বসতে।না,ইবলিশ মাঠটার কথা বলছি না।বলছি,তার পাশের ছোটো মাঠটার কথা,যেখানে প্রচুর আকাশমণি ফুলের গাছ।তোকে নিয়ে পাশাপাশি হাঁটতে ইচ্ছে করে,পশ্চিমপাড়াগামী চারপাশের শোভা বাড়ানো সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোর মধ্য দিয়ে।না না,হাত ধরে না,আমি একটাবারও তোর হাত ধরবো না তুই না বলা অবধি। বিশ্বাস কর প্পীজ,লক্ষীটি,আমি একদমই মেয়েদের পিছে ছ্যাবলার মতো ঘোরা,গায়েপড়া স্বভাবের ঐ ছেলেগুলোর মতো না!সত্যি বলছি।ওদের মতো টোকাটুকি খেলার অভ্যাস আমার নেই।(এইখানে বলে রাখি,সব ছেলেরা এভাবেই বলবে মেয়ে পটানোর জন্য,তাই যাচাই না করে কোনোকিছুই বিশ্বাস করবি না!)
আগের কথায় ফিরে আসি।হাত ধরতে হয়তো চাইবো না আমি,কিন্তু হাঁটার সময় চারপাশের প্রকৃতির চেয়ে হয়তো তোকেই বেশি দেখা হবে আমার!তুই কথা বলার সময় তোর মুখভঙ্গি, ভ্রুজোড়ার সংকোচন-প্রসারণ, আর কপাল কোঁচকানো,হাত নাড়া,কাঁধ ঝাকানো।চলার সময় হাঁটার ছন্দ।আর,ও,হ্যাঁ,বলতে ভুলেই গেছি!তোর গালে টোল পড়া,বুকে কাপন ধরানো অপরুপ হাসিটা।উফ আল্লাহ!এত্তো আদুরে করে হাসিস কেমনে,বলতো?খুব বেশি অস্বস্তিকর হবে কি ব্যাপারগুলো তোর জন্য?
আমার না খুব ইচ্ছে,জানিস...আমার তোর মতো একটা আদুরে মিষ্টি,কিউট মেয়ে হোক।তবে স্বভাবের দিক থেকে পুরোপুরি তোর মতো হলে চলবে না।ও অনেক আহ্লাদী স্বভাবের হবে।আমার কাছে হাজারো আব্দার করবে।
আমার মেয়েকে নিয়ে আমি খেলবো প্রতিদিন,অন্য যত কাজই থাকুক না কেন।ওকে পিঠে চরিয়ে ঘোড়া-ঘোড়া খেলবো,কাঁধে চড়িয়ে ঘুরবো বাড়িময়।সাইকেল চালানো,সাঁতার শেখানো,সব হাতে ধরে ধরে শেখাবো।(আমি নিজেই অবশ্য পারি না এসব এখনও!) ওর বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলবো ছোট থেকেই।শুরুটা বোধহয় রুপকথার বই দিয়েই করলে ভাল হবে,কী বলিস?রাতে ওকে পাশে নিয়ে অনেক অনেক গল্প বলে ঘুম পাড়াবো।(এক কাজ করলে কেমন হয়?গল্পগুলো যদি ধারাবাহিক হয়,প্রতিদিন কিছু কিছু?একটা সমস্যা হতে পারে,ও যদি গল্প অসমাপ্ত থাকলে রাগ করে পুরোটা শোনার বায়না করে?থাক,পরে এটা নিয়ে ভেবে-চিন্তে কিছু একটা বের করে ফেলবোক্ষণ।)
ও আমার গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়বে,গল্প শুনতে শুনতে। ওকে নিয়ে প্রতিদিন গল্প করতে করতে ওকে স্কুলে দিয়ে আসবো।
ও কিন্তু খুব বাপ সোহাগিনী হবে!আমি ওকে ছাড়া,ও আমাকে ছাড়া খেতে চাইবে না।ওর পরীক্ষার আগে ওর পাশে বসে বসে রাত জেগে পড়াশোনা করবো ওর সাথে বসে।পরীক্ষার সময় ওকে হলে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করবো।হল থেকে বেরোলে ওর সাথে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবো(এটা অবশ্য তুই ভালো পারবি)। তখন কিন্তু আমাদের বাপ-মেয়ের আদিখ্যেতা দেখে তুই রাগ করতে পারবি না!
পড়াশোনা শেষ করে ওকে ওর পছন্দমতো কাজে যোগ দেয়ার স্বাধীনতা দেবো।কোনো জোরাজুরি চলবে না কিন্তু,বলে দিলাম আমি।তারপর ওকে ওর নিজের ইচ্ছেমতো বিয়ে দেবো।কোনো রাজপুত্রের দরকার নেই আমার জামাই হিসেবে দরকার এমন কাউকে, যে কিনা ওকে বুঝবে।
এইরে!কোথা থেকে কোথায় চলে এলাম!এখনও মেয়ের মায়েরই খবর নেই,আর আমি কিনা মেয়ে অবধি চলে গেলাম!
সুদূর শৈশব থেকে শুনে আসছি,ছেলেদের কাঁদতে নেই,সেটা নাকি তাদের জন্য বিষম লজ্জার ব্যাপার!
"খবরদার,একদম কাঁদবে না!"
"ছিঃ, বাবা...ছেলেদের কাঁদতে নেই!"
"চোখ মোছো বলছি,এক্ষণ মোছো!"
সারাজীবন ধরে শুনে আসা এই কথা গুলো আমাদেরকে ভয়ংকরভাবে ডিমোটিভেট করে কাঁদার ক্ষেত্রে।যার ফলে আমরা চাইলেও অঝোরে কাঁদতে পারি না,অন্যের সামনে তো দূরে থাক,এমনকি একলা ঘরে নিজের সামনেও নিজে কাঁদতে পারি না আমরা!
মনের অব্যক্ত কান্নাগুলো আজ বুক ঠেলে চোখ ফেটে বেরোতে চাইলেও বেরোতে দেয়না তা দীর্ঘদিনের নিষ্ঠুর নিয়ন্ত্রণের অভ্যাস।
পাপিয়া,
তুই কি আমার এমন একজন হবি,যে কিনা আমার মন খারাপ হলে সেটাকে ভালো করার চেষ্টা না করে মন খারাপটাকে বোঝার চেষ্টা করবে?আমার মন খারাপের সময়গুলোতে শুধু পাশে থাকার আশ্বাসের হাসি হেসে আমাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা না করে আমাকে সেই অঝোরে কাঁদার বয়সটায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে?
জানিস,চারপাশের এই মিথ্যে ভালো থাকার মেকিত্বে মাঝে মাঝেই আমার দমবন্ধ হয়ে আসে।
পাপিয়া,
তুই কি আমার জীবনে প্যারালাইসড সকাল,ঘামে ভেজা দুপুর,বিষন্ন বিকেল,সাঁঝের মায়া আর অঝোরে কাঁদার রাত হয়ে আসবি?
যাই হোক,আর কথা বাড়াবো না।শুধু বলবো,
সময়ের স্রোতে ভেসে হয়তো একদিন আর মনে রবে না এই আমায় তবু কোনো এক জোৎস্নাভরা রাত কিংবা বৃষ্টিদিনের পাগলামীতে মনের ভুলেও যদি আসি ভাবনায়,
জানবি,ছিলি,আছিস আর থাকবি তুই প্রতিটা সময়,এ মনের মণিকোঠায়।
ইতি
তোর ভাবনাকে ছুঁতে চাওয়া একজন
জীবনের আয়নায় কিছু না বলা কথা
শিবপদ মন্ডল
প্রিয়েষু,
এই আমার শেষ চিঠি। জানি এও রয়ে যাবে অধরা.. তুমি কোনদিন ধরতে পারবেনা। অব্যক্ত রয়ে যাবে শুধু স্মৃতি। কিন্তু কেন হল এমন সুর হীন বেসুর আলাপন। ছিঁড়ে গেছে তানপুরার সব তার। ব্যর্থ হয়ে গেছে জীবনের সব আশা। তাই তুমি থাকো ওই দূরে,
নীল আকাশ হয়ে। আমি রব এক টুকরো সাদা মেঘ হয়ে। আমার এই অপমানিত হৃদয় তোমাকে খুঁজে পেতে চাইবে না আর। সময়ের স্রোতে একদিন চলে যাব। যদি পারও স্মৃতি টুকু বুকে নিয়ে ফেলে আসা অতীতে একবার আমার কথা ভেবো । মনে করো আমার যন্ত্রণাকে, মনে করে আমার অমলিন ভালোবাসা কে।
জানো প্রিয়তমা, এখনো আমার মনে হয় শুধু আমার কাছেই তুমি আসছো, শুধু আমার জন্যই।
If I could write the beauty of your eyes
And in fresh number number all your graces
The ages to come would say 'the poet line'
Such heavenly touches never touched earthly faces.
জানো প্রিয়তমা, আমি তোমার মতো গান গাইতে পারি না. .. কিন্তু তুমি যে ভালো গান গাইতে তাতেই আমার মন ভরে যেত। রবীন্দ্রনাথের গানে আমার বরাবরের দুর্বলতার কথা জেনেই বোধহয় তুমি তোমার পরনের পোষাকে লিখিয়ে নিতে কবিগুরুর গানের কলি------কখনও ' যেতে যেতে একলা পথে'
কখনও ' আমার যাওয়া তো নয় যাওয়া'। আবার কখনও তোমার জামায় শোভা পেত আমারই তোমাকে দেওয়া হরেক নাম----- পারুল, দুর্গা, আনন্দী, সীমা,পেঁচি- আরও কতকি ।
কবিতা লেখায় আমি বরাবরই কাঁচা, তবু তোমার প্রেমের অনুপ্রেরণাতে কত কবিতাই লিখেছি। তাই এই আমার শেষ চিঠিতে সাহস সঞ্চয় করে চেষ্টা করছি দু'কলম লিখতে_____
কবে প্রথম চেয়েছি তোমা পানে,
আজ তা বিস্মৃতি----
কবে প্রথম পেয়েছি তোমাকে আমার মাঝে,
তাও।
তবু একথা জানি, তুমি আমারই।
আমারই জন্য দূরদূরান্ত করে অতিক্রম
ছুটে এসেছ তুমি।
আমাকে নিজের করে নিয়ে,
লোভেছ স্বর্গীয় আনন্দ।
যে আনন্দের স্বাদ--- মানুষ কখনো ভুলতে পারেনা,
যে আনন্দের তরে মানুষের ছুটে চলা,
মানুষের আকুতি,
দিনের তরে রাত্রির যেমন, তেমন।
তুমি আমার ঐশ্বর্যা, তুমি আমার সুচিত্রা,
তুমি আমার রানী, আমার মধুবালা।
ইতি
তোমার বেদনা বিদুর
শিবপদ মণ্ডল
রচনা:-27/12/2021
খোকনকে চিঠি
অক্ষয় কুমার বৈদ্য
প্রিয় খোকন,
তুই কেমন আছিস ভালো আছিস না রে!
আমি কেমন আছি জানতে চাইছিস!
মায়া মমতা ভরা খোলা বারান্দায় মন খারাপের বার্ধক্যকে সঙ্গী করে বেঁচে আছি এইটুকু।
আচ্ছা খোকন, তোর মনে আছে সেবার যখন জ্বর হলো সারারাত জেগে কপালে জলপটি দিয়েছিলাম। সেসব কথা হয়তো তোর মনে নেই!
মনে থাকারও কথা নয়! সে সব আজ ধূসর স্মৃতি। আমার হাতে গড়া সেই শিউলি গাছ, জানিনা আজও ফুল ফোটায় কিনা!
জীবনের পড়ন্ত বিকেলে নুয়ে পড়া শরীরে তোকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে রে!
আমি তো আর আগের মত তোকে ছুঁতে পারিনা,
তুই তো এখন অনেক বড় মানুষ, অনেক বড় ঘর। আচ্ছা খোকন তোর কাছ থেকে একটা কথা আজ বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে রে,
সত্যিই কি আমার কথা একবারও মনে পড়ে না!
সত্যি কি আমি বোঝা তোর কাছে! সময় বদলে গেছে নাকি তুই!
ঝাপসা চোখে তোরই ছবি বুকে নিয়ে দিন গুনি-
তুই আসবি কবে…. আমার এ শূন্য আঁচলে
বুকের মানিক হয়ে!!
ইতি
মা
©অক্ষয় কুমার বৈদ্য
জয়নগর
২৮.১২.২১
খোলা চিঠি
নবীন মণ্ডল
অনেক ক'রে দেখতে চেয়েছি পাইনি সে দেখা---
যে দেখা-- মনের আকুলতা, ব্যাকুলতা পুরে দেয় শেখা।
জানি না! এ জীবনে হবে কি না ---
কেমন স্পর্শে পাব!
হৃদয়ের স্পন্দনে পূর্ণ
প্রেমেরই গান গাব।
নির্জন অতি প্রিয় লাগে
শুধু তোমায় স্মরণ রাখতে,
মনের কোণে প্রতিটি কোষের
কোণায় কানায় বাঁধতে।
তুমি ছাড়া নেই কেউ এ জগতে শুধু একা,
তোমার মতো প্রিয় প্রাণ অন্তরেতে ঢাকা।
চির জাগ্রত কেবল ডেকে ডেকে তোলে...
আছি ব'লে তার প্রমাণ এইতো জীবন দোলে।
তোমারই আহ্বান করি নাই সঙ্গ ছাড়ি,
থেকো সদা কাছে দূরে ওগো অন্তর্যামী।
-------------
নবীন মণ্ডল
গ্রাম ও ডাকঘর -- পূর্বশ্রীরামপুর,থানা- মহিষাদল, জেলা -- পূর্ব মেদিনীপুর, সূচক-৭২১৬০৩.
মাকে লেখা চিঠি
অরবিন্দ সরকার
শ্রীচরনেষু
মাগো, আশাকরি অশক্ত শরীর নিয়েও তুমি আগের থেকে ভালো আছো, দীর্ঘদিন তোমার সাথে দেখা করতে না পেরে মনটা কেমন কেমন করছে।
মুশকিল হলো এই ৮৪ বছর বয়সে কানদুটো আর তোমার সাথ দিচ্ছে না, কেননা যমুনা কাকিকে দিয়ে মোবাইলে অনেক অনেকবার তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি, আমার কাজের চাপ আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে, ভাবছি বড়দিনের ছুটিতে তোমাকে একঝলক দেখে আসবো,
যমুনা কাকী ঠিক মতো দেখভাল করছেতো? ছোট ভাই তো ভীষণ ব্যস্ত থাকে, ওকে দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই, কারণ হাসপাতাল আর চেম্বার সামলাতেই ওর দিন চলে যায়, তবে ছোট বৌমা একটু সময় দিলে তুমি আরও একটু বেশি ভালো থাকতে পারতে, মনে হয় ওর মধ্যে আর পরিবর্তন আসবে না।
সেদিন নীরদ সি চৌধুরীর "আত্মঘাতী বাঙালী বইটি" পড়ছিলাম, তখনই ছোট বৌমার কথা মনে পড়ছিল, ও বোধহয় ভুলে যাচ্ছে ওকেও একদিন শাশুড়ি হতে হবে, সেই দিন ও তোমার যন্ত্রনাটা উপলব্ধি করতে পারবে,সত্যিই আমরা আত্মঘাতী বাঙালী হয়ে পড়ছি দিনের পর দিন।
ভালো থাকবার চেষ্টা করো মা , ঠিকমতো ঔষুধপত্র খাবে আর কোন অসুবিধা হলে যমুনা কাকিকে বলবে, আমাকে ফোন করে জানিয়ে দিতে।
বেশিকিছু আর লিখছিনা, তুমি ভালো থেকো, আমার ভূমিষ্ট প্রনাম নিয়ো,
ইতি
তোমার খোকা,
অরবিন্দ মাজী
২৮/১২/২০২১
চিঠি
তরুন নস্কর
আজকাল ধরতে গেলে চিঠি লেখা প্রায় অবলুপ্তির পথে। কেউ চিঠি লেখেনা বললেই চলে। এর মূল কারণ হল মোবাইল।বর্তমান প্রযুক্তির যুগে মোবাইল একটি অন্যতম মাধ্যম। মোবাইলের সাহায্যে আমরা একে অপরের সাথে কথা বলা থেকে শুরু করে বেশিরভাগ কাজই মোবাইলের মাধ্যমে সম্পন্ন করে থাকি। যার ফলে দ্রুত আমরা কারও সথে যোগাযোগ করতে পারি, কোনো তথ্য আদান প্রদান করতে পারি। এর ফলে কেউ আর তেমন চিঠি লেখে না এটাই বাস্তব।কিন্তু যদি একটু আগের দিকে ফিরে যাই তাহলে যানতে পারবো তখন মোবাইল ফোনের ব্যবহার ছিল না । একে ওপরের খবরাখবর জানতে চাইলে চিঠি লিখতে হতো।ভাবলে কেমন অবাক লাগে যার প্রচলন আগে ছিল কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের কারণে তার ব্যবহার আজ শেষ হতে বসেছে। আমি শেষ করার আগে একটি কথা বলে যেতে চাই যে প্রয়োজন নেই বলে তার কদর কেউ করবে না এটা কিন্তু ঠিক নয় সবাই আবার নতুন করে চিঠি লেখা শুরু করো একে অপরকে চিঠি প্রদান করো এতে মনের ভাব, দুঃখ , কষ্ট প্রকাশ পাবে এবং চিঠি লেখা বিলুপ্ত হয়ে যাবেনা। এটি সম্পূর্ণ আমার মতামত বলে আমি মনে করি আপনারাও আপনাদের মতামত আমাকে জানান চিঠি লিখে। সর্বপরি সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং সর্বদা মানুষের পাশে থাকুন এই কামনা করি।
ইতি
তরুণ নস্কর
কোলকাতাকে চিঠি
সুস্মিতা চক্রবর্তী
সুজনেষু কলকাতা,
কেমন আছো তুমি? আমি ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতাম তোমার কাছে এসে থাকবো। খড়্গপুরের কলেজ ক্যাম্পাসে থেকে আমার মনে হতো তুমি এক সমুদ্র মুক্তি। তোমার দোতলা বাস, গঙ্গা নদীর লঞ্চে ঘোরা আমাকে ডেকে নিতো তোমার কাছে।
চলে এলাম তোমার কাছে। এখানে মিশনারী কলেজের পড়াশোনা করলাম। তারপর মিশনারী স্কুলের দিদিমণি হয়ে গেলাম। কলেজেই পেলাম এক আধাপাগলকে। এতো বছর ধরে এ পাগলের সাথেই চললাম। আমাকে তুমি ভরে দিয়েছো। আমার ছেলে বলে কলকাতার একটা গন্ধ আছে, মায়ের গায়ের গন্ধের মতো। ঠিক তাই কলকাতা। তোমার বইমেলা, পার্ক স্ট্রিট যেখানে আমার ও আমার কলেজ, চাকরি জীবনের একাংশ কেটেছে, নিউমার্কেট সব বড়ো আপন।
তুমি ভালো থেকো কলকাতা।
ইতি
তোমার এক পাগল প্রেমিকা
বাসর রাত
শ্রাবণ কয়াল
কল্যানীয়
প্রিয় আজ আমি সুখের সাগরে দুঃখ ভেলায় চেপেছি।দুঃখ এটাই যে ভেলার মাঝি সমুদ্র যাত্রায় অনিচ্ছুক । ভেলার বক্ষতল লাল গোলাপে সাজানো, সবাই তাকে বাসর ঘর বলছে।ওরা জানে না গোলাপ এখন আমার কাছে ঘৃণিত।ওরা বেনারসি শাড়িতে আমাকে সাজিয়েছে ঠিক যেমনটা তুমি চেয়েছিলে।আমি তোমার প্রেমিক সত্ত্বাকে দেখেছি কিন্তু আজ নতুন করে ভীরুতা দেখলাম।আচ্ছা!তুমি কি পারতে না আমায় নিয়ে পালিয়ে যেতে?তোমার অর্থ নেই বলে পিতৃদেব এক ঐশ্বর্যশালী পুরুষের গলায় বরমাল্য পড়াতে বাধ্য করেছিল আমায়।তুমি প্রেমিকের ঠোঁটে ঠোঁট রাখা এবং শরীরকে স্পর্শ করতে পারো।কিন্তু বাড়ি থেকে প্রেমিকাকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সাহস তোমার নেই।আমি পারতাম তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে আনতে।কিন্তু তাতে কি আমি সুখী হতে পারতাম বলো!সংসারে অভাব এলে তুমি বলতে আমি কি তোমায় এনেছি?তুমি তো নিজে থেকে এসেছ।সে লজ্জা আমাকে চরম লজ্জার সম্মুখীন করাতো।সে লজ্জাও সইতাম যদি তুমি একবার নিজের মুখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বলতে।কিন্তু সে সাহস টুকুও তোমার ছিলনা।তুমি জানো! লগ্নভ্রষ্টা হওয়া থেকে বেঁচেছি।তোমার আসার অপেক্ষায় ঘরের দরজা বন্ধ করে সময় জানানো মেশিনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।ভেবেছিলাম তুমি আসবে।ওদিকে ছাদনাতলা থেকে পুরুত কনে আনো কনে আনো বলে চিৎকার করছিল।ঘরের দরজায় এসে আমার গর্ভধারিনী বললো ওরে মা তুই বেরিয়ে আয় নইলে লগ্নভ্রষ্টা হবি যে।সে শব্দ আমার কর্ণকে বিদীর্ণ করতে পারেনি।অবশেষে ঘরের দরজার অস্তিত্ব মুছে দিয়ে একদল পুরুষ আমাকে ঘর থেকে টেনে হিঁচরে বের করে নিয়ে গেল।আমি ছাদনা তলায় অন্যের বধূ হলাম।তৃতীয় রাত আমার বাসর রাত।অর্থাৎ যে বাসর রাত প্রতিটি নারী ও পুরুষের কাছে বহুকাঙ্খিত কিন্তু সেই রাত আমার বহু চেনা।তুমি যে কতবার আমাকে বাসর ঘরের কনে সাজিয়েছ তা শুধু আমি জানি,তাই নতুন বাসর রাতের প্রতি আমার কোনো মোহ ছিলনা।শুধু ভয় ছিল সেই মানুষটিকে নিয়ে যে বহু রাত একা কাটিয়েছে ।আজ তার স্বপ্নের রাতে প্রহরী হতে চলেছে,আমি কি পারবো তার সঙ্গ দিতে;সেই রাতে কি ঘৃণাই না করেছি এই কুৎসিত শরীরকে।শুধু ভেবেছি কি লোলুপতায় বিভোর এ দেহ সময়ের আগেই সবকিছু ভোগ করে বসে আছে।নিজেকে সংযত করে সেই কাঙ্খিত পুরুষের কাছে সঁপে দেওয়ার অপেক্ষায় বসেছিলাম। ক্ষনিকের
জন্য ভেবেছিলাম এ শরীরকে ছুঁতে দেবনা। কিন্তু পরক্ষনে মনে হলো সিংহের খাঁচায় এসে নিজেকে কি রক্ষা করতে পারব!সিংহের শক্তির কাছে আমার শক্তি ব্যর্থ প্রয়োগ জেনে সিংহের অপেক্ষায় বসে রইলাম।রাতের শেষে ভোরের আলো ফোটার আগেই সিংহ শিকারের কাছেই পৌঁছে ভেজা ভেজা গলাই-- "আমার সব শেষ হয়ে গেছে গো সব শেষ হয়ে গেছে।"জানলাম বিবাহের সংবাদে তার প্রেমিকা দুঃখনী নীলা মারা গেছে।নীলার ঝুলন্ত দেহ দেখে পাগলের মতো প্রতিটি বৃক্ষে নিজেকে ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছে।কিন্তু বাসর ঘরে অপেক্ষায় থাকা নারীকে সে ঠকাতে চাই না,তাই নিজের অপরাধের কথা জানিয়ে বিষাক্ত বিষে নিজেকে লুটিয়ে দিল ভূমিতে।ওর ত্যাগে আমি লজ্জা পেলাম।পুরুষ হয়ে ও পবিত্র ভালোবাসার নজির রাখল।আমিও সেই পথে হাঁটতে চলেছি,যাওয়ার আগে তোমাকে সবটাই জানিয়ে গেলাম।আমি জানি যে তুমি আমাকে ভুলে অন্য নারীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছ।তাই তোমার কাছে আমার শেষ চাওয়া দয়া করে তুমি সেই নারীকে জিজ্ঞাসা করো সে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ কিনা।যদি থাকে তাহলে নিজে সাহায্য করে ওদের স্বপ্ন পূরণ করো। নইলে আমার মতো সেও নিরুদ্দেশের পথে পাড়ি দেবে।আর তুমিও সব হারানোর বেদনায় আমাকে অনুসরণ করবে।আমি চাইনা তুমি এখানে এসো।কারণ তুমি এখানে এলে আমি শান্তি পাবনা...
ইতি
সূর্যানি
কাপুরুষ মনকে চিঠি
সোমা বিশ্বাস
কিরে কাপুরুষ,
শুনলাম, তুই নাকি মরতে যাচ্ছিস? বাঃ! ভালো। কাপুরুষের কাজ করে কাপুরুষের নাম রাখছিস! শুনলাম, তোর আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না? তা' বেশ, মরে যা। তোর মত কাপুরুষের বেঁচে থাকারও কোন অধিকার নেই। আসলে জানিস তো, কাপুরুষেরা বাঁচে না। বাঁচার অধিকার কেবলমাত্র বীরপুরুষের। যারা বীর হয়, তারাই কেবল বাঁচতে পারে। তারা যুদ্ধ করে বীরত্বের পরিচয় দেয়। তোর মত যুদ্ধ ফেলে বারবার ফিরে আসে না যুদ্ধ থেকে। তারা জানে, যুদ্ধ থেকে ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়াটাও মৃত্যু, মৃত্যুর সমান। এমন মৃত্যুতে নরকেও ঠাঁই নেই রে। বীরপুরুষদের তাই যুদ্ধ না ফেলে এসে যুদ্ধতেই মন দিতে হয়। যদি মরতেই হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে মর্। কারণ তারাই প্রকৃত মানুষ, প্রকৃত পুরুষ, তারা বীর।
তাই যদি বাঁচতেই চাস্, যুদ্ধ জিতে বাঁচ্। না পারিস্, হেরে গিয়ে মর্। কিন্তু কাপুরুষের মত মরিস না। জন্ম নিয়ে যখন এই পৃথিবীতে এসেছিস, ভালো কর্ম করে দাগ রেখে যা। এতে যার উপকার করলি সে মনে না রাখলেও সারা পৃথিবীর মানুষ তোকে মনে রাখবে। ইতি -
তোর আত্মা, তোর স্বরূপ, তোর বিবেক।
রচনা : ২৯ জুলাই ২০২১
Comments
Post a Comment